আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
167 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (50 points)
১)আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তায। এ বিষয়টা কি সত্যি? সত্যিই কি আয়না দেখা ক্ষতিকর?
২)সকালে ফজরের পর, সূর্যাস্ত ও সূর্যদ্বয়ের সময়ের নাকি যাদু করা হয় বেশি।এটা কি সত্যি? এই লেখার বিষয়ে মতামত জানাবেন প্লিজ।
#আয়নাবাজি_ও_জিন_যাদু

আয়না। ঘরে থাকা একটি প্রয়োজনীয় আসবাব। ছোট বেলায় দেখতাম মা-খালারা আয়নার উপর হাতের কাজ করা কাপড় ঝুলিয়ে ঢেকে রাখত। এখনো হয়ত গ্রামে করে। ছোট আয়নাগুলি ড্রয়ার বা বাক্সে ঢুকিয়ে রাখত। প্রয়োজন হলে পরদা সরিয়ে আয়নার কাজ করে আবার ঢেকে রাখা হত।

ছোট বেলায় প্রায়ই ভাবতাম এমন কেন করে? উত্তর খুজে নিতাম নিজে নিজেই যে আয়না ময়লা হবে বা হাতের কাজের কাপড় ঝুলিয়ে রাখলে সৌন্দর্য বা আভিজাত্য বাড়বে ।

কিন্তু জিন যাদু নজরের দুনিয়ায় ঢুকার পর এটা বুঝতে পারছি যে আয়না কতটা ভয়াবহ।

আপনি আয়নায় আপনার চেহারা দেখলেন। দেখলেন আপনার চুল। কেমন যেন ভালো লাগা তৈরি হল। নিজের অজান্তেই নিজের সৌন্দর্যের প্রতি বিমোহিত হয়ে গেলেন। ব্যাস, আপনার নজর আপনার উপর পড়ার সকল আয়োজন সম্পন্ন। বাকি শুধু আল্লাহর আদেশের।

আপনার শরীরের ভিতর জিন আছে ধরে নেন (আল্লাহ মাফ করুন)। সেই জিন যাদুর জন্যও আসতে পারে। এখন সে তাই দেখে যা আপনি আপনার চোখ দিয়ে দেখেন। আপনি আয়নার সামনে গিয়ে দোয়া না পড়ে আয়নায় নিজেকে দেখলেন, জিন ও দেখল। সে তো মানুষের চোখে মানুষকে আগে দেখেনি। ভালো লেগে গেল। প্রেমে পড়ে গেল। আশিক হয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিল।

যাদুর জিন। সে নিজেই যাদুকর। আপনার চোখ দিয়ে আপনার দিকে আয়নার মাধ্যমে তাকিয়ে যাদু করতে পারে।

যাদু করার জন্য আপনার ব্যবহৃত আয়না যাদুকররা ব্যবহার করতে পারে। আয়না চালান বা আয়নার মাধ্যমে যাদু করে হ্যালুসিনেশন এর মাধ্যমে আপনার চোখ দিয়ে পরাবাস্তব বা অলীক কিছু বা এমন কিছু যা আপনার দেখার কথা না তা দেখাতে পারে। অনেক জিনের রুগী বা কবিরাজ আয়নার দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু বলে দেয়। আমার পরিচিত একজনের টাকা চুরি গিয়েছিল। কবিরাজ তার বাসার আলমারির আয়নায় সরিষার তেল সহ কি কি জানি দিয়ে মন্ত্র বা কিছু একটা পড়ে আয়নায় তাদেরকে তাকাতে বলেছিল। তারা তাকিয়ে দেখে যে কে কিভাবে টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। সব দেখে! ছায়াছবির মত। এক্ষেত্রে কবিরাজ আয়নার মধ্যে কি টিভি ফিট করেছিল? না, সে জিন দিয়ে তাদের দেখিয়েছে এবং তাদের শরীরে জিন প্রবেশ করিয়েছে।

