জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
ইহরাম বাঁধার পদ্ধতি
যারা সরাসরি মক্কায় যাবে, তারা হজ্জ ক্যাম্প বা বিমানবন্দর গিয়ে ফ্লাইট নিশ্চিত হলে, ওয়েটিং রুমে বসে থাকার ফাঁকে বাথরুমে গিয়ে, উযূ করে দক্ষিণ পাশের নামায ঘরে গিয়ে, মাকরূহ ওয়াক্ত না হওয়ার শর্তে টুপি মাথায় দিয়ে বা মাথা ঢেকে সম্ভব হলে দুই রাকা‘আত নামায পড়ে নিবে। ইহরামের উদ্দেশ্যে এই দুই রাকা‘আত নামায পড়া মুস্তাহাব। প্রথম রাকা`আতে সূরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকা`আতে সূরা ইখলাস পড়া উত্তম। অন্য কোনো সূরা পড়লেও চলবে। মাকরূহ ওয়াক্ত হওয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে এই নামায পড়তে না পরলেও কোনো সমস্যা নেই। এরপর মাথার টুপি খুলে ফেলবে। অত:পর বিমানে উঠে শান্ত হয়ে বসে উমরার নিয়ত করে তালবিয়া পড়লেই ইহরাম বাঁধা হয়ে যাবে। তামাত্তু হজ্জকারী যেহেতু প্রথমে উমরা করবে, তাই প্রথমবার ইহরাম বাঁধার সময় শুধু উমরার নিয়ত করবে।
উমরার ইহরামের নিয়ত
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اُرِيْدُ الْعُمْرَةَ فَيَسِّرْهَا لِىْ وَتَقَبَّلْهَا مِنِّىْ
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য উমরার নিয়ত করছি। আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে কবূল করে নিন।’ নিয়ত আরবীতে করা জরুরী নয়।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
মহিলাদের ইহরামের প্রস্তুতির জন্য পুরুষরা যা যা করে মহিলারাও সেগুলো করবে। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, গোসলের পর মহিলারা নিজেদের স্বাভাবিক কাপড় তথা ঢিলেঢালা ফুল হাতার কামিজ ও সেলোয়ার পরবে। এরপর এমন বোরকা পরবে যা চেহারা আবৃত করে । কারণ, পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা হারাম। (যে-সব মহিলা চেহারা খোলা রাখবে এবং যে-সব পুরুষ ইচ্ছাকৃত তাদের দিকে তাকাবে, তাদের গুনাহ হবে। ফলে তাদের ‘হজ্জে মাবরূর’ নসীব হবে না।) কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে মুখ ঢাকার জন্য যে নেকাব পরা হবে, তা যেন চেহারায় লেগে না থাকে। সেজন্য আমাদের দেশে- বাইতুল মুকাররমসহ আরো অনেক জায়গায় ক্যাপের মত একটা জিনিষ পাওয়া যায়, কিন্তু ক্যাপের সামনের অংশ যত লম্বা ততো লম্বা নয় বরং এক দেড় ইঞ্চির মত লম্বা হবে, দেখতে অনেকটা ২/৩ তারিখের চাঁদের মত সেটা পরে তার উপর দিয়ে নেকাব পরবে। তাহলে পর্দাও হয়ে যাবে আবার নেকাব চেহারার সাথে লেগেও থাকবে না। মহিলারা হজ্জ বা উমরার নিয়তের পরে তালবিয়া পুরুষদের মতই তিনবার পড়বে, তবে উচ্চ স্বরে নয়, নিম্ন স্বরে। মহিলারা হায়েয-নেফাস অবস্থায়ও ইহরাম বাঁধতে পারবে। তবে তখন পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য গোসল করা ভালো। (মানাসিকে মোল্লা আলী কারী পৃ.৯০)
(সংগৃহিত)
হযরত আয়েশা রা. থেকে বার্ণিত আছে, তিনি বলেন-
كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْرِمَاتٌ، فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا عَلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.
