আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
114 views
in সালাত(Prayer) by (5 points)
edited by
আস সালামু আলাইকুম।মুহতারাম মেয়েদের একাকী খতম তারাবীহ নামায পড়ার কিছু নিয়ম জানার ছিল । দয়া করে প্রত্যেকটি বিষয়  ও তার লুকমা দেয়ার পদ্ধতি বুঝিয়ে বললে ভালো হতো। আসলে কারো মাধ্যমে পুরোপুরি না জানা বা বোঝার কারণে সন্দেহ থেকে যায় ।

১.যের-যবরে ভুল হলে বা উলট-পালট হলে,

২.এক আয়াত থেকে অন্য আয়াতে চলে গেলে,

৩.একই আয়াতের মধ্যে কিছু অংশ বাদ পড়লে,

৪.একটি আয়াতের পরবর্তী আয়াত বাদ দিয়ে তার পরের আয়াত পড়লে,

৫.সূরা বা পৃষ্ঠা ভুলে গেলে বা আয়াতের মধ্যে সন্দেহ হলে পরবর্তী পৃষ্ঠা বা সূরা পড়লে সেক্ষেত্রে খতম তারাবীহ হবে কি? নাকি সাধারণ তারাবীহ হবে? খতম তারাবীহ পড়তে চাইলে ঐ নামাজ ছেড়ে দিয়ে পুনরায় পড়তে হবে?

৬.এক সূরার মধ্যে ভুল করলে অন্য সূরায় লুকমা দেয়া যাবে? যেমন সূরার শেষ আয়াতে ভুল গেলে,

৭.কিছু আয়াত অনেক বড় আবার কিছু ছোট। সেক্ষেত্রে আবার এমনিতেও প্রথম রাকাতে ৩ আয়াত পরের রাকাতে এর বেশি আয়াত তেলাওয়াত করা যাবে?

৮. তারাবীহতে লুকমা দেয়ার নিয়ম কী? কিভাবে দিতে হয়?কোন কোন ক্ষেত্রে লুকমা দিতে হয় আর কোন কোন ক্ষেত্রে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে বিস্তারিত বললে ভালো হয়।

৯.ভুল যায় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্দেহ হয়  সেক্ষেত্রে করণীয় কি? যেহেতু মেয়েদের জামাত করা যায় না , লোকমা দেয়ার জন্যও কেউ থাকে না সন্দেহ তাই একটু বেশিই হয়,
১০.প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে একই সূরার কিছু অংশ তেলাওয়াত করলে প্রথম রাকাতে একবার সূরা ফাতিহার পর বিসমিল্লাহ বলাই যথেষ্ট নাকি প্রত্যেক রাকাতে বিসমিল্লাহ বলতে হয়,

১১.তারাবীহ কি একটু জোরে তেলাওয়াত করা যাবে? যদি যায় সেক্ষেত্রে শুধু কেরাত অর্থাৎ সূরা ফাতিহা থেকে তেলাওয়াতের অংশটুকু জোরে পড়া যাবে নাকি রুকুর তসবীহ বা বাকি সব দোয়াও জোরে পড়া যাবে?

আফওয়ান, প্রশ্ন অনেক বড় হয়ে গেছে।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://www.ifatwa.info/4350 নং ফাতাওয়ায় আমরা উল্লেখ করেছি যে,
নামাযের কেরাতে যদি তাজবীদে ভূল হয়,যাকে লাহলে খাফী বলা হয়,তাহলে উক্ত নামাযকে দোহড়ানের প্রয়োজন নেই। তাজবীদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/1126 তবে যদি নামাযে এমন কোনো ভূল হয়,যার কারণে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়,(এক্ষেত্রে তাজবীদ বিভাগের লাহনে জালী গ্রহণযোগ্য নয়,কেননা তাজবীদের পরিভাষায় এক হরফের স্থলে অন্য হরফ পড়ে নিলেই লাহনে জলী হয়ে যায়,চায় নিকটবর্তী মাখরাজ হোক বা দূরবর্তী মাখরাজ হোক,চায় অর্থ সঠিক থাকুক বা নাই থাকুক)কিন্তু ফুকাহায়ে কেরাম দূরবর্তী মাখরাজের উচ্ছারণের সময়ে এবং অর্থ বিগড়ে যাওয়ার সময়ে নামাযকে ফাসিদ হওয়ার ফাতাওয়া দিয়ে থাকেন।

