আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
105 views
in সালাত(Prayer) by (11 points)
আসসালামু আলাইকুম মুহতারাম শাইখ। আশা করি আল্লাহ ভালো রেখেছেন আপনাকে।
এবার আমার নিয়্যাত ছিল তারাবীহ সালাত জামাতে আদায় করা এবং তারাবীহতে সম্পূর্ণ কুরআন শ্রবণ করা৷ কিন্তু কিছু কারণে আমার অভিভাবক মসজিদে তারাবীহ আদায়ে নিষেধ করেছেন। তারা বলছেন বাসায় সূরা তারাবীহ পড়তে একাকী। এখন এক্ষেত্রে তাদের এই কথা মান্য করা কী আমার জন্য জরুরী? যদি আমি তাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মসজিদে তারাবীহ সালাত আদায় করতে যাই, এতে কী আমার গোনাহ হবে?

1 Answer

0 votes
by (566,520 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তা'আলা মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা এবং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।তাদের অবাধ্য হওয়াকে হারাম ঘোষনা দিয়েছেন।এ বিষয়ে সমস্ত উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করে থাকেন।

মা বাবার সর্বদায় আনুগত্য করতে হবে,তাদের কথার নাফরমানী করা যাবেনা।
তাদের সাথে সর্বদায় ভালো ব্যবহার করতে হবে।
তারা কষ্ট পায়,এমন কাজ কখনোও করা যাবেনা।

তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا

“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (সূরা আহকাফ-১৫)

আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।(সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)

পিতা মাতার বৈধ বিধান তরক করলে গোনাহ হবে।

তবে শরীয়ত বহির্ভূত কোনো আদেশ করলে পিতা মাতা সহ কারো আদেশকে মান্য করা যাবে না।কেননা হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।

ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ

আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)

★মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা মূলত তিনটি মূলনীতির আলোকে হয়ে থাকে।
(১) তাদের আদেশ কোনো মুবাহ বিষয়ে হতে হবে।কোনো ওয়াজিব তরকের ব্যাপারে হতে পারবে না।এবং কোন হারাম কাজের জড়িত হওয়ার জন্যও হতে পারবে না।
(২)যে কাজের আদেশ তারা দিবেন,এতে তাদের ফায়দা থাকতে হবে,বা শরীয়তের পছন্দসই কাজ হতে হবে।
(৩)যে কাজের আদেশ দিচ্ছেন,তা তাদের সন্তানদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারবে না।

সুতরাং যদি সন্তানের কষ্ট লাঘবের জন্য তারা আদেশ দিয়ে থাকেন,তাহলে এক্ষেত্রে মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।

ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ লিখেন,
ويلزم الإنسان طاعة والديه في غير المعصية وإن كانا فاسقين ، وهو ظاهر إطلاق أحمد ، وهذا فيما فيه منفعة لهما ولا ضرر ، فإن شق عليه ولم يضره : وجب ، وإلا فلا 
গোনাহের কাজ ব্যতীত মুবাহ কাজে,মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।যদি তার ফাসিকও হয়।এটা তখন যখন তাতে মাতাপিতার ফায়দা থাকবে,এবং সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হবে না।যদি সন্তানের উপর কষ্টদায়ক হয় তবে ক্ষতিকারক না হয়, তাহলে তখন মাতাপিতার আদেশ মান্য করা ওয়াজিব।(আল-ফাতাওয়াল কুবরা-৫/৩৮১)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/1707
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে।

ﻟَﺎ ﻃَﺎﻋَﺔَ ﻟِﻤَﺨْﻠُﻮﻕٍ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ

আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(মুসনাদে আহমদ-১০৯৮)

ইমাম বোখারী রহঃ হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্ণনা করেন,
" إن منعتْه أمُّه عن العشاء في الجماعة شفقة:لم يطعها "
যদি মা তার সন্তানের কল্যাণ কামনায় তাকে অন্ধকারে এশার জামাতে যেতে বাধা প্রদান করে,তাহলে এক্ষেত্রে মায়ের আদেশকে মানা যাবে না।(সহীহ বোখারী-১/২৩০)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
নফল এবং মুস্তাহাব ইবাদত সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই যে,ইহা কামিল ঈমানের পরিচায়ক এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম।এর বিপরীতে আল্লাহ তা'আলা সওয়াব প্রদান করবেন।ঐ সমস্ত নফল ইবাদত যা ফরয ইবাদতের জিনস থেকে হয়,যদি ফরয ইবাদতে কোনো প্রকার ত্রুটি থাকে,তাহলে ঐ নফল গুলো সেই ফরযের ত্রুটিকে পুরণ করে দেয়।যেমন নফল হজ্ব ফরয হজ্বের ঘাটতিকে পুরণ করে দেয়।ঠিকতেমনি নফল নামায ফরয নামযের ঘাটতিকে পূর্ণ করে দেয়।নফল সদকাহ ফরয যাকাতের ঘাটতিকে পূর্ণ করে দেয়,ইত্যাদি ইত্যাদি।সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্য নফল এবং মুস্তাহাব ইবাদতকে পরিত্যাগ করা কখনো উচিৎ হবে না।
এখন প্রশ্ন জাগে যে,মাতাপিতা নফল ইবাদতে বাধা প্রদান করলে,সন্তানের জন্য সেই নফল ইবাদত করার বিধান কি?

★শরীয়তের বিধান হলো,মাতাপিতা যদি সন্তানের খেদমতের মুহতাজ থাকে,এবং সন্তানের কাছে সহযোগিতার আবেদন করে,অন্যদিকে যদি সন্তান এমন কোনো নফল ইবাদতে ব্যস্ত হয়ে যায় যা মাতাপিতার খেদমতের অন্তরায় থাকে,তাহলে এমতাবস্থায় মাতাপিতার খেদমতই অগ্রগণ্য হবে।সন্তানের জন্য নফল ইবাদতে লিপ্ত হওয়া জায়েয হবে না।কেননা এক্ষেত্রে মাতাপিতার খেদমতে নিজেকে ব্যস্ত রাখা ওয়াজিব।সুতরাং নফলের উপর ওয়াজিবকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

তবে যদি মাতাপিতা সন্তানের খেদমতের মুহতাজ না থাকে,বা নফল ইবাদতে বাধা প্রদানের কোনো হাজত না থাকে কিংবা এতে মাতাপিতার কোনো ফায়দা না থাকে,এবং এ ব্যাপারে শরীয়তের কোনো আকার ইঙ্গিত না থাকে,তাহলে এমতাবস্থায় মাতাপিতার উক্ত বিধিনিষেধের উপর নফল ইবাদতকে তারজিহ দেয়াই উত্তম হবে।সুতরাং মাতাপিতার আদেশকে না মেনে তখন নফল ইবাদতই উত্তম হবে।হ্যা অবশ্যই মাতাপিতার সাথে উত্তম শব্দ ব্যবহার করতে হবে। তাদেরকে হেকমতের সাথে নরম ভাষায় নফল ইবাদতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বুঝাতে হবে।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার পিতা মাতা যদি আপনার খেদমতের মুখাপেক্ষী না হয়,তারাবিহ সালাত আদায়ে বাধা প্রদানের কোনো হাজত না থাকে কিংবা এতে মাতাপিতার কোনো ফায়দা না থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি মাতাপিতার নিষেধ সত্ত্বেও তারাবিহ সালাত মসজিদে গিয়ে আদায় করতে পারবেন।

তবে এক্ষেত্রে তাদের আদেশ মানতে ইশার সালাত মসজিদে আদায় করে তারাবিহ বাসায় এসে আদায় করাতে কোনো গুনাহ হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...