ইসলামে খোরপোষ/নাফক্বাহ ব্যবস্থার মূলনীতি হচ্ছে,প্রত্যেক উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি নিজ উপার্জন থেকে নিজ খোরপোষ বহন করবে।
যেমন হযরত মিক্বদাম রাঃ থেকে বর্ণিত,
ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻘﺪﺍﻡ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﺎ ﺃﻛﻞ ﺃﺣﺪ ﻃﻌﺎﻣﺎ ﻗﻂ ﺧﻴﺮﺍ ﻣﻦ ﺃﻥ ﻳﺄﻛﻞ ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﻳﺪﻩ ﻭﺇﻥ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺩﺍﻭﺩ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻛﺎﻥ ﻳﺄﻛﻞ ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﻳﺪﻩ
নবীজী সাঃ বলেন, নিজ হাতের উপার্জন থেকে উত্তম রিযিক কেউ কখনো আহার করেনি।এবং আল্লাহর নবী হযরত দাউদ (আঃ)নিজ হাতে কর্ম করে খাবার সংগ্রহ করতেন।(সহীহ বুখারী হাদীস নং-১৯৬৬)
নারী-পুরুষ এক্ষেত্রে সবাই সমান। যদি শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকে রিযিক সংগ্রহ করা তাদের জন্য সম্ভব হয় তাহলে তারা নিজ হাতে রিযিক সংগ্রহ করবে এবং করাই উত্তম।
পুরুষের জন্য নিজের খোরপোষ সংগ্রহ ফরয। এবং মহিলার জন্য পর্দা লঙ্ঘন নাহলে উত্তম।
মহিলার খোরপোষ উপার্জন নিজের উপর তখনই ওয়াজিব হবে যখন তার খোরপোষ দেওয়ার মত কেউ থাকবে না।কেননা মহিলাদের খোরপোষ প্রথমে বাবার উপর,তারপর স্বামীর উপর,তারপর ছেলের উপর ওয়াজিব হয়, বিস্তারিত আলোচনা পরে আসছে।
রিযিক সংগ্রহে অক্ষম ব্যক্তিবর্গের জন্য ইসলাম ভিন্ন খোরপোষের ব্যবস্থা রেখেছে।
সর্বমোট তিনটি কারণে একজনের উপর অন্যজনের নাফক্বাহ / খোরপোষ ওয়াজিব হয়।
এ সম্পর্কে আদ-দুর্রুল মুখতার গ্রন্থে বর্ণিত আছে
وَنَفَقَةُ الْغَيْرِ تَجِبُ عَلَى الْغَيْرِ بِأَسْبَابٍ ثَلَاثَةٍ: زَوْجِيَّةٌ، وَقَرَابَةٌ، وَمِلْك
একজনের উপর অন্যজনের নাফক্বাহ/খোরপোষ ওয়াজিব হওয়ার সবব বা কারণ সর্বমোট তিনটি।
- বৈবাহিক সম্পর্ক
- আত্মীয়তার সম্পর্ক
- মিলকিয়্যাত(গোলাম-মালিক)এর সম্পর্ক।
উপরোক্ত তিন প্রকারের মধ্যে প্রশ্নে বর্ণিত পিতা ও মেয়ের বিষয়টা দ্বিতীয় প্রকার তথা আত্মীয়তার সম্পর্কের আওতাধীন।
এসম্পর্কে চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " (খঃ৪১/পৃঃ ৭৬) বর্ণিত রয়েছে....
ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻮﻳﺘﻴﺔ :
ﻣَﻦْ ﺗَﺠِﺐُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻧَﻔَﻘَﺔُ ﺍﻷُْﺻُﻮﻝ :
- 53 ﺗَﺠِﺐُ ﻧَﻔَﻘَﺔُ ﺍﻷُْﺻُﻮﻝ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻮَﻟَﺪِ، ﻷَِﻥَّ ﻟِﻸَْﺑَﻮَﻳْﻦِ ﺗَﺄْﻭِﻳﻼً ﻓِﻲ ﻣَﺎﻝ ﺍﻟْﻮَﻟَﺪِ ﺑِﺎﻟﻨَّﺺِّ، ﻭَﻷَِﻧَّﻪُ ﺃَﻗْﺮَﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻤَﺎ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺑِﺎﺳْﺘِﺤْﻘَﺎﻕِ ﻧَﻔَﻘَﺘِﻬِﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ
ﻭَﻫِﻲَ ﻋِﻨْﺪُ ﺍﻟْﺤَﻨَﻔِﻴَّﺔِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺬُّﻛُﻮﺭِ ﻭَﺍﻹِْﻧَﺎﺙِ ﺑِﺎﻟﺴَّﻮِﻳَّﺔِ ﻓِﻲ ﻇَﺎﻫِﺮِ ﺍﻟﺮِّﻭَﺍﻳَﺔِ، ﻷَِﻥَّ ﺍﻟْﻤَﻌْﻨَﻰ ﻳَﺸْﻤَﻠُﻬُﻤَﺎ ( 2 ) .
