بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
১. “আকাবীর” শব্দের শাব্দিক
অর্থ বড়রা। সাধারণত পূর্ববর্তী মনীষীগন যারা আক্বীদাগত দিক থেকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল
জামাতের ধারক বাহক ছিলেন তাঁরাই আমাদের আকাবীর। তারা এখলাস লিল্লাহিয়াত, ত্যাগ-তিতিক্ষা-কুরবানি, আদর্শ, নিষ্ঠা, বাতিলের মোকাবেলা ও ইসলামের দাওয়াতের ময়দানে স্বীয় জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তারাই
প্রকৃত আকাবীর। তবে তারা সকলেই ভুলে উর্ধে নয়। তাদের দ্বারাও ভুল ত্রুটি হয়েছে। কুরআন
ও সুন্নাহের আলোকে উম্মাহের জন্য তারা যেই খেদমত করেছেন তার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা
তাদেরকে দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
বর্তমানে যারাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী তারাই আকাবীরের উত্তরসূরী। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের যে দশটি উল্লেখযোগ্য আকিদার কথা পাওয়া যায়, সেই দশটি আকিদাকে যারাই মেনে থাকেন, তাদেরকে কোনোভাবেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত থেকে খারিজ বলা
যাবে না।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের
উল্লেখযোগ্য দশটি আক্বিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে জানুনঃ
https://ifatwa.info/1402
আকীদা সংক্রান্ত বিস্তারিত
জানুনঃ https://www.ifatwa.info/4063
২. বিয়ের পর ছেলের পক্ষে আত্মীয়স্বজন,
বন্ধুবান্ধব,
শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরিব-মিসকিনদের সামর্থ
অনুযায়ী আথীতিয়তা করাকে ‘ওয়ালিমা’ বলে। বাংলায় ওয়ালিমাকে বউভাত বলা হয়ে থাকে। বিয়ের
পরদিন বা পরবর্তী সময়ে সুবিধানুযায়ী নিকটতম সময়ের মধ্যে ওয়ালিমা করা ভাল। তবে ৩ দিনের
মধ্যে করা উত্তম। যেকোনো প্রকার খাদ্যবস্তু দিয়ে ওয়ালিমা করা যায়। মনে রাখতে হবে ওয়ালিমা
একটি ইবাদত। ''এক
দিন ওয়ালিমা করা সুন্নত, দুই
দিন ওয়ালিমা করা মুস্তাহাব, তিন
দিন ওয়ালিমা করা জায়েজ। (মুসলিম: ১৪২৭)''
বিয়ের সুন্নত তরিকা সুন্নতি
বিয়ের নিয়ম ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম বিবাহের সুন্নাত
ইসলামে বিয়ের রুকন বিয়ের সঠিক নিয়ম
ওয়ালিমা এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও ওয়ালিমা করেছেন এবং সাহাবিদেরও করতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ
(সা.) জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-কে বিয়ে করার পরদিন ওয়ালিমা করেছিলেন। (বুখারি,
হাদিস নম্বর-৫১৭০)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ছাফিয়াহ
(রা.)-কে বিয়ের পর ৩ (তিন) দিন যাবৎ ওয়ালিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা,
হাদিস নম্বর-৩৮৩৪)।
হজরত আনাস (রা.) বলেন,
নবী (সা.) আবদুর রহমান ইবনে আওফের শরীরে
হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আমি এক খেজুর আঁটির ওজন স্বর্ণ দিয়ে একজন মহিলাকে বিয়ে
করেছি। রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমার বিবাহে বরকত দান করুক। একটি বকরি/ছাগল দ্বারা হলেও তুমি ওয়ালিমা করো।’
(বুখারি: ৫১৫৫; মুসলিম
ও মিশকাত, হাদিস
নম্বর-৩২১০)।
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.)
