আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
34 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
১)আসসালামু আলাইকুম শায়েখ,আজ থেকে ৩-৪ বছর আগে আমি যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি তখন এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। ওনার কোর্স ফি অনুযায়ী ওনাকে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করে দিই। তারপরে দিবো দিবো করে  বাকি টাকা আর পরিশোধ করা হয়নি।  আমিও আর প্রাইভেটে যাইনি। এখন আমি আমার সে শিক্ষকের টাকা পরিশোধ করে দিতে চাই। আমিতো মেয়ে,আমি নিজে থেকে ইনকাম করিনা৷ আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার আব্বুর। সেজন্য আমার কাছে সে পরিমাণ টাকা থাকেও না । আমার আব্বুকে বললে আব্বু বলে পরিশোধ করে দিবে। কিন্তু এখনো করেনি (আমরা মধ্যবিত্ত) । তার হাতে অতিরিক্ত টাকা থাকলে সংসারের নানা প্রয়োজনে সেটা ব্যয় করে ফেলে। আর ওই সময় মনেও পরেনা। তো আমার প্রশ্ন যে, এই টাকা পরিশোধের দায়িত্ব কার? আমার নাকি আমার আব্বুর? পরিশোধ না করলে গুনাহ কার হবে? আমার নাকি আব্বুর?

২)আমি ক্লাস 9 এ পড়াকালিন এক শিক্ষকের কাছে এক মাসের বেতন না দিয়েই পড়া বাদ দিই। মূলত বেতনের টাকাটা আমি আর আম্মু মিলে খরচ করে ফেলি। ওই সময়ে বান্দার হকের বিষয়টা জানতাম না। এখন সেই শিক্ষকের টাকা পরিশোধ করতে চাই। কিন্তু সেই শিক্ষক এখন কোথায় আছেন জানিনা। আর বেতন কতো ছিলো সেটাও সঠিক মনে নাই।  আমি যদি শিক্ষককে খুজে পাই এবং তাকে আনুমানিক মোট বেতনের চেয়ে কিছু বেশি দেই তাহলে সেটা কি সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে? কারণ আমার মনে নেই বেতন কতো ছিলো। বা তাকে যদি খুজে না পাই তাহলে কি তার বেতনের টাকাটা আমি দান করে দিতে পারবো?

৩) আরেক শিক্ষকের কাছে কিছুদিন পড়ে বাদ দিই। আমি সেই কয়েকদিনের বেতন সঠিকভাবে হিসাব করে আব্বুকে জানিয়েছিলাম কিন্তু আব্বু শিক্ষককে বেতন দেয়ার সময় কিছু টাকা কম দেয়। শিক্ষকও কিছু বলেননি এই বিষয়ে। আমার প্রশ্ন, এতে কি শিক্ষকের মাধ্যমে বান্দার হক নষ্ট হলো? যেহেতু শিক্ষক কিছুই বলেননি এই বিষয়ে।

৪) আমরা এক বাসায় ভাড়া ছিলাম, পাশে আরেক ভাড়াটিয়া ছিলো। তো তার কারেন্টের লাইনের সাথে আমাদের কারেন্টের লাইন এলোমেলো হয়ে যায় যার ফলে তার কারেন্টের বিল আমরা দিতাম আর আমাদেরটা তারা দিতো। সত্যিকার অর্থে আমাদের বিল বেশি আসতো যেটা তারা দিতো আর তাদের কম আসতো সেটা আমরা দিতাম। এভাবে কয়েকমাস দিয়েছিলাম। আমরা কেউই জানতাম না বিষয়টা।  এরপর সে বিষয়টা নিয়ে বাড়িওয়ালার সাথে ঝামেলা করে বাসা ছেড়ে দেয়। এর কিছুদিন পর আমরা জানতে পারি আসল ঘটনা। এখন আমার প্রশ্ন, এতে কি আমাদের দ্বারা তাদের হক নষ্ট হয়েছে? আমরাতো কেউই জানতাম না বিষয়টা।  কতো বিল এসেছিলো এখন তার কিছু মনে নেই যেহেতু অনেক দিন আগের কথা আর আমরাও বাসা চেঞ্জ করে ফেলি পরবর্তীতে।

