بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
১. রোগ-বালাই নিরাময়ে জাহেলিয়্যাতের
যুগে যেসব উপায় অবলম্বন করা হত তন্মধ্যে আরেকটি হল ঝাড়ফুঁক অর্থাৎ কিছু পড়ে রোগীর গায়ে
দম করা। এ ঝাড়ফুঁকের প্রচলন সে যুগে বেশি ছিল। এমনকি অনেক রোগের জন্য বিশেষ বিশেষ মন্ত্রও
ছিল, যা
পড়ে এ রোগের রোগীকে দম করা হত। সাপে কাটলে এক মন্ত্র,
জ্বরের জন্য আরেক মন্ত্র,
বদ নজরের জন্য এক মন্ত্র,
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপনে আরেক মন্ত্র
ইত্যাদি। এ ঝাড়ফুঁককে আরবীতে বলা হয় الرقية (আররুকইয়া)। বলাবাহুল্য,
জাহিলিয়্যাতের যুগে এসব তন্ত্র-মন্ত্রের
অধিকাংশই ছিল কুফর আর শিরক সম্বলিত। আর ইসলামের প্রধান ভিত্তি হল তাওহীদ। তাই ইসলাম
এসেই কোনো প্রকার শর্র্ত ছাড়াই এ ধরনের সকল ঝাড়ফুঁককে নিষিদ্ধ করে দেয়। নবীজী তখন ঘোষণা
করেন-=
إِنّ
الرّقَى، وَالتّمَائِمَ، وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ.
নিশ্চয় ঝাড়ফুঁক,
তামীমা (পাথরবিশেষ) ও তিওয়ালা (স্বামীকে
আকৃষ্ট করার মন্ত্রবিশেষ) শিরক । -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৮৭৯
এবং ঝাড়ফুঁকের ব্যাপারে কঠোরভাবে
শর্ত করে দিলেন যে, তাতে
কোনো শিরকী-কুফরী শব্দ বা বিষয় থাকতে পারবে না। এ ধরনের শিরকমুক্ত ঝাড়ফুঁক হলে নবীজী
তার অনুমোদন তো দিয়েছেনই সাথে সাথে যারা এসব ঝাড়ফুঁক জানে তাদের তা চালিয়ে নিতে এবং
অন্যকে শেখাতেও বলেছেন। আর স্বয়ং নবীজীও ঝাড়ফুঁককারীদের মন্ত্রগুলো শুনতেন এবং দেখতেন
তাতে কোনো কুফরী কথা আছে কি না, থাকলে তা নিষিদ্ধ করে দিতেন আর না থাকলে তার অনুমোদন দিতেন।
হযরত আউফ ইবনে মালিক রা. থেকে
বর্ণিত, তিনি
বলেন, আমরা
জাহিলিয়্যাতের যুগে ঝাড়ফুঁক করতাম। আমরা নবীজীকে বললাম,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বিষয়টি কেমন মনে
করেন? তখন
নবীজী বললেন-
اعْرِضُوا
عَلَيّ رُقَاكُمْ لَا بَأْسَ بِالرّقَى مَا لَمْ تَكُنْ شِرْكًا.
তোমরা ঝাড়ফুঁকে কী বল তা আমাকে
শোনাও। যতক্ষণ পর্যন্ত ঝাড়ফুঁক শিরকমুক্ত হবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। -সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস ৩৮৮৬
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আসমা বিনতে উমাইস রা.-কে বললেন-
مَا شَأْنُ
أَجْسَامِ بَنِي أَخِي ضَارِعَة أَتُصِيبُهُمْ حَاجَةٌ قَالَتْ لَا وَلَكِنْ
تُسْرِعُ إِلَيْهِمْ الْعَيْنُ أَفَنَرْقِيهِمْ قَالَ وَبِمَاذَا فَعَرَضَتْ
عَلَيْهِ فَقَالَ ارْقِيهِمْ.
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম একদিন আসমা বিনতে উমাইস রা.-কে বললেন, (আসমা নবীজীর চাচাতো ভাই ও প্রসিদ্ধ সাহাবী জাফর তাইয়ার
রা.-এর সহধর্মিণী) আমার ভ্রাতুষ্পুত্রদের কী হল, তারা সকলে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তারা কি অভাবে রয়েছে?
আসমা বললেন,
না, তবে তাদের প্রতি বদ নযর বেশি লাগে;
আমরা এর জন্য কি ঝাড়ফুঁক করব?