( 2 ) ﻓﺘﺢ ﺍﻟﻘﺪﻳﺮ 4 / 417 ﻁ ﺩﺍﺭ ﺍﻟﻔﻜﺮ
পিতা-মাতার নাফক্বাহ কার উপর ওয়াজিব হবে।
পিতা-মাতার নাফক্বাহ সন্তানের উপর ওয়াজিব হবে।কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে যে,সন্তানের মালের উপর পিতা-মাতা অধিকার রয়েছে।এবং পিতা-মাতা তাদের সব চেয়ে বেশী ঘনিষ্ঠজন। তাই এজন্য তারা সন্তানের কাছ থেকে খোরপোষের সবচেয়ে বেশী হক্বদার।
জাহির রেওয়ায়াত অনুযায়ী
হানাফি মাযহাবের মূলনীতির আলোকে পিতা-মাতার খোরপোষের দায়িত্ব ছেলে-মেয়ে উভয়ের। এক্ষেত্রে উভয়ই সমান অর্থ্যাৎ সবার উপর ওয়াজিব।(আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়-৪১/৭৬)(ফাতহুল ক্বাদির, ৪/৪১৭)
وفي ردالمحتار
تحت قَوْلُهُ )بِالسَّوِيَّةِ بَيْنَ الِابْنِ وَالْبِنْتِ(
هُوَ ظَاهِرُ الرِّوَايَةِ وَهُوَ الصَّحِيحُ هِدَايَةٌ، وَبِهِ يُفْتَى خُلَاصَةٌ، وَهُوَ الْحَقُّ فَتْحٌ ،3/623ِ
রদ্দুল মুহতার গ্রন্থের ৩নং খন্ডের৬২৩নং পৃষ্টায় বর্ণিত আছে,
পিতা-মাতার খোরপোষ ছেলে-মেয়ে উভয়ের উপর সমানভাবে ওয়াজিব হবে।
সন্তানের মালে পিতার হক্ব ও অধিকার রয়েছে, সম্পর্কে একটি হাদীস শুনুন।
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼ ﻗَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﻟِﻲ ﻣَﺎﻻ ﻭَﻭَﻟَﺪًﺍ ﻭَﺇِﻥَّ ﺃَﺑِﻲ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺃَﻥْ ﻳَﺠْﺘَﺎﺡَ ﻣَﺎﻟِﻲ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﻧْﺖَ ﻭَﻣَﺎﻟُﻚَ ﻷَﺑِﻴﻚَ
এক ব্যক্তি এসে নবীজী সাঃ কে বলল,আমার মাল আছে এবং সন্তানাদিও আছে।এখন আমার পিতা আমার মাল নিয়ে নিতে চায়। নবীজী সাঃ তদুত্তরে বললেনঃতুমি এবং তোমার মাল, তোমার পিতার জন্য বৈধ।অর্থ্যাৎ তোমার মালে তোমার পিতার হক্ব রয়েছে।(ইবনে মাজা ২২৯১,সহীহ ইবনে হিব্বান-২২৯২,মুসনাদে আহমাদ-৬৯০২)
সন্তানের উপর পিতা-মাতার খোরপোষ কখন ওয়াজিব হবে?
(وَ) تَجِبُ (عَلَى مُوسِرٍ) وَلَوْ صَغِيرًا (يَسَارَ الْفِطْرَةِ) عَلَى الْأَرْجَحِ وَرَجَّحَ الزَّيْلَعِيُّ وَالْكَمَالُ إنْفَاقَ فَاضِلِ كَسْبِهِ.
গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী সচ্ছল, নেসাব পরিমাণ মালের মালিক সন্তানের উপর উপর মাতা-পিতার নাফক্বাহ ওয়াজিব হবে।ইমাম যাইলায়ী, ও আল-কামাল রাহ. দৈনন্দিন রোজগারের অতিরিক্ত উপার্জনকে (পিতা-মাতার জন্য খরছ করবে অন্য কিছু নয়) অগ্রাধিকার দেন।(দুর্রুল মুখতার৩/৬২১)
অন্যত্র এসেছে,
إلَّا إذَا كَانَ الْأَصْلُ زَمِنًا لَا كَسْبَ لَهُ، فَلَا يُشْتَرَطُ سِوَى قُدْرَةِ الْوَلَدِ عَلَى الْكَسْبِ
কিন্তু যদি পিতা-মাতা বার্ধক্যর ধরুণ দুর্বল,রোগগ্রস্ত হন ।যদ্দরুন উপার্জন করতে অক্ষম হন।তাহলে সন্তান উপার্জন সক্ষম হলেই তার উপর পিতা-মাতার নাফক্বাহ দেওয়া ওয়াজিব।
এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " (খঃ৪১/পৃঃ ৭৫) বর্ণিত রয়েছে....
يُشْتَرَطُ لِوُجُوبِ الإِْنْفَاقِ عَلَى الأُْصُول مَا يَأْتِي
নিম্নবর্ণিত মূলনীতির আলোকে নাফক্বাহ ওয়াজিব হবে।
أ - أَنْ يَكُونَ الأَْصْل فَقِيرًا أَوْ عَاجِزًا عَنِ الْكَسْبِ، فَلاَ يَجِبُ عَلَى الْفَرْعِ نَفَقَةُ أَصْلِهِ إِنْ كَانَ أَصْلُهُ غَنِيًّا أَوْ قَادِرًا عَلَى الْكَسْبِ، لأَِنَّهَا تَجِبُ عَلَى سَبِيل الْمُوَاسَاةِ وَالْبِرِّ، وَالْقَادِرُ عَلَى الْكَسْبِ كَالْمُوسِرِ مُسْتَغْنٍ عَنِ الْمُوَاسَاةِ
- (ক)পিতা-মাতা সহ সমস্ত উসূল বা মূল জ্বড়(বাপ-দাদা তার এবং উপরের জন) গরিব, উপার্জনে অক্ষম হওয়া শর্ত।সুতরাং উসূল ধনী বা উপার্জনে সক্ষম অবস্থায় ফুরু' বা সন্তানাদির উপর না নাফক্বাহ দেওয়া ওয়াজিব হবেনা।তখন নেকী অর্জন ও আত্মীয়তার বন্ধনকে দৃঢ়তর করতে নাফক্বাহকে ওয়াজিব করা হবে।(যাকে মুস্তাহাব বলা যাবে)
ب - أَنْ يَكُونَ الْفَرْعُ مُوسِرًا وَهَذَا بِاتِّفَاقِ الْفُقَهَاءِ، أَوْ قَادِرًا عَلَى التَّكَسُّبِ وَهُوَ مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ الْحَنَابِلَةُ وَهُوَ الأَْصَحُّ عِنْدَ الشَّافِعِيَّةِ، وَالرِّوَايَةُ الَّتِي جَزَمَ بِهَا صَاحِبُ الْهِدَايَةِ عِنْدَ الْحَنَفِيَّةِ (٣) ، وَأَنْ يَكُونَ فِي مَالِهِ أَوْ كَسْبِهِ فَضْل عَنْ نَفَقَةِ نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ وَامْرَأَتِهِ، فَإِنْ لَمْ يَفْضُل مِنْهُ شَيْءٌ لاَ تَجِبُ عَلَيْهِ النَّفَقَةُ
- (খ) ফারা' বা সন্তানাদি ধণী হওয়া। এটা সমস্ত উলামায়ে কেরামদের অভিমত।(আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়-৪১/৭৫)
দ্বিতীয় প্রকারে পিতা-মাতা ছাড়াও আরও অনেকের জন্য নাফক্বাহ ওয়াজিব হয়।
এ বিষয়ে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত আছে,
وَالنَّفَقَةُ لِكُلِّ ذِي رَحِمٍ مَحْرَمٍ إذَا كَانَ صَغِيرًا فَقِيرًا، أَوْ كَانَتْ امْرَأَةً بَالِغَةً فَقِيرَةً، أَوْ كَانَ ذَكَرًا فَقِيرًا زَمِنًا، أَوْ أَعْمَى وَيَجِبُ ذَلِكَ عَلَى قَدْرِ الْمِيرَاثِ وَيُجْبَرُ كَذَا فِي الْهِدَايَةِ وَتُعْتَبَرُ أَهْلِيَّةُ الْإِرْثِ لَا حَقِيقَتُهُ كَذَا فِي النُّقَايَةِ.
