আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
132 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ,
আমি একটা সিদ্ধান্ত নিতে ভীষণ বিপদে আছি। ভেবে পাচ্ছি না, কি করব আর কি করব না।আপনার দেয়া উত্তরের ভিত্তিতে ই সিদ্ধান্ত নিব ইন শা আল্লাহ।
উস্তাদ আমার বিয়ে হয়েছে সাত বছর। আমার তিনটি বাচ্চা(২,৪,৬ বছর ) আছে আলহামদুলিল্লাহ।আমি আমার পরিবার নিয়ে দুবাই এসেছি চার মাস হয়েছে।আমরা দেশেই থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিদেশ চলে আসার।

আমরা ঢাকা তে থাকতাম।আমরা দুবাই আসার ৪ মাস আগে আমার শাশুড়ী হঠাৎ করে ভীষণ অসুস্থ হয়ে যায় যদি ও ১৩/১৪ বছর ধরে তার ডায়াবেটিস আছে। বেশির ভাগ সময় ই তার ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকত খাবারের প্রতি অনিয়ম থাকার কারণে। সে খাবার খেতে অনেক পছন্দ করে।
সে প্রতি বছরে ২/১ বার ঢাকায় আসত।আমাদের কাছে ১ / ১দেড় মাস থাকতেন।আমার শশুর  ও আছেন। আমি আমার বাচ্চাদের সামলিয়েও আমার সামরথ্য অনুযায়ী তাদের সেবা যত্ন এবং খাবার দাবারের কোন ত্রুটি করিনি।আমি এবং আমার সামী আমাদের উভয় পক্ষে র পিতা মাতা দের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান।এক মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা বিভিন্ন সময় তাদের প্রতি যথেষ্ট ধৈর্য্যশীল ছিলাম।আমি আমার শাশুড়ী র সকল শখ এবং চাহিদা (জায়গা কিনা,বাড়ি করা, উমরাহ করা ) যথাসম্ভব পূরণ করার চেষ্টা করেছি আমার সামী র মাদ্ধ্যমে।

এখন মূল কথায় আসি।উস্তাদ  আমার শাশুড়ী যখন ৪ মাস আগে অসুস্থ হয় তখন তাদের নিষেধ থাকা সত্তে ও নিজ দায়িত্ব থেকে তাকে সেবা যত্ন করতে কুড়িগ্রাম এ যাই।আমি সেখানে গিয়ে ২২ দিন ছিলাম এবং আমার যত টুকু সাস্থে কুলায় সেবা যত্ন করে আল্লাহর  রহমতে তাকে সুস্থ করে তুলি।

কিন্তু আমার বাচ্চা রা যেহেতু সিজারে হয়েছে সেহেতু আমি শারীরিক ভাবে একটু দুর্বল। আমি অনেক রান্না বান্না করা,বাচ্চাদের সামলানো,সামী,শশুড়, শাশুড়ী সবাই কে মেন্যাজ করতে গিয়ে কোমরে,পায়ে ভীষণ ব্যাথা হয়ে যায় এবং আর সহ্য করতে না পেরে ঢাকায় চলে আসি।তখন আমার শাশুড়ী বেশ সুস্থ হয়ে উঠেছে।

আমি চলে আসায় আমার শাশুড়ী অনেক কষ্ট পায়।সে আমার ছোট ছেলে (২বছর ) র জন্য অনেক কান্নাকাটি করে। আমারও অনেক খারাপ লাগে।কিন্তু তাদের সাথে থাকলে আমার অনেক রান্না বান্না করতে হয়,এবং সব কিছু সামলাতে গিয়ে আমার উপর অনেক প্রেসার পরে।
আমার শাশুড়ী চাই ত না আমরা বিদেশ চলে আসি যেহেতু তার এক ছেলে। তাকে বুঝিয়ে রাজি করে ই আমরা বিদেশে আসি।আমাদের সন্তান দের পড়াশোনা র বয়স হয়ে গেছে এবং দেশেও যেহেতু সেট হওয়া আমাদের জন্য কঠিন ছিল তাই আমরা চলে আসি।

সে এখন আবার অসুস্থ হয়ে গেছে এবং তার শরীরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে। আমার শশুর,তার মেয়ে এবং অন্যান্য আত্তীয়সজন রা তার দেখাশোনা করছেন।আমার শশুর আলহামদুলিল্লাহ অনেক সুস্থ এবং ফিট।

এখন আমার সামী এবং আমার কি দেশে যাওয়া উচিৎ? আমার সামী প্রতি দিন তার খোঁজ খবর নেন এবং চিকিৎসা র সকল ব্যয় দিচ্ছেন।   তার চিকিৎসা তে অনেক টাকা লাগবে এবং আমাদের যাওয়া আসাতে ও অনেক খরচা হবে।আমরা যাব কি যাব না ভেবে পাচ্ছি না।
আমার সামী আমাদের কে ছেড়ে চলে গেলে তার আবার আমাদের জন্য ও টেনশন। আমরা সব সময় ই চেষ্টা করেছি তাদেরকে  সন্তুষ্ট  রাখা র জন্য। কিন্তু চাই না এই সময়ে এসে আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন।

আমরা কি বিদেশ চলে এসে অনেক গুনাহ করেছি?আমরা  যাব কি যাব না জানাবেন এবং আমাদের অন্যান্য করণীয় কি?

