আস সালামু আলাইকুম।
আমার প্রশ্ন খুবই স্পর্শ কাতর। সুতরাং উপযুক্ত লোক ছাড়া কেউ উত্তর দিবেন না এবং আমার পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ রইল।
আমার স্ত্রী এবং আমি ব্যাচমেট ছিলাম। দুজন দুজনকে পছন্দ করতাম। মেয়ের মা-বাবা (আমার শ্বশুর-শ্বাশুরি) এর ভিতর ঝগড়া চলত অনেক। মেয়ের মা একসময় মেয়ের বাবকে তালাক দেন। সেই তালাকে মেয়েকে সাক্ষী রাখেন। কিছুদিন পর লুকিয়ে বিয়ে করেন আরেক লোককে। যেই উদ্দ্যেশ্য ছেলে-মেয়ে কেউই জানত না। এরপর সেই নতুন বিয়ে করা লোকের ছেলের সাথে তার মেয়েকে (আমার বর্তমান স্ত্রী) আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে বিয়ে দেন। সেই বিয়েতে ওলী (মেয়ের বাবা) ছিলেন না, এমনকি সে নিষেধ ও করেছিলেন। কিন্তু তখন মেয়ে জানত না সম্পর্কে সে তার সৎ ভাই কে বিয়ে করেছে। এরপর সংসার এক বছরও টিকে নাই।
বিচ্ছেদের পর মেয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি প্রথমে নিষেধ করলেও, পরে ওর কান্নাকাটি দেখে খারাপ লাগে। এবং তাকে বলি ইদ্দত পালন করতে। এইদিকে ওই মেয়ের বাসায় আমার ব্যাপারে কথা বলে। তারা (আপন বাবা-মা) এবার আমার ব্যাপারে রাজি হন। এবং আমার জবের জন্য অপেক্ষা করতে চান। ইদ্দতের সময় শেষ হওয়ার আগেই মেয়ের মা আবার ছেলে খুঁজা শুরু করেন। মেয়ের বাবা আমার জন্য তখনও রাজি ছিলেন। এরপর ইদ্দতের সময় শেষ হওয়ার ১০-১৫ দিন পর বাধ্য হয়ে আমরা নিজেরাই বিয়ে করার সিধ্বান্ত নেই তাদের না জানিয়ে। উল্লেখ্য আমি তখন সবে মাত্র দ্বীনের পথে ফিরতে শুরু করেছিলাম। তাই ইদ্দত পালন, সাক্ষী এসব নানা বিষয়ে সতর্ক থাকার চেষ্টা করেছিলাম।
তখন ছিল রমজান মাস। আমি অনলাইনে অনেক রিসার্চ করলাম। যেটা পেলাম প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম পুরুষ সাক্ষী লাগবে, ইজাব কবুল করতে হবে। এবং সবচেয়ে কনফিউজিং যেটা পেলাম তা হল মেয়ের ওলী নিয়ে। আমার বাপ দাদা সবাই হানাফি ফিকহ অনুসরণ করেন। আমিও তাই করতাম। তবে বিয়ের সময় যখন দ্বীনের পথে ফেরা শুরু করলাম, একটু একটু সালাফীদের (আহলে হাদিস) মতবাদ ভালো লাগা শুরু হয়েছিল। তখনও নিজেকে হানাফিই ভাবতাম, জাস্ট কিছু কিছু মাসয়ালা সালাফীদের ফলো করতাম। বিপত্তিটা বাধল এখানেই, কারণ হানাফি মাজহাবে ওলী ছাড়া বিয়ে জায়েজ, আর অন্য সবগুলোতে বিয়ে বাতিল। মেয়েকেও কয়েকবার নিষেধ করেছিলাম। পরে আমি আমি সাড়া রাত এটা নিয়ে ভাবলাম। শেষে সকালে ভাবলাম যেকোন একজন আলিমের ফতোয়ার উপর ভিত্তি করেই তো কাজ করা যায়। শেষে হানাফি মাজহাবের মতটাকেই প্রাধান্য দিয়ে ৪ জন মুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষীর উপস্থিতিতে ইজাব কবুলের মাধ্যমে রমজান মাসে দিনের বেলায় বিয়ে করি। বিয়ে পর পরেই মেয়ে মেয়ের বাবাকে এবং মাকে ফোন দিয়ে জানায় বিষয়টা। তারা শুধু বলে যে আমাদের জানিয়েও করা যেত, তারা মেনে নেয় এবং আমাকে তাদের বাসায় যেতে বলে। তবে আমার বাড়িতে দেড় বছর পর জানাই।
