বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
যৌথপরিবারে থাকলেও স্বামীর খেদমত ব্যতীত আর কারো খেদমত এমনকি সবার রান্নাবান্নার দায়িত্ব ও স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয় বরং তার নৈতিক দায়িত্ব।তবে রান্নাবান্না সম্পর্কে মতানৈক্য রয়েছে এবং বিষয়টা ব্যাখ্যা সাপেক্ষও ।
পারিবারিক দন্ধ,পরনির্ভরশীল মনমানসিকতা সৃষ্টি সহ আরো নানাবিধ কারণ যৌথপরিবারে রয়েছে যদ্দরুন থানবী রহ সহ অনেক ফেকাহবিদগণ এককপরিবারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
অপরদিকে একক পরিবার প্রথা মানুষের জান মাল ও ঈমান রক্ষার্থে সব চেয়ে বেশী ভুমিকা রাখে।
যেমনঃ-
১/সারাদিন কাজকর্মের শেষে মানুষ একটু নির্জনে আরাম করতে চায়,এবং প্রতিটা নারীই চায় তার পৃথিবীকে সে নিজের মত করে সাজাতে, এবং যখনই প্রয়োজন তখনই স্বামীর সাথে একান্তে সময় অতিবাহিত করতে, এটা একমাত্র একক পরিবারেই সম্ভব যৌথপরিবারে কখনো সম্ভব হবে না।
২/একক পরিবার হলে প্রতিটা মানুষ হালাল ত্বরিকায় তার পাথেয় সংগ্রহে ব্যস্ত থাকবে কারণ এখন তাকে অন্য কেউ খাওয়াবে না, তাই রুজি করতে হবে, এতে করে সে স্বনির্ভর হতে পারবে, কারো উপর বুঝা হবেনা বা হওয়ার চেষ্টা করবে না।
প্রথমে সব কিছু পৃথক করে নিলে পরে ওরাসতের সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হবেনা, সে পিতার সম্পত্তি থেকে যা কিছুই পাবে তা নিয়ে প্রথম থেকেই নিজের মনে করে চিন্তাভাবনা করার সুযোগ পাবে।
৩/একক পরিবারের ব্যবস্থা হলে পর্দার মত গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান মানা ও পালন করা স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের জন্য সম্ভবপর হবে।
তাছাড়া নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে কিছু সময় মানুষ ঘরে তার বস্ত্র খোলে আরাম করবে এটা তার মৌলিক অধিকার যা কোরআন তাকে দিয়েছে এমতাবস্তায় কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না এমনকি নিজ বালিগ সন্তাদি ও সেবক-সেবিকারাও প্রবেশ করতে পারবে না,যৌথ পরিবার হলে বস্ত্র খোলে আরাম করা কখনো সম্ভব হবেনা।
আল্লাহ তা'আলা বলেন।
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻟِﻴَﺴْﺘَﺄْﺫِﻧﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻜُﻢْ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﻢْ ﻳَﺒْﻠُﻐُﻮﺍ ﺍﻟْﺤُﻠُﻢَ ﻣِﻨﻜُﻢْ ﺛَﻠَﺎﺙَ ﻣَﺮَّﺍﺕٍ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞِ ﺻَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﻭَﺣِﻴﻦَ ﺗَﻀَﻌُﻮﻥَ ﺛِﻴَﺎﺑَﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻈَّﻬِﻴﺮَﺓِ ﻭَﻣِﻦ ﺑَﻌْﺪِ ﺻَﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﻌِﺸَﺎﺀ ﺛَﻠَﺎﺙُ ﻋَﻮْﺭَﺍﺕٍ ﻟَّﻜُﻢْ ﻟَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺟُﻨَﺎﺡٌ ﺑَﻌْﺪَﻫُﻦَّ ﻃَﻮَّﺍﻓُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢ ﺑَﻌْﻀُﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺂﻳَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﺣَﻜِﻴﻢٌ
হে মুমিনগণ! তোমাদের দাসদাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাযের পূর্বে, দুপুরে যখন তোমরা বস্ত্র খুলে রাখ এবং এশার নামাযের পর। এই তিন সময় তোমাদের দেহ খোলার সময়। এ সময়ের পর তোমাদের ও তাদের জন্যে কোন দোষ নেই। তোমাদের একে অপরের কাছে তো যাতায়াত করতেই হয়, এমনি ভাবে আল্লাহ তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ বিবৃত করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻎَ ﺍﻟْﺄَﻃْﻔَﺎﻝُ ﻣِﻨﻜُﻢُ ﺍﻟْﺤُﻠُﻢَ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﺄْﺫِﻧُﻮﺍ ﻛَﻤَﺎ ﺍﺳْﺘَﺄْﺫَﻥَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻠِﻬِﻢْ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﺁﻳَﺎﺗِﻪِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﺣَﻜِﻴﻢٌ
তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন বায়োপ্রাপ্ত হয়, তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি চায়। এমনিভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
(সূরা নূর-৫৮)
অবশ্য এককপরিবার ব্যবস্থা হলেও মাতা-পিতা ও মা'যুর ভাই বোনদের লালন-পালন ও বোনকে বিয়ে দেয়ার(বাবার অনুপস্থিতে) দায়িত্ব আপনার উপরই,এবং আপনি ধনী হলে আপনার ভাই-বোনদেরকে পর্যাপ্ত পরিমান সাহায্য-সহযোগিতা করা আপনার একান্ত কর্তব্যও দায়িত্ব।
আশরাফ আলী থানভী(র,) বলেন পুত্রবধুকে আলাদা করে দিন পারিবারিক অশান্তি অনেকটাই কমে যাবে।
(ইরশাদাতে হাকিমূল উম্মতঃ৪০৯)
এমনকি ওয়াজিব খোরপোশের অভিন্ন একটি অংশই হল স্ত্রীকে পৃথক বাসস্থান দেওয়া!তবে স্ত্রী স্বেচ্ছায় একত্রে থাকতে সম্মত হলে ভিন্ন কথা।
(ইসলাহে ইনকিলাবে উম্মতঃ২।১৮৭)
শশুর-শাশুড়ীর খেদমত করতে যে সব স্বামীরা স্ত্রীর উপর আমানবিক নির্যাতন করে,তাদের জেনে রাখা উচিত -একেতো তাদের খেদমত স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয়!দ্বিতীয়ত শশুরের খেদমতে ফিতনার আশংকা আছে! তাই স্বামী নিজে আপন মাতা-পিতার খেদমত করবে অথবা পারিশ্রমিক দিয়ে করাবে।
স্ব ইচ্ছায় শাশুড়ীর খেদমত করা বধুর নৈতিক দায়িত্ব ,কিন্তু এক্ষেত্রে বধুর উপর কোন রকম চাপ প্রয়োগ করা যাবেনা,এবং বধুর খেদমতকে অনুগ্রহ বিবেচনা করাও শ্বাশুড়ীর নৈতিক দায়িত্ব।
মোটকথাঃ-
এককপরিবার ব্যবস্থা ও যৌথপরিবার ব্যবস্থা উভয়ই বৈধ।
আমাদের দেশে যেহেতু পূর্ব থেকেই যৌথপরিবার ব্যবস্থা চলে আসছে, এবং এককপরিবার ব্যবস্থাকে মা-বাবা সহ অনেকেই মেনে নিতে পারেন না।এমনকি অনেকে এককপরিবার ব্যবস্থাকে কটাক্ষ করে ও নিন্দা মনে করে,তাই যৌথপরিবারই আমাদের জন্য আপাতদৃষ্টিতে মাননসই ও গ্রহ