আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
আলহামদু লিল্লাহ।জাযাকুমুল্লাহু খাইরান,আমাদের এত এত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করার জন্য।মন থেকে দুআ।
আলহামদু লিল্লাহ।
https://ifatwa.info/92782/ নং প্রশ্নের ইতিবাচক সমাধান হয়েছে। ঐ প্রশ্নের প্রসঙ্গেই বলছি,
আমার মা গৃহিণী।আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন।প্রায় ৪ বছর যাবৎ রিটায়ারমেন্টে আছেন। চাকরী থাকা অবস্থায় নিজ স্ত্রী ও ৪ সন্তানের জন্য খরচ বহন করার পাশাপাশি নিজ ভাই বোনেরও অধিকাংশ খরচ চালিয়েছেন।প্রয়োজনীয় টাকা জমাতে পারেন নি।চাকরী শেষ হওয়ার পর জমানো অল্প টাকা দিয়ে ও বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে সংসার চালিয়েছেন।কিছু জমি রেন(বন্ধকের মত)দিয়ে টাকার ব্যবস্থা করেছেন।সুদ ছাড়া যেখানে ঋণ পাওয়া যায় নি,সেখানে সুদেও ঋণ নিয়েছেন।প্রায় ৪ বছর এভাবে চলার পর কিছুদিন হলো পেনশনের টাকা পেয়েছেন।তাও এককালীন পেনশন।দাদা মারা যাওয়ার পর জমি ভাগ হয় নি।চাচা ফুপুদের জমি ভাগ করে দেয়ার জন্য সব রেন ছাড়িয়েছেন এখন।এখানে পেনশনের অনেক টাকা চলে গেছে।আবার টাকার ঋণ পরিশোধ করতেও অনেক টাকা চলে গেছে।তার উপর আমরা ৩ বোন,১ ভাই।৩ বোনেরই বিয়ে হয়েছে। ভাইয়ের বয়স প্রায় ৩০।জন্ম থেকেই বুদ্ধিমত্তার সমস্যা।শারিরীক দুর্বলতাও রয়েছে।উপার্জনের সক্ষমতা নেই বললেই চলে।একটা সহজ কাজ করতে দিলে করবে।যেমন-ঘাস কাটা,লাকড়ি কাটা,অল্প বাজার করে আনা।বাজার করতে গেলেও ১০টাকার জিনিস ১৫/২০ টাকা চাইলে বুঝবে না।তবে ২৫/৩০ টাকা চাইলে প্রতারণা ধরতে পারবে হয়তো,নিশ্চিত না।কিন্তু কোন বড় কাজ বা উপার্জনের যে দায়িত্ব, সেরকম সে নিজে থেকে করে না,আবার করানোও যায় নি তার বুদ্ধিমত্তার উপর আস্থা না থাকার কারণে।তাকে বিবাহ করানো হয়েছে।একটা বেবী আছে।তার স্ত্রী -সন্তানকেও আমার বাবাই ভরণপোষণ করছেন।বোনেরা বছরে ৩/৪/৫বার বাবার বাড়ি গেলে অন্তত ১ সপ্তাহ থাকা হয়।প্রচুর খরচ হয়।
সব,সব,সব,এক কথায় বাবাকেই খরচ করতে হয়।ইনকাম সোর্স ছাড়া এত খরচ অসম্ভব।সেজন্য রিটায়ারমেন্টের পর নিজে এই বয়সে ৩টা জমি চাষ করছেন,একটা গরু পালন করছেন,যেসব কাজ চাকরী জীবনে কোনোদিনও করেন নি।সব জমি বর্গা ও রেন দেয়া ছিল তখন।বাবার প্রায়ই জ্বর থাকে আর আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা।এই শরীর নিয়েই কাজ করেন।এই রমজানে তার অসুস্থ হয়ে রোযাও ভাঙতে হয়েছে।আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে শুধু মেজো বোন সরকারী চাকরী করে। সে মাসিক খরচ দেয় না বাবাকে।তবে প্রতি ঈদে ও মাঝেমধ্যে দেয়।বড় বোন গৃহিণী।আমি ১ম দিকে ৮ হাজার এর মত বেতন পেতাম।তখন ৩ হাজার টাকার ডিপিএস শুরু করেছিলাম।আর ৩ হাজার বাবার বাসায় দিব ভেবেছিলাম আর ২ হাজার আমার মাদরাসায় পড়াশুনার খরচ।