بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
উম্মত বা উম্মাহর শাব্দিক অর্থ জাতি। সব মানুষই
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মত। এখানে মুসলিম-অমুসলিম, ইহুদী, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেকেই আল্লাহর তাওহীদ ও নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহর প্রতি দাওয়াত প্রাপ্ত। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) যা করতে বলেছেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে করা এবং তিনি যা করতে নিষেধ করেছেন
তা থেকে বিরত থাকার জন্য আদেশপ্রাপ্ত। সুতরাং এক্ষেত্রে সমগ্র মানুষই এই আদেশের অন্তর্ভুক্ত।
যেমন আল্লাহ বলেন,
قُلْ يَا أَيُّهَا
النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
‘হে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি বলুন, হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সকলের জন্য রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি’ (সূরা আল-আ‘রাফ
: ১৫৮)। অন্যত্র তিনি বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ
إِلَّا كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا
‘আমরা আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি’
(সূরা সাবা : ২৮)। তিনি আরো বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ
إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
‘আমরা তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি’ (সূরা আল-আম্বিয়া
: ১০৭)। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
كَانَ النَّبِيُّ
يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً
‘নবীগণ তাদের স্বীয় জাতির নিকটে প্রেরিত হয়েছিলেন আর শুধু আমি সমগ্র মানুষের নিকটে
প্রেরিত হয়েছি’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৫২১; মিশকাত, হা/৫৭৪৭)।
উম্মত দুই প্রকার:
(ক) উম্মাতে দা‘ওয়াহ : এটা দ্বারা গোটা সৃষ্টিকে বুঝানো হয়েছে। যারা মহান আল্লাহ
এবং নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান আনেনি ও সত্যায়ন করেনি।
তারা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ পাঠ সম্পর্কে অবগত নয়।
তারা ক্বিয়ামতের দিন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে এবং তাদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি
প্রস্তুত রয়েছে। তারা তাদের নাফরমানীর কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যেমন, ইহুদী, খ্রিষ্টান, কাফের, মুশরিক ইত্যাদি ।
হাদীছে
এসেছে,
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ
بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِيْ أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُوْدِيٌّ وَلَا
نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوْتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِيْ أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا
كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ .
‘সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! ইহুদী হোক আর খ্রিষ্টান
হোক, যে ব্যক্তিই আমার এ রিসালাতের খবর শুনেছে, অথচ আমার রিসালাতের
উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে’
(ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৩ ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, অনুচ্ছেদ-৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৫৯৪)।
(খ) উম্মাতে ইজাবাহ : এদের মধ্যে যারা মুক্তিপ্রাপ্ত দল তারা মহান আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং তাঁদের অনুসরণ করেছে
তারা উম্মতে ইজাবাহ এর অন্তর্ভুক্ত। তারা ঐ উম্মত যাদের গুণ মহান আল্লাহ বর্ণনা করেছেন
এবং প্রশংসা করেছেন। যারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং তাঁর শরী‘আত অনুসরণ করেছে। এরাই
হল সেই উম্মত, যারা ঈমান এনেছে এবং এদের জন্যই ক্বিয়ামতের দিন
মহান রবের পক্ষ থেকে অগণিত প্রতিদান ও বিরাট মর্যাদা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ
أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ
وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ
‘তোমরাই মানবম-লীর জন্য শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায়রূপে সমুদ্ভূত হয়েছ, তোমরা ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন কর’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১১০)।
প্রশ্ন হল- إفتراق الأمة তথা ‘উম্মতের বিভক্তি’ সংক্রান্ত হাদীছে বর্ণিত
‘উম্মত’ দ্বারা কী ‘উম্মতে দা‘ওয়াহ’ উদ্দেশ্য, না-কি ‘উম্মতে ইজাবাহ’
উদ্দেশ্য?
উত্তর হল- উলামায়ে কেরাম বলেছেন, এখানে উম্মত দ্বারা ‘উম্মতে ইজাবাহ’ উদ্দেশ্য।
‘উম্মতে দা‘ওয়াহ’ নয়। কেননা তারা ঈমান আনয়ন করেনি। তারা ইহুদী-খ্রিষ্টান বা বিধর্মীদের
অন্তর্ভুক্ত। তারা বিভক্ত সৃষ্টিকারী।
আর যে হাদীছে বলা হয়েছে, ইহুদীরা ৭১টি দলে বিভক্ত আর খ্রিষ্টানরা ৭২টি দলে বিভক্ত। আর এই উম্মত তথা উম্মতে
ইজাবাহ ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে ৭২ দল পথভ্রষ্ট এবং বিদ‘আতের সাথে সম্পৃক্ত।
তবে তারা মুসলিম মিল্লাত থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে বেরিয়ে যায়নি। তাদের এই বিপথে চলে যাওয়া
এবং বিদ‘আতের সাথে জড়িয়ে পড়ার কারণে তাদেরকে শাস্তিপ্রদান করা হবে। তবে মহান আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন। পক্ষান্তরে একটি মুক্তিপ্রাপ্ত দল হল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল
জামা‘আহ। যারা নবী করীম ফ-এর সুন্নাহর যথাযথ অনুসরণ করে এবং তিনি ও তাঁর ছাহাবীগণ যা
আঁকড়ে ধরেছেন তা আঁকড়ে ধরে (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৩১)। এই মুক্তিপ্রাপ্ত দল সম্পর্কে নবী করীম
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ
أُمَّتِىْ ظَاهِرِيْنَ عَلَى الْحَقِّ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى
يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَلِكَ.
‘আমার উম্মতের মধ্যে চিরদিন একটি দল হক্বের উপর বিজয়ী থাকবে। বিরোধিরা তাদের কোন
ক্ষতি করতে পারবে না। এভাবেই ক্বিয়ামত চলে আসবে কিন্তু তারা ঐভাবেই থাকবে’ (মুসলিম
হা/১৯২০,
২/১৪৩ পৃ., ‘ইমারত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৩)। (সংগৃহিত)