জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
সাইয়েদ কুতুব (১৯০৬ - ২৫ আগস্ট ১৯৬৬) হলেন একজন মিশরীয় ইসলামী চিন্তাবিদ এবং বিপ্লবী রাজনৈতিক সংগঠক। তিনি মিশরের ইসলামী আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমিন দলের মুখপত্র ইখওয়ানুল মুসলিমিন'এর সম্পাদক ছিলেন। তাকে তৎকালীন সরকার ফাঁসির আদেশ দেয় এবং এভাবেই তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
,
১৯৬৬ সালের ২৯ আগস্ট মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃস্থানীয় সদস্য সাইয়েদ কুতুবকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।
মিশরের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের হত্যার পরিকল্পনা করার জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
কুতুবকে আধ্যাত্মিক নেতা ও বিপ্লবী ইসলামি চিন্তাবিদদের প্রথম তাত্ত্বিক হিসেবে বিবেচনা করা হত, যারা অস্ত্রের অধিকার আদায়ের জন্য এবং বিদ্যমান বাস্তবতা পরিবর্তন করার জন্য একটি সমাধান হিসেবে সহিংসতা অবলম্বন করার আহ্বান জানায় তারা তাকে শত্রু মনে করতো।
তিনি শরিয়াহ শাসন এবং অন্যান্য বিষয়কে সহজি করণের চিন্তা করে সামাজিক অনেক কাজ করেন। যার কারণে তিনি আজো অমর হয়ে আছেন মানুষের হৃদয়ে।
,
সাঈদ কুতুব সমসাময়িক শিয়া ইসলামি রাজনৈতিক চিন্তাধারায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছেন। তার প্রচারে সহিংসতা ও চরমপন্থার কোনো অবস্থান ছিলো না। বরং তার চিন্তা চেতনার দ্বারা চিহ্নিত বিভিন্ন শিয়া ইসলামি আন্দোলনের ধারণা ও নীতিসমূহের ধারণার সঙ্গে মিল থাকায় শিয়া সম্পর্কের এক নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকা পালন করেছিল।
তার বই ও প্রবন্ধগুলো শিয়া মতাবলম্বিদের একটি অনুপ্রেরণার বিষয়ে পরিণত হয়। এদিকে খোমেনিকে শিয়ারা যে ইমাম মনে করে সেটা সাইয়েদ কুতুবের চিন্তা চেতনার অনেক দিকে মিল পেয়েছে শিয়া মতাবলম্বিরা। যার কারণে তারাও তাকে গুরুত্বের আসনে সমাসিন করেছিলেন।
তার বই ‘ইসলামে সামাজিক ন্যায়বিচার’ শিরোনামে, তিনি উসমান বিন আফফান ও আবু সুফিয়ান বিন হারব, আমর ইবনুল আসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহাবির সমালোচনা করেছেন। যেটা শিয়াদের মতের পক্ষে যায়।
একই বইয়ে কুতুব শিয়া আন্দোলনের প্রশংসা করেন, যা শিয়া আন্দোলনগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল। চতুর্থ শতাব্দীর (হিজড়ার পর) আব্বাসীয় খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। কুতুব এ আন্দোলনকে ইসলামের আত্ম প্রকাশ বলে উল্লেখ করে বলেন, এ লড়াই ছিলো শোষণ ও ক্ষমতা গ্রহণের লড়াই।
,
★যেহেতু তিনি ছাহাবায়ে কেরামদের বিরুদ্ধে কথা লিখেছেন,তাই উলামায়ে কেরামগন তাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বহির্ভূত মনে করেন।
,
(০২)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবি উমায়রা (রা.) বলেন, 'রাসুল (সা.) মুয়াবিয়ার জন্য এ দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! মুয়াবিয়াকে সঠিক পথে পরিচালনা করুন ও তাঁকে পথপ্রদর্শক হিসেবে কবুল করুন'- (তিরমিজি, হা. ৩৮৪২) ।
একবার মুয়াবিয়া (রা.) রাসুল (সা.)-এর অজুতে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন, তখন রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, 'হে মুয়াবিয়া, যদি তোমাকে আমির নিযুক্ত করা হয়, তাহলে আল্লাহকে ভয় করবে এবং ইনসাফ করবে।' মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, 'সেদিন থেকেই আমার বিশ্বাস জন্মেছিল যে, এ কঠিন দায়িত্ব আমার ওপর এসে পড়বে'- (মুসনাদে আহমাদ হা. ১৬৯৩৩)।
