ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাব,
১. পাত্র পাত্রীর পক্ষে যে ব্যক্তি ইজাব দিবেন, তাঁকে সাক্ষী
হিসেবে ধরা যাবে না। বরং ইজাব প্রদানকারী ব্যতিত দুইজন সাবালক পুরুষ বা একজন পুরুষ
এবং দুইজন মহিলা সাক্ষী থাকা প্রয়োজন। সুতরাং ছেলে এবং মেয়ে যদি
ইজাব ও কবুল করে থাকে তাহলে উভয়ের বাবা সাক্ষী হতে পারবে। তবে মেয়ের
বাবা সাক্ষী হতে পারবেন, যদি মেয়ে সাবালক হয়। নতুবা তিনি সাক্ষী হতে পারবেন না।
২. ইজাব ও কবুলটি বলতে হয় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে। সুতরাং সামনা সামনি
ছেলে ও মেয়ের ইজাব ও কবুলের সময় যদি ছেলের বাবা ও মেয়ের বাবা
উপস্থিত থাকে অথবা ছেলের মা-বাবা ও মেয়ের মা উপস্থিত থাকে তাহলে সাক্ষী হিসেবে তারাই
যথেষ্ঠ।
৩. বিয়ের ক্ষেত্রে ওয়ালিমার আয়োজন করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি বিয়ের
প্রচারণার অন্তর্ভুক্ত এবং আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করার শামিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম জয়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর সাথে বাসর রাত অতিবাহিত করার পর ওয়ালিমা
করেছিলেন। (বুখারী:৫১৭০)
সুতরাং সুন্নাহ হলো ছেলেই ওলিমার আয়োজন করবে। মেয়ের বাবার ক্ষেত্রে ওলিমার বিধান
নেই। তবে স্বাভাবিক ভাবে কোন রুসম ও সামাজিক চাপ ছাড়াই মেয়ের বাবা স্বীয় আত্নীয় স্বজনকে
আপ্যায়ন করালে করাতে পারে এতে বাধা নিষেধ নেই।
৪. বিয়ে-শাদি আকীকা কিংবা এ জাতীয় কোনো বৈধ অনুষ্ঠানে কেউ যদি আমন্ত্রিত
হয় তখন সেখানে কোনো উপহারসহ উপস্থিত হওয়া নিষেধ নয়। কেননা, উপহার প্রদান
এবং অন্যের আনন্দে শরিক হওয়া মৌলিকভাবে এ দুটোই ইসলামসমর্থিত; বরং এ দুটি
বিষয় ইসলামে কাঙ্ক্ষিতও। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
تَهَادَوْا فَإِنَّ الْهَدِيَّةَ تُذْهِبُ
وَغَرَ الصَّدْرِ
তোমরা পরস্পরে হাদিয়া বিনিময় করো। এর দ্বারা অন্তরের সঙ্কীর্ণতা
ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। (মুসনাদে আহমদ ৯২৫০)
অপর হাদীসে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
حَقّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ
رَدّ السّلاَمِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ
الدّعْوَةِ وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ.
এক মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের পাঁচটি অধিকার- ১. সালামের
জবাব দেওয়া, ২.
অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া,
৩. জানাযায় শরিক হওয়া,
৪. দাওয়াত করলে তা রক্ষা করা, ৫. হাঁচির জবাবে দুআ পড়া। (সহীহ বুখারী ১২৪০)
সুতরাং সামাজিক চাপ নয়; হাদিয়া আদান-প্রদান হওয়া উচিত খুশি মনে
এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা এই সুন্দর ও স্বাভাবিক বিষয়টিকে
একপ্রকার সামাজিক বাধ্যবাধকতা বানিয়ে ফেলেছি। এ বাধ্যবাধকতা দুই দিক থেকেই। যিনি আমন্ত্রিত, তিনি ভাবেন-একটি
মানসম্মত উপহার ছাড়া সেখানে যাওয়া যাবে না। আবার যারা আমন্ত্রক, তারা অতিথিদের
বরণ করার তুলনায় উপহার গ্রহণের প্রতিই অধিক মনোযোগী হয়ে থাকেন। উপহার গ্রহণের জন্য
থাকে ভিন্ন ব্যবস্থাপনা। এবং সেটাও অনেকটা এমনভাবে, যেন চক্ষুলজ্জার কারণে হলেও কেউ উপহার
প্রদান না করে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে না পারেন। যেন এটাই এখন সামাজিকতা। অথচ জাতীয়
সামাজিকতা পরিত্যাজ্য। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
أَلَا لا يَحِلُّ مالُ امرِىءٍ إلا بِطِيبِ
نفسٍ منه
খবরদার! একজন মুসলমানের যে কোনো জিনিস তার মনের সন্তুষ্টি ছাড়া
অপর মুসলমানের জন্য হালাল নয়। (সহিহ আলজামি’ ৭৬৬২) এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে
ভিজিট করুন: https://www.alkawsar.com/bn/article/2306/
সুতরাং সামজিক প্রথা মনে না করে এবং মানুষের নিকট থেকে গিফট পাওয়ার প্রত্যাশা করা
ছাড়াই যদি কেউ গিফট আনে তা সংরক্ষণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা যেতে পারে তবে এটি যেন,
সাধারণ মানুষকে গিফট দিতে বাধ্য করার মতো পরিবেশ তৈরী না করে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল
রাখতে হবে।
৫. ইজাব, কবুল ও সাক্ষীসহ শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে হলেই বিয়ে হবে। এতে কোন সমস্যা নেই।
৬. বিয়েতে মেয়েরা জোরে আওয়াজ করে, কাজিকে শুনিয়ে
অথবা লোকদের শুনিয়ে কবুল বলতে হবে, এই
বিধান ইসলামী বিয়ের বিধানে নেই। কাজী সাহেব শুনা আবশ্যক নয়। সাক্ষীগণ শুনলেই যথেষ্ঠ।
তবে সাক্ষীদের সাথে সেও শুনতে পারে।
৭-৯. এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন:
https://ifatwa.info/8941/
https://ifatwa.info/44630/