আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
101 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (15 points)
আসসালামু আলাইকুম শায়েখ,
১)আমরা সবাই জানি ফিলিস্তিনের গাজায় কি হচ্ছে। সেজন্য আমরা সবাই ইহুদের পন্য বয়কট করেছি। ফেসবুকে সবাই যতোটা পারি প্রচারও করেছি। আমিও ব্যতিক্রম না। আমার কাছের আত্নীয়স্বজন,বান্ধবী সবাইকে ওইসব পন্য ও ভারতীয় পন্য কিনতে নিষেধ করেছি। কিন্তু মেয়ে হওয়ায় আমার কিছু স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে হয়। দেশি প্রোডাক্টের মান ভালো না হওয়ায় এবং ভারতীয় কিছু পন্য দাম কম হওয়ায় সাথে মান কিছুটা ভালো হওয়ায় আমি এতোদিন সেগুলোই ব্যবহার করে এসেছি। অন্যান্য দেশের প্রোডাক্ট ভালো হলেও দাম অনেক বেশি যা আমার পক্ষে কেনা এখন সম্ভব না। তাই এখনো বাধ্য হয়েই আমাকে ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস+ ইহুদিদের কিছু প্রোডাক্ট ব্যবহার করতেই হচ্ছে। আমি আল্লাহর কাছেও দোয়া করি আমাকে যেনো এসবের বিকল্প ভালো কিছু ব্যবহারের তাওফিক দেন। কিন্তু অন্যান্য জিনিসের ক্ষেত্রে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি বিকল্পটা ব্যবহারের। মাঝে মাঝে দেশীয় পন্য না পাওয়া গেলে ইন্ডিয়ানটাই নিই তাও ইহুদিদেরটা নিইনা।
এখন আমার প্রশ্ন, শায়েখ,আমিতো সবাইকে নিষেধ করি এসব না ব্যবহার করতে কিন্তু আমি নিজেই বাধ্য হয়ে ব্যবহার করছি। এতে কি আমার গুনাহ হবে?? কোনো এক হাদিসে শুনেছিলাম,কোনো ব্যক্তি অন্যকে নিষেধ করে নিজে ওই কাজ করলে সে জাহান্নামে যাবে।
২) শায়েখ,আমি গান বাজনা শুনিনা আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু ইউটিউবের ডকুমেন্টারি, শিক্ষণীয় ভিডিও, নিউজ ইত্যাদিতে ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক থাকে। যখন ভিডিওগুলো দেখতে যাই তখন সে মিউজিক শুনা লাগে। সাবটাইটেলও থাকেনা যে মিউট করে সেটা দেখবো। এতে কি গুনাহ হবে?

শায়েখ,আমরা বান্ধবীরা মিলে একদিন এই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক নিয়ে আলোচনা করছিলাম তখন আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বলেছিলাম যে, এমনি ভিডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক থাকলে আমি শুনিনা মিউট করে রাখি। নিউজের গুলা শুনা লাগেই। এরকম কিছু। পরে মনে পরেছে আমি ভুল বলেছিলাম আমার অন্যান্য ভিডিওতেও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শুনা হয়ে যায় যদিও তা হালকা থাকে। তো তারপর থেকে আমার খুব ভয় করছে যে, আবারও সেই ভুল করলাম কিনা। অন্যকে যে কাজে নিষেধ করি সেটা আমারও করা হয়ে যায়।
শায়েখ,আমি কি করবো এখন? ওদেরকে কি বলে দিবো যে, হ্যাঁ আমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শুনা হয়ে যায়। বা ওই ইহুদি বা ইন্ডিয়ান পন্য আমারও ব্যবহার করা হয়??

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তা'আলা বলেন,
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلاَ تَعْقِلُونَ
তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?(সূরা বাকারা-৪৪)

https://ifatwa.info/10814/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে,
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ، كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُوْلُوْا مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ ‘
হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা তোমরা কর না? আল্লাহর নিকট বড় ক্রোধের বিষয় এই যে, তোমরা বল এমন কথা, যা তোমরা কর না (ছফ ২-৩)।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِى رِجَالاً تُقْرَضُ شِفَاهُهُمْ بِمَقَارِيضَ مِنْ نَارٍ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ خُطَبَاءُ مِنْ أُمَّتِكَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَيَنْسَوْنَ أَنْفُسَهُمْ وَهُمْ يَتْلُوْنَ الْكِتَابَ أَفَلاَ يَعْقِلُوْنَ.

