জবাবঃ-
হযরত ইউনুস আঃ এর উনার কওমের সাথে সংগঠিত ঘটনা এবং ঘটনা প্রক্ষালে উনার পঠিত দু'আ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﻭَﺫَﺍ ﺍﻟﻨُّﻮﻥِ ﺇِﺫ ﺫَّﻫَﺐَ ﻣُﻐَﺎﺿِﺒًﺎ ﻓَﻈَﻦَّ ﺃَﻥ ﻟَّﻦ ﻧَّﻘْﺪِﺭَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﻨَﺎﺩَﻯ ﻓِﻲ ﺍﻟﻈُّﻠُﻤَﺎﺕِ ﺃَﻥ ﻟَّﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧﺖَ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺇِﻧِّﻲ ﻛُﻨﺖُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦ(َ٨٧)
ﻓَﺎﺳْﺘَﺠَﺒْﻨَﺎ ﻟَﻪُ ﻭَﻧَﺠَّﻴْﻨَﺎﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻐَﻢِّ ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻧُﻨﺠِﻲ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ(٨٨)
তরজমাঃ-
এবং মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেনঃ
"(হে আল্লাহ)"আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাশ্য নেই।আপনিই প্রবিত্র।আমি গোনাহগার, জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।"
সূরা আম্বিয়া-৮৭
অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।
সূরা আম্বিয়া-৮৮
ইউনুস এর পঠিত দু'আ সম্পর্কে এক হাদীসে এসেছে,
হযরত সা'দ রাযি থেকে বর্ণিত
2292 - ﻭَﻋَﻦْ ﺳَﻌْﺪٍ - ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ - ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ اﻟﻠَّﻪِ - ﺻَﻠَّﻰ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ -: " «ﺩَﻋْﻮَﺓُ ﺫِﻱ اﻟﻨُّﻮﻥِ ﺇِﺫْ ﺩَﻋَﺎ ﺭَﺑَّﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺑَﻄْﻦِ اﻟْﺤُﻮﺕِ {ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺃَﻧْﺖَ، ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ، ﺇِﻧِّﻲ ﻛُﻨْﺖُ ﻣِﻦَ اﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ} [ اﻷﻧﺒﻴﺎء: 87]
ﻟَﻢْ ﻳَﺪْﻉُ ﺑِﻬَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻓِﻲ ﺷَﻲْءٍ ﺇِﻻَّ اﺳْﺘُﺠِﻴﺐَ ﻟَﻪُ» " ﺭَﻭَاﻩُ ﺃَﺣْﻤَﺪُ، ﻭَاﻟﺘِّﺮْﻣِﺬِﻱُّ.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, মাছ ওয়ালার দু'আ যখন তিনি মাছের পেঠে থাকাবস্থায় দু'আ করেছিলেন,
"লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা, ইন্নি কুনতু মিনাজ-জালিমিন"
অর্থঃ-(হে আল্লাহ)"আপনি ব্যতীত আর কোনো মা'বুদ নেই।আপনি প্রবিত্র।আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।"
(সুতরাং আপনি রহম করুন)
যে মুসলমান-ই যে কোনো বিষয়ে উক্ত দু'আ পড়বে,আল্লাহ তা'আলা তার দু'আকে কবুল করে নিবেন।
মুসনাদে আহমাদ ও জামে তিরমিযি দ্রষ্টব্য।
{মিশকাত,হাদীস নং-২২৯২}
ফিকহে হানাফী রিসার্চ সেন্টার চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
এর পরিচালক: ফখরুল ইসলাম নিজামপূরী এর একটি ফাতাওয়ার সারসংক্ষেপ নিম্নে উল্লেখ করছি
.........................................
