আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَإِنْ يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَمِعُوا الذِّكْرَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌ
অর্থঃ কাফিররা যখন উপদেশ বাণী (কুরআন) শ্রবণ করে তখন তারা যেন তাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়িয়ে ফেলতে চায় এবং বলেঃ সে তো এক পাগল। (সূরা কলামঃ ৫১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেনঃ
عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العين حق
বদ নজর সত্য। (বুখারীঃ ১০/২১৩) অর্থাৎ এর বাস্তবতা রয়েছে, এর কুপ্রভাব লেগে থাকে।
আয়েশা সিদ্দীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
استعيذوا بالله من العين فإن العين حق
তোমরা বদ নজরের ক্রিয়া (খারাপ প্রভাব) থেকে রক্ষার জন্যে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর। কেননা তা সত্য। (ইবনে মাযাহঃ ৩৫০৮)
ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
العين حق ولو كان شيء سابق القدر لسبقته العين ، وإذا استغسلتم فاغسلوا
বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু ত্বাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর । (মুসলিমঃ ১৪/১৭১)
আসমা বিনতে উসাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আবেদন করনে যে, জাফরের সন্তানদের নজর লাগে আমি কি তাদের জন্যে ঝাড়ফুঁক করব? উত্তর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
نعم فلو كان شئ سابق القضاء لسبقته العين
অর্থঃ হ্যাঁ! কোন বস্তু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। (তিরমিযীঃ ২০৫৯, আহমদঃ ৬/৪৩৮) ৫।
حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، قَالَ مَرَّ عَامِرُ بْنُ رَبِيعَةَ بِسَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ وَهُوَ يَغْتَسِلُ فَقَالَ لَمْ أَرَ كَالْيَوْمِ وَلاَ جِلْدَ مُخَبَّأَةٍ . فَمَا لَبِثَ أَنْ لُبِطَ بِهِ فَأُتِيَ بِهِ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقِيلَ لَهُ أَدْرِكْ سَهْلاً صَرِيعًا . قَالَ " مَنْ تَتَّهِمُونَ بِهِ " . قَالُوا عَامِرَ بْنَ رَبِيعَةَ . قَالَ " عَلاَمَ يَقْتُلُ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ إِذَا رَأَى أَحَدُكُمْ مِنْ أَخِيهِ مَا يُعْجِبُهُ فَلْيَدْعُ لَهُ بِالْبَرَكَةِ " . ثُمَّ دَعَا بِمَاءٍ فَأَمَرَ عَامِرًا أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيَغْسِلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ وَرُكْبَتَيْهِ وَدَاخِلَةَ إِزَارِهِ وَأَمَرَهُ أَنْ يَصُبَّ عَلَيْهِ . قَالَ سُفْيَانُ قَالَ مَعْمَرٌ عَنِ الزُّهْرِيِّ وَأَمَرَهُ أَنْ يَكْفَأَ الإِنَاءَ مِنْ خَلْفِهِ .
আবূ উমামা ইবনে হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমের ইবনে রবীআ (রাঃ) সাহল ইবনে হুনাইফ (রাঃ)-র নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তখন গোসল করছিলেন। আমের (রাঃ) বলেন, আমি এমন খুবসুরত সুপুরুষ দেখিনি, এমনকি পর্দানশীন নারীকেও এরূপ সুন্দর দেখিনি, যেমন আজ দেখলাম। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাহল (রাঃ) বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট নিয়ে যাওয়া হলো এবং তাঁকে বলা হলো, ধরাশায়ী সাহলকে রক্ষা করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কাকে অভিযুক্ত করছো? তারা বললো, আমের ইবনে রবীআকে। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ বদনজর লাগিয়ে তার ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের মনোমুগ্ধকর কিছু দেখলে যেন তার জন্য বরকতের দোয়া করে। অতঃপর তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন, অতঃপর আমেরকে উযু করতে নির্দেশ দিলেন। তিনি তার মুখমন্ডল, দু’ হাত কনুই পর্যন্ত, দু’ পা গোছা পর্যন্ত এবং লজ্জাস্থান ধৌত করলেন। তিনি আমেরকে পাত্রের (অবশিষ্ট) পানি সকলের উপর ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি সাহলের পেছন দিক থেকে পানি ঢেলে দেয়ার জন্য আমেরকে নির্দেশ দেন।
(ইবনে মাজাহ ৩৫০৯.আহমাদ ১৫৫৫০, মুয়াত্তা মালেক ১৭৪৭, মিশকাত ৪৫৬২। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، عَنِ الْجُرَيْرِيِّ، عَنْ مُضَارِبِ بْنِ حَزْنٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " الْعَيْنُ حَقٌّ " .
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বদনজর সত্য।
সহীহুল বুখারী ৫৭৪০, ৫৯৪৪, মুসলিম ২১৮৭, আবূ দাউদ ৩৮৭৯, আহমাদ ৭৮২৩, ২৭৪৬৫, ৯১৫৮, ৯৯৪৮।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو هِشَامٍ الْمَخْزُومِيُّ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ أَبِي وَاقِدٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ فَإِنَّ الْعَيْنَ حَقٌّ " .