আনাস ইবনু মালিক বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে রাতে আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে রাতে কতগুলি লোককে দেখলাম, যাদের ঠোট আগুনের কাঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হচ্ছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের বক্তা, যারা মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করত, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। তারা কুরআন তেলাওয়াত করত, তারা কুরআন চর্চা করত না’ (ইবনু হিববান, তারগীব, হা/৩৩২৮)।

عَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَزْدِي صَاحِبُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم رضي الله عنه عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَثَلُ الَّذِي يُعَلِّمُ النَّاسَ الْخَيْرَ وَيَنْسَى نَفْسَهُ كَمَثَلِ السِّرَاجِ يُضِيءُ لِلنَّاسِ وَيُحْرِقُ نَفْسَهُ.

জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ আযদী বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সে ব্যক্তি উদাহরণ যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণের দাওয়াত দেয়, নিজে আমল করে না। সে সেই মোমবাতির মত, যে মোমবাতির মত। যে মোমবাতি মানুষকে আলো দেয় এবং নিজেকে জ্বালিয়ে দেয়’ (তাবারানী, তারগীব, হা/৩৩৩১)।
    
 وَعَنْ أَبِي زَيدٍ أُسَامَةَ بنِ حَارِثَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «يُؤْتَى بالرَّجُلِ يَوْمَ القيَامَةِ فَيُلْقَى في النَّارِ، فَتَنْدَلِقُ أقْتَابُ بَطْنِهِ فَيدُورُ بِهَا كَمَا يَدُورُ الحِمَارُ في الرَّحَى، فَيَجْتَمِعُ إِلَيْه أهْلُ النَّارِ، فَيَقُولُونَ : يَا فُلانُ، مَا لَكَ ؟ أَلَمْ تَكُ تَأمُرُ بالمعْرُوفِ وَتنهَى عَنِ المُنْكَرِ ؟ فَيقُولُ : بَلَى، كُنْتُ آمُرُ بِالمَعْرُوفِ وَلا آتِيهِ، وأنْهَى عَنِ المُنْكَرِ وَآتِيهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

  আবু যায়দ উসামাহ ইবনে যায়দ ইবনে হারেসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’’ [বুখারি৩২৬৭, ৭০৯৮, মুসলিম ২৯৮৯, আহমদ ২১২৭৭, ২১২৮৭, ২১২৯৩, ২১৩১২]
,
অন্যকে উপদেশ দেয়া বা নিষেধ করা আর নিজে সে অনুযায়ী আমল না করা বা বিরত না থাকা নিন্দনীয় হলেও এর অর্থ এটা নয় যে, কোনো বিষয় নিজের মাঝে আমল না থাকলে অন্যকে বলাই যাবে না।
,
এমনটি ধারণা করা ঠিক নয়। অন্যকে আমলের বা বিরত থাকার উপদেশ দিবে, সাথে সাথে নিজেও আমলের চেষ্টা করবে। 

★সুতরাং কাউকে কোন কাজে নিষেধ করার আগে সে কাজটি নিজেকে ছাড়তেই হবে, বিষয়টি এমন নয়।   

বরং অন্যকে উপদেশ দেওয়ার সাথে সাথে সে কাজটা যদি কেহ নিজেও করে থাকে, তবে নিজেকেও ছাড়ার আপ্রাম চেষ্টা করতে হবে।
তাহলেই ইনশাআল্লাহ উপরে উল্লেখিত হাদীসের উপর আমল হবে।
ইনশাআল্লাহ।      

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার গুনাহ হবেনা।

(০২)
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক শোনা জায়েজ নেই।
মিউট করতে হবে।
অন্যথায় সেই ভিডিও দেয়া যাবেনা।

প্রশ্নের বিবরন মতে আপনি মিথ্যা বলেছেন,তাই এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...