ইহরাম অবস্থায় আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। লোকেরা যখন আমাদের পাশ দিয়ে যেত তখন আমরা আমাদের চাদর মাথায় সামনে ঝুলিয়ে দিতাম। আর চলে যাওয়ার পর তা সরিয়ে ফেলতাম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৩৩)
ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, মহিলারা মাথা ক্যাপ বা এ জাতীয় এমন কিছু বেঁধে নিবে যে,যার উপর দিয়ে মাথা থেকে কাপড় ছেড়ে দিলে উক্ত কাপড় চেহারা কে স্পর্শ না করে নিচের দিকে চলে যাবে।চেহারা বলতে মুখের ঐ অংশ যা অজুতে ধৌত করা হয়ে থাকে।অর্থাৎ কপালের উপরাংশের চুল থেকে নিয়ে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত।(কিতাবুল ফাতাওয়া-৪/৩৭)
আরো জানুনঃ-
(০২)
মিকাতে গিয়ে সালাত আদায় করতে হবেনা
এক্ষেত্রে আপনি মিকাত অতিক্রম করার সময় তালবিয়া পাঠ করতে পারেন।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর তালবিয়া হলো-
لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيْكَ لَكَ
উচ্চারণ : লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।
অর্থ : আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোন শরীক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়ামত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই। (বুখারি, হাদিস : ১৫৪৯; মুসলিম, হাদিস : ২৮১১)
(০৩)
নারীরা প্রশ্নে উল্লেখিত উভয় প্রকারের জুতাই পরিধান করতে পারবে।
আরো জানুনঃ-
নারীগন ইহরাম অবস্থায় হাত মোজা,পা মোজা পরিধান করতে পারবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. মহিলাদেরকে ইহরাম অবস্থায় চামড়ার মোজা এবং পাজামা পরার অনুমতি দিতেন। তিনি বলেন, ছফিয়্যা রা. চামড়ার মোজা পরিধান করতেন, যা ছিল তাঁর হাটু পর্যন্ত।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস : ১৫৯৬৯, ১৫৯৬৫)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহিলাগণ ইহরাম অবস্থায় হাত মোজা এবং পাজামা পরিধান করতে পারবে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৪৪৪০)
বিখ্যাত তাবেয়ী কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ রাহ. বলেন, ইহরাম গ্রহণকারিনী হাত-মোজা ও পায়জামা পরিধান করবে।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ১৫৯৬৮)
(০৪)
ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ কাজ গুলি হলোঃ-
*সুগন্ধি ব্যবহার করা।
*নখ কাটা, শরীরের কোনো স্থানের চুল, পশম কাটা-উপড়ানো নিষেধ
আতা, তাউস ও মুজাহিদ রাহ. প্রমুখ বিখ্যাত তাবেয়িগণ বলেন, ‘মুহরিম তার বগলের নিচের পশম উপড়ালে বা নখ কাটলে তার উপর ফিদয়া দেওয়া ওয়াজিব হবে। ’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৩৬০৪)
*স্বামী-স্ত্রীর সহবাস।
*যৌন কামনার সঙ্গে চুম্বন দেওয়া, স্পর্শ করা কিংবা জড়িয়ে ধরা।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, আমি ইহরাম অবস্থায় কামভাবের সঙ্গে নিজ স্ত্রীকে চুম্বন করেছি। এখন আমার করণীয় কী? তিনি উত্তরে বললেন, তুমি একটি কোরবানি করো। (কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, পৃষ্ঠা নং: ৫৩)
*বিবাহ সংক্রান্ত আলোচনা করা যাবেনা।
*পশু শিকার করা যাবেনা।
*মাথার চুল মুণ্ডন করা বা ছোট করা কিংবা উঠিয়ে ফেলা।
*কাপড় বা শরীরের উকূন মারা নিষিদ্ধ।
*ঝগড়া-বিবাদ করা যাবেনা।
*অলঙ্কার ও সাজ-সজ্জা প্রকাশ করা যাবে না।
*মুখমণ্ডলের উপর নিকাব দিয়ে আবৃত করবে না। এক্ষেত্রে যাহা করনীয়,তাহা এক নং প্রশ্নের জবাব দ্রষ্টব্য।
(০৫)
