আশা করি ভাল আছেন। আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত বিষয়ে সূক্ষাতিসূক্ষ বিশ্লেষণপূর্বক পরামর্শ চাচ্ছি।
উস্তাদ,আমি জেনারেল লাইনে পড়ুয়া একজন ছাত্র। দ্বীনের পথে আসার ফিকিরটা নবম শ্রেণির প্রথম দিকে সূচনা হয়। দুনিয়া ও আখিরাতের কথা ভেবে দেখেছিলাম যে, আখিরাতই আসল। তখন সাথে সাথেই মাদ্রাসায় পড়ুয়া ভাইদের পাঞ্জাবীর মত একটা পাঞ্জাবী বানিয়েছিলাম পড়ে নামাজ পড়ার জন্য যে, আমার ও তো আল্লাহর সামনে হাজির হওয়া লাগবে তাদের মত,তাহলে আমার ও সেভাবেই চলা উচিত। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে কয়েক বছর গেল এবং কলেজে পড়ার শেষের দিকে এসে পুরোপুরি সুন্নাতী পোষাক পড়ার সিদ্ধান্ত নেই। আলহামদুলিল্লাহ সেই এখন পর্যন্ত সুন্নাতের উপরই চলার চেষ্টা করি কিন্তু ততটা আমলদার হতে পারিনি। তবে যতটুকু আল্লাহ তায়ালা এই গুনাহগার বান্দাকে রেখেছেন ও দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। দোয়া চাই যেন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ। এখন প্রায়ই আকাঙ্ক্ষা জাগে যে, আমি যদি নিজেকে শুধু দ্বীনী লাইনে খেদমতে রাখতে পারতাম!!!, শুধু আকাক্ষা নয়, আমার ইচ্ছা সারাজীবন শুধু দ্বীনের খেদমত করে যাওয়ার আর কিছু চাই না আখিরাত ছাড়া। কিন্তু হায় মাদ্রাসায় না পড়ে দ্বীনকে পরিপূর্ণ না জেনে, না পারছি নিজে আমলে আগে বাড়তে আর না হচ্ছে এখনকার এই আশা পূরণ। কী আর করা, ছোটবেলায় যদি মা বাবা মাদ্রাসায় দিতেন তাহলে হয়ত আজ এই অবস্থা হত না। আল্লাহর কাছেও আমার মনের গভীরের ফারিয়াদ এটা। কারণ আমি পুরোপুরি সাহাবায়ে কেরামের মত দ্বীন মানতে চাই, যদিও সাহাবায়ে কেরামের মত ঈমানওয়ালা হওয়া যাবে না।
কিন্তু বলার বিষয় এটা যে, আমার দ্বীনের পথে চলার সুন্নাতী লেবাস ও দ্বীনের পথের দূর্বলতা দেখে কিছুদিন আগে আমার বড় ভাই আম্মু কে বলতেছে যে, ও এখন মাওলানা পড়তে চায় কিনা জিজ্ঞেস করেন। ভাই সম্পূর্ণ নিজে থেকে বলেছে হয়ত। কারণ আমি তো কখনও এই আশা পরিবারের কারও কাছে প্রকাশ করিনি, শুধু আম্মু মাঝে মাঝে আমাকে যখন বলে যে, এখন এত দ্বীনের প্রতি আগ্রহ তাহলে স্কুল লাইফে থাকতে মাদ্রাসায় ই চলে যেতে পারতে। তখন আমি বলি আম্মু, তখন কি আর অতটা দ্বীনের ক্বদর বুঝি আর বুঝলেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিক যোগ্যতা তখন থাকে না কিংবা মনে ও আসে নি আমার স্বাভাবিকভাবে। তাই পারিনি।
আমি আমার দ্বীনের পথে মাদ্রাসায় পড়ার এখনকার আশা না বলার আসল কারণ ছিল আমি এখন অনার্স ১ম বর্ষে পড়াশোনা করছি, বয়স ২২ বছর। আমার আরো দুই ভাই আছে যারা আমার বড়, একজন বিবাহিত।
সাথে তিন বোন আছে, যাদের দুইজন এখন অবিবাহিত।আর পরিবারে উপার্জন করে ঐ দুজন ভাই, পরিবারের ভরণপোষণ ও আমার এবং আমার ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ ও তারা বহন করে,কারণ বাবা প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে থেকেই অবসর। মেজো ভাইয়ের ও বিবাহ আসন্ন যেকোনো বছর হয়ে যেতে পারে ইনশা আল্লাহ।তাছাড়া মা বাবা দেখি বার বার আমার উপার্জন দেখে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করে আর বলেও অনেক অনেক অনেক আমাকে ইদানিং। তাছাড়া আমরা আর্থিকভাবে তেমন একটা স্বচ্ছল ও না, তবুও আলহাদুলিল্লাহ যেভাবে আল্লাহ রেখেছেন।
★মুল কথা আমার পারিবারিক অবস্থা এবং দায়িত্ববোধের বোঝা তারাতারি ই হাতে কিছুটা হলেও নেওয়া লাগবে ভবিষ্যতে যতটুকু আমার মনে হচ্ছে। এদিকে আমার জেনারেল পড়াশোনা শেষ করতেও আরো কমপক্ষে ৫ বছর লাগবে।
