জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
“ আর যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তোমরা চুপ থাকো ও মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো যেন তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও।” (সূরা আ’রাফ: ২০৪)
কিন্তু কোন অনুষ্ঠানের মাইক টেস্ট করার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা হলে বা অনলাইনে পণ্যের মার্কেটিং করার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে তিলাওয়াত প্লে করা হলে কি আল্লাহর এ নির্দেশ পালন করা হচ্ছে? অবশ্যই নয়। তাহলে এতে কি প্রকারান্তরে কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে না?
শরহুল মুনতাহা কিতাবে বলা হয়েছে:
لا يجوز رفع الصوت بالقرآن في الأسواق مع اشتغال أهلها بتجارتهم وعدم استماعهم له، لما فيه من الامتهان (شرح المنتهى)
“বাজারের মধ্যে মানুষ যখন ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকে এবং কুরআনে মনোযোগ সহকারে শুনতে পারে না তখন সেখানে উচ্চ আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয নেই। কেননা এতে কুরআনের প্রতি অবমানা হয়।”
ইমাম বাইহাকী এই মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন:
فصل في رفع الصوت بالقرآن إذا لم يتأذ به أصحابه، أو كان وحده، أو كانوا يستمعون له
البيهقي في الشعب)
“অনুচ্ছেদ: যখন সঙ্গী-সাথীদেরকে কষ্ট না দেওয়া হবে অথবা যখন একাকী থাকবে এবং অন্যান্য লোকজন মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করবে তখন কুরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে আওয়াজ উঁচু করা।” (বাইহাকী, শুআবুল ঈমান)
عن أبي سعيدٍ قالَ اعتَكفَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليْهِ وسلَّمَ في المسجدِ فسمِعَهم يجْهَرونَ بالقراءةِ فَكشفَ السِّترَ وقالَ ألا إنَّ كلَّكم مُناجٍ ربَّهُ فلا يؤذِيَنَّ بعضُكم بعضًا ولا يرفعْ بعضُكم على بعضٍ في القراءةِ أو قالَ في الصَّلاةِ.
আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে (মসজিদে নববী) ইতিকাফ করছিলেন। এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন, লোকেরা উঁচু স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করছে। তখন তিনি পর্দার কাপড় সরিয়ে তাদের লক্ষ্য করে বললেন, “মনে রাখবে, তোমাদের সবাই তার পালনকর্তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিমগ্ন রয়েছ। অতএব তোমাদের একজন অপরজনকে কষ্ট দিবে না এবং তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে (অথবা তিনি বলেছেন: সালাতের ক্ষেত্রে) একজন অপরজনের উপর আওয়াজ উঁচু করবে না।”
[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৩৩২; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস: ১১৬৫; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১১৮৯৬; মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩১০]
আরো জানুনঃ-
কুরআনের অসম্মানী হয়,এমন কোনো কাজ করা যাবেনা।
সেটি আদবের খেলাফ।
,
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهٰذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِه اٰخَرِينَ
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাব কুরআনের মাধ্যমে কোন কোন জাতিকে উন্নতি দান করেন। আবার অন্যদেরকে করেন অবনত।
(মুসলিম ৮১৭, ইবনু মাজাহ ২১৮, আহমাদ ২৩২, দারিমী ৩৪০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১২৫, শু‘আবূল ঈমান ২৪২৮, সহীহাহ্ ২২৩৯।)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে।
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ( ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻨﻬﻰ ﺃﻥ ﻳﺴﺎﻓﺮ ﺑﺎﻟﻘﺮﺁﻥ ﺇﻟﻰ ﺃﺭﺽ ﺍﻟﻌﺪﻭ؛ ﻣﺨﺎﻓﺔ ﺃﻥ ﻳﻨﺎﻟﻪ ﺍﻟﻌﺪﻭ )
রাসূলুল্লাহ সাঃ কুরআন সাথে নিয়ে শত্রু দেশে সফর করতে নিষেধ করেছেন।যাতেকরে শত্রুরা কুরআনকে নিয়ে গিয়ে কোনোপ্রকার অসম্মান না করতে পারে।(মুয়াত্তা মালিক-৫/২,মুসনাদু আহমাদ-২/৬,৬৩, সুনানু নাসাঈ-৮৫,সুনানু ইবনি মা'জাহ২৮৮০)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কোন অনুষ্ঠানের মাইক টেস্ট করার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা,
অনলাইনে পণ্যের মার্কেটিং করার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে তিলাওয়াত এগুলো মূলত প্রকারান্তরে কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হয়।
এবং এক্ষেত্রে "কুরআন তিলাওয়াত চুপ থাকা ও মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করার" যে নির্দেশ মহান আল্লাহ তায়ালার ছিলো,সেটি পালন করা হয়না।
বিধায় এ ধরনের কাজ কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন হওয়ায় আদবের খেলাফ।
অনলাইনে পণ্যের মার্কেটিং করার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল ﷺ এর শানে গাওয়া হামদ না'ত যুক্ত করা হলে এতে যেহেতু কুরআনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন হচ্ছেনা, এবং কুরআনের আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর আদেশ অমান্য হচ্ছেনা,তাই এটি নাজায়েজ নয়।
তবে তাকওয়ার খেলাফ।
প্রশ্নে উল্লেখিত শিক্ষক সর্বোচ্চ তাকওয়ার স্তর হতে উক্ত কথা বলেছেন।