গায়রে মাহরাম পুরুষ না থাকলে এক্ষেত্রে মুখের উপর কাপড় থাকা যাবেনা।
হ্যাঁ, আশেপাশে গায়রে মাহরাম পুরুষ থাকলে এভাবে মুখে কাপড় রেখে নামাজ পড়লে নামাজের কোনো সমস্যা হবেনা।
(০৬)
হ্যাঁ, ঘুমানো যাবে।
(০৭)
ওমরাহ পালন করবেন যেভাবে।
ওমরাহ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা, পরিদর্শন করা ও সাক্ষাৎ করা। হজের সময় ছাড়া অন্য যেকোনো সময় পবিত্র কাবাঘরের তাওয়াফসহ নির্দিষ্ট কিছু কাজ করাকে ইসলামের পরিভাষায় ওমরাহ বলা হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ওমরাহ পালনের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর জন্য হজ ও ওমরাহ পূর্ণভাবে আদায় করো।’ (সুরা বাকারা: ১৯৬) এখানে ওমরাহ পালনের নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো:
ওমরাহর প্রধান চার কাজ
» ইহরাম পরা।
» পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করা।
» সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে
সাতবার সায়ি করা।
» মাথার চুল মুণ্ডন করা বা ছোট করা।
ইহরাম পরার নিয়ম
ইহরাম পরিধানের আগে সব ধরনের শারীরিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন করতে হবে। যেমন হাত-পায়ের নখ কাটা, গোঁফ, চুল ও নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা ইত্যাদি। ইহরাম পরিধানের আগে ফরজ গোসলের মতো করে গোসল করা সুন্নত। তারপর মাথা বা দাড়িতে সুগন্ধি লাগানো। এরপর ফরজ নামাজের ওয়াক্ত হলে ফরজ নামাজ আদায় করবেন, অন্যথায় অজুর সুন্নত হিসেবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবেন। নামাজের পর কিবলামুখী হয়ে ইহরাম পরিধান করবেন। পুরুষদের সেলাইবিহীন পোশাক ও নারীদের যেকোনো উপযুক্ত পোশাক পরিধানের মাধ্যমে ইহরাম পরিধান করতে হবে। ইহরামের জন্য নির্দিষ্ট স্থান মিকাতে বা মিকাতে আসার আগে ওমরাহর নিয়ত করতে হবে এবং ইহরাম পরতে হবে। এরপর তালবিয়া পড়তে হবে।
ইহরামের দোয়া
ইহরামের সময় ওমরাহর নিয়ত করে এই দোয়া পড়া যায়—
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল উমরাতা ফা-ইয়াসসিরহা লি ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি ওমরাহর ইচ্ছা করছি; আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।
এরপর বলবেন, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা বি-ওমরতিন (অর্থ হে আল্লাহ, ওমরাহকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)।
তালবিয়া
এরপর নবী (সা.) যেভাবে তালবিয়া পড়েছেন, সেভাবে তালবিয়া পড়বেন। তালবিয়া হচ্ছে, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।’ অর্থ: আপনার দরবারে আমি হাজির হে আল্লাহ, আমি হাজির। আমি হাজির আপনার দরবারে। আপনার কোনো অংশীদার নেই। আমি আপনার দরবারে হাজির। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা, সব নিয়ামত আপনার জন্যই এবং রাজত্ব আপনার জন্যই।
পুরুষেরা উচ্চ স্বরে তালবিয়া পড়বেন। ইহরাম পরা থেকে তাওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়ার বিধান আছে। তাওয়াফ শুরু করলে তালবিয়া পড়া ছেড়ে দেবেন।
ইহরাম অবস্থায় যা করা যাবে না
» সেলাইযুক্ত কাপড় বা জুতা ব্যবহার করা।
» মাথা ও মুখ ঢাকা।
» চুল কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা।
» নখ কাটা।
» ঘ্রাণযুক্ত তেল বা আতর লাগানো।
» স্ত্রী সহবাস করা, যৌন উত্তেজনামূলক কোনো আচরণ করা।
» শিকার বা ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ করা।
» চুল-দাড়িতে চিরুনি বা আঙুল চালনা করা, যাতে ছেঁড়ার আশঙ্কা থাকে।
» শরীরে সাবান লাগানো।