আমরা পিতামাতার বিষয়ে আল্লাহ কে যথেষ্ট ভয় করি কারণ আমরা নিজেরা ও সন্তান দের মা বাবা।

উস্তাদ আমার সন্তান দের জন্য আমার অনেক  চিন্তা যেন তারা বদ সন্তান না হয়। আমাদের কে যেন একটা সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন এই জন্য বিস্তারিত লেখা।

1 Answer

0 votes
by (575,580 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

স্বামীর জন্য জরুরি হলো স্ত্রীর অধিকার রক্ষা করা,তার সাথে সদব্যবহার করা।
  
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
ألا واستوصوا بالنساء خيرا، فإنما هن عوان عندكم ليس تملكون منهن شيئا غير ذلك
শোন হে! তোমরা আমার পক্ষ হতে নারীদের প্রতি সদাচরণের উপদেশ গ্রহণ কর। তারা তো তোমাদের কাছে আটকে আছে। তোমরা তাদের কাছ থেকে এছাড়া আর কিছুর অধিকার রাখো না। (জামে তিরমিযী, হাদীস: ১০৮৩

সুতরাং স্ত্রীর উপর স্বামীর খেদমত আবশ্যক,  
শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা স্ত্রীর জন্য একটি অতিরিক্ত কাজ। এটা তার দায়িত্ব নয়,আবশ্যক নয়, । কিন্তু বর্তমান সমাজে মনে করা হয়, এটা তার অপরিহার্য দায়িত্ব বরং এটিই যেন তার প্রধান দায়িত্ব। 
আমাদের সমাজের আবহমান কালের চলমান রীতি হলো, যৌথ পরিবারগুলোতে পুত্রবধূরা শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করে থাকেন। এটাকে পারিবারিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।
ছেলের জন্য বউ আনাই হয় শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার জন্য। এ সবই পরিমিতিবোধের চরম লঙ্ঘন। মা-বাবার সেবা করা সন্তানের দায়িত্ব, পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক ৪/১৯৩, কিফায়াতুল মুফতি ৫/২৩০)

যদি স্বামীর মা-বাবার খেদমতের প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বামীর কর্তব্য হলো তাঁদের সেবা-যত্ন করা। তবে কোনো স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে স্বামীর মা-বাবার সেবা করেন, এটা তাঁর পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিনিময়ে তিনি অনেক সওয়াব পাবেন। তবে এসব করতে আইনত তিনি বাধ্য নন। যদিও কাম্য এটাই যে স্বামীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান ও সমীহের চোখে দেখবেন। তাঁদের মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন এবং তাঁদের সেবা করতে পারাকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িও পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও খাতির করবেন। তার সুখ-সুবিধার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন।

★ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।
যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনার উপর আপনার শাশুড়ীর খেদমত আবশ্যক নয়। সুতরাং শাশুড়ীর খেদমত করতে গিয়ে নিজেকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলা ঠিক হয়নি।
এক্ষেত্রে অন্যান্য আত্মীয় বা কাজের মেয়ে রেখে দায়িত্ব দিতে হবে।

তবে আপনার স্বামীর উপর তারা মা (আপনার শাশুড়ীর) খেদমত আবশ্যক। 

সুতরাং প্রশ্নের বিবরন মতে যেহেতু দেশে তার মেয়ে,আপনার শশুর আপনার শাশুড়ীকে দেখাশোনা করছেন,এবং আপনার স্বামী চিকিৎসা খরচও পাঠাচ্ছেন।

সুতরাং বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া দেশে আসা আপনাদের জন্য আবশ্যক নয়।

তদুপরি যদি তাদের দিয়ে খেদমত সম্পন্ন না হয়,আরো লোকের প্রয়োজন হয়,সেক্ষেত্রে কাজের মেয়ে রাখা যেতে পারে।

তারপরেও আপনি যদি দেশে শাশুড়ীর খেদমতের জন্য আসেন,তাহলে সেটি তার প্রতি আপনার দয়া ও ইহসান হবে। 
শরীয়ত এটি আপনার উপর আবশ্যক করে দেয়নি।

আরো জানুনঃ 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...