মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَ کَذٰلِکَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ قُرۡاٰنًا عَرَبِیًّا لِّتُنۡذِرَ اُمَّ الۡقُرٰی وَ مَنۡ حَوۡلَہَا وَ تُنۡذِرَ یَوۡمَ الۡجَمۡعِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ ؕ فَرِیۡقٌ فِی الۡجَنَّۃِ وَ فَرِیۡقٌ فِی السَّعِیۡرِ ﴿۷﴾
আর এভাবে আমরা আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি আরবী ভাষায়, যাতে আপনি মক্কা ও তার চারদিকের জনগণকে সতর্ক করতে পারেন এবং সতর্ক করতে পারেন কিয়ামতের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল থাকবে জান্নাতে আরেক দল জলন্ত আগুনে।
(সুরা আশ শূরা ০৭)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উক্ত আয়াতের ব্যখ্যাঃ- যেহেতু মক্কা শহর দুনিয়ার সকল জনপদ ও শহরের মূল ও ভিত্তি,মক্কা মুকাররমা পুরো দুনিয়া Middle এ অবস্থান করছে,আর এর এর আশেপাশ দিয়েই যেহেতু পুরো দুনিয়া ঘিরে রয়েছে,
তাই আয়াতে উক্ত বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে।
কুরআন শুধু মাত্র আরবদের জন্যই,বা রাসুলুল্লাহ সাঃ শুধু আরবদের জন্যই এসেছেন,এটা বুঝানো কোনোক্রমেই উদ্দেশ্য নয়।
রাসুলুল্লাহ সাঃ সমস্ত জিন-ইনসানের নিকট প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا﴾
‘‘হে মুহাম্মাদ! বলো, হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল হিসাবে এসেছি’’। (সূরা আরাফ: ১৫৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾
‘‘আর আমি তো তোমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে পাঠিয়েছি। কিন্তু বেশীর ভাগ লোক জানেনা’’। (সূরা সাবা: ২৮) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَىٰ عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا﴾
‘‘বড়ই বরকত সম্পন্ন তিনি, যিনি তারঁ বান্দার উপর নাযিল করেছেন এ ফুরকান। যাতে সে সমগ্র সৃষ্টির জন্য সতর্ককারী হন’’। (সূরা ফুরকান: ১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ﴾ ‘‘হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে সৃষ্টিজগতের জন্য আমার রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি’’। (সূরা আন্বীয়া: ১০৭) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنصِتُوا فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَىٰ قَوْمِهِم مُّنذِرِينَ﴾
‘‘আর যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে নিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাতে তারা কুরআন শোনে। যখন তারা সেখানে পৌঁছলো তখন পরস্পরকে বললো, চুপ করো। যখন তা পাঠ করা শেষ হলো তখন তারা সতর্ককারী হয়ে নিজ নিজ কওমের কাছে ফিরে গেল’’। (সূরা আহকাফ: ২৯)
সুতরাং কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র মানব ও জিন জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছেন।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত জিন-ইনসান সকলের জন্যই। জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই তার দাওয়াত। সুতরাং কেউ যেন এটি মনে না করে যে, ইসলামের কোনো হুকুম শুধু আরবদের জন্যই খাস। বরং কুরআনে মুসলিম, কাফের, মুমিন, মুনাফেক, নেককার, বদকার, সৎকর্মশীল, যালেম এবং কুরআন-হাদীছে উল্লেখিত অন্যান্য বিভিন্ন নামের প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা হুকুম উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন ও হাদীছে শরী‘আতের কোনো হুকুমই আরবদের জন্য খাস করে নাযিল হয়নি।
আরবদের জন্য খাস করে শরী‘আতের কোনো হুকুমই প্রদান করা হয়নি। কেননা তার দাওয়াত ছিল সমস্ত সৃষ্টির জন্য। তবে আরবদের ভাষায় এবং কুরাইশদের ভাষায় কুরআন নাযিল হয়েছে। যাতে করে তিনি আরবদের জন্য এর তাবলীগ করতে পারেন। তাই তিনি প্রথমে আরবদের মাঝে তাবলীগ করেছেন। অতঃপর আরবদের মাধ্যমে সমস্ত জাতির কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তার নবীকে সর্বপ্রথম তাবলীগ করার আদেশ দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে পার্শ্ববর্তী লোকদের নিকট তাবলীগ করার আদেশ করেছেন। ইসলামের জন্য জিহাদ করার ক্ষেত্রেও তিনি প্রথমে পার্শ্ববর্তী কাফেরদেরকে অতঃপর অন্যান্য কাফেরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার আদেশ করেছেন।