» উকুন, ছারপোকা, মশা, মাছিসহ কোনো জীবজন্তু হত্যা করা।
» যেকোনো ধরনের গুনাহের কাজ করা।
তাওয়াফ করার নিয়ম
পবিত্র কাবাঘর সাতবার প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলা হয়। ওমরাহকারী প্রথমেই মসজিদুল হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে দোয়া পড়বেন। এরপর তাওয়াফ শুরু করার জন্য হাজরে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবেন। ডান হাত দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করবেন এবং চুমু খাবেন। যদি হাজরে আসওয়াদে চুমু খেতে না পারেন, হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন এবং হাতে চুমু খাবেন। যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করতে না পারেন, তাহলে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করে হাত দিয়ে ইশারা করবেন এবং তাকবির বলবেন। কিন্তু হাতে চুমু খাবেন না।
এরপর ডান দিক ধরে চলতে থাকবেন। পবিত্র কাবাঘরকে বাম দিকে রাখবেন। যখন রুকনে ইয়ামেনিতে (হাজরে আসওয়াদের পর তৃতীয় কর্নার) পৌঁছাবেন, তখন সেই কর্নার শুধু স্পর্শ করবেন। যদি স্পর্শ করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাওয়াফ চালিয়ে যাবেন; ভিড় করবেন না। এরপর হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হতে হতে এ দোয়া পড়বেন: ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আজাবান নার।’ অর্থ: হে আমাদের রব, দুনিয়ায় আমাদের কল্যাণ দান করুন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (আবু দাউদ)
যখনই হাজরে আসওয়াদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করবেন, তখন হাজরে আসওয়াদ অভিমুখী হয়ে তাকবির বলবেন। তাওয়াফের অন্য অংশে যা কিছু খুশি জিকির, দোয়া ও কোরআন তিলাওয়াত করবেন।
ইজতেবা ও রমল করার নিয়ম
তাওয়াফের মধ্যে পুরুষদের দুটি জিনিস করতে হয়। এক. তাওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইজতেবা করা। ইজতেবা মানে ডান কাঁধ খালি রেখে চাদরের মাঝের অংশ বগলের নিচ দিয়ে এনে চাদরের পাশ বাম কাঁধের ওপর ফেলে দেওয়া। তাওয়াফ শেষ করার পর চাদর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া। দুই. তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা। রমল মানে ছোট ছোট পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। আর বাকি চার চক্করে রমল নেই বিধায় স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা।
সাফা-মারওয়ায় সায়ি করার নিয়ম
যখন সাফা পাহাড়ের কাছে আসবেন, তখন সুরা বাকারার ১৫২ নম্বর আয়াত ‘ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআইরিল্লাহ’ পড়বেন। এই আয়াত শুধু সায়ির শুরুতে সাফার নিকটবর্তী হলে পড়বেন। সায়ির শুরুতে বলবেন, ‘নাবদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহি।’ (অর্থ: আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন, আমরাও তা দিয়ে শুরু করছি।) এরপর সাফা পাহাড়ে উঠবেন, যাতে কাবা শরিফ দেখতে পান। কাবার দিকে ফিরে আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলবেন। কাবা নজরে এলে কাবাকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া করবেন।
যখন সবুজ কালার চিহ্নিত স্থানে পৌঁছাবেন, তখন যত জোরে সম্ভব দৌড়াবেন। কিন্তু কাউকে কষ্ট দেবেন না। দ্বিতীয় সবুজ রং চিহ্নিত স্থান থেকে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবেন। এভাবে মারওয়ায় পৌঁছাবেন। সবুজ চিহ্নিত স্থানে এ দোয়া পড়বেন: ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতাল আ-আজজুল আকরাম।’ অর্থ: আমার রব, ক্ষমা করুন, দয়া করুন। আপনিই সর্বাধিক সম্মানিত ও দানশীল।
