আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+2 votes
181 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (18 points)

১। আনাস (রাঃ)-হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন তারা (কাফের-মুশরিকদের সন্তানরা) হল জান্নাতবাসীদের বান্দা/দাস। (মুসনাদে আবু ইয়ালা ৪১০১, ৪১০২)

এই হাদিসে কি বোঝানো হয়েছে?

 

২। কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করছি।

১ম হাদিসঃ 

আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! মু’মিনদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের (জান্নাত-জাহান্নাম সংক্রান্ত ব্যাপারে) কী হুকুম? তিনি উত্তরে বললেন, তারা বাপ-দাদার অনুসারী হবে। আমি বললাম, কোন (নেক) ’আমল ছাড়াই? তিনি বললেন, আল্লাহ অনেক ভালো জানেন, তারা জীবিত থাকলে কী ’আমল করতো। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা মুশরিকদের (নাবালেগ) বাচ্চাদের কী হুকুম? তিনি বললেন, তারাও তাদের বাপ-দাদার অনুসারী হবে। (অবাক দৃষ্টিতে) আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোন (বদ) ’আমল ছাড়াই? উত্তরে তিনি বললেন, সে বাচ্চাগুলো বেঁচে থাকলে কী ’আমল করত, আল্লাহ খুব ভালো জানেন। (আবূ দাঊদ)[1]

باب الإيمان بالقدر - الفصل الثاني

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَرَارِيُّ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: «مِنْ آبَائِهِمْ» . فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ بِلَا عَمَلٍ؟ قَالَ: «اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ» . قُلْتُ فذاراري الْمُشْرِكِينَ؟ قَالَ: «مِنْ آبَائِهِمْ» . قُلْتُ: بِلَا عَمَلٍ؟ قَالَ: «اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

وعن عائشة رضي الله عنها قالت: قلت: يا رسول الله ذراري المؤمنين؟ قال: «من آبائهم» . فقلت: يا رسول الله بلا عمل؟ قال: «الله أعلم بما كانوا عاملين» . قلت فذاراري المشركين؟ قال: «من آبائهم» . قلت: بلا عمل؟ قال: «الله أعلم بما كانوا عاملين» . رواه أبو داود

[1] সহীহ : আবূ দাঊদ ৪০৮৯।

অর্থাৎ মুশরিকদের সন্তানেরা জাহান্নামী হবে। (আমার হাদিসটি পড়ে সাধারণভাবে যা মনে হচ্ছে)

২য় হাদিসঃ 

 শু’আইব (রহ.) হতে বর্ণিত যে, ইবনু শিহাব (রহ.) বলেছেন, নবজাত শিশু মারা গেলে তাদের প্রত্যেকের জানাযার সালাত আদায় করা হবে। যদিও সে কোন ভ্রষ্টা মায়ের সন্তানও হয়। এ কারণে যে, সে সন্তানটি ইসলামী ফিত্রাহর (তাওহীদ) এর উপর জন্মলাভ করেছে। তার পিতামাতা ইসলামের দাবীদার হোক বা বিশেষভাবে তার পিতা। যদিও তার মা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের অনুসারী হয়। নবজাত শিশু সরবে কেঁদে থাকলে তার জানাযার সালাত আদায় করা হবে। আর যে শিশু না কাঁদবে, তার জানাযার সালাত আদায় করা হবে না। কেননা, সে অপূর্ণাঙ্গ সন্তান। কারণ, আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ প্রতিটি নবজাতকই জন্ম লাভ করে ফিতরাতের (তাওহীদের) উপর। অতঃপর তার মা-বাপ তাকে ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। (বুখারী ১৩৫৮, ১৩৫৯, ১৩৮৫, ৪৭৭৫; মুসলিম ২৬৫৮; আবু দাউদ ৪৭১৪ )

আবার এই হাদিস অনুসারে, মুশরিক শিশুরা জান্নাতী কারণ তারা ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। [এর স্বপক্ষে আলেমদের শক্ত অবস্থান আছে।]

