স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের গোপন কথা সংরক্ষিত রাখা,পারিবারিক গোপন কথা সংরক্ষিত রাখা ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « إنَّ مِنْ أشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ القِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِي إِلَى الْمَرْأةِ وتُفْضِي إِلَيْهِ، ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا »
আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ সেই ব্যক্তি হবে, যে স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে এবং স্ত্রী তার সঙ্গে মিলন করে। অতঃপর সে তার (স্ত্রীর) গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়।’’
(মুসলিম ১৪৩৭, আবূ দাউদ ৪৮৭০, আহমাদ ১১২৫৮)
عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كُنَّ أَزْوَاجُ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم عِنْدَهُ، فَأقْبَلَتْ فَاطِمَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا تَمْشِي، مَا تُخْطِئُ مِشيتُهَا مِنْ مشْيَةِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم شَيْئاً، فَلَمَّا رَآهَا رَحَّبَ بِهَا، وَقَالَ: «مَرْحَباً بابْنَتِي »، ثُمَّ أجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ، ثُمَّ سَارَّهَا فَبَكتْ بُكَاءً شَدِيداً، فَلَمَّا رَأَى جَزَعَهَا، سَارَّهَا الثَّانِيَةَ فَضَحِكَتْ، فَقُلتُ لَهَا: خَصَّكِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم مِنْ بَيْنِ نِسَائِهِ بِالسِّرَارِ، ثُمَّ أنْتِ تَبْكِينَ ! فَلَمَّا قَامَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم سَألْتُهَا: مَا قَالَ لَكِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَتْ: مَا كُنْتُ لأُفْشِي عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم سِرَّهُ، فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قُلْتُ: عَزَمْتُ عَلَيْكِ بِمَا لِي عَلَيْكِ مِنَ الحَقِّ، لَمَا حَدَّثْتِنِي مَا قَالَ لَكِ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم ؟ فَقَالَتْ: أمَّا الآنَ فَنَعَمْ، أمَّا حِيْنَ سَارَّنِي في المَرَّةِ الأُولَى فَأَخْبَرَنِي أَنَّ جِبْريلَ كَانَ يُعَارِضُهُ القُرآنَ فِي كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ، وَأنَّهُ عَارَضَهُ الآنَ مَرَّتَيْنِ، وَإنِّي لا أُرَى الأجَلَ إِلاَّ قَدِ اقْتَرَبَ، فَاتَّقِي اللهَ وَاصْبِرِي، فَإِنَّهُ نِعْمَ السَّلَفُ أنَا لَكِ، فَبَكَيْتُ بُكَائِي الَّذِي رَأيْتِ، فَلَمَّا رَأى جَزَعِي سَارَّنِي الثَّانِيَةَ، فَقَالَ: « يَا فَاطِمَةُ، أمَا تَرْضَيْنَ أنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ المُؤُمِنِينَ، أَوْ سَيَّدَةَ نِساءِ هذِهِ الأُمَّةِ ؟ » فَضَحِكتُ ضَحِكِي الَّذِي رَأيْتِ .
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীরা সকলেই তাঁর কাছে ছিল। ইত্যবসরে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হেঁটে (আমাদের নিকট) এল। তার চলন এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চলনের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে স্বাগত জানালেন এবং বললেন, ‘আমার কন্যার শুভাগমন হোক।’ অতঃপর তিনি তাকে নিজের ডান অথবা বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তাকে কানে কানে গোপনে কিছু বললেন। ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা জোরেশোরে কাঁদতে আরম্ভ করলেন। সুতরাং তিনি তার অস্থিরতা দেখে পুনর্বার তাকে কানে কানে কিছু বললেন। ফলে (এবার) সে হাসতে লাগল। (আয়েশা বলেন,) অতঃপর আমি ফাতেমাকে বললাম, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের মাঝে (তাদেরকে বাদ দিয়ে) তোমাকে গোপনে কিছু বলার জন্য বেছে নেওয়া সত্ত্বেও তুমি কাঁদছ?’ তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উঠে গেলেন, তখন আমি তাকে বললাম, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বললেন?’ সে বলল, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন কথা প্রকাশ করব না।’
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করলে আমি ফাতেমাকে বললাম, ‘তোমার প্রতি আমার অধিকার রয়েছে। তাই আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি যে, তুমি আমাকে বল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছিলেন?’ সে বলল, ‘এখন বলতে কোন অসুবিধা নেই।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমবারে কানাকানি করার সময় আমাকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, ‘‘জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম প্রত্যেক বছর একবার (অথবা দু’বার) করে কুরআন শোনান। কিন্তু এখন তিনি দু’বার শুনালেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারছি যে, আমার মৃত্যু সন্নিকটে। সুতরাং তুমি (হে ফাতেমা!) আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। কেননা, আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগামী।’’ সুতরাং আমি (এ কথা শুনে) কেঁদে ফেললাম, যা তুমি দেখলে। অতঃপর তিনি আমার অস্থিরতা দেখে দ্বিতীয়বার কানে কানে বললেন, ‘‘হে ফাতেমা! তুমি কি এটা পছন্দ কর না যে, মু’মিন নারীদের তুমি সর্দার হবে অথবা এই উম্মতের নারীদের সর্দার হবে?’’ সুতরাং (এমন সুসংবাদ শুনে) আমি হাসলাম, যা তুমি দেখলে।’