মারওয়ার ওপর উঠে কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দোয়া করবেন। এরপর একইভাবে মারওয়া থেকে নেমে সাফার দিকে যাবেন। সাফায় পৌঁছানোর পর আগে যা করেছেন, এখানেও তা-ই করবেন। এভাবে সাত চক্কর শেষ করবেন। সাফা থেকে মারওয়া গেলে এক চক্কর। মারওয়া থেকে সাফায় এলে এক চক্কর। সায়ি শেষ হলে এ দোয়া পড়বেন: ‘রাব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস ছামিউল আলিম।’ অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। আপনি নিশ্চয়ই সবকিছু শোনেন ও জানেন।
মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করার বিধান
সাত চক্কর সায়ি শেষ করার পর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবেন অথবা মাথার চুল ছোট করবেন। মুণ্ডন করলে মাথার সর্বাংশের চুল মুণ্ডন করতে হবে। অনুরূপভাবে চুল ছোট করলে মাথার সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবে। আর নারীরা আঙুলের এক কর পরিমাণ মাথার চুল কাটবেন।
(০৮)
প্রথমেই জেনে রাখি,হজ্জ উমরাহ এর সাথে মদিনা যিয়ারতের কোনো আবশ্যকীয়তা নেই।
এটি অতিরিক্ত আমল।
মদিনায় এসে করনীয়ঃ-
মসজিদে নববীতে প্রবেশের সময় খুব গুরুত্বের সাথে মসজিদে প্রবেশের সুন্নাতগুলি আদায় করবে। খেয়াল রাখবে সুন্নাতওয়ালার দরবারে এসে যেন কোনো কাজ সুন্নাতের পরিপন্থী না হয়। মসজিদে প্রবেশের পর সম্ভব হলে এবং মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে রিয়াযুল জান্নাতে দুই রাকা‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়বে। ফরয নামাযের সময় হয়ে থাকলে আগে ফরয পড়ে নেবে।
রওযায়ে আতহারে সালাম পেশ
তাহিয়্যাতুল মসজিদ শেষে উভয় জাহানের সরদার, রহমাতুল লিল আলামীন, পেয়ারা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে সালাম পেশের উদ্দেশ্যে রওনা করবে। মনে রাখবে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জাওয়াব পেতে হলে এবং তাঁর শাফায়াত লাভে ধন্য হতে হলে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী জীবনযাপন করা জরুরী। যারা এখনও সুন্নাত মোতাবেক জীবন যাপন শুরু করেনি তারা রওযায় উপস্থিত হওয়ার আগেই তাওবা ইস্তিগফার করে ভবিষ্যতে সুন্নাত মোতাবেক জীবনযাপন করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে নেবে।
বাবুস সালাম দিয়ে- কাউকে কোনো কষ্ট না দিয়ে- প্রেম-মুহাব্বত, শ্রদ্ধা ও আবেগ ভরা হৃদয় নিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে। এসময় যত বেশি সম্ভব দুরূদ শরীফের হাদিয়া নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে পেশ করবে। যখন রওযায়ে আতহারের বড় জালি বরাবর পৌঁছবে, তখন কিবলার দিকে পিঠ করে বড় জালি বরাবর দাঁড়াবে। মনে করবে যেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখছে, আর তিনিও তাকে দেখছেন। অবনত দৃষ্টিতে হৃদয়ের সবটুকু ভক্তি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাসহ পেয়ারা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে সালাম পেশ করবে।
এভাবে সালাম পেশ করবে
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا حَبِيْبَ اللهِ
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا خَيْرَالْخَلْقِ
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدَ الْمُرْسَلِيْنَ.
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا شَفِيْعَ الْمُذْنِبِيْنَ.