1 Answer

0 votes
by (681,640 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ حَدَّثَنَا سَعِيدٌ الْمَقْبُرِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ ২৪৪৯.৬৫৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)

وَعَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ؟» . قَالُوا: الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لَا دِرْهَمَ لَهُ وَلَا مَتَاعَ. فَقَالَ: «إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ يَأْتِي يَوْم الْقِيَامَة بِصَلَاة وَصِيَام وَزَكَاة وَيَأْتِي وَقَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا. وَأَكَلَ مَالَ هَذَا. وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يَقْضِيَ مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرح فِي النَّار» . رَوَاهُ مُسلم

আবূ হুরায়রা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জানো, (প্রকৃত) গরীব কে? সাহাবায়ে কিরাম বললেনঃ আমরা তো মনে করি, আমাদের মধ্যে যার টাকা-পয়সা, ধনদৌলত নেই, সে-ই গরীব। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি গরীব হবে, যে ব্যক্তি দুনিয়া থেকে সালাত, সিয়াম ও যাকাত আদায় করে আসবে; কিন্তু সাথে সাথে সেসব লোকেদেরকেও নিয়ে আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কারো অপবাদ রটিয়েছে, কারো সম্পদ খেয়েছে, কাউকে হত্যা করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে; এমন ব্যক্তিদেরকে তার নেকীগুলো দিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর যখন তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে অথচ পাওনাদারদের পাওনা তখনো বাকি, তখন পাওনাদারদের গুনাহ তথা পাপ তার ওপর ঢেলে দেয়া হবে, আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

(মুসলিম ৫৯-(২৫৮১), তিরমিযী ২৪১৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৮৪৫, সহীহুল জামি‘ ৮৭, সহীহ আত্ তারগীব ২২২৩, শু‘আবুল ঈমান ৩৩, আহমাদ ৮০২৯, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৬৪১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪১১, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ৫৬১, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ২৭৭৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৮৩৮।)

জাবের (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, কোন জান্নাতবাসী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ তার উপর কোন জাহান্নামবাসীর দাবী অবশিষ্ট থাকবে। আর কোন জাহান্নামবাসীও জাহান্নামে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ তার উপর কোন জান্নাতবাসীর দাবী অবশিষ্ট থাকবে। আমি বললাম, সে দাবী কিভাবে মিটমাট করবে, যেখানে আমরা সকলে উত্থিত হব আল্লাহর সমীপে সহায়-সম্বলহীনভাবে? তিনি বলেন, নেকী ও গোনাহ দ্বারা’ (আহমাদ হা/১৬০৪২; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯৭০; ছহীহুত তারগীব হা/৩৬০৮)।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
তার কোর্স ফির পুরো টাকা যদি আপনার আব্বু আপনাকে না দিয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে বাকি টাকা আপনার আব্বুকেই দিতে হবে।
তবে বাবাকে বুঝিয়ে তাহা উসুল করে দেয়ার দায়িত্ব আপনার।

আপনার বাবা বাকি টাকা কোনোক্রমেই না দিলে সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে কোনো সময় আপনি সামর্থবান হলে আপনি তাহা পরিশোধ করে দিবেন।

(০২)
এতে কোনো সমস্যা নেই।
এটি সুদের অন্তর্ভুক্ত হবেনা।

তাকে কোনোভাবেই না পেলে, মোবাইল নাম্বারও না পেলে বেতনের টাকা শিক্ষকের ছওয়াবের নিয়তে দান করে দিতে পারবেন।

(০৩)
এতে হক নষ্ট হয়নি।

(০৪)
হ্যাঁ, এতে আপনাদের দ্বারা তাদের হক নষ্ট হয়েছে।

তাদের সাথে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটি সমাধানে আসতে হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...