(সহীহুল বুখারী ৩৬২৪, ৩৬২৬, ৩৭১৬, ৪৪৩৪,৬২৮৫, মুসলিম ২৪৫০, তিরমিযী ৩৮৭২, ইবনু মাজাহ ১৬২১, আহমাদ ২৩৯৬২, ২৫৫০১, ২৫৮৭৫)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أَعْظَمَ الْأَمَانَةِ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَفِي رِوَايَةٍ: إِنَّ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلُ يُفْضِي إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِي إِلَيْهِ ثمَّ ينشر سرها
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার নিকট সর্বাধিক আমানত হলো ঐ বিষয়। অন্য বর্ণনায় কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা‘আলার নিকটে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ঐ ব্যক্তি- যে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে, অতঃপর পরস্পরের মধ্যস্থ গোপনীয়তা (মানুষের মাঝে) প্রকাশ করে দেয়।
(মুসলিম ১৪৩৭, আবূ দাঊদ ৪৮৭০, আহমাদ ১১৬৫৫.মিশকাত ৩১৯০)
ব্যাখ্যা: দাম্পত্য জীবনের একান্তবাস আল্লাহ সুবাহানাহূ ওয়াতা‘আলার দেয়া এক বিশেষ উপহার এবং আমানত। এতে রয়েছে জীবনের প্রশান্তি এবং স্থিতি। এটা অতীব গোপনীয় বিষয় যা রক্ষা করা প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য। মানুষ তার জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য তার স্ত্রীর নিকট উদ্গত হয় এটা আল্লাহ তা‘আলার অভিপ্রেত চিরাচরিত বিধান। এর কথা এবং কর্ম সম্পূর্ণভাবে গোপন রাখতে হবে, কোনো কিছুই কারো কাছে প্রকাশ করা যাবে না। স্ত্রীর সৌন্দর্য কিংবা ত্রুটি সবকিছুই গোপন রাখতে হবে। কেউ যদি স্ত্রীর নিকট উদ্গত হয়ে তার সৌন্দর্যের কথা অথবা ত্রুটির কথা অপরের নিকট প্রকাশ করে দেয় তাহলে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট মহা খিয়ানাতকারী হিসেবে এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হিসেবে উঠবে। স্ত্রীও স্বামীর গোপন কোনো বিষয় প্রকাশ করবে না।
বিজ্ঞজনেরা একটা দৃষ্টান্ত দিয়েছেন : এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে তখন তাকে কেউ জিজ্ঞেস করল, তুমি তোমার স্ত্রীকে কেন তালাক দিবে? সে উত্তর করল, সে আমার স্ত্রী কিভাবে আমি তার দোষ তুলে ধরতে পারি? অতঃপর সে যখন তাকে ‘‘তার কোনো এক গোপন ত্রুটি বা দোষের কারণে’’ তালাক দিয়েই ফেলল তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কি দোষে তুমি তাকে তালাক দিলে? উত্তরে সে বলল, কিভাবে আমি একজন বেগানা নারীর দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করতে পারি?
কেউ কেউ বলেছেন, দাম্পত্য সম্পর্ক পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হলে তা প্রকাশ করা দোষণীয় নয়। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৭; মিরকাতুল মাফাতীহ)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
হ্যাঁ, গাইরতের বিষয়ে এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
এটা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শিক্ষা নয়।
বরং মেহমান দারী করাই রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শিক্ষা।
হাদীস শরীফে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টির প্রতি তাকিদ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ.
আল্লাহ ও পরকালের প্রতি যে ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সমাদর করে।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৬)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا خَيْرَ فِيمَنْ لَا يُضِيفُ
যে মেহমানদারি করে না তার মাঝে কোনো কল্যাণ নেই।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৭৪১৯)
আরেক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-কে লক্ষ করে বলেন, ...নিশ্চয়ই তোমার উপর তোমার মেহমানের হক রয়েছে।
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৩৪)
(০২)
এগুলো বলা গায়রত বিরোধী নয়।
তবে স্বামী-স্ত্রী ও পরিবারের গোপন কথা সংরক্ষিত রাখা আবশ্যক।
তবে স্থান,কাল,পাত্র,ও ব্যাক্তি বিশেষ একেক জনের গায়রত একেক রকম হতে পারে,তাই এই বিষয় গুলিলে কেউ গায়রতের অন্তর্ভুক্ত মনে করতে পারেন। তাতে কোনো সমস্যা নেই।
এটি তার বিষয়।