بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে
ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে সম্বোধন করে বলেন,
وَاسْتَفْزِزْ
مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَأَجْلِبْ عَلَيْهِم بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ
وَشَارِكْهُمْ فِي الأَمْوَالِ وَالأَوْلادِ وَعِدْهُمْ وَمَا يَعِدُهُمُ
الشَّيْطَانُ إِلاَّ غُرُورًا
তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য
থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ
কর, তাদের
অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তিতে শরীক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া
শয়তান তাদেরকে কোন প্রতিশ্রুতি দেয় না। (সূরা ইসরা ৬৪)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, যে
সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের আওয়াজ। বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রহ.
বলেন, ইবলিসের
আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন,
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে,
যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে
তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (ইগাছাতুল
লাহফান ১/১৯৯)আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি. বলেন,
الْغِنَاءُ
يُنْبِتُ النِّفَاقَ فِى الْقَلْبِ كَمَا يُنْبِتُ الْمَاءُ الزَّرْعَ
পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা
উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে। (বাইহাকী ২১৫৩৬ তাফসীরে কুরতুবী
১৪/৫২)
সলফে সালেহীন;
সাহাবা ও তাবেঈনদের ভাষ্য অনুযায়ী গান
অন্তরে মুনাফিকী (কপটতা) উদগত করে এবং বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র। যেমন-
ক) নিফাক এর উৎস। খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী। গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ। ঘ) কোরআনের
প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী। ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী। চ) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ
সৃষ্টিকারী এবং ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭)গজল বা ইসলামী
সংগীত যদি ভালো অর্থবোধক হয়, তাহলে আবৃত্তি করা, শ্রবণ করা জায়েয আছে।চায় একক কন্ঠে হোক বা সম্মিলিত কন্ঠে
হোক।
তবে কয়েকটি মূলনীতিকে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে
লক্ষ্য রাখতে হবে।
(১) মিউজিক থাকতে পারবে না।
(২) অত্যাধিক মনযোগ প্রদান
করা যাবে না।যার দরুণ ফরয ওয়াজিব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
(৩) মহিলাদের কন্ঠে হতে পারবে
না,এবং অশ্লীল বা
হারাম কথাবার্থা তাতে থাকতে পারবে না।
(৪) ফাসিক,এবং উদ্ভ্রান্তদের কন্ঠে হতে পারবে না।
(৫) এমন কোনো আয়োজন হতে পারবে
না, যা
মিউজিকের মত মনে হয়।
(৬) গান যেভাবে মানুষকে আকৃষ্ট
করে,ফিতনায় পতিত করে,
সে রকম কোনো কন্ঠ হতে পারবে না।
অথচ বর্তমানে প্রচলিত অনেক
শে'র,
গজলে এমনটাই লক্ষ্য করা যায়।আজকালের শ্রুতাগণ
অর্থের দিকে খেয়াল না করে, তারা
কন্ঠ এবং ভাবভঙ্গির দিকেই বেশী খেয়াল করে গজল বাছাইরকরে।এত্থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকতে
হবে।(ফাতহুল বারী-১০/৫৫৩)
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে
ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/1898
মুখ দ্বারা শিষ দেওয়া সম্পর্কে
সর্বমোট তিনটি মতামত পাওয়া যায়:
(১) হারাম,
উপরোক্ত আয়াতের বিত্তিতে শিষ দেয়াকে কেউ
কেউ হারাম সাব্যস্ত করে থাকেন।
(২) মাকরুহ। যারা
মাকরুহ বলেন,তাদের
দলীল হল, কুরআনের
উপরোক্ত আয়াত কাফিরদের ইবাদত সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। বিধায় এ আয়াত শিষ দেয়া হারাম
হওয়ার উপর অকাট্য নয়। সে হিসেবে মাকরুহ বলা যায়।
(৩) জায়েয। যারা
জায়েয বলেন, তাদের
দলীল হল,কাফিরদের উদ্দেশ্য
ছিলো, কুরআন
শ্রবণে বাধা সৃষ্টি করা। সুতরাং শিষ হারাম নয় বরং কুরআন শ্রবণে বাধা সৃষ্টি করাই হারাম।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী
ভাই/বোন!
১. এই ভাবে গান গাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কেননা এতে করে
অন্তরে মরিচা ধরে নেওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এত্থেকে বেচে থাকতে হবে। ইতিপূর্বে কোনো অমুসলিম বা
ফাসিক যেই সূর ব্যবহার করেছে, যেই সূর মানুষকে ইবাদত থেকে গাফিল করে,
জাহান্নামের নিকটবর্তী করে,
এমন সূর হতে পারবে না। মিউজিক ব্যতীত ভালো অর্থবোধক কোনো গজল সংগীত গাওয়ার/ শ্রবণের অনুমতি রয়েছে।
তবে গানের সূরে বা কন্ঠে হতে পারবে না।
ইসলামি সংগিত সম্পর্কে জানতে- https://www.ifatwa.info/1898
২. মনে মনে মিউজিকের আওয়াজ কপি করে গুন
গুন আওয়াজে গান গাওয়া জায়েয নেই। কারণ, গান ফাসিক এবং উদ্ভ্রান্তদের
কন্ঠেই হয়ে থাকে এবং এর অধিকাংশই অমুসলিম থাকে। বিধায় গানকে আবৃত্তি করা জায়েয
হবে না, যদিও
সেটা মিউজিক ছাড়া হোক না কেন।