আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
161 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। আমার হাসবেন্ড আমাকে ১ বার তালাক দিয়েছিলো৷  আর ২য় বার প্রচন্ড রাগের মাথায় ৩ তালাক দিয়েছিলো। ২য় বার হানাফি ফিকহ্ গ্রুপের এক মুফতি এর সাথে আমি আর আমার হাসবেন্ড হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে উনি সব শুনে  বলেছিলেন তালাক হয় নি৷ যেহেতু আমার হাসবেন্ড হিতাহিত জ্ঞানে ছিলেন না। আমার হাসবেন্ড বলেছিলো উনার নাকি মনেও ছিলো না। যাই হোক এই ঘটনার প্রায় ২ বছর হচ্ছে। আমার স্বামীর সাথে আমার বনিবনা হচ্ছে না।উনি আমাকে অনেক মারধোর করেন। আমার ফ্যামিলি এবং আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন। আমার বাবার দোকানে উনি কাজ করতেন। তাই আমি উনাকে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে থাকতাম।উনি আমার বাড়িতেই আমাকে মারতে মারতে অজ্ঞানপ্রায় করে ফেলেছেন অনেকবার৷ কয়েকবার রাতে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। প্রায়শই শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন তো আছেই। বিয়ের ৫ বছর পর আমি কনসিভ করেছিলাম। উনি আমাকে তখনও মেরেছে। আমার মুখ চেপে ধরেছে আর গলায় ওরনা প্যাচ দিয়েছে। কিছুদিন পরে আল্ট্রাসাউন্ডে জানতে পারি যে আমার টুইন বেবির হার্টবিট অফ হয়ে মিস্ক্যারেজ হয়ে গেছে আড়াই মাসে জানুয়ারিতে । আমি আশঙ্কা করি হয়তো এই মারধোরের কারণে আমার বাচ্চা নষ্ট হতে পারে। বাকিটা আল্লাহু আলাম। এরপর ১ বার শারিরীক হয়েছেন উনি ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও। তো জানুয়ারি থেকেই উনি নানান কারণে আমার সাথে নানান শর্তযুক্ত তালাক দিত যে এইটা করলে বা অইখানে গেলে বা ঝগড়ার সময় রুমে কেউ আসলে তালাক হয়ে যাবে। আমিও তালাক এড়ানোর জন্য এইসব মেনে চলতাম যাতে তালাক পতিত না হয়। এর মধ্যে উনার মারামারি চলছিলো। আমি একটা অসুস্থ মানুষ তারপরেও। এরপরে উনি আমাকে বলত তুই আমাকে তালাক দে তোর বাসায় জানা নাহলে  তালাক দিয়ে দিব।  তুই তোর বাপ মায়েরে বল। আমার বাবা মা এইসবের  কিছুই জানত না। ২৩ ফেব্রুয়ারি আমার গ্রামের বাড়ি ওয়াজ ছিলো। ২১ ফেব্রুয়ারি উনি আমাকে বলে তুই তোর বাসায় না জানালে  আমি তোর গ্রামে গিয়ে সবার সামনে অনুষ্ঠান বাড়িতে কাহিনী করব। আমার বাবা মা এইদিকে কিছুই জানে না। তাই আমি বাধ্য হয়ে  আমার বাসায় জানাইসি অইদিন। তারপর  সে অইদিন জানার পর চলে যায়। ২৩ তারিখ আমার বাড়ি এসে তারা অনেক নাটক করে। এর পর থেকে আমাদের মাঝে যোগাযোগ নাই। উনি আমার কাছে এখন মাফ চান কিন্তু ১ তালাকের বিষয় ছাড়া কিছু স্বীকার করেন না। নিজের ভুল বুঝেন না। আমার কাছে প্রমাণ আছে। আমার আব্বুর ব্যবসায়িক অনেক ক্ষতি করেছেন উনি এর মাঝে। আমি কোনোদিন আমার বাড়ি এইসব জানাতে চাই নি। উনি আমাকে বাধ্য করেছেন। এখন আমাকে কেউ ই অই বাড়ি পাঠাতে চাচ্ছে না। আমিও অইবাড়িতে আমার জীবনের আশঙ্কা করি। উনি মোটেও দ্বীনদার নন। সন্ত্রাস টাইপ এলাকা অইটা। খুন খারবি হয়৷ উনার মেন্টালিটিও অমন। আমার পক্ষে অইখানে আর যাওয়া পসিবল না। গেলে উনার হাতে বা উনার ফ্যামিলির হাতে মার খেয়ে মারা যাবার সম্ভাবনা আছে। এই ক্ষেত্রে হুজুর বিবাহ বিচ্ছেদের নিয়ম কি? উনি উনার সামর্থ থাকার পরেও আগে আমার জরুরতের জিনিস দিতেন না। বলতেন টাকা নাই। কিন্তু নিজের  শখগুলো ঠিকই পূরণ করতেন।  এখন আমার যেই শারিরীক অবস্থা উনার এখন আমার ভরণপোষণের আর ডাক্তারের চিকিৎসার ক্ষমতা নেই। উনি আমার বাবার বাড়িতে আমার সাথে থাকতেন। কোনো খরচ ও দিতেন না থাকার জন্য। উল্লেখ্য আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম৷ উনার ফ্যামিলির সামনে। কাজি ছিলো আর একটা দলিল টাইপের কাগজে ৩ লক্ষ টাকা মোহর ধরে বিয়ে করেছিলাম। অইখানে তাজফিজে তালাকের বিষয় আছে কি না জানা নাই। উনি আমাকে বিয়ের পর মুখে অনেকবারই বলেছে আমাকে ছেড়ে দাও। তুমি তালাক দেও । ছাড়াছাড়ির নিয়তেই বলসে।এই ক্ষেত্রে মৌখিকভাবে তাহফিজের ক্ষমতা কি মৌখিকভাবে পতিত হয়?আমি আসলে তখন এইসব নিয়ম জানতাম ও না। বিয়ের পর থেকে আমি অই কাগজ আর দেখিও নাই। এখন আমাদের আর কয় তালাক অবশিষ্ট আছে? আর আমি উনার থেকে আলাদা হব কিভাবে? আমার ফ্যামিলি তেমন দ্বীনদার নয়। মেয়েরা যে তালাক দিতে পারে না এইটা আমি তাদের বুঝাতে পারছি না। আমার মামা উকিল উনিও বলেন যে শরীয়াহ আছে  সাথে দেশের আইনো আছে। ঈদের পর দুই ফ্যামিলি বসে  উনারা খুব তাড়াতাড়ি নোটিশ পাঠাতে চাচ্ছে। এইক্ষেত্রে আমি সাইন করে নোটিশ পাঠালে ডিভোর্স হবে কি? দেশের প্রচলিত আইনে যেহেতু মেয়েরা তালাক দিলে হয় না তাহলে হুজুর আমি কি করতে পারি?আমার এই ব্যাপারে জানা প্রয়োজন খুব তাড়াতাড়ি।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