অনেকে আয়নার দিকে তাকিয়ে নানা রিচুয়াল প্যাক্টিস করে। যেমন পশ্চিমে আয়নার দিয়ে তাকিয়ে রাতের একটা সময় একটা সংখ্যক বার ব্লাড ম্যারি বলে ডাকলে নাকি আত্না হাজির হয়! আমাদের অনেকেই আবার কষ্ট পেয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে কান্না করে এবং নানা রকম কথা বলে (জিনে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝেই এটা বেশি দেখা যায়)। ফলে তারা জিন দ্বারা পজেস হবার হুমকির মুখে থাকেন। (বাথরুমেও এ ধরনের কাজ করলে পজেস হবার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে)। ক্রিস্টাল বল বা এধরনের সকল কিছুই এই একই সুত্রে পড়ে। পানির ভিতর দেখাও সেম কাহিনী।

আয়না দিয়ে নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে অনেকে মেডিটেশন (!) করে বা সম্মোহিত করে। জানেন কি এটা জিনের কারবার? জিন আক্রান্ত ব্যক্তি যদি এমন করে তবে তার জিন আসক্ত হবে তো হবেই, এমনকি তার মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ক্ষমতা বা পথ বা উপায় বেড়ে যাবে। এটা যে কত ভয়াবহ তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। আপনি বুঝার আগেই আপনি সম্পূর্ণ পাগল হবার পথে অনেকখানি পথ পাড়ি দিয়ে ফেলবেন। এ ধরনের পেশেন্টের আয়না দেখার পরিমাণ এত বেড়ে যায় যে সবার চোখেই তা অস্বাভাবিক লাগবে।

আয়নার দিকে তাকিয়ে কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া, নানা আকৃতি দেখা, আয়নার সামনে বসলে সময় কোন দিক দিয়ে পার হয় তা না বুঝা, অতীত বা ভবিষ্যতের কিছু দেখে ফেলা ইত্যাদি সুস্পষ্ট জিন পজেসের লক্ষন। আয়নার সামনে মোম জ্বালিয়ে রিচুয়াল বেশ কমন। এছাড়া আয়নায় লাল বা কালো কালার দিয়ে মন্ত্র বা কিছু লিখে যাদু করাও কমন। এমনকি জিনেরাও আয়নার উপর আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য কিছু লিখে বা একে যেতে পারে।

যাই হোক, অকারণে আয়না দেখা বা অস্বাভাবিক আয়নার প্রতি আসক্তি এবং সেল্ফিবাজি যদি আপনি করে থাকেন সাবধান হয়ে যান। আয়না ঢেকে রাখবেন। দোয়া পড়ে আয়না দেখবেন। নইলে আয়নাবাজিও অতি মারাত্মক হতে পারে।

আয়না দেখার সুন্নাত ।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আয়না দেখতেন তখন এই দোয়া পড়তেন, (শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৮৩০২)

اَللّٰهُمَّ حَسَّنْتَ خَلْقِيْ فَاَحْسِنْ خُلُقِيْ وَ اَوْسِعْ فِيْ رِزْقِيْ

(আল্লাহুম্মা হাসসানতা খলক্বি ফাহাছ্ছিন খুলুক্বি ওয়া আওছি'ফি- রিঝক্বি)

অর্থ, হে আল্লাহ! আপনি যেমন আমাকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন, তেমন আমার চরিত্রকেও সুন্দর করেদিন এবং আমার রিজিকে প্রশস্ততা দান করুন।
(যদিও এই দোয়া পড়ার সময়কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে)
[৭:২৭] আল আরাফ

يا بَني آدَمَ لا يَفتِنَنَّكُمُ الشَّيطانُ كَما أَخرَجَ أَبَوَيكُم مِنَ الجَنَّةِ يَنزِعُ عَنهُما لِباسَهُما لِيُرِيَهُما سَوآتِهِما إِنَّهُ يَراكُم هُوَ وَقَبيلُهُ مِن حَيثُ لا تَرَونَهُم إِنّا جَعَلنَا الشَّياطينَ أَولِياءَ لِلَّذينَ لا يُؤمِنونَ

হে বনী আদম, শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেভাবে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল; সে তাদের পোশাক টেনে নিচ্ছিল, যাতে সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখ না। নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদের জন্য অভিভাবক বানিয়েছি, যারা ঈমান গ্রহণ করে না।
Ruqyah And Hijamah Centre বাংলাদেশ
Alternative Cure: Ruqyah and Hijamah, Bangladesh