এই স্থানে খুব ভিড় থাকায় সালাম পেশ করার জন্য হয়তো বেশি সময় পাবে না। তাই তাড়াহুড়া না করে ধীরে ধীরে যে কয়টা শব্দ বলতে পারে তাই বলবে। শুধু ‘ আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’ এতটুকু বললেই সালাম আদায় হয়ে যাবে।
মদীনায় অবস্থানের দিনসমূহে করণীয়
ক. পুরুষগণ পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামা‘আতের সাথে মসজিদে নববীতে আদায় করবে। ইমাম আহমাদ হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে এমনভাবে যে, তার কোনো ওয়াক্তের নামায ছুটবে না, তাহলে তাকে জাহান্নাম, কবরের আযাব ও নেফাক থেকে মুক্তির সনদ দেওয়া হবে। মুসনাদে আহমাদ ৩/১৫৫ হা. নং ১২৫৯০
খ. মহিলাদের জন্য বাসায় নামায পড়াই ভালো। তবে রওযা শরীফ যিয়ারাত করতে আসার সময় কোনো নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলে মসজিদে নববীতে মহিলাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে নামায পড়বে।
গ. সম্ভব হলে মসজিদে নববীতে থেকে কয়েক দিন ই‘তিকাফ করবে। পারলে এক খতম কুরআন পড়বে।
ঘ. মদীনার মিসকীনদেরকে বেশি বেশি দান-সদকা করবে।
ঙ. মদীনায় কেউ খারাপ আচরণ করলেও তার সাথে উত্তম আচরণ করবে। কোনো রকম বিতর্কে জড়াবে না।
চ. মদীনার অধিবাসীদের সাথে খুব অন্তরঙ্গ ও মুহাব্বতপূর্ণ আচরণ করবে।
ছ. যখনই সুযোগ হবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওযা যিয়ারত করবে। তবে নামাযের পরপর যিয়ারাতে না যাওয়া ভালো। কারণ তখন প্রচণ্ড ভিড় থাকে। এছাড়া তখন যিয়ারাত করলে যিয়ারাতটা কেমন যেন একটা গতানুগতিক এবং আনুষ্ঠানিকতামুলক কাজ হয়ে যায়। তবে শরীয়তের দৃষ্টিতে নামাযের পর প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও যিয়ারাত করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে মদীনার বাসা থেকে কখনো কখনো শুধু যিয়ারাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে নববীতে যাওয়া ভালো। কারণ এতে যিয়ারাতকে মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বানানো হয়।
জ. রওযা শরীফের দেয়াল স্পর্শ করা ও চুমা দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
ঝ. মদীনায় অবস্থানের দিনগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার বার দুরূদ শরীফ পড়বে।
ঞ. গুনাহ থেকে ও সুন্নাতের খেলাফ কোনো কাজ করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবে।
মদীনার কিছু স্থান যিয়ারাত করা মুস্তাহাব
ক. মদীনার কবরস্থান ‘বাকীউল গরকদ’
এখানে দশ হাজারের বেশি সাহাবা কেরাম রা. কে দাফন করা হয়েছে। এখানে দাফনকৃত কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সাহাবা কেরামের নাম উল্লেখ করা হলো: ১. হযরত উসমান রা. ২. হযরত খাদীজা ও মাইমূনা রা. ব্যতীত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সকল স্ত্রী ৩. হযরত ফাতেমা রা. ৪. হযরত ইবরাহীম রা. (নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ছেলে) ৫. রুকাইয়্যা রা. ( নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেয়ে) ৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. ৭. হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. ৮. হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওক্কাস রা. ৯. হযরত আব্বাস রা. (নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচা) ১০. হযরত হাসান ইবনে আলী রা. ১১. ইমাম মালেক রাহ.. এছাড়াও আল্লাহর আরো অনেক প্রিয় বান্দা এখানে শায়িত আছেন। মুআলিমুল হুজ্জাজ পৃ.৩২৬
খ. শুহাদায়ে অহুদের কবর ও অহুদ পাহাড়
মদীনা থেকে উত্তর দিকে প্রায় তিন মাইল দূরে অহুদ পাহাড় অবস্থিত। এই পাহাড় সম্পর্কে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অহুদ এমন একটি পাহাড় যা আমাকে ভালোবাসে এবং আমিও তাকে ভালোবাসি’ । তৃতীয় হিজরীতে এই পাহাড়ের পাদদেশে মক্কার মুশরিকদের সাথে অহুদ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবা কেরাম রা. শাহাদাত বরণ করেন। বিশেষ করে হযরত হামযা রা. কে এই যুদ্ধে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ করা হয়। অহুদের শহীদগণের কুরবানীর কারণেই আজ আমরা ইসলাম পেয়েছি, ঈমানদার হতে পেরেছি। তাই তাঁদের প্রতি আমাদের সীমাহীন ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা পোষণ কারা উচিত। তারা যেমন দ্বীনের জন্য জান কুরবান করে দিয়েছেন, আমাদেরও তাঁদের মতো দ্বীনের জন্য ত্যাগ ও কুরবানী করা দরকার।
গ. মসজিদে কুবা
মদীনা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রায় দুই মাইল দূরে মসজিদে কুবা অবস্থিত।
ঘ, মসজিদে কিবলাতাইন।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)