আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
49 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (27 points)
আসসালামু আলাইকুম,  কোনো নিঃসন্তান অসুস্থ মেয়ের যদি যথেষ্ট ভালো পরিমাণ স্বর্ণের গহনা থাকে,যার মালিক সে নিজে, আর কোনো স্ম্পদ তার নাই।মেয়ের বাবা, মা, স্বামী, এক ভাই আছে, আর কোনো ভাইবোন, সন্তান নাই।
এই মেয়ে এখন তার অধিকাংশ গহনা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মন থেকে সদাকা করে দিতে চায়, কিন্তু তার বাবা মা কোনোভাবেই রাজি না, কোনোভাবেই না। বাবা মায়ের  নিজেদের অনেক সম্পদ আছে, তারা নিজেদের সম্পদ ও ভালো পরিমাণে জমা করে রেখেছে।

আর তাদের মেয়ের এতো গহনা থাকা সত্বেও কিছুতেই তা থেকে মেয়েকে দান করতে দিচ্ছে না।

১.আমি জানতে চাই গহনার মালিক যেহেতু মেয়ে, এই গহনা সদাকা করতে হলে কি আসলেই বাবা মার অনুমতি দরকার (বাবা মার ও অনেক বেশি আছে)?
২.বাবা মা এতো বেশি  নিষেধ করতেছে,এতো ঝামেলা করতেছে, এই অবস্থায় শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মেয়ের কি উচিত হবে গহনা সদাকা করে দেওয়া?( মেয়ে খুব বেশি করে চাচ্ছে অনেকদিন ধরে, শুধু বাবা মার জন্য হচ্ছে না)
৩.মেয়ের মা বারবার বলছে যে মেয়ে নাকি এইভাবে তার ভাই, স্বামী, ভবিষ্যৎ সন্তান এদের বঞ্চিত করতেছে( মেয়ে নিঃসন্তান, কখনো সন্তান না ও হইতে পারে) , মা বলছে  এইভাবে নাকি দান সদাকা জায়েজ নাই।
আসলেই কি এইভাবে মেয়ে নিজের সব জিনিস সুস্থভাবে সুস্থ মস্তিষ্কে সদাকা করতে পারবে না?
৪.কি করা যায় এই গহনা সদাকা করতে হলে? কিভাবে হিকমতের সাথে এতোটা দুনিয়ামুখী বাবা মাকে কষ্ট না দিয়ে সদাকা করা যায়?

1 Answer

0 votes
by (683,680 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলাম আমাদেরকে ঈমান-আমল থেকে শুরু করে সকল কর্ম ও আচরণে ভারসাম্য শেখায়। দানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ না করে সব নিজের হাতে কুক্ষিগত করতে যেমন নিষেধ করা হয়েছে, তেমনি নিজের সকল অর্থ-সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে পরের দিন নিজেকেই হাত পাততে হচ্ছে বা পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে কষ্ট হচ্ছে- এমনটি ইসলাম পছন্দ করে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ لَا تَجْعَلْ یَدَكَ مَغْلُوْلَةً اِلٰی عُنُقِكَ وَ لَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُوْمًا مَّحْسُوْرًا.

(কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখ না এবং তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখ না, যদ্দরুন তোমাকে নিন্দাযোগে ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হবে। 
(সূরা ইসরা (১৭) : ২৯)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় ও জান্নাতী বান্দাদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে উল্লেখ করেছেন-

وَ الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ یُسْرِفُوْا وَ لَمْ یَقْتُرُوْا وَ كَانَ بَیْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا.

আর ব্যয় করার সময় যারা না করে অপব্যয় এবং না করে কার্পণ্য; বরং তা হয় উভয়ের মাঝখানে ভারসাম্যমান। 
(সূরা ফুরকান (২৫) : ৫৭)

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাহাবী হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু। দুনিয়াতে থাকতেই বিশেষভাবে যে দশজন সাহাবী জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ লাভ করেছিলেন হযরত সা‘দ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। বিদায় হজে¦র সময় তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মুমূর্ষু অবস্থা। নবীজী তার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে তাকে দেখতে যান।

নবীজীকে কাছে পেয়ে হযরত সা‘দ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার শারীরিক অবস্থা তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা আমাকে বেশ কিছু ধনসম্পদ দান করেছেন। আর সন্তান বলতে মাত্র একটি মেয়েই আমার। আমি চাচ্ছি, আমার সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ দ্বীনের জন্য খরচ করব, আল্লাহর রাস্তায় সদকা করে দিব। অর্থাৎ পুরো সম্পদের এক ভাগ রেখে বাকি দুই ভাগই তিনি সদকা করে দেবেন। কিন্তু নবীজী এর অনুমতি দিলেন না।

অনুমতি না পেয়ে তিনি আরেকটু কম করে এজাযত চাইলেন। বললেন, তাহলে আমি অর্ধেক সম্পত্তি দান করার ওসিয়ত করি আর অর্ধেকটা রেখে দিই? নবীজী এরও অনুমতি দিলেন না।

এবার তিনি আরো কম করে অনুমতি চাইলেন। বললেন, তাহলে আমার মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ দ্বীনের জন্য ওসিয়ত করে যাই আর মেয়ের জন্য দুই তৃতীয়াংশ রেখে যাই? নবীজী এখন কিছুটা সম্মত হলেন। বললেন-

وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ.

আচ্ছা, তিন ভাগের এক ভাগ দিতে চাও! ঠিক আছে, দিতে পার। কিন্তু তিন ভাগের এক ভাগও অনেক।

এরপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পদ ব্যয় ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন মুমিন কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, সেই নীতি সুস্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন। নবীজী বললেন-

إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ، وَلَسْتَ تُنْفِقُ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إِلاَّ أُجِرْتَ بِهَا، حَتَّى اللُّقْمَةَ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ.

তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পাতবে, এরচে’ অনেক উত্তম হচ্ছে তাদেরকে সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া। আর তুমি যে খরচই কর না কেন, তা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তোমাকে সওয়াব দান করবেন। এমনকি একটি লোকমা, যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও। ( সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৪০৯)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
এক্ষেত্রে বাবা মার অনুমতির দরকার নেই।

(০২)
এক্ষেত্রে তিন ভাগের এক ভাগের চেয়ে বেশি দান করা উচিত হবেনা।

(০৩)
সে সমস্ত সম্পদ দান করতে পারবে।
তবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নির্দেশ মেনে তিন ভাগের এক ভাগের চেয়ে বেশি দান করা উচিত হবেনা।

(০৪)
এক্ষেত্রে অল্প কিছু দান করা যায়।
প্রয়োজনে গহনা না দিয়ে কিছু টাকা পয়সা দান করা যায়।

তবে গহনার দরুন অবশ্যই প্রতি বছর যাকাত আর কুরবানী আদায় করতে হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...