প্রত্যেক আত্মীয়র জন্য নিকটত্বের ধারাবাহিতায় নাফক্বাহ ওয়াজিব হবে,যদি তারা নাবালিগ ও ফকির হয়।অথবা ফকির বালিগা মহিলা হয়।অথবা বার্ধক্য বা রোগগ্রস্ত উপার্জনে অক্ষম(ফকির)অথবা অন্ধ হয়।এবং তা মিরাসের ভিত্তিতে ওয়াজিব হবে।অর্থ্যাৎ উক্ত ধনী ব্যক্তিকে তাদের উপর তাদের কাছ থেকে তার জন্য প্রাপ্য মিরাস অনুযায়ী নাফক্বাহ দিতে তাকে বাধ্য করা হবে।এক্ষেত্রে ওরাসতের আহল হওয়াই যতেষ্ট বাস্তবে ওয়ারিছ হওয়া শর্ত নয়।নুক্বায়া কিতাবে এভাবেই বর্ণিত রয়েছে।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৫৬৬)
প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা গরিব/ফকির হলে কার উপর তার নাফক্বাহ ওয়াজিব?
এমন প্রশ্নের জবাবে বলা যায়,
প্রথমে তার পিতার উপর তারপর স্বামীর উপর তারপর সন্তানের উপর।এদের মধ্যে যদি কেউ জীবিত না থাকে অথবা নাফক্বাহ দেওয়ার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে ওরাসতে নিকটত্বের ভিত্তিতে নিকটাত্মীয় উপর উক্ত মহিলার নাফক্বাহ ওয়াজিব হবে।
وَتَجِبُ نَفَقَةُ الْإِنَاثِ الْكِبَارِ مِنْ ذَوِي الْأَرْحَامِ، وَإِنْ كُنَّ صَحِيحَاتِ الْبَدَنِ إذَا كَانَ بِهِنَّ حَاجَةٌ إلَى النَّفَقَةِ كَذَا فِي الذَّخِيرَةِ
প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার নাফক্বাহ ওরাসতে নিকটত্বের ভিত্তিতে নিকটাত্মীয় উপর ওয়াজিব হবে,যখন তার নাফক্বাহর প্রয়োজন হবে।।যদিও সে শারিরিকভাবে সুস্থ থাকে না কেন।
রদ্দুল মুহতারে বর্ণিত আছে....
وَ) تَجِبُ أَيْضًا (لِكُلِّ ذِي رَحِمٍ مَحْرَمٍ صَغِيرٍ أَوْ أُنْثَى) مُطْلَقًا (وَلَوْ) كَانَتْ الْأُنْثَى (بَالِغَةً) صَحِيحَةً
وفي ردالمحتار تحت قوله )مطلقا(
وَالْمُرَادُ بِالصَّحِيحَةِ، الْقَادِرَةُ عَلَى الْكَسْبِ، لَكِنْ لَوْ كَانَتْ مُكْتَسِبَةً بِالْفِعْلِ كَالْقَابِلَةِ وَالْمُغَسِّلَةِ لَا نَفَقَةَ لَهَا كَمَا مَرَّ (
ভাবার্থঃউপার্জনে সক্ষম,সুস্থ, পূর্ণবয়স্ক মহিলার খোরপোষ পিতা-স্বামী-সন্তান না থাকা অবস্থায় নিকটাত্মীয়র উপর ওয়াজিব।কিন্ত যদি মহিলা শরীয়ত সমর্থিত কোনো কাজে প্রথম থেকেই নিয়োজিত থাকে, তাহলে তার নাফক্বাহ অন্যর উপর ওয়াজিব হবেনা।(রদ্দুল মুহতারা-৩/৬২৭)
সারমর্মঃ-
মেয়ে ধনী হলে মেয়ের উপর পিতা-মাতাকে লালন-পালন করা ওয়াজিব।অন্যথায় ওরাসতে নিকটত্বের ভিত্তিতে নিকটাত্মীয় উপর উক্ত পিতা-মাতাসহ প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার খোরপোষ ওয়াজিব হবে।
উপার্জনে অক্ষম ব্যক্তির খোরপোষের দায়ভার সম্পর্কে আদ-দুর্রুল মুখতারে (৩/৬২৩) বর্ণিত আছে,
وَالْمُعْتَبَرُ فِيهِ الْقُرْبُ وَالْجُزْئِيَّةُ
এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নিকটত্বতা ও রক্ত সম্পর্কতা।