একটি মূলনীতি জানা থাকলে এ বিষয়গুলো বুঝা খুবই সহজ। এক হল দ্বীন। আরেক হল দুনিয়া।
যে বস্তুর ফলাফল মৃত্যুর পর মানুষ পেতে চায়, তার নাম দ্বীন। আর যে বস্তুর ফলাফল মানুষ মৃত্যুর আগেই পেতে চায়, তাই হল দুনিয়া।
বিদআতের সম্পর্ক হল দ্বীনের সাথে। দুনিয়ার সাথে নয়। তা’ই দুনিয়াবী কোন বস্তুর ক্ষেত্রে বিদআত শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। যেমন চেয়ার টেবিল, কম্পিটউটার ইত্যাদি।
কারণ এসব কোনটিই মৃত্যুর পরের ফলাফলের জন্য কেউ নির্মিত করেনি।
কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে মিলাদ পড়া, মিলাদে কিয়াম করা ইত্যাদি বিদআত। কারণ এসবের দ্বারা মৃত্যুর পর প্রতিদান পাবার আশা করা হয়, আর এসবের প্রমাণ কুরআন হাদীস ও সাহাবা তাবেয়ীদের জমানায় ছিল না।
আর যেসব বিষয় দ্বীনী বিষয় নয় বরং দুনিয়াবী বিষয়, সেসব ক্ষেত্রে যদি সরাসরি কুরআনের আয়াত বা হাদীস বিরোধী না পাওয়া যায়, কিংবা শরীয়ত বিরোধী আর কোন কারণ না পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত কাজটি বৈধ হবে।
উপরোক্ত মূলনীতিটি ভাল করে অনুধাবন করলে খতমে জালালী, খতমে ইউনুস, খতমে খাজেগান ইত্যাদির হুকুমও আপনি বের করে নিতে পারবেন।
উপরোক্ত খতমের কোনটিই আখেরাতের ফায়দার জন্য করা হয় না। বরং দুনিয়াবী কোন ফায়দার জন্য করা হয়ে থাকে। যেমন বিপদমুক্তি ইত্যাদি। তাই সরাসরি কুরআনের কোন আয়াত বা হাদীস এসবের বিরোধী পেশ না করতে পারলে এসবের কোনটিকে নাজায়েজ বা হারাম বলার কোন সুযোগ নেই।
দ্বিতীয় জবাব হল, এসব খতমের অবস্থান হল, ডাক্তারদের অভিজ্ঞতালব্দ পথ্যের মত। অভিজ্ঞ ডাক্তারগণ যেমন তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বের করেছেন যে, জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেলে ভাল হয়, ঠান্ডা লাগলে ওরাডিন ইত্যাদি ঔষধ খেলে ভাল হতে পারে, তেমনি বুযুর্গানে দ্বীন তাদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জেনেছেন যে, কিছু কিছু নির্দিষ্ট খতমের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু ফায়দা হয়ে থাকে। তাই তারা বুযুর্গানে দ্বীন থেকে বিভিন্ন খতমের প্রমাণ পাওয়া যায়।
এসবই অভিজ্ঞতালব্দ বিষয়। কোনটিই দ্বীনের বিষয় নয়। বা কুরআন ও হাদীস থেকে প্রমাণিত বিষয় নয়। এসবকে কেউ সওয়াবের কাজও মনে করে না। বরং প্রয়োজন পূরণের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
যেমন ডাক্তারের সাজেশন অনুপাতে ঔষধ সেবন। তা’ই ডাক্তারের পরামর্শ অনুপাতে পথ্য সেবন যেমন হারাম ও বিদআত নয়, তেমনি কতিপয় দুনিয়াবী উদ্দেশ্য হাসিলের আশায় বুযুর্গদের অভিজ্ঞতালব্দ উপরোক্ত খতম পড়াও হারাম বা বিদআত নয়।
হ্যাঁ, এসবকে সুন্নত মনে করা, কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত পদ্ধতি মনে করা বিদআত। কেননা দু'আয়ে ইউনুস হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলে ও সংখ্যা কোনো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
নতুবা এমনিতে আমল করতে কোন সমস্যা নেই।
সুপ্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে,বিপদআপদ থেকে মুক্তি ও মাকসাদ হাসিল করতে উক্ত দু'আ যদি কেউ ঈমান ও ইয়াকিনের সাথে পড়ে তবে তার মাকসাদ পূর্ণ হবে।
তবে এক্ষেত্রে কোনো সময় বা সংখ্যা হাদীসে নির্ধারিত নেই।যে কোনো সময়ই পড়া যাবে।এবং যত ইচ্ছা পড়া যাবে।এক্ষেত্রে কোনো কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যাকে সুন্নাত মনে করা যাবে না।এটা বেদাআত হবে।
নির্দিষ্ট সংখ্যায় না পড়লে দু'আ কবুল হবে না এবং পড়লে দু'আ কবুল হবে, এরকম আকিদা-বিশ্বাস পরিত্যাগ করে যদি কেউ পূর্ববর্তী বুজুর্গানে কেরামদের তরিকাকে গ্রহণ করে তবে তা অবশ্য নিন্দনীয় হবে না।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।