বিয়ের সময় আমি সবেমাত্র দ্বীনে ফিরছিলাম। পুরাপুরি তখনও ফিরি নাই। তাই সহীহ হাদিস, কুরআন, দলিল এসব নিয়ে ততটা ধারনা স্পষ্ট ছিলনা। তাই হয়ত ওলী ছাড়াই বিয়েটা করেছিলাম। এরপর শুরু হয় স্ট্রাগল পিরিয়ড। আমি বেকার ছিলাম। প্রতিনিয়ত ইসলামকে জানার চেষ্টা করলাম আর কর্মের চেষ্টা করলাম। করোনার সময় পুরোপুরি সালাফি মতবাদ ভালো লাগা শুরু হল। এবং আমি পুরোপুরি হানাফি থেকে সালাফিতে (আহলে হাদিস) ডাইভার্ট হয়ে গেলাম। কারণ পুরো ইন্টারনেট জুড়ে ফিকহি বিষয়ে তাদের অকাট্য যুক্তি এবং দলীল দিয়ে ভরা ছিল। অন্যদিকে হানাফি মাজহাবের বিষয়ে তেমন কোন কন্টেন্ট ছিলনা। বা থাকলে যুক্তি সম্মত বিশ্লেষণ ছিলনা। যাই হোক, করোনার সময় দ্বীনকে অনেক বেশি ভালবাসতে শুরু করলাম। এবং যার প্রতিদান আল্লাহ আমাকে দিলেন। একটি সন্তান দিলেন এবং আমার রিজিকে এমন বরকত দিলেন যা কল্পনাও করতে পারিনি, আলহামদুলিল্লাহ।
বিগত এক বছর হল কিছু হানাফি আলেমদের যুক্তিপুর্ন ডিবেট অনলাইনে পাচ্ছি। বিশেষ করে ডঃ এনায়েতুল্লাহ আব্বাসি, আবরার সাহেব সহ আরও অনেকের। যা আমাকে অনেকটাই সন্তুষ্ট করেছে। এবং আবার হানাফি মাজহাব অনুযায়ী আমলের চেষ্টা করি। (মাজহাবি এবং আহলে হাদিসের অনেক আলেমকেই খুবই কট্টর ভাষায় একে অন্যকে নিন্দা করতেও দেখি, যা আমার খুবই বিশ্রী লাগে)। এখন আমি ইসলামের জন্য কিছু করতে চাই। দলমতের উর্ধে নির্বিশেষে সবার জন্য।
এখন আমার কিছু প্রশ্ন,
১। আমার শ্বাশুরির তালাক কি তখন কার্যকর হয়েছিল? কারণ তিনি মেয়ে মানুষকে সাক্ষী রেখে তালাক দেন। কারণ আমার জানা মতে মেয়ে মানুষ সাক্ষী হতে পারেনা। এবং তার এখনকার বিয়ে কি হালাল হয়েছে?
২। আমার স্ত্রীর প্রথম বিয়ে কি বৈধ হয়েছিল? কেননা সম্পর্কে সৎ ভাই ছিল। এবং মেয়ের বাবার অনুমতি ছিলনা এমনকি বিয়ের পরেও না। এবং বিয়ের সময় মেয়ের মা ছিলেন সাক্ষী এবং অভিভাবক হিসেবে।
৩। আমার বিয়ে কি শুদ্ধ/হালাল হয়েছে? হানাফি মাজাহাব ব্যতীত বেশিরভাগ আলেমের মত অনুযায়ী বিয়ে হচ্ছেনা। তাহলে কি আবার বিয়ে করতে হবে? হলেও কিভাবে? কিংবা হানাফি ফিকহ অনুযায়ী শুদ্ধ হলেও আমি যদি আবার কখনও সালাফি মতবাদ অনুসরণ করি, তখন কি আবার বিবাহ করতে হবে? (উল্লেখ্য আমার স্ত্রী প্রথম থেকেই হানাফি ফিকহ অনুসরণ করেন)
দয়া করে উত্তরগুলো দিবেন, খুব পেরেশানিতে আছি। প্রয়োজনে পুনরায় ওয়ালীকে সামনে রেখে ইজাব কবুল করতে প্রস্তুত।