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। কেননা বদনজর সত্য বা বাস্তব ব্যাপার।
(ইবনে মাজাহ ৩৫০৮)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
উলামায়ে কেরামগন বলেছেন,আল্লাহ তায়ালা মানুষের শরীর ও আত্মায় বিভিন্ন প্রকারের ক্ষমতা ও প্রাকৃতিক ক্রিয়াশীল দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আর এদের ভেতর অপরকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাও দিয়েছেন। আর কোন জ্ঞানী ব্যক্তি শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আত্মার প্রতিক্রিয়ার অস্বীকার করতে পারবে না, কেননা এটা এমন একটি বিষয় যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে পরিলক্ষিত ও অনুভব করতে পারি। যেমন মানুষের চেহারা লাল রং ধারণ করে যখন তার দিকে কোন লজ্জাকারী ব্যক্তির দৃষ্টি পড়ে। তেমনি ভাবে ভয়ের কিছু দেখলে হলদে রং ধারণ করে। আর লোকজন বাস্তবে দেখতে পেয়েছে যে, বদ নজরের জন্যে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর এসব আত্মার প্রভাবে হয়ে থাকে। আর যেহেতু আত্মার সম্পর্ক চোখের সাথে খুবই গভীর এজন্য এটাকে চোখ লাগা বলা হয় কিন্তু চোখের নিজস্ব এমন কোন প্রভাব নেই বরং প্রতিক্রিয়া কেবল আত্মার মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর আত্মার মতা, প্রকৃতি ও এর গুণ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সুতরাং হিংসুক থেকে হিংসার মাধ্যমে হিংসাকৃতের উপর স্পষ্ট কষ্টের প্রভাব পড়ে।
এজন্য আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন হিংসাকারীদের থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে।
বদনজর কখনও যোগাযোগে হয় আর কখনও সামনা সামনি হয় কখনও দৃষ্টিপাতে, আবার কখনও আত্মার দ্বারা ঘায়েল করে আর কখনও এর প্রভাব বদ দুআ ও তাবীজের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর কখনও ধ্যানের মাধ্যমে হয়।
বদ নজর কেবল দৃষ্টির দ্বারা হয় না বরং কখনও অন্ধ ব্যক্তিরও বদ নজর লাগে আর তা এভাবে যে, তার সামনে কারো প্রশংসা বর্ণনা করা হয় আর তা শুনে অন্ধ ব্যক্তির আত্মা সেই প্রশংসিত ব্যক্তির উপর প্রভাব বিস্তার লাভ করে । এটা একটা বিষাক্ত তীরের ন্যায় যা বদ নজরকারী ব্যক্তির আত্মা হতে বের হয়ে অন্য ব্যক্তির উপর আঘাত হানে। আর এই তীরের লক্ষ্য বস্তু কখনও সঠিক হয় আবার কখনও হয় না। এর একটি উদাহরণ এমন যেমন কোন আক্রমণকারী এমন বক্তির উপর যদি আক্রমণ করে, যার গায়ে সুরক্ষিত যুদ্ধ পোশাক থাকে তবে আঘাতে তার শরীর আহত হবে না। তেমনি যদি দু'আ পড়ে সে যদি সুরক্ষিত থাকে তবে ক্রীয়া হবে না। আর যদি খালি গায়ে থাকে তবে আঘাত তার শরীরে হবে। আর কখনও এমন হয় যে, তীর ব্যবহারকারীর তীর শক্রর উপর আঘাত না হেনে বরং তীর ব্যবহারকারীর শরীরকেই উল্টো আঘাত করে বসে। তেমিনভাবে কখনও বদ নজর যে লাগায় উল্টো তার উপর আঘাত হানতে পারে। আর কখনও বা অনিচ্ছায় নদ নজর লেগে যায়।
অতএব এর প্রকৃতি হলো বদ নজরকারীর আশ্চর্য হয়ে চোখ লাগানো এরপর তার খবীস আত্মা তার অনুসরণ করে যা তার বিষাক্ত দৃষ্টিকে সহযোগিতা করে। কখনও মানুষ নিজেকেই বদনজরে মেরে থাকে, কখনও তার ইচ্ছার বাইরেও বদনজর লেগে থাকে। (যাদুল মা’আদ থেকে সংক্ষিপ্তাকারেঃ ১/১৬৫)
বদ নজর কেবল দৃষ্টির দ্বারা হয় না বরং কখনও অন্ধ ব্যক্তিরও বদ নজর লাগে আর তা এভাবে যে, তার সামনে কারো প্রশংসা বর্ণনা করা হয় আর তা শুনে অন্ধ ব্যক্তির আত্মা সেই প্রশংসিত ব্যক্তির উপর প্রভাব বিস্তার লাভ করে ।