সুতরাং নামাযে কোনো হরফ উচ্ছারণের সময়ে,সেই হরফের স্থলে তার দূরবর্তী মাখরাজের কোনো হরফ উচ্ছারিত হয়ে গেলে,এবং অর্থ বিগড়ে গেলে নামায ফাসিদ হয়ে যাবে


https://ifatwa.info/19542/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ  
নামাজে মাখরাজ অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াত জরুরি। 
কেননা মাখরাজ গত ভূল হলে অনেক সময় অন্য অক্ষরের ন্যায় উচ্চারণ হয়ে যায়,যাতে প্রায়ই অর্থ বিকৃত হয়ে যায়।
আর শরীয়তের বিধান হলো নামাজে অর্থ বিকৃত হলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।
,
তাই অবশ্যই মাখরাজ অনুযায়ী প্রত্যেক অক্ষর উচ্চারণ করে নামাজ আদায় করতে হবে।
,    
আরো জানুনঃ  

মদ অনুযায়ী নামাজ আদায় না করলে এক্ষেত্রে বিধান হলো যদি টান থাকা সত্ত্বেও টান না দেওয়া হয়,বা তিন/চার আলিফের জায়গায় এক আলিফ টানা হয়,এক্ষেত্রে নামাজের কোনো সমস্যা হবেনা।
কিন্তু যেখানে টান নেই,সেখানে টান দিলে প্রায়ই অর্থ বিকৃত হয়ে যায়।
আর শরীয়তের বিধান হলো নামাজে অর্থ বিকৃত হলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।
,

আমরা তাজবিদ সংক্রান্ত কিছু মাসয়ালা জেনে নেইঃ
 
“তাজবিদ ও কিরাআতবিদগণ কর্তৃক উল্লেখিত তাজবিদের নিয়ম-কানুনগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া ভালো। এটি কিরাআত সুন্দর করার অন্তর্গত। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

« زَيِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ »

“তোমরা সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত কর।” [হাদিসটি ইমাম আহমদ, ইবনে মাজাহ, নাসায়ী ও হাকেম রহ. হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং তা সহীহ]

সুতরাং যদি গুন্নাহ, তারকিক (বারিক/চিকন করা), তাফখিম (পোর/মোটা করা) ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রাখা হয় তাহলে তা উত্তম। কিন্তু আমার কাছে যা মনে হয় এটা আবশ্যক নয়-যদি স্পষ্টভাবে ত্রটি-বিচ্যুতি ছাড়া পাঠ করে।”

 শাইখ সালেহ আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,

“قراءة القرآن بالتجويد مستحبة من غير إفراط، وليست واجبة، وإنما الواجب تجويد القرآن من اللحن والخطأ في الإعراب”

“তাজবিদ সহ কুরআন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। তবে এ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। এটা ওয়াজিব নয়। বরং ওয়াজিব হল, ইরাব (উচ্চারণ ও প্রকাশ করা) এর ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত করে সুন্দরভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা।”

শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন,

أما التجويد فليس بواجب، التجويد تحسين للفظ فقط، وتحسين اللفظ بالقرآن لا شك أنه خير، وأنه أتم في حسن القراءة، لكن الوجوب بحيث نقول من لم يقرأ القرآن بالتجويد فهو آثم قول لا دليل عليه، بل الدليل على خلافه”

“আর তাজবিদ ওয়াজিব নয়। তাজবিদ শব্দকে সুন্দর করে মাত্র। কুরআনের শব্দকে সুন্দর করা নি:সন্দেহে কল্যাণকর। এটি কিরাআতকে সুন্দর করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গতা দান করে। কিন্তু তাজবিদকে ওয়াজিব বলা অর্থাৎ “এ কথা বলা যে, যে ব্যক্তি তাজবিদ অনুযায়ী কুরআন পড়বে না সে গুনাহগার হবে” এর পক্ষে কোনও দলিল নাই। বরং এর বিপরীতেই দলিল রয়েছে।”

