শরীয়তের বিধান মতে হজ্বের সময় আরাফা ও মুযদালিফা ছাড়া বাকি সময় মুকিম হোক বা মুসাফির হোক কোন অবস্থায়ই এক নামাযকে অন্য নামাযের সময়ে একসাথে করে পড়া জায়েজ নয়।
তবে আকৃতিগতভাবে একত্রিত করা যাবে, আর তা হচ্ছে যোহরকে তার শেষ সময় পর্যন্ত দেরী করে আদায় করা তারপর আসরকে তার প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা। [আদ-দুররুল মুখতার ওয়া হাশিয়া ইবন আবেদীন, ১/৩৮১]
তিরমিজি শরীফের ১৮৮ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ
حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ، يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ الْبَصْرِيُّ حَدَّثَنَا الْمُعْتَمِرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ حَنَشٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ جَمَعَ بَيْنَ الصَّلاَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ عُذْرٍ فَقَدْ أَتَى بَابًا مِنْ أَبْوَابِ الْكَبَائِرِ " .
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন অজুহাত ছাড়াই যে ব্যক্তি দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করে সে কাবীরা গুনাহের স্তরসমূহের মধ্যে একটি স্তরে পৌছে যায়।
,
বুখারী, মুসলিম, সুনান গ্রন্থকারগণ, মালেক এবং আহমাদ সহ অন্যান্যগণ আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ : « الصَّلاَةُ لِوَقْتِهَا » .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি সর্বোত্তম? রাসূল বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা”।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত, ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস,
«أن رسول الله صلى الله عليه وسلم جمع في حجة الوداع المغرب والعشاء بالمزدلفة»
“নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের দিন মাগরিব ও ইশাকে মুযদালিফায় জমা করে আদায় করেছেন।”
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছেঃ
فى الفتاوى الهندية- ولا يجمع بين الصلاتين في وقت واحد لا في السفر ولا في الحضر بعذر ما عدا عرفة والمزدلفة كذا في المحيط(الفتاوى الهندية -كتاب الصلاة، الفصل الثاني في بيان فضيلة الأوقات -1/52)
সারমর্মঃ একই ওয়াক্তে দুই নামাজকে একত্রে পড়া যাবেনা।
সফর অবস্থাতেও নয়,মুকিম অবস্থাতেও নয়।
তবে আরাফা আর মুযদালিফায় একত্রে পড়া যাবে।
,
তবে একটি সূরত করা যায়, সেটি হল-এক নামাযের শেষ সময় আর অন্য নামাযের শুরু সময়ে নামায পড়া। প্রয়োজনের সময় এটি বৈধ পদ্ধতী।
,
যেমন ৩টা বেজে ৩০ মিনিট হল জোহর নামাযের শেষ সময়। আর সাড়ে তিনটা থেকে আসর শুরু হয়ে যায়। তাহলে সাড়ে তিনটার আগ মুহুর্তে জোহর নামায সমাপ্ত করে সাড়ে তিনটার পরপরই আসর নামায পড়ে ফেলা এটা জায়েজ। একে বলা হয় জময়ে’ সূরী।
ইমাম তিরমিজি রহঃ বলেন
وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ أَنْ لاَ يَجْمَعَ بَيْنَ الصَّلاَتَيْنِ إِلاَّ فِي السَّفَرِ أَوْ بِعَرَفَةَ . وَرَخَّصَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنَ التَّابِعِينَ فِي الْجَمْعِ بَيْنَ الصَّلاَتَيْنِ لِلْمَرِيضِ وَبِهِ يَقُولُ أَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ . وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ يَجْمَعُ بَيْنَ الصَّلاَتَيْنِ فِي الْمَطَرِ وَبِهِ يَقُولُ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ . وَلَمْ يَرَ الشَّافِعِيُّ لِلْمَرِيضِ أَنْ يَجْمَعَ بَيْنَ الصَّلاَتَيْنِ .
বিশেষজ্ঞদের মতে সফর ও আরাফাতের ময়দান ছাড়া দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করা যাবে না। কিছু তাবিঈ রুগ্ন ব্যক্তিকে দুই ওয়াক্তের নামায একত্র করার অনুমতি দিয়েছেন। আহমাদ ও ইসহাক এ মত গ্রহণ করেছেন। কিছু বিশেষজ্ঞ বৃষ্টির কারণে দুই নামায একত্রে আদায় করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন। শাফিঈ, আহমাদ এবং ইসহাকও অনুরূপ কথা বলেছেন। কিন্তু শাফিঈ রুগ্ন ব্যক্তিকে দুই নামায একত্রে আদায়ের অনুমতি দেননি।
তবে অনেক ইসলামী স্কলারগন যেমন মালেকী, শাফেয়ী, হাম্বলীগণ এ মত পোষণ করেছেন যে, সফরের কারণে যোহর এবং আসর অনুরূপভাবে মাগরিব ও ইশার সালাতকে একত্রে আদায় করা জায়েয। [আশ-শারহুল কাবীর, ১/৩৬৮; মুগনিল মুহতাজ, ১/৫২৯, কাশশাফুল কিনা‘, ২/৫]