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

স্বভাবতই মানুষ আয়না দেখে। আয়না দেখা ও পরিপাটি থাকা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। প্রতিটি মানুষের উচিত চেহারা দেখে আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করা। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে যেন ভুলে না যাই। এ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম কি? তা শিখিয়েছেন নবী মুহাম্মদ সা.।

আয়না দেখার সময় কী দোয়া পড়তে হয়- এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আয়না দেখার সময় এই দোয়া পড়তেন-

اللهم أنت حسّنت خلقي فحسن خُلقي

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা হাস্সানতা খালক্বি, ফাহাসসিন খুলুক্বি।

অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার চেহারায় সৌন্দর্য দিয়েছেন। অতএব আমার চরিত্রেও সৌন্দর্য দান করুন। (আহমদ, হাদিস : ২৪৩৯২; আবু ইয়ালা, হাদিস : ৫০৭৫)

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলতেন-

اللهُمَّ أَحْسَنْتَ خَلْقِي ، فَأَحْسِنْ خُلُقِي

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহসানতা খালক্বি, ফাআহসিন খুলুক্বি।

অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার চেহারা সুন্দর করেছেন। অতএব আমার চরিত্রও সুন্দর করে দিন। (সহিহুল জামে, হাদিস : ১৩০৭)

আলি ইবনে আবি তালিব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেন তখন বলতেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ ، اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَحَسِّنْ خُلُقِي

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতা খালক্বি ফাহাসসিন খুলুক্বি।

অর্থ : আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা, হে আল্লাহ আপনি আমার অবয়ব সুন্দর করেছেন, অতএব আমার আচরণও সুন্দর করে দিন। (আমলুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হাদিস : ১৬৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন আয়না দেখতেন তখন তিনি বলতেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي حَسَّنَ خَلْقِي وَخُلُقِي ، وَزَانَ مِنِّي مَا شَانَ مِنْ غَيْرِي

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি হাসসানা খালক্বি ওয়া খুলুক্বি; ওয়া যানা মিন্নি মা শানা মিন গাইরি।

অর্থ : আল্লাহর শোকরিয়া, যিনি আমার চেহারা ও আচরণে সৌন্দর্য দিয়েছেন এবং আমাকে অন্য কারো অসৌন্দর্য থেকে রক্ষা করে সুন্দর করেছেন। (আবু ইয়ালা, হাদিস : ২৬১১)

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখতেন, তখন তিনি বলতেন-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي سَوَّى خَلْقِي فَعَدَلَهُ ، وصَوَّرَ صُورَةَ وَجْهِي فَحَسَّنَهَا، وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি সাওয়া খালক্বি ফাআদালাহু, ওয়া সাওয়ারা সুওরাতা ওয়াজহি ফাহাসসানাহা, ওয়া জাআলানি মিনাল মুসলিমিন।

অর্থ : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাকে ন্যায়সঙ্গতার সঙ্গে পূর্ণতা দিয়েছেন। আমার মুখাবয়ব সুন্দরভাবে তৈরি করেছেন এবং আমাকে মুসলিম বানিয়েছেন।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.) হাতে আয়না নিয়ে তাতে তাকিয়ে বলতেন,

 

الحمد لله ، أكمل خلقي ، وحسن صورتي ، وَزَانَ مِنِّي مَا شَانَ مِنْ غَيْرِي

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহ, আকমালা খালক্বি, ওয়া হাস্সানা সুওরাতি, ওয়া যানা মিন্নি মা শানা দত গাইরি।

‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমার অঙ্গ-সৌষ্ঠবের পূর্ণতা দিয়েছেন এব আমার অবয়ব সুন্দর করেছেন। অন্যের অসুন্দরতা থেকে আমাকে রক্ষা করে সৌন্দর্য দিয়েছেন। (জাওয়ায়েদুজ জুহদ : ১১৭৪)

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
প্রশ্নে উল্লেখিত তথ্য সঠিক নয়।

আয়নায় মুখ দেখা বিষয়ক যেসব দোয়া উপরে উল্লেখ করা হয়েছে, আয়নায় চেহারা দেখার সময় সেই দোয়া পাঠ করা সুন্নাত।

তাই আয়নায় চেহারা দেখার সময় দোয়া পাঠ করার পরামর্শ থাকবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...