,
,
★আলী রাঃ এর সাথে মুয়াবিয়া রাঃ এর যুদ্ধের ক্ষেত্রে উভয়েই হক ছিলেন।
এখানে দুইজনই ইজতিহাদ করেছেন।
তাই তাদের কাহারো ভুল ধরা যাবেনা।
,
এখানে মূল বিষয় ছিলো উসমান রাঃ এর ততৎক্ষনাৎ কিসাস নিয়ে।
মুয়াবিয়া রাঃ সেটার দাবী করেছিলেন,আর আলী রাঃ পরবর্তীতে বিচার করতে চেয়েছিলেন।
,
আসলে হযরত উসমান রাঃ এর হত্যাকারীদের কিসাসের দাবিকারী হযরত উসমান রাঃ এর ছেলেরাও করেছে। বিশেষ করে ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে উসমান রাঃ এর ছেলে আবান বিন উসমান রাঃ এর নাম বড় উলামাগণ এবং লেখকগণ পরিস্কার ভাষায় উল্লেখ করেছেন।
শুধু আহলে সুন্নাতের অনুসারী ইতিহাসবিদগণ নয় বরং শিয়া ঐতিহাসিকগণও একথা উল্লেখ করেছেন। যেমন-
সালীম বিন কায়েস হাল্লালী শিয়া বলেন-
ان معاوية يطلب بدم عثمان ومعه ابان بن عثمان وولد عثمان (كتاب سليم بن قيس الكفى الهلالى الشيعى العامرى-153، مطبوعة نجف اشرف تحت بث معاوية قراء الشام وقضاتهم)
অর্থাৎ উসমান রাঃ এর এর খুনের বদলা কিসাসের দাবিতে মুয়াবিয়া রাঃ এর সাথে আবান বিন উসমান রাঃ এবং হযরত উসমান রাঃ এর অন্যান্য সন্তানগণ ও ছিল। {কিতাবু সালিম বিন কায়স-১৫৩}
শুধু তাই নয়, হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ আবু মুসলিম খাউলানী রহঃ এবং তার জামাতের লোকদের সাথে কথোপথনের সময় এ বিষয়টি পরিস্কার করে বলেন-
انا ابن عمه وانا اطلب بدمه وامره الى …. الخ (البداية والنهاية-8/129)
অর্থাৎ আমি হত্যাকৃত মাজলুম খলীফা চাচাত ভাই আর এ বিষয়টি [ওলীদের পক্ষ থেকে] আমার কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এ হিসেবে আমি নিহতের খুনের বদলা কিসাসের আবেদন করছি। {আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-৮/১২৯}
উপরোক্ত দু’টি উদ্ধৃতি দ্বারাই আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে। আসলে মুয়াবিয়া রাঃ এর এর দাবির সাথে একেতো উসমান রাঃ এর সন্তানগণও শামিল ছিল। আর হযরত মুয়াবিয়া রাঃ ও যে, কিসাসের দাবি করেছিলেন সেটিও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নয়, বরং একজন আত্মীয় হিসেবে। আর আত্মীয়ের জন্য তার আত্মীয়ের রক্তের কিসাসের দাবি করা কোন অন্যায় দাবি হয় না। তাই এসব ভূয়া অভিযোগ উত্থাপন করে মুয়াবিয়া রাঃ কে দোষারোপ করা কিছুতেই জায়েজ হবে না।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,বোন,
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা হল-সাহাবায়ে কেরাম সমলোচনার উর্দ্ধে। তাদের দোষ বর্ণনা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ”। (শরহুল আকায়েদ পৃষ্ঠা ৩৫২)
মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-আমি [সাহাবাদের] তাদের প্রতি সন্তুষ্ট আর তারাও আমার অনুগত। {সূরা তাওবা-১০০}
রাসূল সাঃ সাহাবাদের সম্পর্কে বলেন-আমার সাহাবীরা তারকাতুল্য। তোমরা যারই অনুসরণ করবে হেদায়েত পেয়ে যাবে। {কানুযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০০২, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২৪৩৫৫}
,
তাই কোনো ছাহাবায়ে কেরামের দুর্নীতিবাজ, মিথ্যাবাদীসহ বাজে কথা বলা জায়েজ নেই।
,
এগুলো সবই মিথ্যা তথ্য।