তালাক হচ্ছে স্বামীর অধিকার। স্বামী তালাক দিলেই তালাক সংঘটিত হবে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ عَنْ مُوسَى بْنِ أَيُّوبَ الْغَافِقِيِّ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ سَيِّدِي زَوَّجَنِي أَمَتَهُ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنِي وَبَيْنَهَا قَالَ فَصَعِدَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ مَا بَالُ أَحَدِكُمْ يُزَوِّجُ عَبْدَهُ أَمَتَهُ ثُمَّ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنَهُمَا إِنَّمَا الطَّلَاقُ لِمَنْ أَخَذَ بِالسَّاقِ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার মনিব তার বাঁদীকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছে। এখন সে আমার ও আমার স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে আরোহণ করলেন, অতঃপর বলেনঃ হে লোকসকল! তোমাদের কারো এরূপ আচরণ কেন যে, সে তার গোলামের সাথে তার বাঁদীর বিবাহ দেয়, অতঃপর তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়? নারীর ঊরু স্পর্শ করা যার জন্য বৈধ, তালাকের অধিকার তার।
(সুনানে ইবনে মাজাহ ২০৮১.বায়হাকী ৯/১৫৭, ইরওয়াহ ২০৪১।)

★শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  মহিলা নিজের উপর কেবল তখনি তালাক পতিত করতে পারবে, যদি স্বামী তাকে তালাক দেবার অধিকার দিয়ে থাকে।
এটি নিকাহ নামার ১৮ নং ধারাতে হ্যাঁ লেখার মাধ্যমেই হোক,বা পরবর্তীতে মৌখিক বা লিখিত ভাবেই হোক।
,  
সুতরাং স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করে,আর স্ত্রী স্বামী কর্তৃক তালাকে তাভবিজের ক্ষমতাবলে লিখিত বা মৌখিকভাবে নিজের নফসের উপর তালাক দিয়ে দিলে সেটি পতিত হয়ে যাবে।

আরো জানুনঃ 

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ
   
قال لھا: طلقي نفسک ولم ینو أو نوی واحدة فطلقت وقعت رجعیة الخ (الدر المختار مع رد المحتار، کتاب الطلاق، باب الأمر بالید، ۴: ۵۷۵، ط: مکتبة زکریا دیوبند)۔
সারমর্মঃ
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে,তুমি তোমার নিজের নফসকে তালাক দাও,কোনো নিয়ত না করে,অথবা এক তালাকের নিয়ত করে,অতঃপর স্ত্রী তালাক দেয়,তাহলে এক তালাকে রজয়ী পতিত হবে।     

رجل قال لامرأتہ خذي طلاقک، فقالت: أخذت، یقع الطلاق۔ (الفتاویٰ الہندیۃ، کتاب الطلاق / الفصل الثاني في إیقاع الطلاق ۱؍۳۵۹)
সারমর্মঃ
কোনো ব্যাক্তি যদি তার স্ত্রীকে বলে,তুমি তোমার তালাক গ্রহন করো।
স্ত্রী যদি বলে যে গ্রহন করলাম,তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে।    

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনি তালাকের অধিকার প্রাপ্ত হয়েছেন। আপনি মৌখিক বা লিখিত যেভাবেই হোক নিজের নফসের উপর তালাক প্রদান করে ইদ্দত কাল অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্রে বিবাহ বসতে পারবেন।

দেশের প্রচলিত আইনেও আপনি তালাক গ্রহন করে অন্যত্রে বিবাহ বসতে পারবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...