بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/4233 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মৃত ব্যাক্তির জন্য কুরআন
শরিফ তেলাওয়াত করে ঈসালে ছওয়াব করা জায়েজ আছে। এতে কোনো সমস্যা নেই। ঈসাল মানে হল, পৌঁছানো। আর
সওয়াব মানেতো সওয়াব,
পূণ্য।
তাহলে ঈসালে সওয়াব মানে হল, সওয়াব পৌঁছানো।প্রচলিতভাবে “ঈসালে সওয়াব”
বলা হয়, মৃত
ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায় কোন আমল করে সওয়াব পৌঁছানোকে বলা হয়।
পবিত্র কুরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ
الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ
الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا
وَخَيْرٌ أَمَلًا [١٨:٤٦]
ধন ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী
সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম। [সূরা
কাহাফ-৪৬]
স্থায়ী সৎকর্ম কী? এক হাদীসে রাসূল সাঃ ব্যাখ্যা করেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ
عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ
عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ব্যক্তি যখন
মারা যায়, তখন
তার নেক আমল করার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি পথ ছাড়া। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয় হল
ইলম, যদ্বারা
মানুষ উপকার পায়, এবং
তৃতীয় হল, নেক
সন্তানের দুআ। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৮৪৪, সুনানে আবু
দাউদ, হাদীস
নং-২৮৮০, মুসলিম, হাদীস নং-১৬৩১]
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ
رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أُمِّي
افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا، وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ، فَهَلْ لَهَا
أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর কাছে এসে
বলল, আমার
আম্মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন।[কিছু বলে যেতে পারেননি] আমার ধারণা! তিনি যদি কিছু বলার
সুযোগ পেতেন, তাহলে
আমাকে তার নামে সদকা করতে বলতেন। তো আমি যদি তার নামে সদকা করি, তাহলে কি এর
সওয়াব তিনি পাবেন? রাসূল
সাঃ বললেন, হ্যাঁ।
[বুখারী, হাদীস
নং-১৩৮৮]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا،
أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ، جَاءَتْ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: إِنَّ أُمِّي نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى
مَاتَتْ، أَفَأَحُجُّ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ حُجِّي عَنْهَا، أَرَأَيْتِ لَوْ
كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً؟ اقْضُوا اللَّهَ فَاللَّهُ
أَحَقُّ بِالوَفَاءِ
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। এক জুহাইনা এলাকার এক মহিলা
রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বললেন, আমার আম্মা হজ্ব করার মান্নত করেছিলেন, কিন্তু হজ্ব
করার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি এখন তার পক্ষ থেকে তা আদায় করবো? রাসূল সাঃ ইরশাদ
করলেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ
থেকে আদায় কর। তোমার মায়ের যিম্মায় যদি ঋণ থাকতো, তাহলে কি তুমি তা আদায় করতে না? তেমনি এটাও
আদায় কর। কারণ আল্লাহ তাআলাই অধিক হক রাখেন যে, তার সাথে কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করা হবে।
[বুখারী, হাদীস
নং-১৮৫২]
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: تُوُفِّيَ رَجُلٌ
فَغَسَّلْنَاهُ، وَحَنَّطْنَاهُ، وَكَفَّنَّاهُ، ثُمَّ أَتَيْنَا بِهِ رَسُولَ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عَلَيْهِ، فَقُلْنَا: تُصَلِّي
عَلَيْهِ؟ فَخَطَا خُطًى، ثُمَّ قَالَ: ” أَعَلَيْهِ دَيْنٌ؟ ” قُلْنَا:
