আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
138 views
in সাওম (Fasting) by (11 points)

আসসালামু আলাইকুম মুহতারাম শাইখ। আশা করি আল্লাহ আপনাকে আফিয়াতের সাথে রেখেছেন।
আমার একজন পরিচিত ভাই নিম্নের হাদীসটি এবং সেইসাথে হাদীসের ব্যাখ্যাটি আমাকে দিয়েছেন। আমি হুবহু সেগুলো নিচে দিলাম।

"গ্রন্থঃ সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৮/ সওম (রোযা) (كتاب الصوم)
হাদিস নম্বরঃ ২৩৫০

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ ফজরের আযান শুনতে পায় অথচ খাবারের পাত্র তার হাতে থাকে, সে যেন তা রেখে না দেয় যতক্ষণ না তার প্রয়োজন পূরন হয়।  (হাসান সহীহ)

আবু দাউদে বর্ণিত হাদিসটির বর্ধিত অংশসহ মুসনাদে আহমাদের বর্ণনাটি হলো-

عن أبي هريرة قال قال رسول الله ﷺ "إذا سمع أحدكم النداء والإناء على يده فلا يضعه حتى يقضي حاجته منه"

قال وكانوا يؤذنون إذا بزغ الفجر

অর্থ: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন আজান শোনে, তার হাতে খাবারের প্লেট থাকে, সে যেন আজানের কারণে খাবার বন্ধ না করে, যতক্ষণ না সে পেট ভরে খেয়ে নেয়।

এরপর আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মুয়াজ্জিন এ আজান দিতেন ফজর উদয় হওয়ার পরই।
(মুসনাদে আহমাদ; ২য় খণ্ড, হাদিস নং ৫১০, বায়হাকি, সুনান, ৪র্থ খণ্ড, হাদিস নং ২১৮, আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে জারির আত তাবারি, তাফসিরে তাবারি, ৩য় খণ্ড, ২৬১ পৃ.,)

সুতরাং ফজরের আজান হলে রোজাদারের খিদে থাকলে সে প্রয়োজন মতো খেয়ে নেবে। এটাই হাদিসের বাহ্যিক অর্থ এবং রাসুলের (সা.) উদ্দেশ্য।
(মুখতাসারে মুনযিরির ওপর শায়েখ আহমদ শাকেরের টিকা; ৩য় খণ্ড, ২৩৩ পৃ.)

এ সম্পর্কে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দিন আলবানি (রহ.) বলেন, এটা বান্দার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং ছাড়।
(তামামুল মিন্নাহ লিল আলবানি, ৪১৭-৪১৮ পৃ.)"


সেই ভাইয়ের প্রদানকৃত হাদীস এবং সেটার ব্যাখ্যা এখানেই শেষ।
এই প্রেক্ষিতে আমার জানার বিষয় হলো:

এখানে যেই হাদীসের ব্যাখ্যা দেওয়া হলো, সেই অনুপাতে খাবার খাওয়া অবস্থায় ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেলে কিংবা আযান হলে তথা সুবহে সাদিক উদিত হয়ে গেলেও অবশিষ্ট খাবার খেয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু আমি জানতাম, সুবহে সাদিক উদিত হয়ে গেলে আর খাবার খাওয়া যাবে না। বরং সুবহে সাদিক উদিত হয়ে গেলে যদি কেউ খাবার খায়, তাহলে রোযা ভেঙে যাবে৷

এখন উপরের হাদীসের ব্যাখ্যা দেখে সংশয়ে পড়ে গেছি। অনুগ্রহ করে হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করার অনুরোধ রইলো।

1 Answer

0 votes
by (565,920 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

اُحِلَّ لَکُمۡ لَیۡلَۃَ الصِّیَامِ الرَّفَثُ اِلٰی نِسَآئِکُمۡ ؕ ہُنَّ لِبَاسٌ لَّکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لِبَاسٌ لَّہُنَّ ؕ عَلِمَ اللّٰہُ اَنَّکُمۡ کُنۡتُمۡ تَخۡتَانُوۡنَ اَنۡفُسَکُمۡ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ وَ عَفَا عَنۡکُمۡ ۚ فَالۡـٰٔنَ بَاشِرُوۡہُنَّ وَ ابۡتَغُوۡا مَا کَتَبَ اللّٰہُ لَکُمۡ ۪ وَ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَکُمُ الۡخَیۡطُ الۡاَبۡیَضُ مِنَ الۡخَیۡطِ الۡاَسۡوَدِ مِنَ الۡفَجۡرِ۪ ثُمَّ اَتِمُّوا الصِّیَامَ اِلَی الَّیۡلِ ۚ وَ لَا تُبَاشِرُوۡہُنَّ وَ اَنۡتُمۡ عٰکِفُوۡنَ ۙ فِی الۡمَسٰجِدِ ؕ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰہِ فَلَا تَقۡرَبُوۡہَا ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ اٰیٰتِہٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّہُمۡ یَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸۷﴾

সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোষাকস্বরুপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরুপ। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত কর ছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে মার্জনা করেছেন। কাজেই এখন তোমরা তাদের সাথে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর। আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালোরেখা থেকে উষার সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রকাশ না হয়। তারপর রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। কাজেই এগুলোর নিকটবর্তী হয়ে না। এভাবে আল্লাহ তার আয়াতসমূহ মানুষদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারে।
(সুরা বাকারা ১৮৭)

আয়াতে রাতের অন্ধকারকে কালো রেখা এবং ভোরের আলো ফোটাকে সাদা রেখার সাথে তুলনা করে সাওমের শুরু এবং খানা-পিনা হারাম হওয়ার সঠিক সময়টি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অধিকন্তু এ সময়-সীমার মধ্যে কম-বেশী হওয়ার সম্ভাবনা যাতে না থাকে সে জন্য (حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ) শব্দটিও যোগ করে দেয়া হয়েছে। এতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, সন্দেহপ্রবণ লোকদের ন্যায় সুবহে-সাদিক দেখা দেয়ার আগেই খানা-পিনা হারাম মনে করো না অথবা এমন অসাবধানতাও অবলম্বন করো না যে, সুবহে-সাদিকের আলো ফোটার পরও খানা-পিনা করতে থাকবে। বরং খানা-পিনা এবং সাওমের মধ্যে সুবহে-সাদিকের উদয় সঠিকভাবে নির্ণয়ই হচ্ছে সীমারেখা। এ সীমারেখা উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খানা-পিনা বন্ধ করা জরুরী মনে করা যেমন জায়েয নয়, তেমনি সুবহে-সাদিক উদয় হওয়ার ব্যাপারে ইয়াকীন হয়ে যাওয়ার পর খানা-পিনা করাও হারাম এবং সাওম নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ, তা এক মিনিটের জন্য হলেও। সুবহে-সাদিক উদয় হওয়া সম্পর্কে ইয়াকীন হওয়া পর্যন্তই সেহরীর শেষ সময়। [মা'আরিফুল কুরআন]

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উপরোক্ত আয়াত থেকে সাব্যস্ত হয় যে সুবহে-সাদিক উদয় হওয়ার পর খানা পিনা করা স্পষ্ট হারাম।

সুতরাং এই স্পষ্ট আয়াতের বিপরিত কোনো খবয়ে ওয়াহেদ আসলে সেটা আয়াতের বিধানকে রহিত করতে পারবেনা।

সুতরাং সুবহে-সাদিক উদয় হওয়ার পর খানা পিনা করা স্পষ্ট হারাম।

আপনি যেই হাদীস উল্লেখ করেছেন,তাহা হলোঃ-

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ أَحَدُكُمْ وَالْإِنَاءُ فِي يَدِهِ فَلَا يَضَعْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ مِنْهُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (সাহরী খাবার সময়) তোমাদের কেউ ফজরের আযান শুনতে পেলে সে যেন হাতের বাসন রেখে না দেয়। বরং নিজের প্রয়োজন সেরে নেবে।

আবূ দাঊদ ২৩৫০, আহমাদ ৯৪৭৪, ১০৬২৯, ১০৬৩০, মুসতাদারাক লিল হাকিম ৭২৯, সহীহাহ্ ১৩৯৪, সহীহ আল জামি‘ ৬০৭।

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা: 
অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, ফজরের আযান শ্রবণের সময় স্বীয় হাতের পাত্র থেকে পানাহার করা বৈধ। 

এর বিভিন্ন ব্যখ্যা রয়েছে,কেহ কেহ বলেন যে এ আযান দ্বারা ফজরের পূর্বে বিলাল (রাঃ) এর আযান উদ্দেশ্য। 

দলিলঃ- 
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-  নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিলাল রাত থাকতেই আযান দেয়, অতএব তোমরা ইবনু উম্মু মাকতূম আযান দেয়ার আগ পর্যন্ত পানাহার করতে থাক।

কেহ কেহ বলেন, পানাহার হারাম হওয়ার সম্পর্ক ফজর (সুবহে সাদিক) উদয়ের সাথে আযানের সাথে নয়। মুয়াযযিন ফজর উদয়ের আগেও ভুলক্রমে আযান দিতে পারে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...