আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
105 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (25 points)
আমি কোনো নতুন পোশাক পড়ার আগে প্রতিবার মনে হয় কেউ আমার প্রশংসা করবে আমি সেই উদ্দেশ্য পড়ছি যেহেতু সুনামের উদ্দেশ্য পোশাক পরিধান করলে আল্লাহ আগুনের পোশাক পড়াবেন।

এখন আমি একটি পোশাক পড়ার আগে মনের মধ্যে আসছে যে  আমাকে সুন্দর আর স্ট্যান্ডার বলবে কিনা যা আমি চাই না এই ভাবনা চিন্তাগুলো আসুক। যখনই এটা দূর করার চেষ্টা করি তখন আরো বেশি করে আসে যেন আমি সত্যি  এগুলো চাইছি। এখন কি আমি এই পোশাকটি পড়তে পারবো?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://ifatwa.info/48106/  নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

হাদীস শরীফে  এসেছেঃ

حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ الزَّعْفَرَانِيُّ، حَدَّثَنَا عَفَّانُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ اللَّهَ يُحِبَّ أَنْ يُرَى أَثَرُ نِعْمَتِهِ عَلَى عَبْدِهِ

আমর ইবনু শু'আইব (রাহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত, তার দাদা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা তার দেয়া নি’মাতের নিদর্শন তার বান্দার উপর দেখতে ভালোবাসেন (অর্থাৎ- যাকে যে রকম নি’মাত প্রদান করা হয়েছে সেনুযায়ী পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করা আল্লাহ পছন্দ করেন)। (তিরমিজি ২৮১৯)

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিনয়াবত হয়ে সুন্দর পোশাক পরিহার করে, আল্লাহ তাআলা তাকে মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের পোশাক পরিধান করাবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৮)

আবু বুরদাহ (রহ.) বলেন, আয়েশা (রা.) আমাদের কাছে একটি মোটা জটবদ্ধ চাদর এবং মোটা কাপড়ের লুঙ্গি নিয়ে এসে বলেন : ‘এই দুই কাপড়েই মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৭৩৩)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) যে বিছানায় নিদ্রা যেতেন, তা ছিল চামড়ার তৈরি। এর মধ্যে খেজুরগাছের আঁশ ভরা ছিল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৭৬১)

আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, যদি তুমি পরকালে (মর্যাদার দিক থেকে) আমার পাশে থাকতে চাও, তাহলে তিনটি বিষয়ের ওপর আমল করবে। এক. দুনিয়ায় তোমার জন্য মুসাফিরের মতো প্রয়োজনীয় পাথেয় যথেষ্ট হোক। দুই. বিত্তশালীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকবে। তিন. পট্টি, তালি ও পুনর্বার সেলাই করা ছাড়া কাপড়কে পরিত্যক্ত করে দেবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ১৭৮০)

কাপড় পরিধান কালে নিন্মোক্ত দোয়াটি পাঠ করুন, তাতে পূর্বাপর গুনাহ্ গুলো মাফ হয়ে যায়ঃ

ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻯْ ﻛَﺴَﺎﻧِﻰْ ﻫٰﺬَﺍ ﻭَﺭَﺯَﻗَﻨِﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِﺣَﻮْﻝٍ ﻣِّﻨِّﻰْ ﻭَﻟَﺎ ﻗُﻮَّﺓ

অর্থাৎঃ সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্ তাআলার জন্যে, যিনি আমাকে এ কাপড়টি পরিধান করিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে আমার শক্তি সামর্থ্য ব্যতিরেকে তা তিনি আমাকে দান করেছেন।(আল মুস্তাদরাক, হাদিস নং-৭৪৮৬, খন্ড-৫ম, পৃষ্ঠা-২৭০)

নতুন কাপড় পরার দোয়া:

 أُلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي مَا أُوَارِي بِهِ عَوْرَتِي، وَأَتَجَمَّلُ بِهِ فِي حَيَاتِي

‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি কাসানি মা উয়ারি বিহি আওরাতি ওয়া আতাজাম্মালু বিহি ফি হায়াতি।’ অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে কাপড় পরিয়েছেন, যা দিয়ে আমি লজ্জাস্থান ঢেকে রাখি এবং জীবনে সৌন্দর্য লাভ করি।’ আবু উমামা (রা.)-এর বর্ণনা থেকে বর্ণিত, ‘ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নতুন কাপড় পরিধান করার সময় এই দোয়া পড়তেন।’ (তিরমিজি: ৩৫৬০)

পোশাক পরিধানের দোয়া পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নতুন কাপড় পরার সময় দোয়া পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়া ও পরকালে নিজের নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষণে রাখবেন।’ (তিরমিজি: ২/২৩০)

পোশাক কারখানাগুলো পরিচিত মডেল এবং টিভি সিরিয়ালের নামে বাহারি পোশাক বাজারজাত করে থাকে। আর উঠতি ছেলে-মেয়েদের এসব পোশাকের প্রতি থাকে বাড়তি আগ্রহ। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) এসব পোশাক না পরার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪০২৯)

পোশাক পরিধানে কৃপণতা না করা: অপচয় ও কৃপণতা সর্বক্ষেত্রেই নিন্দনীয়। পোশাক-পরিচ্ছদেও এর ব্যতিক্রম নয়। সামর্থ্য থাকার পরও কেউ যদি কৃপণতা করে নিম্নমানের পোশাক পরিধান করে ইসলামে তাদের অপছন্দ করা হয়েছে। একবার আবুল আহওয়াসের পিতা মালিক বিন আউফ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলেন। তখন তাঁর পরনে ছিল অতি নিম্নমানের পোশাক। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি সম্পদ আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, কী সম্পদ আছে? আমি বললাম, সব ধরনের সম্পদই আল্লাহ আমাকে দান করেছেন। উট, গরু, ছাগল, ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, ‘যখন আল্লাহ তাআলা তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন তখন তোমার ওপর তাঁর নিয়ামতের ছাপ থাকা চাই। ’ (নাসাঈ, হাদিস: ৫২৯৪)

অহংকার বা মানুষ দেখানোর মানসিকতা সর্বাবস্থায় সকল কাজেই নিন্দনীয়। পোশাক-পরিচ্ছদের মাধ্যমেও যেন এই ব্যাধি মানুষের অন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়েও হাদিস শরিফে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না (রাগান্বিত থাকবেন)। (বুখারি, হাদিস: ৫৭৯১)

বিধর্মীদের অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নাজায়েজ। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অমুসলিমদের পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়। ’  (তবারানি আওসাত, হাদিস: ৩৯২১)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

ভালো পোশাক থাকা সত্ত্বেও তালি যুক্ত পোশাক পরিধান করার বিষয় রাসুলুল্লাহ সাঃ ও ছাহাবায়ে কেরামগনদের থেকে পাওয়া যায় না আবার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বর্তমান যুগে তালি যুক্ত পোশাক পরিধান করলে মনের মধ্যে উল্টো আরেক রোগ লোক দেখানোর বিষয় আসার সম্ভাবনা প্রবল। মনের মধ্যে এটা আসবে যে মানুষগন দেখবে যে আমার মাঝে অহংকার নেই, আমি তালি যুক্ত পোশাক পরিধান করেছি, তাহলে আমি কত বিনয়ী ইত্যাদি। অথচ উত্তম বা সুন্দর পোশাক পরায় কোনো অহংকার নেই। যার যার অবস্থান অনুযায়ী পোশাক পরাও ইসলামের বিধান ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের শোকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন।

মোট কথা সুন্দর ও উত্তম কাপড় কিংবা ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করা অহংকার বা গোনাহের কারণ নয় বরং সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পোশাকে ব্যাপারেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।

তবে যেই পোশাক পরিধান করবেন, সেটির দ্বারা যেনো মনের মধ্যে কোনো অহংকার না আসে, সেদিকে সচেতন থাকবেন। পোশক পরিধানের সময় উপরে উল্লেখিত দোয়া ও ইস্তেগফার পাঠ করবেন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনাকে অহংকার থেকে মুক্ত রাখবেন।

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পোশাক বিষয়ক কিছু নীতিমালা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/4492/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...