এখন বেতন কমে গেছে।ডিপিএস +পড়াশুনার খরচ চালিয়ে আর কোনো টাকা থাকে না বাবাকে দেয়ার মত।এদিকে আমি যদি আমার চাকরীর পরিধি বাড়াই তাহলে আমার কওমী পড়াশুনাতে ক্ষতি হয়।সেজন্য আমি চেয়েছিলাম ডিপিএস টা আর চালাব না।এই ৩ হাজার টাকা বাবাকে দিব।আমি যদি ৩ হাজার দেই,তাহলে আমার মেজো বোন ৫ হাজার দিবে।পরবর্তীতে আমি ৪ হাজার দিব,সে ৬ হাজার দিবে।এভাবে ৮-১০ হাজার টাকায় আমার মা ও বাবার খরচটা অন্তত চলবে,ইন শা-আল্লাহ।আমি দিচ্ছি না,তাই আমার বোনও দিচ্ছে না।
কওমী পড়াশুনা শেষ করে মাদরাসায় খেদমত করার ইচ্ছে ছিল।তখন মনে হয় একটু বেশি টাকা দিতে পারবো বাবাকে।কিন্তু সেটা আরও ৫ বছর প্রায় লাগবে।বাবার তো এখনই কষ্ট হচ্ছে। তাই এখনই হেল্প করা দরকার মনে হচ্ছে।
বাবাকে টাকা দেয়া দরকার,এটা আগেও মাঝেমধ্যে বলতাম আমার স্বামীকে।সে বলতো চাকরী করো,দিতে পারবা।চাকরী মানে অন্তত ২০ হাজার টাকা বেতনের।যাতে এই সংসারেও কিছু দিতে পারো।জেনারেল লাইনের চাকরী।অথবা মাদরাসায়ও যদি হয়।কিন্তু মাদরাসায় তো ২০ হাজার কল্পনাই করা যায় না।তাই জেনারেল জবই করতে হবে।
জেনারেল জব করা যাবে না কী কী কারণ সেগুলো বুঝানোর চেষ্টা করি।বুঝে আবার বুঝেও না।চাকরী নিয়ে চাপাচাপিও করে না।যখনই বাবাকে দেয়ার কথা বলি তখনই বলে।আর ওর বাবা যখন বলে তখন।এছাড়া বলে না।
আমার স্বামী যখন ডিপিএস শুরু করে,আমিও তখনই ডিপিএস শুরু করি।আমি বলি নি যে,এটা তার জন্য করছি।আমি নিজের জন্য করছি,এমনটিই কথা হয়েছিল।কিন্তু তবুও তার মনের শান্তি যে,আমি কিছু জমাচ্ছি,যেটা সংসারের প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে।রমজানে ওর বাসার খবর আমি নিয়েছি একাধিকবার।কিন্তু সে আমার বাবা/মার খোঁজ নেয় নি একবারও।এখন আমি ডিপিএস ভাঙার বিষয়ে বলার আগে বাবার অসুস্থতার কারণে রোযা ভাঙার কথা বলে কান্না করি।তারপর সব পরিস্থিতি ওর জানা সত্ত্বেও নম্রভাবে বর্ণনা করি।তারপর বলে যে,আমাকে হেল্প করতে বলছো তাহলে?আমি পারবো না যেটা সত্যি কথা।আমি বললাম,তাহলে আমাকেই বাবাকে হেল্প করতে হবে।ডিপিএসের ৩ হাজার টাকা ছাড়া আমার কোনো টাকা থাকে না মাসিক হেল্প করার মত।তখন আবার বলে,জব করো,ডিপিএসের টাকা ছাড়া যেখান থেকে পারো হেল্প করো গিয়ে,ডিপিএসে হাত দিবা না।আমি বললাম,এটা তো তোমার ডিপিএস না।আমার ডিপিএস আমি ধরবো।বললো,আমরা একসাথে ২টা ডিপিএস শুরু করেছি,প্রায় ১ বছর হয়ে গেছে,৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কোনো কথা বলা যাবে না,যদি তুমি তোমারটা ভাঙ্গো,তাহলে আমাদের মধ্যে রিলেশন থাকবে না।
তারপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বুঝানোর চেষ্টা করি। সে বলে,যা কিছু হোক।যদি ডিপিএস ভাঙো তাহলে অন্য কোনো কথা হবে না,তালাকের বিষয়ে আলোচনা হবে।
আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম।ডিপিএস ঠিক রেখে চাকরীর পরিধি বাড়াতে চাইলাম।কিন্তু তা না পারার কয়েকটি কারণ আছে।
১.আমার মাদরাসায় পড়ার ক্ষতি।সময় কম পাওয়া।
২.আমি অনলাইনে কুরআন পড়াই।অনলাইনে ফেসবুক/ইউটিউব বা এরকম অপ্রয়োজনীয় কারণে ব্যবহার করি না বললেই চলে।কিন্তু একটানা কুরআন ক্লাস নিতে গিয়ে চোখের ক্ষতি হচ্ছে দিনদিন।চোখে কালি পড়ছে+চশমার পাওয়ার বাড়াতে হচ্ছে। এটা শরীরের উপর জুলুম বলা চলে হয়তো।তাই ক্লাস কমিয়ে বেতনও কমে গেছে।এখন চোখের উপর চাপ কমেছে।অনলাইনে এর বেশি কাজ করতে চাচ্ছি না।
৩.২নং এর বিকল্প হিসেবে অফলাইনে মাদরাসায় অংক ইংলিশ এর ৩টি ক্লাস নেয়ার সময় হয়তো কোনোরকম বের করা যাবে ২ ঘন্টা।এতে ৩০০০ বেতন হবে হয়তো।বেতন কম হলেও মাদরাসায় জিম্মাদারী তো কম না।মাদরাসায় বিয়ের আগেও ক্লাস নিয়েছি।ছুটি নিতে সমস্যা হয়।আর এখন আমার স্বামী আমাকে নিয়ে বছরে ৪/৫বার বাড়ি যায়।প্রতিবার গড়ে ১ সপ্তাহ থাকা হয়।ঈদে তো প্রায় ২ সপ্তাহ।মোটকথা বেতন কম হলে স্বামী ও শ্বশুর শ্বাশুড়ি তাকে চাকরীই মনে করে না।আমার ছুটির বিষয় মূল্যই দিবে না।মাদরাসা ফেলে রেখেই স্বামীর সাথে ছুটি কাটাতে হবে।একে তো মাদরাসার হক নষ্ট।আবার মাদরাসার প্রধানের কাছে নিজেদের মান সম্মান নষ্ট।এটা নিয়ে আবার যুদ্ধ করতে হবে।আর নিজের পড়াশুনার পরিবেশও নষ্ট হবে।
৪.৩ নং এর বিকল্প হিসেবে অফলাইন টিউশন করাতে চাইলে-টিচারের ওয়াইফ হয়ে টিউশন খোঁজা অপমানজনক।তবুও যদি অপমান অগ্রাহ্য করে খুঁজি,তাহলে কখন পাবো অথবা পেলেও সেটা কতদিন থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই।একটু কঠিন ও সময়ের ব্যাপার।
৫.সেলাই কাজ অল্প পারি।এর জন্য সেলাই মেশিন লাগবে।সে কিনে দিবে না।আমার কাছেও টাকা নেই।
সেলাই কাজ থেকে ইনকামের জন্যও বেশ কিছু সময় লাগবে,কাস্টমার সংগ্রহের জন্য,প্রচারণার জন্য।
৬.অফলাইনে কুরআন পড়ানোর জন্য ছাত্রী সংগ্রহেও অনেক সময় লাগবে।যেহেতু আমি হাফেজা না।আবার অফলাইনে কুরআন পড়ানোতে পরিচিত না।
৭.পাশে কিন্ডার গার্টেন স্কুল আছে।কিন্তু জেনারেল কোনো জবে ঢুকলে আমার ইমান আমলের খুব ক্ষতির আশংকা করছি।আবার সময়ও দিতে হবে বেশি।
৮.আমার নিজের পড়াশুনা না থাকলে একটু মেহনত করা যেত অফলাইন প্রচারণার।তালিবে ইলম হয়ে আমি এত সময় বাইরে দিতে পারছি না।তাই আমার জন্য বর্তমানটাই সহজ যেটা অনলাইনে কুরআন পড়াচ্ছি।তবে বেতন কম।
৯.আমার পড়াশুনার খরচও সে দিবে না।দিলে ঐ টাকাটা বাবাকে দিতে পারতাম।
ডিপিএসের টাকা ছাড়া আমার আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা আছে বলে মাথায় আসছে না।খুঁজে পাচ্ছি না।
