আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
159 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (12 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। কয়েকটা প্রশ্ন ছিলো, লেখা বড় করার জন্য আফওয়ান।
১।চারজন সাক্ষীর উপস্থিতি তে সাবালক ছেলে মেয়ের বিয়ে বৈধ হয়ে যায়। তার মানে তখন তারা স্বামী স্ত্রী। তাদের কথা বলা, মেলামেশা তে পাপ হবে না। কিন্তু বাবা মা বিয়ের কথা জানে না। এক্ষেত্রে কিরকম গুনাহ হবে??  বাবা মা র অবাধ্য হওয়ার গুনাহ?? বাবা মা বিয়ের কথা জানে না কিন্তু ২ পরিবার ছেলে মেয়েকে পছন্দ করে ঠিক করে রাখছে। ছেলের চাকরি না হওয়া অব্দি তারা বিয়ে দিবে না তাই ছেলে মেয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। অবাধ মেলামেশা তে প্রশ্রয় দিচ্ছে না আবার নিষেধ ও করছে না। বরং বাবা মা এটা কে স্বাভাবিক ভাবে দেখতেছে যে তাদের সন্তান হারাম সম্পর্কে রয়েছে। এক্ষেত্রে বাবা মায়ের গুনাহ হচ্ছে কি না??  বাবা  মায়ের গুনাহ এবং নিজেদের গুনাহ না হওয়ার নিয়তে তাদের না জানিয়ে বিয়ে করলেও কি অবাধ্যতার পাপ হবে??

২।সেই বিয়েটার কথা ৪ জন ছাড়া আর কেউ জানে না। এখন তাদের মধ্যে কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয় নি। কিন্তু মেলামেশা, ঘুরাঘুরি হয়েছে। পরিবারের সমস্যার কারনে পরে আর তারা ছেলে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে না। কিন্তু ছেলে মেয়ে তো আগেই বিয়ে করেছিলো। সবরকম ভাবে বুঝানোর পরও বাবা মা আর মেনে নিবে না। এক্ষেত্রে মেয়ের যদি ২য় বিয়ে হয় সেখানে ১ম বিয়ের কথা জানানো জরুরি কি না?  না জানালে কিরকম গুনাহ হবে? যেহেতু শারীরিক সম্পর্ক ছিলো না তাই বিয়ের কথা টা গোপন রাখা যাবে কি না??
৩। ছেলে মেয়ের সেই অবস্থায় তালাক হলে গুনাহ হবে কি না??  যদি বাসায়  আগে বিয়ে হয়েছে  এটা বলার পরেও কোনো পক্ষই মেনে নিচ্ছে না সেক্ষেত্রে?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তা'আলা মাতাপিতার আদেশকে মান্য করা এবং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।তাদের অবাধ্য হওয়াকে হারাম ঘোষনা দিয়েছেন।এ বিষয়ে সমস্ত উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করে থাকেন।

মা বাবার সর্বদায় আনুগত্য করতে হবে,তাদের কথার নাফরমানী করা যাবেনা।
তাদের সাথে সর্বদায় ভালো ব্যবহার করতে হবে।
তারা কষ্ট পায়,এমন কাজ কখনোও করা যাবেনা।

তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا

“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস।” (সূরা আহকাফ-১৫)

আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।(সূরা বনী ইসরাঈল-২৩)

পিতা মাতার বৈধ বিধান তরক করলে গোনাহ হবে।

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তারা উভয়েই যেহেতু বালেগ বালেগাহ,সেক্ষেত্রে তারা উভয়ে শরয়ী সাক্ষ্যির উপস্থিতিতে বিয়ের প্রস্তাব ও প্রস্তাব গ্রহণ সম্পন্ন করেছে,সুতরাং তাদের বিয়ে ইসলামী শরীয়াহ মুতাবিক শুদ্ধ হয়ে যাবে।

যদিও তাদের অভিভাবক  কিছুই না জানে বা এখন রাজি না থাকে। কিংবা তিনি অনুমতি নাও দিয়ে থাকে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৮৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪২১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৮, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৩৪, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১০৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩৫৭৬}

আরো জানুনঃ-

উল্লেখ্য যে  মাতাপিতা সন্তুষ্টি ও অনুমতি নিয়ে সবাইকে অগ্রসর হতে হবে।এবং মাতাপিতার সন্তুষ্টিই দুনিয়া ও অাখেরাতের কল্যাণের উত্তম মাধ্যম।মাতাপিতাকে কষ্ট দিয়ে জীবনে সূখী হওয়া যাবে না।

তাছাড়া বৈধ ও ভালো কাজে মাতাপিতার নির্দেশ মান্য করাও ওয়াজিব।

সুতরাং আমরা পরামর্শ স্বরুপ বলবো যদিও উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে বাবার মতামতকে উপেক্ষা করে তাদের বিবাহ হয়ে যাবে,তারপরেও এভাবে অভিভাবককে না  জানিয়ে চুরি করে,অথবা তাদের মতামতকে উপেক্ষা করে  বিয়ে করা কখনো উচিৎ হবে না।কেননা মাতাপিতা সব সময় সন্তানের কল্যাণ চায়।তাই মাতাপিতার পরামর্শ ও আদেশ মান্য করাই সবার জন্য কল্যাণকর।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
পরামর্শ থাকবে অভিভাবকদেরকে জানিয়ে করিয়ে উক্ত বিবাহ করা। তারা রাজী না হলে তাদের গুনাহের বিষয় জানানো,ইসলামের বিধান জানানো জরুরী। 

তাদেরকে না জানিয়ে এভাবে বিবাহ করলে তাদের অবাধ্যতার গুনাহ হবে।

এক্ষেত্রে তারা যে গুনাহ করছিলো,সেটা দেখে পিতা মাতা নিষেধ না করলে পিতামাতারও গুনাহ হবে।

(০২)
এক্ষেত্রে তালাকের পর মেয়ের যদি ২য় বিয়ে হয় সেখানে ১ম বিয়ের কথা জানানো জরুরি।

না জানালে ধোকা দেয়ার গুনাহ হবে।

শারীরিক সম্পর্ক না হলেও বিয়ের কথা টা গোপন রাখা যাবেনা।
এভাবেই বলতে হবে যে বিবাহ এভাবে হয়েছিলো,চারজন সাক্ষী ছাড়া কেউ জানেনা,তাদের কোনো সংসার হয়নি।শারীরিক সম্পর্কও হয়নি।

(০৩)
শরীয়ত সম্মত কোনো কারনে তালাক হলে গুনাহ হবেনা। 
শরীয়ত সম্মত কারন ছাড়া অযথা তালাক হলে গুনাহ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...