ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম
জবাব,
অযু ভঙ্গের অন্যতম একটি কারন হলো ঘুম। চিৎ হয়ে; কাত হয়ে; হেলান দিয়ে কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেস দিয়ে
ঘুমালে বা কোন কিছুতে হেলান দিয়ে ঘুমালে
বস্তুটি সরিয়ে ফেললে যদি সে-ব্যক্তি পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে,
তাহলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে৷ আর যদি
পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে তাহলে ওযু ভঙ্গ হবেনা৷ আর কোন কিছুতে
হেলান না দিয়ে শুধু বসে বসে ঘুমালে ওযু ভঙ্গ হবেনা৷
ইবনে আব্বাস রাযি.
থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ ﷺ
বলেছেন,
لَيْسَ
عَلَى مَنْ نَامَ سَاجِدًا وُضُوءٌ، حَتَّى يَضْطَجِعَ، فَإِنَّهُ إِذَا
اضْطَجَعَ، اسْتَرْخَتْ مَفَاصِلُهُ
সেজদা অবস্থায় ঘুমালে
অযু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে,
কেননা, চিৎ বা কাত হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়।
[ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে]।
(মুসনাদে আহমাদ ২৩১৫ আবু দাউদ ২০২)ৎ
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
১. প্রশ্নে উল্লেখিত বসে সামান্য ঘুম,
এতে যদি কোনো কিছুর সাথে হেলান দেওয়া না হয়,
তাহলে অযু ভেঙ্গে যাবে না। আর বসে বসে ঘুমানো
অবস্থায় যদি সামনের দিকে সামান্য ঝুকে যান,
তাহলে ওযু ভঙ্গ হবেনা৷
কেননা হাদীস শরীফে
বর্নিত আছে, হযরত আনাস (রাযিঃ) হতে বর্নিত,
তিনি বলেনঃ হযরত রাসুলুল্লাহ
(সাঃ)
ইশার নামাযে আসতে বিলম্ভ হলে সাহাবীগন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার কারনে তাদের
ঘাড়/গর্দানসমূহ নিচের দিকে ঝুলে পড়তো৷ এমতাবস্থায়
তারা পুনরায় ওযু না করেই নামায আদায় করতেন৷ (আবু দাউদ হা,২০০)
চিত বা কাত হয়ে ঘুমিয়ে
পড়লে নিশ্চিতভাবেই অজু ভেঙে যায় এবং নামাজের জন্য পুনরায় অজু করতে হয়।
কিন্তু কেউ যদি চিত
বা কাত হয়ে না ঘুমায়, বরং হেলান দিয়ে ঘুমায় এবং এ সময় যদি নিতম্ব মাটি থেকে পৃথক না
হয় তাহলে কি অজু ভাঙবে? এর উত্তরে অনেক ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে— ‘হেলান দিয়ে ঘুমানোর সময় যদি নিতম্ব মাটি থেকে পৃথক না হয় তাহলে
অজু ভঙ্গ হবে না। (হিন্দিয়া: ১/১২, আল মুহিতুল বুরহানি: ১/৬৮,
রদ্দুল মুহতার: ১/১৪৩,
আহসানুল ফতোয়া: ২/২২-২৩,
ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৩/৫৬)
এখানে অজু না ভাঙার
মূল যে কারণটি দেখা যাচ্ছে, সেটি হলো—নিতম্ব
মাটি থেকে পৃথক না হওয়ার কারণে কোমরের নিচের অংশ মাটি,
ফ্লোর, চেয়ার ইত্যাদির সাথে ভালোভাবে এঁটে লেগে থাকা।
যদি ঘুমন্ত অবস্থায়
কোমরের নীচের অংশ মাটি, ফ্লোর, চেয়ার ইত্যাদি থেকে পৃথক হয়, তাহলে অজু নষ্ট হয়ে গেছে বলে ধরা হবে। এক্ষেত্রে
নামাজের জন্য পুনরায় অজু করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৩৫;
ফতোয়া খানিয়া: ১/৪১;
খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/১৯)
২. অবপিত্র অবস্থায় নামাজ পড়ার কাজটি কুফরী। কিন্তু এর দ্বারা লোকটি কাফের হয়ে যায় না। তবে যদি এ বিশ্বাসে অজু ছাড়া নামায পড়ে যে,
ওজু ছাড়াই নামায পড়ার বিধান। তাহলে পবিত্র
কুরআনের বিধান অস্বিকার করার কারণে লোকটি কাফির হয়ে যাবে। তাকে নতুন করে ঈমান আনতে
হবে।
আর যদি কোন ব্যক্তি ভুলবশত বা অনিচ্ছাকৃত অজু
ছাড়া নামাজ পড়ে থাকে, তাহলে তাকে কাফির বলা যাবে না।
৩. জ্বী না আপনার ঈমানের কোন সমস্যা হয়নি
এবং এতে কোন গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ।
৪. পেশাব-পায়খানা এবং বায়ুর চাপ নিয়ে নামায আরম্ভ করা মাকরূহ তাহরীমী। আর স্বাভাবিক
অবস্থায় নামায শুরু করার পর নামাযের ভিতরে এমন চাপ সৃষ্টি হলে নামাযের পর্যাপ্ত ওয়াক্ত
বাকি থাকা সত্তে¡ও এ অবস্থায় নামায চালিয়ে যাওয়া মাকরূহ।
এ ধরনের ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দিয়ে ওযু-ইস্তিঞ্জা সেরে পূর্ণ চাপমুক্ত হয়ে নামায
আদায় করা কর্তব্য।
হাঁ,
নামাযের ওয়াক্ত যদি এত স্বল্প থাকে যে,
প্রয়োজন সারতে গেলে নামায কাযা হয়ে যাবে
তাহলে সম্ভব হলে এ অবস্থায়ই নামায পড়ে নিবে।
অবশ্য পর্যাপ্ত ওয়াক্ত
থাকার পরও কোনো ইমাম বা একাকী নামায আদায়কারী যদি এ অবস্থায় নামায পড়ে নেয় তবে
এমনটি করা মাকরূহ হলেও তাদের নামায আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় পড়া জরুরি নয়। তবে ভবিষ্যতে
এরূপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। (শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৬৬; রদ্দুল মুহতার ১/৩৪১,
৬৪৪)
এ
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন:
https://ifatwa.info/3169/
https://ifatwa.info/61884/