একসাথে শুরু করা ডিপিএস ভাঙার কথা শুনে আমার স্বামীর মন অনেক খারাপ হয়।আমি চাই নি তার মন খারাপ করাতে।তার সাথে আমি রাগও করি নি।বলতেছে আমি নাকি কমিটমেন্ট ভেঙেছি।ওকে বিপদে ফেলেছি।অথচ ডিপিএসটা সম্পূর্ণই আমার।এতে ওর কোনো ক্ষতি নেই।এখন আমার স্বামী আমাকে আরেকটি অপশন দিয়েছে।তা হলো-ডিপিএস আমি চালাতে না পারলে ওর নামে করে দিতে।ও চালাবে।আমি বললাম,ঠিক আছে,তাহলে আমার যত টাকা জমেছে সেটা আমাকে দিয়ে দাও।কিন্তু সে দিবে না।আমি মাঝখানে অফ করতে চাচ্ছি,তাই এটা আমার শাস্তি।৫বছর পর সে দিবে।আমার জমানো টাকাসহ ডিপিএস ওর নামে করে দিলে এক প্রকার সমাধান হয়ে যেতো।এরপরের মাস থেকে বাবাকে মাসিক টাকা দিতে পারতাম।কিন্তু জমানো টাকাটা আমার এখনই লাগবে।কারণ-
শ্বশুর বাড়ি থেকে আমার বাবার বাসায় ঈদে কয়েকজন বেড়াতে আসবে।সেখানে প্রায় ৫০ জনের জন্য খরচ করা আমার বাবার জন্য সত্যিই কষ্টদায়ক।সেটা তো আর স্বামীকে বলা যাচ্ছে না।তাহলে সে আমাকে ছোট করে দেখবে।আর তার বাবাকে বলে দিবে যেন আমার বাবার বাড়ি দাওয়াতে না যায়।ঝামেলা হবে।
যেখানে মাসিক চলাই কষ্ট হচ্ছে।সেখানে এত টাকা খরচ।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে যে,আমাকে এতখানি কষ্ট করে পড়াশুনা করানোর পরেও চাকরী করে বাবাকে হেল্প করতে পারছি না।আমার দায়িত্ব আমি পালন করছি না যেখানে,সেখানে আমার জন্য এত মানুষের জন্য খরচ করা কি বাবার দায়িত্ব?
অনেক কিছু বললাম।এখন প্রশ্ন হলো-
১.আমার বাবার এই অবস্থায় বাবা মাকে আর্থিক সাহায্য বা বাবা মায়ের উপর আমাদের ৪ ভাইবোনের কার কতটুকু দায়িত্ব?
২.বাবা মা মারা গেলে ভাইয়ের সংসার চালানো আমাদের ৪ ভাইবোনের কার কতটুকু দায়িত্ব?
৩.বাবা-মায়ের খরচ দিচ্ছি না-এই অবস্থায় আমাদের সুবিধার জন্য এত খরচ করা কি আমার বাবার দায়িত্ব?না করলে স্বামী+শ্বশুর বাড়ীতে আমার মূল্য কমে যায়।
৪.এই ডিপিএস ভাঙলে কি তালাক হবে?হলে সেটা কোন প্রকারের তালাক?শুধু নাম বললে হয়তো বুঝব না।মিন ফাদলিকুম,বিস্তারিত বুঝিয়ে দিলে ও করণীয় বললে উপকৃত হবো, ইন শা-আল্লাহ।
৫.তালাকে রজয়ী ১ বার দেয়ার পর ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই ফিরিয়ে নিলে যেহেতু তালাক কার্যকর হয় নি,তাহলে কি এটাকে ১ তালাক ধরা হবে না এবং ৩ তালাক বাকি থাকবে?নাকি ১ তালাকে রজয়ী দিলেই তা কার্যকর হোক বা না হোক বাকি থাকবে ২ তালাক?
৬.এরকম তার কোনো অপছন্দনীয় বিষয় আসলেই সে তালাকের কথা বলে আমাকে আটকাতে চায়।কারণ জানে আমার এ বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে। ডিপিএসের টাকা নিয়ে তাহলে মনে হচ্ছে ওর ভবিষ্যত চিন্তা আছে।ডিপিএস যদি ৫ বছর পূর্ণও করি,তখন সেই টাকা আমার নিজের প্রয়োজনে খরচ করতে চাইলে সে আবার তালাকের কথা বলেই আমাকে আটকাবে।এটা কি এতই ঠুনকো বিষয় যে,তালাককে সে নিজের সুবিধামত ব্যবহার করছে?
৭.আমি কি ডিপিএস ভেঙে বাবাকে টাকাটা দিতে পারবো না?উপরোক্ত সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার করণীয় কি মাসআলা এবং পরামর্শ দিলে উপকৃত হবো মিন ফাদলিকুম।