بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল:- আল্লাহ তায়ালা
স্থান ও দিক থেকে পবিত্র
ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেন,
تعالى عن الحدود والغايات ، والأركان والأعضاء والأدوات ، لا تحويه الجهات الست كسائر المبتدعات
মহান আল্লাহ তায়ালা সব ধরনের সীমা-পরিসীমা, অঙ্গ-প্রতঙ্গ, সহায়ক বস্তু
ও উপায়-উপকরণ থেকে পবিত্র। অন্যান্য সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় ছয় দিক তাকে বেষ্টন করে
না। (অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সব ধরনের দিক থেকেও পবিত্র)
সুতরাং আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে আমাদের আক্বিদা হলো, তিনি মাখলুক
থেকে পবিত্র এক মহান সত্ত্বা। তিনি সময়, স্থান ও দিক থেকে পবিত্র। মাখলুকের সঙ্গে
সামান্যতম সাদৃশ্যও দেয়াও কুফুরী। কেননা তিনি ইরশাদ করেছেন, তার সদৃশ কিছু
নেই। তিনি মহা বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে যেমন ছিলেন,আরশ-কুরশী সৃষ্টির পূবের্ যেমন ছিলেন, এখনও আছেন।
মহাবিশ্ব ধ্বংসের পরও থাকবেন। সৃষ্টির অস্তিত্বের পূর্বে যেমন সময় ও স্থান থেকে পবিত্র
অবস্থায় ছিলেন, এখনও
তিনি সব ধরনের স্থান ও সময় থেকে পবিত্র। এই কথাটি সংক্ষেপে রাসূল স. বলেছেন,
أَنْتَ الْأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَيْءٌ ، وَأَنْتَ الْآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَيْءٌ ، وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَيْءٌ ، وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَيْءٌ
” আপনিই
প্রথম, আপনার
পূর্বে কিছু নেই। আপনিই শেষ, আপনার পরে কিছু নেই। আপনিই প্রকাশ্য, আপনার উপরে
কিছু নেই। আপনিই গোপন,
আপনার নিচে কিছু নেই”
(মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-২৭১৩)
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের এই সহীহ আকিদা পবিত্র কুরআন ও রাসূল
স. এর বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তায়ালা কোথায়? এর সহজ উত্তর
হলো, আল্লাহ
তায়ালা অনাদিকালে যেমন ছিলেন, এখনও আছেন। কোন সৃষ্টির অস্তিত্বের পূর্বে আল্লাহর অবস্থানের
জন্য যেমন কোন স্থানের প্রয়োজন হয়নি, এখনও প্রয়োজন হয় না। আল্লাহ তায়ালা
স্থান ও সময়ের উর্ধ্বে। স্থান ও সময় দু’টো্ই আল্লাহ পাকের সৃষ্টি। তিনি সৃষ্টি দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত নন, বরং
সকল সৃষ্টি তার নিয়ন্ত্রণে।
১. হযরত আলী রা. বলেন,
“من زعم أن إلهنا محدود فقد جهل الخالق المعبود”
অর্থ: যে বিশ্বাস করলো যে আল্লাহ তায়ালা সসীম, সে আমাদের মা’বুদ
আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ” [ হিলয়াতুল
আউলিয়া, খ.১, পৃ.৭৩]
২. বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম যাইনুল আবেদীন [মৃত: ৯৪ হি:] বলেন,
“أنت الله الذي لا يَحويك مكان”
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি সেই সত্ত্বা, কোন স্থান যাকে
পরিবেষ্টন করতে পারে না। [ইতহাফুস
সাদাতিল মুত্তাকিন,
আল্লামা মোর্তজা জাবিদী, খ.৪,
পৃ.৩৮০]
তিনি আরও বলেন,
“أنت الله الذي لا تُحَدُّ فتكونَ محدودًا”
অর্থ: আপনি সেই সত্ত্বা যার কোন হদ বা সীমা নেই। সীমা থাকলে
তো আপনি সসীম হয়ে যাবেন। [ইতহাফুস
সাদাতিল মুত্তাকিন,
খ.৪, পৃ.৩৮০]
৩.ইমাম আবু হানিফা রহ. তার আল-ফিকহুল আবসাতে বলেছেন,
:”قلتُ: أرأيتَ لو قيل أين الله تعالى؟ فقال ـ أي أبو حنيفة ـ : يقال له كان الله تعالى ولا مكان قبل أن يخلق الخلق، وكان الله تعالى ولم يكن أين ولا خَلْق ولا شىء، وهو خالق كل شىء”
অর্থ: যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় আল্লাহ তায়ালা কোথায়? ইমাম আবু হানিফা
রহ. এর উত্তরে বলেন,
তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে,
সৃষ্টির অস্তিত্বের পূর্বে, যখন কোন স্থানই ছিলো না, তখনও আল্লাহ তায়ালা ছিলেন। আল্লাহ তায়লা
তখনও ছিলেন যখন কোন সৃষ্টি ছিলো না, এমনকি ‘কোথায়’ বলার মতো স্থানও ছিলো
না। সৃষ্টির একটি পরমাণুও যখন ছিলো না তখনও আল্লাহ তায়ালা ছিলেন। তিনিই সব কিছুর সৃষ্টা”
[ আল-ফিকহুল আবসাত,
পৃ.২০, আল্লামা
যাহেদ আল-কাউসারীর তাহকীক]
ইমাম আবু হানিফা রহ. আরও বলেন,
“ولقاء الله تعالى لأهل الجنة بلا كيف ولا تشبيه ولا جهةٍ حقٌّ”
অর্থ: জান্নাতবাসীর জন্য কোন সাদৃশ্য, অবস্থা ও দিক
ব্যতীত আল্লাহ তায়ালার দর্শন সত্য। [কিতাবুল
ওসিয়্যা, পৃ.৪, শরহে ফিকহুল
আকবার, মোল্লা
আলী কারী, পৃ.১৩৮]
ইমাম আবু হানিফা রহ. স্পষ্ট লিখেছেন, আল্লাহ তায়ালা
দিক থেকে পবিত্র। পরকালে আল্লাহ তায়ালাকে দেখা যাবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালাকে দেখার
জন্য আল্লাহর কোন দিকে থাকার প্রয়োজন নেই। ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতো বিখ্যাত তাবেয়ীর
বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তাবেয়ীগণের আকিদাও এটি ছিলো। অর্থাৎ
আল্লাহ তায়ালা স্থান ও দিক থেকে পবিত্র।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী
ভাই/বোন!
উক্ত তাসবীহ থেকে উদ্দেশ্য যে, “আল্লাহ
তায়ালা মর্যাদা ও সম্মানের দিক থেকে সবার উর্ধে”। এখানে স্থান
বা জায়গার দিকে থেকে ঊঁচু বা উর্ধে বুঝানো উদ্দেশ্য না।