আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
90 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি
প্রিয় মুহতারাম, আমরা কয়েকজন দোকানদার মিলে প্রতিদিন ৫০০ করে একজনের কাছে জমা রেখে  দশদিন পর লটারি করে ১২ জনের মধ্যে যার নাম ঊঠবে  সে পাবে।এভাবে ১২টা লটারি হবে।এখানে কারও টাকার কম বা বেশি হবে না।সবাই তার টাকাই পাবে একটু আগে আর পরে।

যে ভাই এটা পরিচালনা করবেন তার উদ্দেশ্য হচ্ছে,,

 একএে মোটা অংকের টাকা পেলে এক ভাইশের  ব্যবসায়িক উপকার হবে।

২য় ত সে সুদী ব্যবস্হাপনার লোন থেকে  নিজেকে সরিয়ে নেয়ার  একটা অবলম্বন হবে।

৩য় এর মাধ্যমে পরিচালক ভাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্য নিহিত আছে।
উপরোক্ত বিষয়ের ঊপরে ভিত্তি করে লটারি করা কি জায়েজ হবে????

আর যেহেতু ১২ জনের টাকা একএে হবে সেহেতু বিভিন্ন জনের টাকা বিভিন্ন উৎস আছে, তাতে কি কোন সমস্যা আছে হালাল - হারাম মিশ্রনের???

1 Answer

0 votes
by (559,140 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মূলত জুয়া বলা হয়, যা লাভ ও লোকশানের মাঝে ঝুলন্ত থাকে, এমন অর্থের খেলার নাম  জুয়া।

كُلُّ شَيْءٍ مِنَ الْقِمَارِ فَهُوَ مِنَ الْمَيْسِرِ حَتَّى لَعِبِ الصِّبْيَانِ بِالْجَوْزِ.
প্রত্যেক বাজি মাইছির তথা জুয়ার অন্তর্ভূক্ত এমনকি শিশুদের হারজিতের খেলাও জুয়ার অন্তর্ভূক্ত। [তাফসীরে ইবনে কাসীর-২/১১৬, সূরা মায়িদা, আয়াত নং-৯০-৯৩]
,
শরীয়তের বিধান মতে জুয়া খেলা স্পষ্ট আকারে হারাম।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا  [٢:٢١٩]

তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে,তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। [সূরা বাকারা-২১৯]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٥:٩٠]
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ [٥:٩١]

হে মুমিনগণ,এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।
শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? [সূরা মায়িদা-৯০-৯১]

আরো জানুনঃ  

https://ifatwa.info/3089/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
শরীয়তের বিধান হলো  ক্ষেত্র বিশেষে লটারী বৈধ রয়েছে।সব রকম লটারী হারামের অন্তর্ভুক্ত না।বরং ঐ সমস্ত লটারী-ই হারাম যা দ্বারা কোনো হক্ব বা যোগ্যতা অথবা মালিকানা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

কিন্তু যদি পূর্ব থেকেই হক্ব বা অধিকার প্রতিষ্টিত থাকে।কিন্তু উভয় সমান সমান হওয়ার ধরুণ কাউকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাচ্ছেনা।এমতাবস্তায় একজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য লটারির মাধ্যমে তাকে নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ প্রকার লটারী বৈধ রয়েছে ।
যা কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

যেমনঃ- আল্লাহ তা'আলার বানী,
َ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺖَ ﻟَﺪَﻳْﻬِﻢْ ﺇِﺫْ ﻳُﻠْﻘُﻮﻥ ﺃَﻗْﻼَﻣَﻬُﻢْ ﺃَﻳُّﻬُﻢْ ﻳَﻜْﻔُﻞُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺖَ ﻟَﺪَﻳْﻬِﻢْ ﺇِﺫْ ﻳَﺨْﺘَﺼِﻤُﻮﻥَ

"আপনি তখন তাদের কাছে উপস্থিত ছিলেন না। যখন তারা লটারীর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করছিল যে, কে মারইয়ামকে প্রতিপালন করবে। এবং আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা এ নিয়ে ঝগড়া করছিলো।"
সূরা-আলে ইমরান,৪৪।