সুতরাং উপার্জনে অক্ষম ব্যক্তির রক্তের সম্পর্কের দিকদিয়ে যেই সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে,তার উপর তাকে নাফক্বাহ দেওয়া ওয়াজিব হবে।
ইবনে আবেদীন শামী রাহ নাফক্বাহ বিষয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করতে যেয়ে উক্ত বিষয়ের জটিলতা ও কঠিনত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করে বলেনঃ-
وَاعْلَمْ أَنَّ مَسَائِلَ هَذَا الْبَابِ، مِمَّا تَحَيَّرَ فِيهَا أُولُو الْأَلْبَابِ، لِمَا يُتَوَهَّمُ فِيهَا مِنْ الِاضْطِرَابِ، وَكَثِيرًا مَا رَأَيْت مَنْ ضَلَّ فِيهَا عَنْ الصَّوَابِ، حَيْثُ لَمْ يَذْكُرُوا لَهَا ضَابِطًا نَافِعًا وَلَا أَصْلًا جَامِعًا
জ্ঞাতব্যঃ
নাফক্বাহ বিষয়টা অত্যান্ত জটিল।এ বিষয়ে অনেক জ্ঞানীজন ও পন্ডিত মহাশয়বৃন্দ দিক হারাম হয়ে হয়রান-পেরাশান হয়েছেন।কেননা এতে অনেক তীক্ষ্ণতা ও অস্পষ্টতা বিদ্যমান রয়েছে।অনেককে দেখেছি তারা সঠিক রাস্তা থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন।তারা উক্ত বিষয়ের পরিপূরণ সঠিক কোনো মূলনীতি উপস্থাপন করতে পারেননি।
(রদ্দুল মুহতার৩/৬২৩)
সর্বক্রেত্রে প্রযোয্য না হলেও মোটের উপর বলা যায় যে,যারা মৃতব্যক্তির রক্ত সম্পর্কে অতি নিকটবর্তী হওয়ার ধরুণ ওয়ারিস হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, তারাই ধারাবাহিক ভাবে খোরপোষের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ধারাবাহিক সিরিয়াল কি? এসম্পর্কে বলা যায়,
প্রথমে অধস্তন ছেলে-মেয়ে তারপর পিতা এর পর ছেলের ছেলে এভাবে.............।
আপনি কারো ব্যপারে জানতে হলে বর্তমানে উনার কে কে জীবিত আছে? বললে উত্তর তাকে চিন্থত করে দেয়া যাবে।
ধারাবাহিক সিরিয়াল কি?
এ সম্পর্কে
ইবনে আবেদীন শামী রাহ মোটামোটি একটি মূলনীতি মূলক সারসংক্ষেপ উনার আলোচানায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
নিম্নে তা প্রদত্ত করছি।
প্রকাশ থাকে যে,সন্তানাদিদের মধ্য থেকে খোরপোষের দ্বায়ভার গ্রহণের মত যোগ্যব্যক্তি হয়তো একজন হবে অথবা অনেক হবে।
যদি একজন থাকে, তাহলে যাহির কথা যে তার উপর নিশ্চিতরূপে খোরপোষের দ্বায়ভার চলে আসবে।
দ্বিতীয়তঃহয়তো শুধুমাত্র ফুরু' (একজন মানুষের ছেলে-মেয়ে,নাতী-নাতনি সহ সমস্ত সন্তানাদি) হবে অথবা ফুরু' এর সাথে হাওয়াশি থাকবে।
( হাওয়াশিঃযে উক্ত ব্যক্তির না উর্দস্তন পুরুষদের মধ্য থেকে না অধস্তন পুরুষদের মধ্য থেকে, তবে উভয়ের মধ্যে রক্তের আত্মীয়তা রয়েছে)অথবা ফুরু' ও উসূল ( উর্দস্তন পুরুষ)থাকবে।অধবা ফুরু', উসূল,ওহাওয়াশি সবাই বিদ্যমান থাকবে।অথবা শুধমাত্র উসূল বিদ্যমান থাকবে,বা উসূল ও হাওয়াশি বিদ্যমান থাকবে।এই হচ্ছে সর্বমোট ছয় প্রকার যার বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ।