ইসলামি পরিভাষায় দান করাকেই সদকা বলা হয়।
সদকা শব্দটি এসেছে আরবি ‘সিদকুন’ থেকে। অর্থ: সত্যতা, যথার্থতা। পরিভাষায় সদকা বলা হয়, একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে স্বীয় সম্পদ ব্যয় করা।
সদকা দুই প্রকার।
এক, আবশ্যকীয় যেমন যাকাত।
দুই, নফল দান।
,
এই নফল দান তথা যেটি আবশ্যকীয় নয়,সেটি আবার দুই প্রকার।
,
(১) সাধারণ সদকা (২) সদকায়ে জারিয়া। গরিব দুঃখীকে টাকা পয়সা দান করা, ভালো ব্যবহার করা সাধারণ সদকার অন্তর্ভুক্ত।
আর সাদকায়ে জারিয়া বলা হয় ঐ সমস্ত সৎকর্ম যেগুলোর কল্যাণকারিতা স্থায়ী হয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاء مَرْضَاتِ اللّهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ وَاللّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
‘যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মতো, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত না-ও হয়, তবে হাল্কা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম যথার্থই প্রত্যক্ষ করেন।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৬৫)
مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
‘যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৬১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنِي مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ أَبِي الْحُبَابِ سَعِيدِ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلَا يَقْبَلُ اللَّهُ إِلَّا طَيِّبًا كَانَ إِنَّمَا يَضَعُهَا فِي كَفِّ الرَّحْمَنِ يُرَبِّيهَا كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ أَوْ فَصِيلَهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ
সায়ীদ ইবনে ইয়াসার (রহঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি হালাল উপায়ে অর্জিত মাল সদকা করে, আল্লাহ তা’আলা হালাল অর্থাৎ পবিত্রকেই কবুল করেন – তাহা হইলে উক্ত সদকা সে আল্লাহর হাতে দিল। আল্লাহ্ পাক তাহাকে এইভাবে লালন-পালন করেন, যেইভাবে তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা কিংবা উটের বাচ্চা লালন-পালন কর। শেষ পর্যন্ত সেই সদকা (বর্ধিত হইয়া) পর্বতসমান হইয়া যায়।
(মুওত্তা মালিক ১৮৭২)
وَحَدَّثَنِي مَالِك عَنْ إِسْحَقَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ أَنَّهُ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ كَانَ أَبُو طَلْحَةَ أَكْثَرَ أَنْصَارِيٍّ بِالْمَدِينَةِ مَالًا مِنْ نَخْلٍ وَكَانَ أَحَبَّ أَمْوَالِهِ إِلَيْهِ بَيْرُحَاءَ وَكَانَتْ مُسْتَقْبِلَةَ الْمَسْجِدِ وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَاءٍ فِيهَا طَيِّبٍ قَالَ أَنَسٌ فَلَمَّا أُنْزِلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ قَامَ أَبُو طَلْحَةَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَإِنَّ أَحَبَّ أَمْوَالِي إِلَيَّ بَيْرُحَاءَ وَإِنَّهَا صَدَقَةٌ لِلَّهِ أَرْجُو بِرَّهَا وَذُخْرَهَا عِنْدَ اللَّهِ فَضَعْهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ حَيْثُ شِئْتَ قَالَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَخْ ذَلِكَ مَالٌ رَابِحٌ ذَلِكَ مَالٌ رَابِحٌ وَقَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ فِيهِ وَإِنِّي أَرَى أَنْ تَجْعَلَهَا فِي الْأَقْرَبِينَ فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ أَفْعَلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَقَسَمَهَا أَبُو طَلْحَةَ فِي أَقَارِبِهِ وَبَنِي عَمِّهِ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, মদীনার আনসারগণের মধ্যে আবু তালহা (রাঃ) ছিলেন সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি। তাঁহার সবচাইতে অধিক খেজুর বৃক্ষ ছিল। সমুদয় বাগানের মধ্যে ‘বাইরহা’ নামক বাগানটি ছিল তাহার (আবু তালহার) অধিক পছন্দনীয়। বাগানটি মসজিদে নববীর সামনেই অবস্থিত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সেই বাগানে প্রায়ই আসা-যাওয়া করিতেন। সেখানকার পানি খুবই উত্তম ছিল, তিনি তাহা পান করিতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হইলঃ (لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ) অর্থাৎ যতক্ষণ তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু (আল্লাহর রাহে) খরচ না করিবে, ততক্ষণ তোমরা সওয়াব পাইবে না)। তখন আবু তালহা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট আসিয়া বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, যতক্ষণ তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু (আল্লাহর রাহে) খরচ না করিবে, ততক্ষণ তোমরা সওয়াব পাইবে না। আর আমার প্রিয় বস্তু হইল এই ‘বাইরহা’। আমি ইহাকে আল্লাহর রাস্তায় সদকা করিলাম। ইহার বিনিময়ে আমি নেকীর আশা রাখি এবং ইহা আল্লাহর নিকট জমা রাখিতেছি। সুতরাং ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি ইহাকে যেভাবে ইচ্ছা কবুল করুন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, বাহবা! ইহা অত্যন্ত লাভজনক মাল, ইহা অত্যন্ত লাভজনক মাল। তুমি এই বাগান সম্বন্ধে যাহা কিছু বলিয়াছ আমি উহা শ্রবণ করিয়াছি। আমার মনে হয়, তুমি ইহাকে তোমার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করিয়া দাও। আবু তালহা বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি উহা বিতরণ করিয়া দিব। অতএব আবু তালহা (রাঃ) তাহার আত্মীয়-স্বজন ও চাচাত ভাইগণের মধ্যে উহা বন্টন করিয়া দিলেন।
(মুওত্তা মালিক ১৮৭৩)
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ لِكَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ أَعَاذَكَ اللهُ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ قَالَ وَمَا إِمَارَةُ السُّفَهَاءِ قَالَ أُمَرَاءُ يَكُونُونَ بَعْدِي لَا يَقْتَدُونَ بِهَدْيِي وَلَا يَسْتَنُّونَ بِسُنَّتِي فَمَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَأُولَئِكَ لَيْسُوا مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُمْ وَلَا يَرِدُوا عَلَيَّ حَوْضِي وَمَنْ لَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَأُولَئِكَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُمْ وَسَيَرِدُوا عَلَيَّ حَوْضِي يَا كَعْبُ بْنَ عُجْرَةَ الصَّوْمُ جُنَّةٌ وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ وَالصَّلَاةُ قُرْبَانٌ أَوْ قَالَ بُرْهَانٌ يَا كَعْبُ بْنَ عُجْرَةَ إِنَّهُ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ النَّارُ أَوْلَى بِهِ يَا كَعْبُ بْنَ عُجْرَةَ النَّاسُ غَادِيَانِ فَمُبْتَاعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا وَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُوبِقُهَا
জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’ব বিন উজরাহকে বললেন, ‘‘আল্লাহ তোমাকে নির্বোধ (আমীর) দের শাসনকাল থেকে আশ্রয় দিন।’’ কা’ব বললেন, ‘নির্বোধ (আমীর) দের শাসনকাল কি?’ তিনি বললেন, ‘‘আমার পরবর্তীকালে এক শ্রেণীর আমীর হবে; যারা আমার আদর্শে আদর্শবান হবে না এবং আমার তরীকাও অবলম্বন করবে না। সুতরাং যারা (তাদের দ্বারে দ্বারস্থ হয়ে) তাদের মিথ্যাবাদিতা সত্ত্বেও তাদেরকে সত্যবাদী মনে করবে এবং অত্যাচারে (ফতোয়া ইত্যাদি দ্বারা) তাদেরকে সহযোগিতা করবে তারা আমার দলভুক্ত নয় এবং আমিও তাদের দলভুক্ত নই। তারা আমার ‘হওয’ (কাওসারের) পানি পান করার জন্য উপস্থিত হতে পারবে না।
আর যারা তাদের মিথ্যাবাদিতায় তাদেরকে সত্যবাদী জানবে না এবং অত্যাচারে তাদেরকে সহযোগিতা করবে না তারা আমার দলভুক্ত, আমিও তাদের দলভুক্ত এবং আমার ‘হওয’ (কাওসারের) পানি পান করার জন্য উপস্থিত হতে পারবে।
হে কা’ব বিন উজরাহ! সিয়াম হল ঢাল স্বরূপ, সদকাহ (দান-খয়রাত) পাপ মোচন করে এবং নামায হল (আল্লাহর) নৈকট্যদাতা অথবা তোমার (ঈমানের) দলীল।
হে কা’ব বিন উজরাহ! সে মাংস (দেহ) জান্নাতে প্রবেশ করবে না; যা হারাম খাদ্যে প্রতিপালিত হয়েছে। তার জন্য তো দোযখই উপযুক্ত।
হে কা’ব বিন উজরাহ! মানুষের প্রাত্যহিক কর্মপ্রচেষ্টা দুই ধরনের হয়ে থাকে; কিছু মানুষ তো নিজেদেরকে (সৎকর্মের মাধ্যমে) ক্রয় করে (দোযখ থেকে) মুক্ত করে নেয়। আর কিছু মানুষ (অসৎকর্মের মাধ্যমে) নিজেদেরকে বিক্রয় করে ধ্বংস করে দেয়।
(আহমাদ ১৪৪৪১, বাযযার ১৬০৯ , ত্বাবারানী, ইবনে হিব্বান, সহীহ তিরমিযী ৫০১)