دِينَارَانِ، فَانْصَرَفَ، فَتَحَمَّلَهُمَا أَبُو قَتَادَةَ، فَأَتَيْنَاهُ،
فَقَالَ أَبُو قَتَادَةَ: الدِّينَارَانِ عَلَيَّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” حَقُّ
الْغَرِيمُ، وَبَرِئَ مِنْهُمَا الْمَيِّتُ؟ ” قَالَ: نَعَمْ، فَصَلَّى
عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ بَعْدَ ذَلِكَ بِيَوْمٍ: ” مَا فَعَلَ الدِّينَارَانِ؟
“فَقَالَ: إِنَّمَا مَاتَ أَمْسِ، قَالَ: فَعَادَ إِلَيْهِ مِنَ الْغَدِ، فَقَالَ:
لَقَدْ قَضَيْتُهُمَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ”
الْآنَ بَرَدَتْ عَلَيْهِ جِلْدُهُ “،
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি
মারা গেলে আমরা তার গোসল দিলাম। তারপর কাফন পড়িয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে নিয়ে এলাম। যেন
তিনি তার উপর জানাযা পড়েন। আমরা হযরতকে জানাযা পড়াতে অনুরোধ করলাম। নবীজী সাঃ কয়েক
কদম আগে বাড়লেন। তারপর তিনি বললেন, তার উপর কি কোন ঋণ আছে? আমরা বললাম, দুই দিনার ঋণ
আছে। একথা শুনে রাসূল সাঃ ফিরে গেলেন। তখন আবু কাতাদা রাঃ বললেন, আমি তা পরিশোধ
করে দিব। ঋণের হক আদায় করে তুমি মৃতকে ঋণমুক্ত করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তারপর রাসূল
সাঃ তার জানাযা পড়ালেন। তারপর একদিন পর রাসূল সাঃ জিজ্ঞাসা করলেন, ঋণ কি আদায়
হয়েছে? আবু
কাতাদা বললেন, তিনিতো
গতকাল মারা গেছেন। তারপর একদিন পর আবার জিজ্ঞাসা করলেন। তখন জবাবে বলা হল, আদায় করা হয়েছে।
তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন,
এখন উক্ত ব্যক্তির আত্মাকে শান্ত করেছো। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৫৩৬]
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ:
شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْأَضْحَى
بِالْمُصَلَّى، فَلَمَّا قَضَى خُطْبَتَهُ نَزَلَ مِنْ مِنْبَرِهِ وأُتِيَ
بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ،
وَقَالَ: «بِسْمِ اللَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، هَذَا عَنِّي، وَعَمَّنْ لَمْ
يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাঃ
এর সাথে ঈদুল আযহায় নামাযে শরীক ছিলাম। যখন খুতবা শেষ হল। তখন তিনি মিম্বর থেকে নামলেন।
তারপর তার কাছে একটি ভেড়া আনা হল। তারপর তিনি তা জবাই করলে নিজ হাতে। জবাইকালে বললেন, বিসমিল্লাহি
আল্লাহু আকবার, এটি
আমার এবং আমার ঐ উম্মতীর পক্ষ থেকে যারা কুরবানী করতে পারেনি। [আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮১০]
উপরোক্ত দলীল প্রমাণাদীর মাধ্যমে আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়ে
গেছে যে, মৃতের
জন্য ঈসালে সওয়াব করা কুরআন ও হাদীস এবং ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা প্রমাণিত। তাই ঈসালে সওয়াবের
উদ্দেশ্যে যেসব কাজ করা যায়ঃ
১.
মৃতের নামে সদকা করা।
২.
কুরবানী করা।
৩.
মৃতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা।
৪.
মৃতের জন্য দুআ করা।
৫.
ইস্তিগফার করা।
৬.
হজ্ব করা।
ইত্যাদি পূণ্যের কাজ করে মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করা
যায়। যা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত।
★প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
মাইয়্যেতের পরিবারের জন্য উচিত উক্ত মৃত ব্যক্তির জন্য উপরে উল্লেখিত আমলগুলোর
মাধ্যমে ঈসালে সওয়ার করা। আশা করা যায় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ। তবে তার
বিষয়ে যেই স্বপ্ন দেখা গেছে তা অন্য করো নিকট বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্যই দাওয়াতের
কাজ করতে হবে কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, স্বপ্ন শরীয়তের দলীল
নয়। সুতরাং উক্ত মৃত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে ঐ স্বপ্নে বর্ণনা দেওয়া থেকে দূরে থাকতে
হবে।