মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
جَنّٰتُ عَدۡنٍ یَّدۡخُلُوۡنَہَا وَ مَنۡ صَلَحَ مِنۡ اٰبَآئِہِمۡ وَ اَزۡوَاجِہِمۡ وَ ذُرِّیّٰتِہِمۡ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ یَدۡخُلُوۡنَ عَلَیۡہِمۡ مِّنۡ کُلِّ بَابٍ ﴿ۚ۲۳﴾
স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও (তাতে প্রবেশ করবে)। আর ফেরেশতাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে।
(সুরা রা'দ ২৩)
জান্নাতীদের জন্য আরো একটি পুরস্কার এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তা এই যে, আল্লাহ তা'আলার এ নেয়ামত শুধু তাদের ব্যক্তিসত্তা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং তাদের বাপ-দাদা, স্ত্রী ও সন্তানরাও এর অংশ পাবে। শর্ত এই যে, তাদেরকে এর উপযুক্ত হতে হবে। এর নূ্ন্যতম স্তর হচ্ছে মুসলিম হওয়া। [ফাতহুল কাদীর]
উদ্দেশ্য এই যে, তাদের বাপ-দাদা ও স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততিদের আমল যদিও এ স্তরে পৌছার যোগ্য নয়; কিন্তু আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের খাতিরে তাদেরকেও এ উচ্চস্তরে পৌছে দেয়া হবে। [কুরতুবী]
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন
وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ اتَّبَعَتۡہُمۡ ذُرِّیَّتُہُمۡ بِاِیۡمَانٍ اَلۡحَقۡنَا بِہِمۡ ذُرِّیَّتَہُمۡ وَ مَاۤ اَلَتۡنٰہُمۡ مِّنۡ عَمَلِہِمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ ؕ
এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানে তাদের অনুগামী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং তাদের কর্মফল আমি একটুও কমাবো না।
[সূরা আত-তূরঃ ২১]
رَبَّنَا وَ اَدۡخِلۡہُمۡ جَنّٰتِ عَدۡنِۣ الَّتِیۡ وَعَدۡتَّہُمۡ وَ مَنۡ صَلَحَ مِنۡ اٰبَآئِہِمۡ وَ اَزۡوَاجِہِمۡ وَ ذُرِّیّٰتِہِمۡ ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ۙ﴿۸﴾
হে আমাদের রবা! আর আপনি তাদেরকে প্রবেশ করান স্থায়ী জান্নাতে যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের পিতামাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তাদেরকেও ৷ নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্ৰজ্ঞাময়।
(সুরা গাফির ০৮)
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ তা'আলা সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদের সন্তান-সন্ততিকেও তাদের সম্মানিত পিতৃপুরুষদের মর্তবায় পৌঁছিয়ে দেবেন, যদিও তারা কর্মের দিক দিয়ে সেই মর্তবার যোগ্য না হয়- যাতে সম্মানিত মুরব্বীদের চক্ষুশীতল হয়।
সায়ীদ ইবন-জুবায়ের রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, জান্নাতী ব্যাক্তি জান্নাতে প্ৰবেশ করে তার পিতামাতা, স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে যে, তারা কোথায় আছে? জওয়াবে বলা হবে যে, তারা তোমার মর্তবা পর্যন্ত পৌছতে পারেনি। তাই তারা জান্নাতে আলাদা জায়গায় আছে। এই ব্যক্তি আরয করবে, হে রব! দুনিয়াতে নিজের জন্যে ও তাদের সবার জন্যে আমল করেছিলাম। তখন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আদেশ হবে, তাদেরকেও জান্নাতের এই স্তরে একসাথে রাখা হোক।
এসব বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আখেরাতে সৎকর্মপরায়ণ পিতৃপুরুষ দ্বারা তাদের সন্তানরা উপকৃত হবে এবং আমলে তাদের মর্তবা কম হওয়া সত্বেও তাদেরকে পিতৃপুরুষদের মর্তবায় পৌঁছিয়ে দেয়া হবে। অপরদিকে সৎকর্মপরায়ণ সন্তান-সন্ততি দ্বারা তাদের পিতা-মাতার উপকৃত হওয়াও হাদীসে প্রমাণিত আছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা কোন কোন নেকবান্দার মর্তবা তার আমলের তুলনায় অনেক উচ্চ করে দেবেন। সে প্রশ্ন করবে, হে রব! আমাকে এই মর্তবা কিরূপে দেয়া হল? আমার আমল তো এই পর্যায়ের ছিল না। উত্তর হবে, তোমার সন্তান-সন্ততি তোমার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা ও দো'আ করেছে। এটা তারই ফল। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৫০৯]
সৎকর্মশীল ঈমানদাররা তাদের মা-বাবা, সন্তান-সন্ততিসহ বেহেশতে প্রবেশ করবে।
তাফসিরে তাদাব্বুরে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, মানুষের স্বভাব হলো, যখন সে কোনো পুরস্কার পায়, যখন বিশেষ কোনো প্রাপ্তি ঘটে, তখন সে এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় প্রিয় মানুষের সঙ্গে। আত্মীয়-স্বজনও তার এ আনন্দের অংশীদার হয়।
মানুষের স্বভাবগত এই বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা হবে পরকালে। তাই কিয়ামতের দিন জান্নাতবাসী জান্নাতে গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবও তাদের সঙ্গী হবে। কিন্তু এই আনন্দঘন উৎসবমুখর জীবন যাপন তখনই সম্ভব হবে যখন তাদের সবাই ঈমান ও আমলের সূতিকায় আবদ্ধ থাকবে। কেননা পরকালে ঈমান ও আমল ছাড়া আর কোনো জিনিসের মূল্য নেই।
যদি সন্তান,মা বাবা সকলেই জান্নাতী হয়,সেক্ষেত্রে তারা চাইলে তাদের মাঝে উক্ত গভীর বন্ধন জান্নাতেও থাকবে,ইনশাআল্লাহ।