আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
71 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (11 points)

১। জীবনে ঈমান আনার লক্ষ্য বা নিয়ত ফরজ সেটা যদি না থাকে অন্যান্য লক্ষ্য রাখলেও সে মানুষের জীবন সফল নয় বা সেই ক্ষেত্রে সেই মানুষ কাফের হবে এটা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে ?

 

২। কেউ জুদি নিজেকে বুঝাতে আমরা শব্দ ব্যাবহার করে থাকে যেমন আল্লাহ কুরআন এ কিছু আয়াতে করেছেন সেই ক্ষেত্রে কি কোন সমস্যা হবে কি নাকি ঈমান চলে যাবে আমরা ব্যাবহার করলে ? 

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)

 

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

**১. প্রতিটি মানুষ সফল হতে চায়। কিন্তু কোন মানুষ যদি বেঈমান হয়ে বা কাফের হয়ে ইন্তোকাল করে তাহলে তার ঠিকানা চিরস্থায়ী জাহান্নাম। সে ব্যক্তিই সব চেয়ে ব্যর্থ। প্রত্যেকে নিজেকে সফল করতে চায়। সে জন্য আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক ও উৎসাহ দিতেই কোরআনে এরশাদ করেন যে,

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ

‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কেয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। সুতরাং যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগের সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)

এই আয়াতে কারিমায় মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন। আর এর সঙ্গে সফলতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। তাহলো-

প্রথমত : মৃত্যু এমন এক ধ্রুব সত্য বিষয় যে, তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কো পথ নেই।

দ্বিতীয়ত : দুনিয়াতে মানুষ ভাল ও মন্দ যে যা-ই করুক না কেন, তাকে পরকালে তার কর্মের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে।

তৃতীয়ত : প্রকৃত সফলতা সেই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে- ‘যে দুনিয়াতে থাকাকালীন স্বীয় প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করে নিয়েছে এবং যার ফল স্বরূপ তাকে জাহান্নাম থেকে দূর করে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

চতুর্থত : দুনিয়ার (চাকচিক্যময়) জীবন ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ধোঁকা থেকে যে নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে পারবে, সেই হবে সৌভাগ্যবান। আর যে এই ধোঁকার জালে ফেঁসে যাবে, সেই হবে ব্যর্থ ও হতভাগা।

সুতরাং কোন মানুষ যদি ঈমান গ্রহণ না করে মারা যায় তাহলে সেই সব চেয়ে ব্যর্থ। যেহেতু সব প্রাণীকে মৃত্যুবরণ করতে হবে, দুনিয়ার নির্ধারিত সময় শেষে সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে; তাই পরকালের সফলতা লাভে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত না হয়ে ইমান গ্রহণ করা ও আল্লাহর বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করার বিকল্প নেই।

**২. পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে মহান আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে বোঝাতে আমরা (বহুবচন) শব্দ ব্যবহার করেছেন এই বিষয়টি শুধু অমুসলিম নয়, অনেক মুসলিমের কাছেও স্পষ্ট নয়। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। প্রথমত সবার জানা উচিত যে, ইসলামী শরীআতের কোন বিধানের কারণ তালাশ করা অন্যায়। বরং নির্বিবাদে মেনে নেওয়ার মধ্যেই বান্দার কল্যাণ নিহিত রয়েছে, মুমিন তো তারাই যারা বলে আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। (সূরা বাকারা ২/২৮৫)।

 তাছাড়া প্রত্যেক মুমিনকে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার প্রত্যেকটি কাজে বিরাট হিকমত এবং প্রশংসনীয় উদ্দেশ্য রয়েছে। আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তা স্পষ্ট হওয়া জরূরী নয়। এটি এক প্রকার পরীক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম।’ (সূরা মূলক ৬৭/২)।

শব্দকে তার নিজস্ব অর্থে ব্যবহার না করে ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করা হলে বাড়তি মর্ম পাওয়া যায়। এটি ভাষার একটি স্বীকৃত বিষয়। শের বা বাঘ শব্দটি গঠিত হয়েছে বনের একটি জন্তুর নাম হিসেবে। বন্য সেই জন্তুকে বুঝানো হলো এর নিজস্ব অর্থ। কিন্তু যখন শব্দটি এই অর্থে ব্যবহার না হয়ে মানুষকে বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ‘শেরে বাংলা’ বা বাংলার বাঘ বলে, তখন বাড়তি যে মর্ম তাতে যোগ হয় তা হল মানুষটির ভেতরে রয়েছে শক্তি ও সাহসিকতা। আরবী ভাষায় নাহনু (نحن) মানে আমরা। এটি দুইজন বা একাধিকজনের জন্য গঠিত একটি সর্বনাম। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে একে নিজস্ব অর্থ থেকে সরিয়ে এক বচনের জন্য যখন ব্যবহার করা হয় তখন বাড়তি যে মর্ম তাতে স্থান করে নেয় তাহল, ব্যক্তির মর্যাদাবান ও সম্মানিত হওয়া। বিখ্যাত আরবী অভিধান ‘আল-মুজামুল ওয়াসীত’ এর লেখক বলেন, ‘সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বহু বচনের শব্দকে এক জনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সম্মানের প্রশ্নে মহান আল্লাহ তাআলা হলেন সবার চেয়ে অগ্রগামী। তিনি একক, লা শরীকা লাহু তথা অংশীদারবিহীন। পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াতে তাঁর জন্য বহুবচনের শব্দ ব্যবহৃত হওয়ার একটি প্রধান কারণ এটি সম্মান, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি প্রদর্শন।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন, “ইন্না (নিশ্চয়ই আমরা) বা নাহনু (আমরা) এবং বহুবচনাত্মক অন্যান্য শব্দগুলোর বিভিন্ন রূপ যেমন একটি দল বা সমষ্টির পক্ষে একজনের বক্তব্যের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তেমনি কোন ব্যক্তির সম্মান এবং মর্যাদা প্রকাশেও ব্যবহৃত হয়। যেমন কোন সম্রাট যখন কোন আদেশ জারি করেন, তখন সেখানে বলা হয়, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে’ এক্ষেত্রে যদিও একজন মানুষই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিন্তু তার সম্মানার্থে বহুবচন ব্যবহার করা হচ্ছে। যিনি সবার চেয়ে বেশি সম্মানিত হবার যোগ্য, তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা। তাই তিনি যখন কুরআনে ইন্না বা নাহনু ব্যবহার করেন তা তাঁর সম্মান আর মর্যাদাকেই প্রকাশ করে, সংখ্যাধিক্যকে নয়। যদি এধরনের কোন আয়াত কারো মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে তাহলে তার উচিত হবে অন্যান্য স্পষ্ট এবং পরিষ্কার আয়াতগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া। যেমন: একজন খৃষ্টান যদি উদাহরণস্বরূপ কুরআনের এই আয়াত সামনে নিয়ে আসে যে, “আমরাই উপদেশ (সম্বলিত কুরআন) নাজিল করেছি এবং আমরাই তার সংরক্ষণকারী। (সূরা হিজর; ১৫:৯)। এখানে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। তাহলে আমরা “বলো, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়।” (সূরা ইখলাস; ১১২:১) এবং এধরনের আরো যেসব সুস্পষ্ট আয়াত রয়েছে সেগুলো দ্বারা এসব যুক্তি খন্ডন করবো, যে আয়াতগুলোর অন্য কোন ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। এর ফলে যে আসলেই সত্যের সন্ধান করছে তার মনের সব সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। প্রতিবার আল্লাহ যখন বহুবচন ব্যবহার করেন, তা তাঁর মহান মর্যাদা আর তাঁর অসংখ্য নাম এবং গুণকেই বুঝায়।” (আল আকিদাহ আল তাদমুরিয়্যা, পৃষ্ঠা ১০৯)

আমরা এই সম্মানসূচক বহুবচন কিন্ত অন্যান্য ভাষায়ও দেখতে পাই। যেমন বৃটেনের রাণী এলিজাবেথের লিখিত বক্তব্যগুলোতে সবসময় We এর ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। ইংরেজিতে একে Royal We বলা হয়। এছাড়া অন্যান্য দেশের প্রধানদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তগুলো জানানোর সময়ও বহুবচন ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

মনে রাখতে হবে " প্রচলিত আরবী ব্যাকরণ দিয়ে কখনো কুরআনকে বিশ্লেষণ করা যাবেনা কারণ কুরআনের ব্যাকরণ প্রচলিত আরবী ব্যাকরণের চেয়ে অনেক উন্নতমানের।

যেমন আপনি নিউটনের মহাকর্ষ -অভিকর্ষের সুত্র দিয়ে আইনস্টাইনে E=mc2 প্রুফ করতে পারবেন না। আইনস্টাইনের E=mc2 প্রুফ করতে হলে আপনাকে আইনস্টাইনের আবিষ্কৃত তত্ব দিয়েই করতে হবে।

কুরআনের " আমরা " শব্দের অর্থ এই নয় যে আল্লাহ অনেকজন। এখানে " আমরা" বলতে মূলত "আমি" শব্দের উপর ব্যাপকভাবে জোর দেওয়া হয়েছে যেটাকে ইংরেজীতে " রয়াল "প্লুরাল" বলা হয়। এটা দ্বারা বহুবচনকে ইঙ্গিত করেনা, বরং একবচনের উপর স্ট্রংলী জোর দেওয়া হয়।

 আর পরিশেষে আল্লাহই সর্বজ্ঞানী এবং তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...