মারয়ামের পিতা না থাকার ধরুণ সবাই মারয়ামকে লালন-পালনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো।তাদের মধ্য থেকে একেকজন একেক আঙ্গিকে নিজেকে লালনপালনের অগ্রাধিকারী ধাবী করছিলো।
যেহেতু তাদের সবার মধ্যে লালন-পালনের যোগ্যতা ও অধিকার প্রায় সামন সমান ছিলো।তাই লটারীর মাধ্যমে যাকারিয়া (আঃ)কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিলো।

এখানে লালন-পালনের হক্বকে প্রমাণিত করা হচ্ছেনা।বরং লটারির মাধ্যমে ঝগড়াকে নিরসন করা হচ্ছিলো।

হাদীস শরীফে এসেছে,
হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত,
عَنْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ( ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺳَﻔَﺮًﺍ ﺃَﻗْﺮَﻉَ ﺑَﻴْﻦَ ﻧِﺴَﺎﺋِﻪِ ، ﻓَﺄَﻳَّﺘُﻬُﻦَّ ﺧَﺮَﺝَ ﺳَﻬْﻤُﻬَﺎ ﺧَﺮَﺝَ ﺑِﻬَﺎ ﻣَﻌَﻪُ ) . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ( 2454 ) ﻭﻣﺴﻠﻢ ( 2770 ) .

নবীজী সাঃ যখনই সফরের ইচ্ছা করতেন,তখন সমস্ত বিবিগণের মধ্যে লটারী দিতেন, লটারীতে যার নাম উঠে আসত,তাকে নিয়েই সফরে বের হতেন।
সহীহ বুখারী -২৪৫৪।
সহীহ মুসলীম-২৭৭০।

এখানেও নবীজী সাঃ এর সাথে সফরের অধিকার নিয়ে লটারী হচ্ছিল না। কেননা স্বামী সফরকালীন সময়ে স্ত্রীদের কোনো অধিকার নেই।যে কেউ যেতে পারবে।
এখন লটারীর মাধ্যমে একজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

এরকম লটারী ইসলামী শরীয়তে বৈধ রয়েছে।
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﺭﺣﻤﻪ  ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻹﻗﺮﺍﻉ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﻭﺍﺟﺐ .
" ﺷﺮﺡ ﻣﺴﻠﻢ " ( 15 / 210
ইমাম নববী রাহ বলেন এরকম স্থানে লটারী আমাদের দৃষ্টিতে ওয়াজিব।

★সু-প্রিয় পাঠকবৃন্দ!

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম,লটারী সর্বক্ষেত্রে নিষিদ্ধ নয়,বরং ক্ষেত্র বিশেষে বৈধও রয়েছে।

যদি জুয়া না থাকে,এবং যদি পূর্ব থেকেই হক্ব বা অধিকার প্রতিষ্টিত থাকে।কিন্তু উভয় সমান সমান হওয়ার ধরুণ কাউকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাচ্ছেনা।এমতাবস্তায় একজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য লটারির মাধ্যমে তাকে নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ প্রকার লটারী বৈধ রয়েছে ।
,
লটারি সম্পর্কে আরো জানুন
https://www.ifatwa.info/1505

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে লটারী করা জায়েয। কেননা এক্ষেত্রে কেউই জমাকৃত টাকার কম বা বেশি পায় না এবং মেয়াদের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকে নিজের জমাকৃত পূর্ণ টাকা পেয়ে যায়। তবে লটারিতে যার নাম আসবে তাকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি সকলের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতিতে হতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যাদের নাম আগে লটারীতে উঠবে,তারা যেন শেষ পর্যন্ত কিস্তি দেওয়া অব্যাহত রাখে এটা নিশ্চিত করতে হবে। যেন ঋণদাতাদের জমা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

এক্ষেত্রে লটারি দ্বারা যেহেতু শুধু কাকে আগে ঋণ দেওয়া হবে এটা চিহ্নিত করা উদ্দেশ্য- তাই এই লটারি জায়েয।

এখানে যার টাকা সে নিজেই পাবে। 
তাই যার হালাল টাকা,সে হালাল টাকাই পেয়েছে বলে বিবেচিত হবে ,আর যার হারাম টাকা,সে হারাম টাকা পেয়েছে বলে বিবেচিত হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...