নবীজী বললেন,
কী পড়ে তোমরা বদ নযরের জন্য ঝাড়ফুঁক কর-
তা আমাকে শোনাও। তখন আসমা রা. তা পড়ে শোনালেন। তখন নবীজী বললেন,
অসুবিধা নেই এ দিয়ে ঝাড়ফুঁক কর। -মুসনাদে
আহমাদ, হাদীস
১৪৫৭৩
কোনো মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে
যারা উপস্থিত থাকবেন, তাদের
প্রথম কর্তব্য হলো— কালেমায়ে তায়্যিবার
তালকিন করা। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুগামী ব্যক্তিদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’র
তালকিন করো। (মুসলিম, হাদিস
: ৯১৬-৯১৭)
তালকিনের অর্থ হচ্ছে- মুমূর্ষু
ব্যক্তির পাশে একটু আওয়াজ করে কালেমা পড়তে থাকা। তবে মনে রাখতে হবে,
এ অবস্থায় তাকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে
কালেমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। জোরাজুরি করা যাবে না;
এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
তাই নিয়ম হলো- তার পাশে বসে
মৃদু আওয়াজে কেবল কালিমা পড়তে থাকা। কালিমা বলুন বা এজাতীয় কিছু না বলা। তার পাশে যখন
কালেমা পড়া হবে, তিনি
যখন কালেমার আওয়াজ শুনতে পাবেন, আশা করা যায়, তিনি নিজেই কালেমা পড়ে নিতে পারেন।
এ কালেমা যার জীবনের শেষ কথা
হবে— তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন,
‘যার শেষ কথা হবে- লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ, সে
জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১৮)
মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে থেকে
সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করার কথাও হাদিসে রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন,
‘মৃত্যুপথযাত্রী যারা তাদের
পাশে থেকে তোমরা সুরা ইয়াসিন পাঠ করো।’ (সুনানে আবু দাউদ,
হাদিস : ৩১২৩;
ইবনে হিব্বান,
হাদিস : ৩০০২)
মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে তালকীন
করানোর বিষয়ে পাওয়া যায়। তালকীন হলো মৃত্যু
শয্যায় শায়িত ব্যক্তির পাশে বসে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা।
কারণ,
মুয়ায বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
«
مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
دَخَلَ الْجَنَّةَ »
“যার শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুনান আবু দাউদ-৩১১৬)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে
বর্নিত, হযরত
(ﷺ) বলেছেনঃ
তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রীকে (মৃত্যুর পুর্ব মূহুর্তে) কালিমার তালকীন দান কর৷
কেননা মৃত্যুর সময় যার শেষ কথা হবে [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ] সে জান্নাতে প্রবেশ করবে৷
(সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং-২১৬২)
★★প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
১. জ্বী মুমূর্ষু রোগীকে
রুকইয়া শরঈয়াহ হিসেবে কুরআনের আয়াত বা হাদীসে বর্ণিত দোয়া পড়ে
ফুঁ দেওয়া জায়েয আছে। তাছাড়া যে-ঝাড়ফুঁক ‘মা’ছূর’ নয়,
কিন্তু তার উপকারিতা অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত
এবং তাতে ঈমানবিরোধী ও শরীয়তবিরোধী কোনো বিষয় নেই তা মুবাহ উপায়-উপকরণের পর্যায়ে। যেমনিভাবে
অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত উপকারী ওষুধ-পথ্য ব্যবহার করা মুবাহ,
তেমনিভাবে এই ঝাড়ফুঁকও মুবাহ।
২. শরীয়াতসম্মত
যে কোন ঈসালে সওয়াবের দ্বারা মাইয়্যেত উপকৃত হয়। তেলাওয়াতে কুরআন,
ইস্তেগফার,
নফল সাদকা,
যে কোন নেক আমল দ্বারাই ঈসালে সওয়াব করা যায়। মাইয়্যিতের জন্য কালেমা পড়ে
খতমে তাহলীল করে ঈসালে ছওয়াব করা জায়েজ আছে। তবে সেগুলো কে বিশেষ কোনো সংখ্যা দ্বারা
আখ্যায়িত করা বা
উক্ত সংখ্যার সাথে জরুরী মনে করা ঠিক হবে না। এমনকি বাড়াবাড়ি করলে বিদ'আত পর্যন্ত হুকুম আসবে।
৭০ হাজার বার বা একলক্ষ বার কালেমা পড়ে মাইয়্যেতের রূহে বখশিশ
করার যে আমলটির কথা উল্লেখ করেছেন এর কোন আলাদা ফজীলত হাদীস ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত
নয়। তাই এটাকে সুন্নাহ মনে না করে যদি কেউ এ পদ্ধতিতে ঈসালে সওয়াব করতে চায় তাহলে তার অবকাশ রয়েছে।
আর উক্ত আমলটি অনেক বুযুর্গানে
দ্বীনরা তাদের অভিজ্ঞতা ও কাশফের মাধ্যমে ফলপ্রসু হিসেবে বলে থাকেন। বাকি এটি কুরআন
বা হাদীসে বর্ণিত কোন পদ্ধতি নয়।
তাই এটিকে বুযুর্গদের অভিজ্ঞতালব্দ
একটি পদ্ধতি হিসেবে করা যায়। কিন্তু সুন্নত বা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মনে করা
যাবে না। যদি সুন্নাহ বা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মনে করা হয়,
তাহলে বিদআত হবে।
আরো জানুন: https://ifatwa.info/37643/
৩. জ্বী জায়েয আছে। হাদীসে বর্ণিত আছে
যে,
حدثنا حفص بن
غياث، عن المجالد، عن الشعبي، قال: كانت الأنصار يقرؤون عند الميت بسورة البقرة.
শাবী থেকে বর্ণিত, আনসার (সাহাবীগণ) মাইয়িতের কাছে সূরা বাকারা
তিলাওয়াত করতেন। -(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা- ১০৯৫৩)
عن معقل بن
يسار، قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: اقرءوا يس على موتاكم.
মাকিল ইবনে ইয়াসার রা. থেকে
বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের মাইয়িতের জন্য সূরা
ইয়াসীন পাঠ কর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১২১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩০০২; মুসতাদরাকে হাকিম ১/৫৬৫)