বলেন, রাসুলুল্লাহ
(সা.) জয়নব (রা.)-কে বিবাহ করার পর যতবড় ওয়ালিমা করেছিলেন,
এতবড় ওয়ালিমা তিনি তাঁর অন্য কোনো স্ত্রীর
বেলায় করতে দেখা যায়নি।। (বুখারি: ৫১৬৮; মুসলিম: ২৫৬৯; মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১১)।
হজরত আনাস (রা.) বলেন,
আল্লাহর রাসুল (সা.) ছাফিয়াহ (রা.)-কে
মুক্ত করে বিবাহ করলেন এবং তাঁর মোহর নির্ধারণ করেছিলেন তাঁর মুক্তিপণ। তিনি তাঁর বিবাহের
ওয়ালিমা করেছিলেন ‘হায়স’ নামক বিশেষ খাদ্য
দিয়ে, যা
খেজুর, পনির
ও ঘি দ্বারা তৈরি ছিল। (বুখারি: ৫১৬৯; মুসলিম: ২৫৬২; মিশকাত, খণ্ড: ২, হাদিস নম্বর-৩২১৩)।
নির্দিষ্ট কোন খাবারের কথা উল্লেখ করা
নেই যে, ঐ খাবার দিয়েই মেহমানদারী করতে হবে। বরং ওয়ালিমায় অতিরিক্ত খরচ
করা কিংবা খুবউঁচু মানের খাবার ব্যবস্থা করা জরুরি নয়। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করাই
সুন্নত।
হজরত আনাস (রা.) বলেন,
খায়বার থেকে ফিরে আসার সময় নবী (সা.) খায়বার
ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থানে ৩ (তিন) দিন অবস্থান করলেন এবং সেখানে মহিলা সাহাবি ছাফিয়্যা
(রা.)-কে আনা হলো। রাসুল (সাঃ) ওয়ালিমার ব্যবস্থা করলেন আর আমি মুসলিমদের ওয়ালিমার দাওয়াত দিলাম। এই ওয়ালিমায় রুটি বা গোশত কিছুই ছিল
না। এই ওয়ালিমার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) একখানা চামড়ার দস্তরখান বিছানোর আদেশ করলেন।
অতঃপর এই দস্তরখানের ওপর কিছু খেজুর, পনির ও ঘি ঢেলে দেওয়া হলো। (বুখারি: ৫৩৮৭;
মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১৪)।
হযরত ছাফিয়্যা বিনতে শায়বা
(রা.) বলেন, নবীজি
(সা.) উনার এক স্ত্রীর ওয়ালিমা করেছিলেন মাত্র দুই ‘মুদ’ (বা এক ‘সা’,
অর্থাৎ সাড়ে তিন কেজি) যব দ্বারা। (বুখারি:
৫১৭২; মিশকাত,
হাদিস নম্বর-৩২১৫)।
বিবাহের ক্ষেত্রে কেবল ছেলের
জন্য ওয়ালিমা করা সুন্নত। বর্তমানে কনের বাড়িতে যে ভোজের আয়োজন করা হয়,
তা শরিয়তসম্মত নয়। বিয়েতে কনেপক্ষের কোনোরূপ
খরচ করার কথা নয়। এরপরও যা করা হয়, সেটা সৌজন্যমূলক আপ্যায়নমাত্র। (বুখারি,
হাদিস নম্বর-৬০১৮)।
কনেপক্ষের অনিচ্ছাকৃত চাপের
মুখে বাধ্যতামূলক মেহমানদারি সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এতে অংশ নেওয়াও হারাম। কারও ওপর জোর
প্রয়োগ করে কোনো খাবার গ্রহণ করা জুলুমের শামিল। (আল দায়েউস সানায়ে,
কিতাবুন নিকাহ;
দুররুল মুখতার,
রদ্দুল মুহতার)।
বর্তমানে দেখা যায়,
বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার গ্রহণের জন্য চেয়ার-টেবিল
সাজিয়ে ক্যাম্প খুলে বসে। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও নিচু মনের পরিচায়ক। এতে আগত অথিতিরা লজ্জায় পড়ে যায়। যেসব
উপহার দেওয়া-নেওয়া হয়, তা
যদি চক্ষুলজ্জার খাতিরে বা সামাজিক চাপে বা সুখ্যাতি কিংবা তার বিনিময় পাওয়ার উদ্দেশ্যে
হয়, তাহলে
তা করা অবৈধ। আর যদি আনন্দচিত্তে ভালোবাসার স্মৃতিস্বরূপ দেওয়া হয় বা না দিলে কোনো
রকম অপমান করা না হয়, তাহলে
তা গ্রহণ করা বৈধ। (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ১১৫৪৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৪/৩৮৩)
৩. নবী কারীম সাঃবলেনঃ-মুসলমানগন তাদের কৃতচুক্তির আওতাধীন।অর্থাৎ শরীয়ত বিরোধী চুক্তি
না হলে তা অবশ্যই পূরণীয় এবং পূরণ করতে হবে,এবং দালালীও একটি চুক্তি বিধায় তা বৈধ ও পূরণীয় । (সহীহ বোখারী-৩/৯২,
হাদীস নং ২২৭৪ এর শিরোনাম)
সুতরাং অফিসিয়ালি নির্দিষ্ট রুলস অনুযায়ী
প্রত্যেক রিসেলারের নিকট থেকে কাজে যোগ দেওয়ার পূর্বে উক্ত টাকা গ্রহণ করা হলে তা জায়েয
আছে। কিন্তু যদি এটি অফিসিয়ালি এই রুলস না থাকে বা অবৈধ হয় তাহলে অন্যায় ভাবে কারো
থেকে এভাবে টাকা নেওয়া জায়েয হবে না।
৪. আনাস ইবনু মালিক (রাযি.)
হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সিজদায় (অঙ্গ প্রত্যঙ্গের)
সামঞ্জস্য রক্ষা কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দু’ হাত বিছিয়ে না দেয়,
যেমন কুকুর বিছিয়ে দেয়। (সহীহ বুখারী, হাদীষ ৮২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৯৩)
এই হাদীস পুরুষের ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য। এই হাদীসে পুরুষের সিজদার নিয়ম শেখানো হয়েছে। সুতরাং পুরুষের সিজদার নিয়ম এবং নারীর সিজদার নিয়ম
সম্পূর্ণ আলাদা। আরো সুস্পষ্ট ভাবে হাদীসের ব্যাখ্যা জানতে ও নারী পুরুষের সালাতের
পার্থক্য জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/6368/
আরো জানুনু: https://ifatwa.info/52639/