৩য় হাদিসঃ 

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মুশরিকদের শিশু সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তাদের সৃষ্টি লগ্নেই তাদের ভবিষ্যৎ ‘আমল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। (৬৫৯৭, মুসলিম ৪৬/৬, হাঃ ২৬৬০, আহমাদ ১৮৪৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩০০)

আবার এই হাদিস অনুসারে আল্লাহই ভালো জানেন তাদের সম্পর্কে। 

=> আবার অনেকে বলেন যে, যারা প্রকৃতই ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানেনি, শুনেনি, দাওয়াত পায়নি তাদের কাছে, পাগলদের কাছে, বধিরদের কাছে এবং এমন আরো কিছু মানুষের কছে থেকে কিয়ামতে আল্লাহর আনুগত্যের উপর এক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তাতে যারা উত্তীর্ণ হবে, তারা জান্নাতবাসী এবং অবশিষ্টরা দোযখবাসী হবে। আর এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অধিকাংশ স্কলারের মত। আর এই দলিলের ভিত্তিতেই অনেকে বলেছেন কাফের শিশুদের থেকেও পরীক্ষা নেওয়া হবে।

 

এখন আসলে কোনটি ঠিক? প্রায় সবই তো সহিহ হাদিস থেকে নেওয়া। তাহলে এমন অসঙ্গতি (আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। আল্লাহ মাফ করুন।)মনে হচ্ছে  কেন? সঠিক তথ্য জানাবেন দয়া করে।

 

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

মুসলিম শিশু মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে এই কথার সাথে জুমহুর ওলামা একমত। কিন্তু অমুসলিম নাবালক ও নাবালিকা সন্তানদের ক্ষেত্রে মতভেদ পাওয়া যায়। কাফের-মুশরিকদের নাবালেগ মৃত শিশু-সন্তান সম্পর্কে আলেমদের মাঝে সাধারনত ৪টি মাযহাব পাওয়া যায়। গ্রহনযোগ্যতার ক্রমানুসারে সেগুলো হলোঃ তারা জান্নাতে যাবে। তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে আখিরাতে। তাদের সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া। তারা জাহান্নামে যাবে। সবগুলোর পক্ষেই মোটামুটি দলিল রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি গ্রহনযোগ্য হচ্ছে ১ম মত, তারপর ২য়, তারপর ৩য়, তারপর ৪র্থ। ৪র্থ মতের পক্ষের আলিমদের সংখ্যা সবচেয়ে কম।

(তাফসীর ইবনে কাসীর ৩/২৯-৩৩; শারহে সুনানে আবি দাউদ ৭/৮৩; আত তাযকিরাহ ২/৩২৮; আত-তাদকিরাহ ২/৩২৮; শরহ মুসলিম ১৬/২০৭, ২০৮; ফাতহুল বারী ৩/২৪৫;)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حديث ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَوْلاَدِ الْمُشْرِكِينَ فَقَالَ: اللهُ، إِذْ خَلَقَهُمْ، أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মুশরিকদের শিশু সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ্ তাদের সৃষ্টি লগ্নেই তাদের ভবিষ্যৎ আমল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। (সহীহুল বুখারী, পর্ব ২৩: জানাযা, অধ্যায় ৯২, হাঃ ১৩৮৩; মুসলিম, পর্ব ৪৬: কাদর বা ভাগ্য, অধ্যায়, অধ্যায় ৬, হাঃ ২৬৬০)

وقال القرطبي : إن قول أنهم في الجنة هو قول الأكثر ، وقال : وقد أنكر بعض العلماء الخلاف فيهم. " التذكرة " (2/328) সারমর্মঃ

তারা জান্নাতে যাবে, এটিই বেশিরভাগ উলামায়ে কেরামদের মত।    (মা'আরেফুল কোরআন ৫/৪৫৭) এবং ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১২/২১১ তে আছে যে কুরআন শরীফে এসেছেঃ 

وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ

আল্লাহ তায়ালা  কাহারো গুনাহের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেননা। (সুরা ফাতির ১৮)

