জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
تَزْكِيَة [زكو]
[তায্কিয়াহ] এর অর্থঃ পবিত্রকরণ পবিত্রতা,প্রশংসাসূচক সনদ প্রদান,প্রশংসাপত্র,আত্মশুদ্ধি, নফসকে পবিত্র করন।
এটি ভালো একটি নাম।
তাযকিয়া নামটার কোন নেতিবাচক অর্থ নেই। ইসলামিক নাম হিসেবে এই নামটা অনেক ভাল হবে।
শরীয়তের বিধায় অনুযায়ী এ নাম রাখতে কোনো সমস্যা নেই।
কারো নাম অসুন্দর হলে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখতেন। হাদীস শরীফে এ ধরনের অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে। উদাহরণ স্বরূপ নিন্মে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হল-
মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আতা বলেন, আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম- বাররা (নেককার, ভালো মানুষ)। তখন যয়নব বিনতে আবি সালামা বললেন-
سُمِّيتُ بَرّةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لَا تُزَكّوا أَنْفُسَكُمْ، اللهُ أَعْلَمُ بِأَهْلِ الْبِرِّ مِنْكُمْ فَقَالُوا: بِمَ نُسَمِّيهَا؟ قَالَ: سَمّوهَا زَيْنَبَ.
আমার নাম ছিল, বাররা। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের পবিত্রতা ঘোষণা কোরো না। (কারণ, বাররা অর্থ, ভালো, নেককার, পূত-পবিত্র) আল্লাহই জানেন তোমাদের মধ্যে ভালো ও পূত-পবিত্র কারা। জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে আমরা তার কী নাম রাখতে পারি? তখন নবীজী বললেন, তার নাম যয়নাব রাখ। (নবীজীর আদেশে তখন বাররা নাম পরিবর্তন করে তার নাম যয়নাব রাখা হল।) -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৪২
যয়নাব হচ্ছে উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে সালামা রা.-এর মেয়ে। আবু সালামার ইন্তেকালের পর উম্মে সালামা রা. নবীজীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এজন্য উম্মে সালামা রা.-এর সন্তানগণ নবীজীর কাছে থেকে তারবিয়াত লাভের সৌভাগ্যে ধন্য হন। যয়নাব রা. ছিলেন অনেক বুদ্ধিমান এবং নেককার নারী। হাদীসের কিতাবে তার থেকে অনেক রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে। যয়নাবের পাশাপাশি তার ভাই ওমর ইবনে আবী সালামাও নবীজীর তারবিয়াত লাভে ধন্য হন।
,
যয়নাব বিনতে আবী সালামার মত উম্মুল মুমিনীন হযরত জুওয়াইরিয়া রা.-এর নামও ছিল বাররা। এ নাম পরিবর্তন করে নবীজী তার নাম রাখেন জুওয়াইরিয়া।
عَنِ ابْنِ عَبّاسٍ، قَالَ: " كَانَتْ جُوَيْرِيَةُ اسْمُهَا بَرّةُ فَحَوّلَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اسْمَهَا جُوَيْرِيَةَ، وَكَانَ يَكْرَهُ أَنْ يُقَالَ: خَرَجَ مِنْ عِنْدِ بَرّةَ.
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, জুওয়াইরিয়া রা.-এর নাম ছিল বাররা। নবীজী তার নাম পরিবর্তন করে জুওয়াইরিয়া রাখেন (জুওয়াইরিয়া অর্থ ছোট্ট বালিকা)। কেউ যদি বলত- “বাররা এর কাছ থেকে বের হয়েছে” তাহলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা অপছন্দ করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৪০
মানসিকতা ও স্বভাবের উপরও নামের একটা প্রভাব থাকে।
أَخْبَرَنِي عَبْدُ الحَمِيدِ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ، قَالَ: جَلَسْتُ إِلَى سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ، فَحَدّثَنِي: أَنّ جَدّهُ حَزْنًا قَدِمَ عَلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَالَ: مَا اسْمُكَ؟ قَالَ: اسْمِي حَزْنٌ، قَالَ: بَلْ أَنْتَ سَهْلٌ. قَالَ: مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ اسْمًا سَمّانِيهِ أَبِي قَالَ ابْنُ المُسَيِّبِ: فَمَا زَالَتْ فِينَا الحُزُونَةُ بَعْدُ.
আবদুল হুমাইদ বিন শায়বা বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, আমার দাদা ‘হাযান’ একবার নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? দাদা বললেন, আমার নাম হাযান। (হাযান অর্থ শক্তভূমি) নবীজী বললেন- না, তুমি হচ্ছ ‘সাহল’ (অর্থাৎ তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ, নরম জমিন।) দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না। সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, এর ফল এই হল যে, এরপর থেকে আমাদের বংশের লোকদের মেযাজে রুঢ়তা ও কর্কশভাব রয়ে গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৯৩
,
সুন্দর নাম রাখার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হল, হাশরের ময়দানে- সেখানে পূর্বাপর সকল মানুষ একত্রিত হবে এবং ব্যক্তিকে তার নাম ও তার বাবার নামসহ ডাকা হবে।
হযরত আবুদ দারদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ، وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ.
কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের ও তোমাদের বাবার নাম নিয়ে (অর্থাৎ এভাবে ডাকা হবে- অমুকের ছেলে অমুক)। তাই তোমরা নিজেদের জন্য সুন্দর নাম রাখ। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৪৮।