ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম।
জবাব,
মুমিন জীবনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
প্রকৃত মুমিনের সব কর্মপ্রচেষ্টা এর ওপর নির্ভর করে থাকে। মহান রবের সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা
অর্জনের এই ব্যাকুলতা থেকে মুমিন বান্দারা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকে প্রতিনিয়ত। আল্লাহ
যা হারাম করেছেন তা পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা পালনে সদা সচেষ্ট থাকে।
আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির পরোয়া না করে মানুষের সন্তুষ্টি
খুঁজে বেড়ানোর পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন
مَنِ الْتَمَسَ رِضَاءَ اللَّهِ بِسَخَطِ النَّاسِ كَفَاهُ اللَّهُ مُؤْنَةَ النَّاسِ وَمَنِ الْتَمَسَ رِضَاءَ النَّاسِ بِسَخَطِ اللَّهِ وَكلَهُ اللَّهُ إِلَى النَّاسِ
‘যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টির পরোয়া না করে আল্লাহ তাআলার
সন্তুষ্টি খুঁজে বেড়ায়,
মানুষের দেওয়া দুঃখ-কষ্ট থেকে বাঁচানোর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই তার জন্য যথেষ্ট
হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে অসন্তুষ্ট করে হলেও মানুষের সন্তুষ্টি খুঁজে
বেড়ায়, আল্লাহ
তাআলা তাকে মানুষের দায়িত্বে ছেড়ে দেন। (সুনানে তিরিমিজি: ২৪১৪)
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন ইমানদারের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি
ও সফলতা। আল্লাহ বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ
ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ
‘মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের জন্য আত্ম-বিক্রয় করে থাকে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর অত্যন্ত স্নেহপরায়ণ।’
(সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
لَّا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِّن نَّجْوَاهُمْ
إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ ۚ
وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا
عَظِيمًا
‘তাদের
অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই, তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় সদকা, সত্কর্ম ও মানুষের
মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কেউ তা করলে অবশ্যই আমি
তাকে মহাপুরস্কার দেব।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৪)
عَنْ رَجُلٍ مِنْ اهْلِ الْمَدِينَةِ قَالَ : كَتَبَ مُعَاوِيَةُ إِلَى عَائِشَةَ أم الْمُؤْمِنِينَ رَضيَ اللهُ عَنْهَا انِ اكْتُبِي إِلَيَّ كِتَابًا تُوصِينِي فِيهِ وَلا تُكْثِرِي عَلَيَّ فَكَتَبَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا إِلَى مُعَاوِيَةَ : سَلامٌ عَلَيْكَ امَّا بَعْدُ : فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنِ الْتَمَسَ رِضَاءَ اللهِ بِسَخَطِ النَّاسِ كافَاهُ اللهُ مُؤْنَةَ النَّاسِ وَمَنِ الْتَمَسَ رِضَاءَ النَّاسِ بِسَخَطِ اللهِ وَكَلَهُ اللهُ إِلَى النَّاس وَالسَّلامُ عَلَيْكَ
মদীনার এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত, একদা মুআবিয়া
(রাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে এই আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখলেন যে, ’আমার জন্য একটি
চিঠি লিখুন এবং তাতে আপনি আমাকে কিছু অসিয়ত করুন (মন্ত্রণা ও উপদেশ দেন)। আর বেশী ভার
দেবেন না।’ সুতরাং আয়েশা (রাঃ) হযরত মুআবিয়া (রাঃ) কে চিঠিতে লিখলেন যে, ’সালামুন আলাইক।
অতঃপর আমি আপনাকে জানাই যে,
আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ’’যে ব্যক্তি
লোকেদেরকে অসন্তুষ্ট করেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তির
জন্য লোকেদের কষ্টদানে আল্লাহই যথেষ্ট হন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে লোকেদের
সন্তুষ্টি খোঁজে সে ব্যক্তিকে আল্লাহ লোকেদের প্রতিই সোপর্দ করে দেন।’’ অসসালামু আলাইক্।’
(তিরমিযী ২৪১৪, সিলসিলাহ
সহীহাহ ২৩১১)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নেল্লিখিত হাদীস তথা “যে ব্যক্তি লোকেদেরকে অসন্তুষ্ট করেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ
করে, সে
ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এবং লোকদেরকেও তার প্রতি সন্তুষ্ট করেন। আর যে ব্যক্তি
আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে লোকদেরকে সন্তুষ্টি অন্বেষণ করে, সে ব্যক্তির
প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এবং লোকদেরকেও তার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দেন।’’ (ইবনে হিব্বান
২৭৬ )
হাদীসের ব্যাখ্যা হলো, যে কাজে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন, সে কাজে মানুষ
সন্তুষ্ট হলেও এতে কোনো কল্যাণ নেই। আল্লাহর কাছে এর কোনো গ্রহণযোগ্যতাও নেই। কারণ, যারা নাফরমান ও বেঈমান হয়ে থাকে সাধারণত তারাই আল্লাহ যে
কাজে অসুন্তুষ্ট হোন তারা তাতে খুশী হয়ে থাকে। কিন্তু তাদের সেই আনন্দের কোন মূল্য
নেই আল্লাহ তায়ালার নিকট। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষ যখন কোন কাজ করে তাতে
আল্লাহ তায়ালাও খুশী হোন এবং ঈমানদার বান্দাগনও খুশী হোন। যদিও তাতে কিছু নাফরমান নারাজ
হয় কিন্তু তাদের অখুশী থাকা মুমিন বান্দাকে সামগ্রীক দিক থেকে কোন ক্ষতি করতে পারে
না।