بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
“আরবি ভাষায় দাড়িকে বলা হয় লিহইয়া বা লাহয়া। এর আভিধানিক অর্থ
হলো থুতনিসহ মুখের দুই পাশের ওই হাড়, যার ওপর দাঁতগুলো অবস্থিত। প্রাপ্ত বয়সে
ওই হাড়ের ওপর যে লোম বা কেশ গজায়, ওই লোম বা কেশগুলোকেই হাড়ের নামকরণে লিহইয়া বলা হয়।
বহু আরবি ও ইসলামী অভিধান, গ্রহণযোগ্য ফিকাহ ও হাদীসের ব্যাখ্যা
গ্রন্থের বর্ণনা মতে,
‘চেহারার সর্বদিকে মোচ ছাড়া চুলের মতো যে পশম বয়সের অনুপাতে গজায়, তা সবই শরয়ী
পরিভাষায় দাড়ির অন্তর্ভুক্ত। যার নিচের সীমানা হলো মুখের থুতনী আর ওপরের সীমানা হলো
উভয় কানপট্টি ও উভয় চক্ষুর মধ্যবর্তী স্থান। ‘ আল্লামা শামী রহঃ বলেছেন- দাড়ি সম্পর্কে
মূল কথা হলো, দাড়ি
রাখা ওয়াজিব। এর শরয়ী পরিমাপ হলো এক মুষ্টি পরিমাণ। দাড়ি রাখা ইসলামের শেআর এবং নিদর্শন।
এটি সব নবীর সুন্নাত। এটি ভদ্রতা, মহত্ত্ব এবং ইজ্জত ও সম্মানের আলামত। এর মধ্যেই রয়েছে পৌরুষত্বের
পরিপূর্ণতা। এভাবে দাড়ি রাখা নবী করিম (সা.)-এর সার্বক্ষণিক আমল ছিল। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে-তাবেইন, ফুকাহা, মুহাদ্দেসীন, সলফে-সালেহীনেরও
আমল ছিল এরূপ। নবী (সা.) এটিকে ফিতরাত তথা মানুষের প্রকৃতি বলেই আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং
দাড়ি রাখা আবশ্যক। চেঁছে ফেলা বা এক মুষ্টির ভেতর কাটা হারাম ও গোনাহে কবিরা ৷
তবে দাড়ি ব্যতীত গাল ও থুতনীর নিচের পশম কাটা জায়েয আছে৷ তবে
মুণ্ডন করা বিদআত৷ অনুরুপভাবে ঠোঁটের নিচের নিমদাড়ি রাখাও আবশ্যক৷তা কেটে ফেলা বা
মুণ্ডন করা বিদআত বা মাকরুহে তাহরীমী৷ (শামী ৫/৪০৬ পৃঃ)
নবী (সা.) দাড়ির কতখানি গুরুত্ব দিতেন এবং ইসলামে দাড়ি রাখার
আবশ্যকতা কোন পর্যায়ের,
তা নিচের কয়েকটি হাদিস থেকে অনুমেয়-
হজরত ইবনে উমর (রা.)
সূত্রে বর্ণিত, তিনি
বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা.) মোচ খাটো এবং দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দিতেন৷ (সহিহ মুসলিম
১/১২৯, ২৫৯
পৃঃ) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো, দাড়ি লম্বা করো, মোচ খাটো করো
৷ (সহিহ
বুখারি ২/৮৭৫ পৃঃ)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.)
সূত্রে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা মোচ খাটো করো এবং দাড়ি নিচের দিকে ঝুলাও, অগ্নিপূজারীদের
বিরোধিতা করো৷ (সহিহ মুসলিম ১/২২২, ২৬০ পৃঃ)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে
উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা মোচ খাটো এবং দাড়ি লম্বা করো ৷(সহিহ বুখারি
২/৮৭৫ পৃঃ)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমরা দাড়ি লম্বা করো, মোচ খাটো করো এবং তোমাদের চুলের সাদা
রং পরিবর্তন করো। ইহুদি ও নাসারাদের সাদৃশ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকো ৷(কানজুল উম্মাল
৬/৬৫৩ পৃঃ)
হাদিস শরিফে আছে- হজরত আমর ইবনে শুয়াইব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
(সা.) স্বীয় দাড়ির নিচ ও আশপাশ থেকে মুষ্টি পরিমাণের বাইরের অংশ কাটছাঁট করতেন। (শরহু
শিরআতিল ইসলাম-২৯৮ পৃঃ)।
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাড়ি মোবারক এক
মুষ্টির বেশি ছিল এবং এক মুষ্টি পরিমাণ রেখে বাকিটা কর্তন করা যাবে।
সাহাবায়ে কেরাম দাড়ি লম্বা রেখেছেন। তবে এক মুষ্টির পর কাটার
স্বীকৃতি সাহাবায়ে কেরামের আমলে পাওয়া যায়।
হজরত মারওয়ান ইবনে সালেমে মুকাফা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে উমর
(রা.)-কে দেখেছি, তিনি
নিজের দাড়ি মুঠ করে ধরে বাকিটুকু কেটে ফেলতেন ৷(আবু দাউদ ২/৭৬৫ পৃঃ)
হজরত ইবনে উমর (রা.) হজ ও উমরার সময় নিজ দাড়ি মুঠ করে ধরে বাইরের
অংশটুকু কেটে ফেলতেন৷ (সহীহ বুখারী ৭/৮৩ পৃঃ)
আবু জুব’আ (রহ.) থেকে
বর্ণিত, তিনি
বলেন, হজরত
আবু হুরায়রা (রা.) স্বীয় দাড়ি মুঠ করে ধরে বাইরের অংশটুকু কেটে ফেলতেন ৷(ফতহুল বারি
১০/৬৩২ পৃঃ)
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নেলিখিত ছুরতে গালের উপরের এবং গলার দিকে তথা থুতনির হাড্ডির
নিচে গলায় গজানো চুল দাড়ীর অন্তর্ভূক্ত নয়। তাই তা কাটা বা মুণ্ডানোতে কোন সমস্যা নেই।
কারণ, আরবি ভাষায় দাড়িকে বলা হয় لِحْيَةٌ লিহইয়া বা । এর শাব্দিক অর্থ হলো, থুতনিসহ মুখের
দুই পাশের ওই হাড়, যার
ওপর দাঁতগুলো অবস্থিত। প্রাপ্ত বয়সে ওই হাড়ের ওপর যে লোম, পশম বা কেশ
গজায়, সেগুলোকেই
হাড়ের নামকরণে لِحْيَةٌ লিহইয়া
বাংলায় দাড়ি বলা হয়।
পুরুষদের জন্য এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব। এক মুষ্টির
কমে দাড়ি কাটা বা ছেঁটে ফেলা জায়েয নয়। এক মুষ্টির বাহিরে অতিরিক্ত অংশগুলো
কেটেছেঁটে পরিষ্কার করতে পারবে।
আরো জানুন: https://ifatwa.info/3975/?show=3975#q3975