এমতাবস্তায় আমি মাদ্রাসায় চলে যাওয়ার সাহস বুকে পাচ্ছি না, অথচ মাদ্রাসায় যেতে না পারার প্রবল কষ্ট আমার আল্লাহ ছাড়া পরিবারের কেউ জানেও না। অন্তত আমার পরিবার যদি পুরোপুরি স্বচ্ছল থাকতো তাহলে কোনো কিছু না ভেবেই চলে যেতাম ইনশা আল্লাহ। কারণ আমার মনটা এখন শুধু দ্বীনি ইলম শিক্ষা করে নিজেকে সর্বদা দ্বীনের খেদমতে গুনাহমুক্ত পরিবেশে থাকতে চায়। শুধু আল্লাহর জন্য কাজ করতে চাই, শুধু আখিরাত চাই, দুনিয়ার জরুরত ছাড়া আর কিছু আমি চাই না।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বড় ভাই এর বলা " মাওলানা পড়তে চাও কিনা " এর জবাবে আমি কি বলব নিজেই বুঝতেছি না ,, যাব বলব নাকি যাওয়ার সুযোগ নেই সেটা ও বলতে পারছি না। কারণ আমার মনের কথা, আশা, চিন্তা কিছু তারা জানে না যা কিছু বললাম এখন। তবে সাথে জিজ্ঞেস করেছে " কত সময় লাগবে মাওলানা পড়তে " আমি ধারণা স্বরুপ বলেছিলাম, কমপক্ষে ৬ বছর ( মাদানী নেসাবে)। এক ভাইয়ের থেকে শুনেছিলাম তাই এটা ই বলে দিয়েছি সময়ের ধারণা দেয়ার জন্য।
পরে আমি চুপ ছিলাম আর তারাও বেশি একটা কিছু বলিনি। তারা এটা শুনে নীরব থাকাটা ও আমার কাছে ইস্যু।
আমার বয়স ২২ বছর এবং আমি জেনারেল লাইনে অনার্স ১ম বর্ষে পড়ি। দ্বীনের পথে চলতে গিয়ে এখন আমার নিয়ত নিজেও ইলম ও হিকমাহ আল্লাহর কাছে চাওয়া, আর সাথে ভবিষ্যতে নিজের পুরো পারিবারিক বংশধারাকে শুধুমাত্র দ্বীনের খেদমতের জন্য "নববী জ্ঞানের সোনালী রাজপথে" চালানো,যে পথ চলায় থাকবে শুধু আমার আল্লাহ আর প্রিয় রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাঁটি ভালবাসা।
আর এ জন্য এখন আমি কিভাবে তা করা যায় তা নিয়ে ভাবছি, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। ভাবছি এই অবস্থায় আমি নিজে ই এখন মাদ্রাসায় গিয়ে শুরু করা উচিত নাকি নিজে জেনারেল লাইনে থেকেই চেষ্টা করে যাবো।
★১) মাঝে মাঝে মনে হয় আমার
পরিবার তেমন স্বচ্ছল না। আর এই অবস্থায় আমি যদি মাদ্রাসায় এখন না গিয়ে জেনারেল লাইনে পড়েই পর্যাপ্ত অর্থের যোগান দেই, যাতে আল্লাহ চাহেতু নিজের সন্তানাদি এবং নিজের ভাতিজা-ভাতিজি, ভাগনে-ভাগ্নী, ভাই-বোন এদের কেউ ই কোনাভাবে অর্থাভাবে ভাল মাদ্রাসায় পড়া বন্ধ হয়ে না যায় ইনশা আল্লাহ। কারণ পরিচিত দুর সম্পর্কের কারও কাছে শুনেছি, তিনি অর্থের কারণে ছেলে মেয়েদের সবাইকে মাদ্রাসায় ই পড়াতে পারছে না কারণ জরুরতের খরচ তো লাগবেই। তার ওপর অনেক বড় আলেম আলেমা বানাতে গেলে তো আরো বেশি ই খরচ লাগবে স্বাভাবিক।
তাই আমার মনে এসব উকি দিয়েছে এখন।
★২) আর যদি উসিলা ছাড়া শুধু
আল্লাহর কাছে এই স্বপ্ন রেখে আমি নিজেও এখন মাদ্রাসায় চলে যাই, তাহলে অর্থ যোগানের তেমন কেউ থাকবে না যদিও আমার দুই ভাই বিবিধ কাজ করে। এক্ষেত্রে তাহলে আমি আমার কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌছার সম্ভাবনা বেশি নাকি নিজে জেনারেল লাইনে থেকেই চেষ্টা করে লক্ষ্যে পৌছানোর সম্ভাবনা বেশি, কোনটা ??? নাকি এই দুইদিক চিন্তার কোনোটা ওয়াসওয়াসা হিসেবে আমাকে লক্ষ্যের দিকে যেতে বাধা দিচ্ছে?
★★★এই বিষয়টা ই আগে পরিস্কার হওয়া জরুরি যে, দুই দিকের কোনটি আমি বেছে নিবো এখন???
★ যদি ২য় সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিজেই আগে মাদ্রাসায় চলে যাওয়ার কথা হয়,তাহলে
এখন আমার কী করা উচিত, কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত, আমি কি অন্তত মাদানী নেসাবে পড়ার কথা চিন্তা করে মাদ্রাসায় চলে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি কিনা, গেলেও এই বয়সে আমাকে ভর্তি নিবে কিনা ???
★★★আর এক্ষত্রে মা বাবার অনুমতি না থাকলেও যেতে পারব কিনা,
পরামর্শ করা আমার রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত। কাজেই আমার জীবিনের গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তে উক্ত বিষয়টি যথাযথ বিবেচনাপূর্বক একটা পরামর্শ দিলে ভাল হয়।
NOTE: যদিও এই সবকিছু আমি আগেই টাইপ করে রেখেছিলাম জিজ্ঞেস করার জন্য আপনাকে, কিন্তু ব্যবসায় জড়িত হওয়াটা ঠিক হবে কিনা শুধু সেটার জন্যই কিন্তু এই ইস্তেখারাটা করেছিলাম। বাকিসব বলা হয়েছে।
জাজাকাল্লাহু খইরন।