আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
69 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
মাজারে সিজদাহ করে, ওরশের আয়োজন করে, সিজদায়ে তাজিমী দেয় পীরকে/মাজারে, আবার কালিমার সাক্ষ্যও দেয়, এমন ব্যক্তির সাথে কোনো মুসলিম মেয়ের বিয়ে কি শুদ্ধ হবে? তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, কিন্তু মাজারে তাজিমী সিজদাহ ও দেয়। বিয়ে শুদ্ধ হবে কিনা,  বা তারা কাফির হয়ে যাবে কিনা, বিয়ে বাতিল হবে কিনা, এবিষয়ে অনুগ্রহ করে বিস্তারিত বলুন ইনশাআল্লাহ।

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

মাযার” শব্দটি আরবী। বাংলা অর্থ হল যিয়ারতের স্থান। যে স্থানকে যিয়ারত করা হয়, তার নামই মাযার। মুসলমানের কবর যিয়ারত করা জায়েজ। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-

عن ابن بريدة عن أبيه قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها فإن فى زيارتها تذكرة

অনুবাদ-হযরত ইবনে বুরাইদা রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলা, এখন যিয়ারত কর। [কোন সমস্যা নেই।]। কেননা কবর যিয়ারত মৃত্যুকে স্মরণ করে দেয়। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৭০০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩০৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৫৭১, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৬৯}

কবর যিয়ারত করা ছাড়া কবর তথা মাযার ঘিরে আরো যত কাজ করা হয়, তা সবই বিদআত। এসব করা জায়েজ নেই। যেমন-

১-মাযার ঘিরে উরস করা।

২-মাযারে বাতি প্রজ্বলন করা

২-মাযারে মান্নত মানা।

৩-মাযারে গিয়ে দুআ করা। মৃত ব্যক্তির কাছে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করে দেওয়ার আবেদন করা।

৪-মাযারে শিন্নি পাকানো ইত্যাদী সকল কাজই বিদআত ও শরীয়ত গর্হিত কাজ। এসব করা খুবই গোনাহের কাজ। এসবের কোন ভিত্তি ইসলামে নেই। সম্পূর্ণ হারাম এ সকল কাজ।

মাযার ঘিরে উরস করা

স্বীয় কবরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান করাকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহর নবী ইরশাদ করেন-

عن أبى هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « لا تجعلوا بيوتكم قبورا ولا تجعلوا قبرى عيدا وصلوا على فإن صلاتكم تبلغنى حيث كنتم (سنن ابى داود-كتاب المناسك، باب زيارة القبور، رقم الحديث-2044

তোমরা স্বীয় ঘরকে কবর বানিয়োনা। (অর্থাৎ কবরের ন্যায় ইবাদত-নামায, তেলাওয়াত ও যিকির ইত্যাদি বিহীন করনা।) এবং আমার কবরে উৎসব করোনা।(অর্থাৎ বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন আসরের আয়োজন করনা। তবে হ্যাঁ আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। নিশ্চয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের দরূদ আমার নিকট পৌঁছে থাকে।(আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতারা পৌঁছিয়ে দেন।)” (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং-২০৪৪/৪০)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- রাসূলে সাঃ নিজ রওযা মুবারকে উৎসব (উরস) পালন করতে বারণ করেছেন। তাহলে অন্য কে আর এমন আছে যার কবরে তা বৈধ হবে?

হাদিসের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুনাভী রহঃ এই হাদিসের ব্যাক্ষা করতে গিয়ে বলেন-

قال المناوي ويؤخذ منه أن اجتماع العامة في بعض أضرحة الأولياء في يوم أو شهر مخصوص من السنة ويقولون هذا يوم مولد الشيخ ويأكلون ويشربون وربما يرقصون فيه منهي عنه شرعا وعلى ولي الشرع ردعهم على ذلك وإنكاره عليهم وإبطاله (عون المعبود-كتاب المناسك باب زيارة القبور-6/23)

এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, সাধারণ মানুষ যারা বছরের কোন নির্দিষ্ট মাসে বা দিনে (উরসের নামে) ওলীদের মাযারে একত্রিত হয় এবং বলে-আজ পীর সাহেবের জন্ম বার্ষিকী (মৃত্যু বার্ষিকী), সেখানে তারা পানাহারেরও আয়োজন করে, আবার নাচ গানেরও ব্যবস্থা করে থাকে, এ সবগুলিই শরীয়ত পরিপন্থী ও গর্হিত কাজ। এ সব কাজ প্রশাসনের প্রতিরোধ করা জরুরী। (আউনুল মা’বুদ-৬/২৩)

মাযার ঘিরে বাতি প্রজ্বলন হারা

عن ابن عباس قال : لعن رسول الله صلى الله عليه و سلم زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد والسرج (سنن الترمذى- أبواب الصلاة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم ، باب ما جاء في كراهية أن يتخذ على القبر مسجدا-2/136)

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী সাঃ অভিশম্পাত করেছেন (বেপর্দা) কবর যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর, এবং সেসব লোকদের উপর যারা কবরকে মসজিদ বানায়(কবরকে সেজদা করে) এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলিত করে। (জামি তিরমীযী-২/১৩৬)

উক্ত হাদিসে সুষ্পষ্ট কবরে বাতি প্রজ্জ্বলনকারীর উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশম্পাত করেছেন আল্লাহর নবী সাঃ।

আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত বা কুরবানী করা যায়না। কারণ মান্নত ও কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া কারা জন্য করা জায়েজ নয়। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (162) لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ (163) (سورة الأنعام-162-163)

আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তা-ই করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং প্রথম আনুগত্যশীল। (সূরা আনআম-১৬২-১৬৩)

সূরা কাউসারে মহান রাব্বুর আলামীন বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (২)( অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। (সূরা কাউসার-২)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

জেনে শুনে এরকম ব্যক্তিকে বিবাহ করা কোন ভাবেই জায়েয নেই। কারণ, শরীয়তের বিধান হলো কেউ যদি গায়রুল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সেজদা করে, গায়রুল্লাহর নামে কোরবানী করে, গায়রুল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার নাম জপতপ করে, মানবীয় ক্ষমতার উর্ধ্বের কোনো বিষয় গায়রুল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, মাযার-দরগাহর তওয়াফ করেমোটকথা, যেসব কাজ আল্লাহ তাআলা তাঁর উপাসনার জন্য নির্ধারণ করেছেন তা গায়রুল্লাহর জন্য করে তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ শিরক।

এবং যে ব্যাক্তি মাযার বা মাযারে শায়িত ব্যক্তি সম্পর্কে অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করে,সে শিরক করলো। সুতরাং কেহ যদি সত্যিকারঅর্থেই এহেন আকিদা, বিশ্বাস মনে প্রানে পোষন করে মাজারে সেজদাহ ইত্যাদি করে,তাহলে সে কুফরী করলো।

তাকে নতুন করে কালেমা পড়ে ঈমান আনতে হবে। খালেছ দিলে তওবা করতে হবে।  বিস্তারিত জানুনঃ

https://ifatwa.info/4570/?show=4570#q4570

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, তারা সত্যিকারঅর্থেই এহেন আকিদা, বিশ্বাস মনে প্রানে পোষন করে মাজারে সেজদাহ করে,তাহলে তারা মুশরিক হবেননতুন করে ঈমান আনতে হবে। অন্যথায় তারা মুসলমানতবে তারা ভ্রান্ত। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের থেকে খারিজ।   

এসম্পর্কে আরো জানুন: https://ifatwa.info/8040/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...