★★যাদের জন্য পূর্ণ তাজবিদ সহকারে কুরআন তেলাওয়াত সম্ভব। শুধুমাত্র তাদের জন্যই পূর্ণ তাজবিদ সহকারে কুরআন তেলাওয়াত করা ওয়াজিব।আর যাদের বেলায় সম্ভব নয়, তাদের জন্য পূর্ণ তাজবিদ সহকারে কুরআন তেলাওয়াত করা ওয়াজিব নয়।বরং অর্থে পরিবর্তন আসেনা এমনকরে কুরআন পড়াই তাদের জন্য যথেষ্ট হবে।এমনকি তারা পূর্ণ তাজবিদ সহকারে না পড়লেও তাদের কোনোপ্রকার গোনাহগার হবেন না।(শরহু তাইয়্যিবাতুন-নাশর-৬৩)

আরো জানুনঃ
 
যেখানে টান নেই,সেখানে টান দিলে প্রায়ই অর্থ বিকৃত হয়ে যায়।
আর শরীয়তের বিধান হলো নামাজে অর্থ বিকৃত হলে নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।

তবে কোথাও বেশি টান (৩ আলিফ মদ ৪ আলিফ মদ)  থাকলে কম টান (এক আলিফ টান) দিলে সেক্ষেত্রে নামাজ ফাসেদ হবেনা।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
এক্ষেত্রে উক্ত স্থানটি পুনরায় শুদ্ধ করে পাঠ করতে হবে। অন্যথায় নামাজ ভেঙ্গে যাওয়ার মতো অর্থ বিকৃত হলে নামাজ ভেঙ্গে যাবে।

(০২)
সেক্ষেত্রে পুনরায় আগের আয়াতে ফিরে আসার চেষ্টা করতে হবে।
ফিরে আসতে না পারলে রাকাত শেষ করে দিয়ে অন্য রাকাতে তাহা ঠিক করে নিতে হবে।

(০৩)
সেক্ষেত্রে পুনরায় ঠিক করে নেয়া চেষ্টা করতে হবে।
ঠিক করতে না পারলে রাকাত শেষ করে দিয়ে অন্য রাকাতে তাহা তুলে নিতে হবে।

(০৪)
সেক্ষেত্রে পুনরায় সেই আয়াতটি পাঠ করার চেষ্টা করতে হবে।
সেই আয়াতটি পাঠ করতে না পারলে রাকাত শেষ করে দিয়ে অন্য রাকাতে সেই আয়াত তুলে নিতে হবে।

(০৫)
এক্ষেত্রে যেটা মনে আসছে সেটাই পড়তে হবে।
নামাজের পর কুরআন দেখে স্থানটি ঠিক করে নিয়ে ভালোভাবে নামাজের মধ্যে পুনরায় তিলাওয়াত করতে হবে।
এমতাবস্থায় ঠিক করে নিলে খতম তারাবিহ হবে।

(০৬)
না।
বরং সাথে সাথেই লোকমা দিতে হবে।

(০৭)
হ্যাঁ, এভাবে তিলাওয়াত করা যাবে।

(০৮)
কোথায় কোথায় লোকমা দেয়া যায়,সে সংক্রান্ত জানুনঃ- 

(০৯)
এক্ষেত্রে সন্দেহকে পাত্তা না দিয়ে রাকাত শেষ করে নামাজের পর কুরআন দেখে স্থানটি ঠিক করে নিয়ে ভালোভাবে নামাজের মধ্যে পুনরায় তিলাওয়াত করতে হবে।

(১০)
প্রথম রাকাতে একবার সূরা ফাতিহার পর বিসমিল্লাহ বলাই যথেষ্ট।

(১১)
জোড়ে তিলাওয়াত করা যাবেনা।
তবে গায়রে মাহরাম শোনাত বিন্দুমাত্র আশংকা না থাকলে সেক্ষেত্রে কিছুটা (সামান্য) জোড়ে আওয়াজে পড়ার অনুমতি কেহ কেহ দিয়ে থাকেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 102 views
...