সুতরাং কাফের মুশরিকদের নাবালেগ সন্তান  যদি বালেগ হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, তাহলে তাদের শাস্তি হবেনা। কেননা মা বাবার কুফুরির কারনে সে শাস্তির উপযুক্ত হবেনা।

জামিয়া বিন নুরি পাকিস্তানের 143607200012 নং ফতোয়া দ্রষ্টব্য।

শিশুরা নিরপরাধ। ইসলামি শরিয়তমতে, মুসলিম-অমুসলিম যার ঔরসেই সন্তানের জন্ম হোক, নাবালেগ অবস্থায় সে একজন মুসলমান। পরে বড় হলে পিতা-মাতা ও পরিবেশ তাকে ইহুদি খ্রিস্টান বা মুশরিক বানায়। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে

- كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، كَمَثَلِ البَهِيمَةِ تُنْتَجُ البَهِيمَةَ هَلْ تَرَى فِيهَا جَدْعَاءَ

‘রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের ওপর (মুমিন হিসেবে) জন্মগ্রহণ করে। এরপর তার মাতাপিতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান বা অগ্নি উপাসক বানায়। যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ? (বুখারি: ১৩৮৫)

অতএব, অমুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া সন্তান যদি নাবালেগ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতি হবে এবং তার কোনো শাস্তি নেই। সহিহ বুখারিতে মেরাজের ঘটনা সংক্রান্ত এক দীর্ঘ হাদিসের এক পর্যায়ে এসেছে-‘আমরা চলতে চলতে একটি সবুজ বাগানে উপস্থিত হলাম। এতে একটি বড় গাছ ছিল। গাছটির গোড়ায় একজন বয়োবৃদ্ধ লোক ও বেশ কিছু বালক বালিকা ছিল..।’ এই হাদিসের পরের অংশেই বলা হয়েছে- গাছের গোড়ায় যে বৃদ্ধ ছিলেন, তিনি ইবরাহিম (আ.) এবং তাঁর চারপাশের বালক-বালিকারা ছিল আওলাদুন্নাস বা মানুষের সন্তান। (সহিহ বুখারি: ১৩৮৬, ইফাবা-১৩০৩)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা হলো, জান্নাতীদের সেবক-সেবিকা হবে ৷

২. এটি এমন কোনো বিষয় নয়, যা জানার উপর শরীয়তের কোনো আমল নির্ভরশীল এবং আকীদাগত কোন বিষয়ও নয়, যা জানা জরুরি ৷ তাই এ জাতীয় বিষয় নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া ঠিক নয়।

কাফের-মুশরিকদের নাবালেগ সন্তান মারা গেলে তাদের সাথে কি আচরণ করা হবে এ বিষয়ে বিভিন্ন মত আছে। যেমন কেউ বলেন জান্নাতে যাবে ৷ কেউ বলে জাহান্নামে যাবে ৷ কেউ বলে আ’রাফে থাকবে ৷ কেউ বলে জান্নাতীদের সেবক-সেবিকা হবে ৷ তবে জান্নাত যাবে- এ মতটি অধিক শক্তিশালী। এর সঠিক ফয়সালা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন। (লামিউদ দারারী ২/১৩৭; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৫/৫০২; রদ্দুল মুহতার ২/১৯২; ফাতাওয়া উসমানী ১/৫২ )

ইমাম আবু হানিফা রহঃ এই বিষয়ে তাওক্কুফ করেছেন। জান্নাত জাহান্নাম কোনো মতের দিকে যাননি। 

وقال القرطبي : إن قول أنهم في الجنة هو قول الأكثر ، وقال : وقد أنكر بعض العلماء الخلاف فيهم. " التذكرة " (2/328)

সারমর্মঃ তারা জান্নাতে যাবে, এটিই বেশিরভাগ উলামায়ে কেরামদের মত।    

বিস্তারিত জানুনঃ- https://ifatwa.info/12149/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by
তাহলে ১ম হাদিসের ব্যাখ্যা কি?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...