আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
76 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (19 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ
শায়খ,ইসলামে তো বলা আছে যেনো বিধর্মী কোনো পুরুষের সাথে মুসলিম নারী বিবাহে আবদ্ধ না হয়।
আবার আইন অনুযায়ী হয়তো জায়েজ হতে পারে।
১/ যদি একজন মুসলিম নারী কোনো হিন্দু পুরুষকে বিবাহ করে তাহলে কি বিয়ে জায়েজ হবে?

২/এই রকম বিবাহের কারনে কি আখিরাতে মুসলিম নারীর জিনাহর শাস্তি হবে?
৩/আইন অনুযায়ী যদি এই রুপ বিবাহের অনুমতি থাকে তাহলে কি মৃত্যুর পর এজন্য কোনো হিসাব দিতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

বিবাহ হল ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আল্লাহ তাআলা অশ্লীলতা ও ব্যভিচার রোধ করার লক্ষ্যে যেমন বিভিন্ন বিধি-বিধান দিয়েছেন তেমনি মানুষকে উৎসাহিত করেছেন বিবাহের প্রতি। সে যেন তার স্বভাবগত চাহিদা বৈধ পন্থায় পূরণ করে। তাই বিবাহ-শাদি হল নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক ও বৈধ জীবন যাপনের খোদায়ী বন্ধন। মানবজাতির অস্তিত্বরক্ষা ও বংশ বিস্তারের শুদ্ধ-সুন্দর মাধ্যমরূপে নর-নারীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন হতে বিবাহের এই বিধান দান করেছেন। 

আল্লাহ রাববুল আলামীনের দেওয়া বিধান অনুসারেই এই বন্ধন স্থাপিত হবে। কুরআন-সুন্নাহর হুকুম-আহকাম ও নিয়ম-কানুন অনুসারে এবং শরীয়তসম্মত উপায়ে এ বন্ধন ও সম্পর্ক বৈধতা লাভ করবে। কুরআন-সুন্নাহর হুকুম-আহকাম তথা ইসলামের বিধি-বিধানই এ সম্পর্কের মূল ভিত্তি ও প্রধান উপাদান। আল্লাহর বিধান মানুষের বিবেক-বুদ্ধির অনুগামী হয় না। মানুষের যুক্তি-বুদ্ধিতে বোধগম্য হোক বা না হোক আল্লাহর বিধান অনুসরণের মধ্যেই প্রতিটি মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যে মহান সৃষ্টিকর্তা নারী-পুরুষ উভয় সত্ত্বার মালিক, তিনিই তাদের পারস্পরিক বৈধতার জন্য বিধান দিয়েছেন। সুতরাং সে বিধান অনুসরণ করলেই পরস্পরের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ দুজন নর-নারীর মধ্যে সম্পর্ক বৈধতা লাভ করবে। 

তাদের পারস্পরিক জীবন যাপন হালাল বলে গণ্য হবে। অন্যথায় নয়। মোটকথা, আল্লাহর বিধানেই নারী-পুরুষ একে অপরের জন্য বৈধ হয় এবং আল্লাহর বিধানেই হারাম হয়।

আন্তঃধর্মীয় বিবাহ সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহবিরোধী। কারণ আল্লাহ তাআলা শিরক ও কুফরি করে এমন নারী-পুরুষের সাথে মুসলমান নারী-পুরুষের বিবাহ হারাম করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

وَلَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّى يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُؤْمِنٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُولَئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ وَيُبَيِّنُ آَيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

(তরজমা) তেমারা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। নিঃসন্দেহে একজন মুমিন দাসী যে কোনো মুশরিক নারীর চেয়ে অনেক উত্তম। যদিও এই মুশরিক নারীকে তোমাদের বেশি ভালো লাগে। আর তোমরা (তোমাদের নারীদের) মুশরিক পুরুষদের কাছে বিয়ে দিয়ো না। যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। নিঃসন্দেহে একজন মুমিন দাস যে কোনো মুশরিক পুরুষের চেয়ে অনেক উত্তম। যদিও সেই মুশরিক পুরুষকে তোমাদের বেশি ভালো লাগে। কারণ তারা (মুশরিকরা) সকলে তো জাহান্নামের দিকে ডাকে আর আল্লাহ তার বিধানের মাধ্যমে জান্নাত ও মাগফিরাতের দিকে আহবান করেন। তিনি তার আয়াতসমূহ মানুষের উপকারার্থে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তা অনুসরণ করতে পারে।-সূরা বাকারা (২) : ২২১

অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا جَاءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوهُنَّ اللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَانِهِنَّ فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ.. وَلَا تُمْسِكُوا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ

 (তরজমা) হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদের নিকট ঈমানদার নারীগণ হিজরত করে আসে তখন তোমরা তাদের পরীক্ষা কর। আল্লাহ অধিক জ্ঞাত তাদের ঈমানের ব্যাপারে। এরপর তোমরা যদি জানতে পার, তারা (হিজরত করে আসা নারীগণ) মুমিন তাহলে তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফিরিয়ে দিও না। তারা (মুমিন নারীগণ) কাফেরদের জন্য বৈধ নয় এবং কাফেরগণও তাদের (মুমিন নারীদের) জন্য বৈধ নয় ... । আর তোমরা কাফের নারীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রেখো না।-সূরা মুমতাহিনা (৬০)  : ১০

উক্ত আয়াতদ্বয় দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, কোনো মুসলিম নারী কোনো অমুসলিম পুরুষের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। অনুরূপভাবে কোনো মুসলিম ব্যক্তি কোনো কাফের, মুশরিক নারীকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে পারে না। অর্থাৎ মুসলিম-অমুসলিমের কোনো বিবাহ বৈধ হতে পারে না।
শুধু বিবাহ-শাদি নয়, কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব, প্রেম-ও ভালবাসায় জড়িয়ে পড়া এবং যে কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপনকেও আল্লাহ তাআলা কঠোরভাবে নিন্দা করেছেন এবং তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। 

ইরশাদ করেছেন-

لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آَبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ   أُولَئِكَ  كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ

 (তরজমা) যে জাতি আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে তাদের আপনি কখনো দেখবেন না ওই সব লোকদের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে মোকাবেলারত। হোক তারা তাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বেরাদর কিংবা আত্মীয়-স্বজন, ওদের অন্তরে আল্লাহ ঈমানকে বদ্ধমূল করেছেন এবং তাদেরকে তার রূহ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন।-সূরা মুজাদালা (৫৮) : ২২

তাই প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর কর্তব্য, বিবাহ-শাদি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক সৃষ্টিসহ সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম মান্য করা, তার বিধানের অনুসরণ করা। এটাই মুসলমানিত্বের প্রকৃত অর্থ, যথার্থ দাবি।

বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা নারীর বিষয়ে আল্লাহকে ভয় কর। কারণ তাদেরকে তোমরা গ্রহণ করেছ আল্লাহর নিরাপত্তায়। আর তাদের লজ্জাস্থানকে হালাল করেছ আল্লাহর বিধান দ্বারা।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১৮

মনে রাখা উচিত, শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বিয়ে কোনো বিয়েই নয়। এজন্য বিষয়টি এমন নয় যে, সে শুধু একবারই হারাম কাজ করল; বরং এটা তার গোটা জীবনের অপরাধ। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের এই সম্পর্ক থাকবে ততক্ষণ হারাম সম্পর্কের গুনাহ হতে থাকবে। আর তাদের সন্তানের হুকুমের বিষয়টি তো সহজেই অনুমেয়। বিয়ের শুধু একটি বিষয়ে আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করা হলে সামাজিকতা, দাম্পত্য সম্পর্ক, নসব ও মীরাস ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়ে অজান্তেই আল্লাহ তাআলার অকাট্য ও স্পষ্ট বিধানের বিরোধিতা করা হয় তা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। 

আহলে কিতাবদের বিবাহ করার বিধান জানুনঃ-  https://ifatwa.info/17961/

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
যদি একজন মুসলিম নারী কোনো হিন্দু পুরুষকে বিবাহ করে তাহলে বিয়ে জায়েজ হবেনা। হ্যাঁ যদি সেই হিন্দু পুরুষ বিবাহের আগে সন্তুষ্টি চিত্তে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে, তওবা করে ফিরে আসে,সেক্ষেত্রে তার সাথে বিবাহ মুসলিমের জন্য বৈধ হবে। 

(০২)
হ্যাঁ, যেনার শাস্তি হবে।

(০৩)
তবুও এটি আল্লাহর বিধান অনুপাতে স্পষ্ট যেনা।
সুতরাং আখেরাতে এর জন্য কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...