بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
বিয়ের জন্য ইজাব কবুল এবং দুইজন পুরুষ সাক্ষী বা একজন পুরুষ
সাক্ষী ও দুইজন মহিলা সাক্ষীর প্রয়োজন এবং মহর উল্লেখ করা জরুরী। তবে মহর উল্লেখ না থাকলেও বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যায়। বিয়ের জন্য রেজিষ্টেশন জরুরী পর্যায়ের
নয়। এটা দেশীয় আইন। সুতরাং রেজিষ্টেশন না করেও যদি কেউ অন্যান্য শর্তাদি পুরণ করে বিয়ে
করে নেয়, তাহলে
বিয়ে হয়ে যাবে। ইজাব-কবুল সম্পন্ন হওয়ার পর কাজি বর-কনের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে বিবাহ
নিবন্ধন ফরমটি পূরণ করেন।
কাবিন এটি একটি ফারসী শব্দ। এর অর্থ মহর, দেনমহর, বিবাহ পণ। কাবিন
করা মানে বিবাহের মহর বিষয়ক আলোচনা চূড়ান্ত করা। বর্তমানে বিবাহ রেজিস্ট্রেশনকেই কাবিন
বলে আখ্যায়িত করা হয়। মহর বিবাহের আবশ্যকীয় অন্যতম একটি উপাদান। মহর ব্যতিরেকে বিবাহ
শুদ্ধ হয় না। তবে প্রচলিত কাবিন বা বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বিবাহের কোনো অংশ নয়। এটা প্রাসঙ্গিক
দেশীয় একটি নিরাপত্তাজনিত আইনী ব্যাপার মাত্র। এর সাথে মৌলিক বিবাহের আবশ্যকীয় কোনো
সম্পর্ক নেই। আগে পরে কাবিন না করালেও বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং শুধু কাবিন করিয়ে
নিলেই বিবাহ হয়ে যায় না। অতএব বিবাহপূর্ব কাবিন করিয়ে নিলেও হবু বধূ হবুবরের জন্য পরনারী হিসেবেই গণ্য হবে। একজন পরপুরুষ এবং একজন পরনারীর মাঝে যে
ধরনের সম্পর্ক থাকে এ দুজনের মাঝে ঠিক একই রকম সম্পর্ক বজায় থাকবে। আর পরনারীর সাথে
কথা বলার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াতের নীতি হলো, বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে তাদের সাথে
কথা বলা যাবে না।
সুতরাং বিয়ে না করিয়ে
শুধু প্রচলিত কাবিন করিয়ে হবু বরের জন্য হবু কণের সাথে একান্ত প্রয়োজন ব্যতিরেকে কথা
বলা জায়েয নেই। উল্লেখ্য, বিবাহ নিবন্ধন বা কাবিন বিবাহ সম্পন্ন
হওয়ার পর করা চাই। কারণ বিবাহপূর্ব নিবন্ধনের
ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার মত অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয়। কেননা বিবাহ
ফরমে আমি বিবাহ করলাম করেছি জাতীয় ঘরগুলো পূরণ করতে হয়, যা স্পষ্ট মিথ্যার
আশ্রয়গ্রহণের শামিল।
শরীয়তের বিধান হলো, কাবিন করতে হলে পূর্বে নিয়মমাফিক বিবাহ
সম্পন্ন করতে হবে। বিবাহের কার্যাবলি সম্পন্ন হলে নির্ধারিত কাবিননামার ফরম পূরণ করবে।
এ সংক্রান্ত সরকারি আইনও একথাই বলে যে, বিবাহের পরে ফরমটি পূরণ করত সংঘটিত বিবাহকে
সরকারী রেজিস্ট্রারভুক্ত করবে। কেননা বিবাহই যদি সম্পাদিত না হয়ে থাকে তাহলে রেজিস্ট্রেশন
বা নিবন্ধন কিসের হবে?
কিন্তু আমাদের সমাজে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, ‘বিয়ের কাবিন
করে রেখেছি, বিয়ে
পরে হবে।’ আবার অনেক সময় দেখা যায়, কাজি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাগাদা
দিতে থাকে যে, ‘কাবিনের
কাজ আগে শেষ করে ফেলুন। পরে আপনারা মসজিদের ইমাম সাহেবকে দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে নেবেন।’ এই
চিন্তা এবং কাজগুলো নিতান্তই ভুল। কেননা, যেখানে বিয়েই এখনও সম্পন্ন হয়নি সেখানে
কিসের নিবন্ধন করা হবে?
সুতরাং বিয়ের আগে কাবিন করা একে তো আইনসিদ্ধ নয়, আবার এক্ষেত্রে আরো কিছু বড় সমস্যাও
রয়েছে।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের সময় যে ফরমটি পূরণ করতে হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য
কয়েকটি কলাম হল, বিবাহ
কত তারিখে হয়েছে? কোথায়
বিবাহ হয়েছে? বিবাহ
কার মাধ্যমে পড়ানো হয়েছে?
বিয়ে পড়ানোর পূর্বেই যদি কাবিন করে রাখা হয় তবে ফরমের উপরোক্ত কলামগুলোতে অবশ্যই
মিথ্যা তথ্য লিখতে হবে। কেননা বিয়ে না হওয়ায় বিয়ে সম্পাদনের তারিখ, স্থান সবকিছু
বানিয়ে লিখতে হবে। এক কথায়,
বিবাহের পূর্বে কাবিন করার দ্বারা পাত্র, পাত্রী, সাক্ষী, কাজী সকলেই
মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। সবাই মিথ্যা কথার উপর ভিত্তি করে স্বাক্ষর করছে।
উপরোক্ত মিথ্যা তথ্য লেখা ছাড়াও বিয়ের পূর্বে কাবিন করার ক্ষেত্রে
আরেকটি জটিলতর সমস্যা হলো,
কাবিননামার ১৮ নং ধারা। এখানে লেখা থাকে, বর কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা
প্রদান করা হবে কি না?
হলে কোন কোন শর্তে?
ফরমের এ কলামটি পূরণকালে সাধারণত ‘হ্যাঁ’ লিখে তিনটি শর্ত উল্লেখ করা হয়। এর অর্থ
হলো, স্বামী
তার স্ত্রীকে শর্ত সাপেক্ষে তালাক গ্রহণের ক্ষমতা দিয়েছে। একে ইসলামী পরিভাষায় ‘তালাকে
তাফবীয’ বলা হয়। বিয়ের পর যেমনিভাবে স্বামী নিজে তালাক প্রদানের ক্ষমতা রাখে তদ্রূপ
কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্ত্রীকেও তালাক গ্রহণের অধিকার দিতে পারে। কিন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতে
বিয়ের আগে যেহেতু স্বামী নিজেই তালাক প্রদানের ক্ষমতা রাখে না তাই স্বামী মুখে স্ত্রীকে
ঐ অধিকার দিলেও বা অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করলেও স্ত্রীর জন্য বিবাহের পর উক্ত অধিকার
প্রতিষ্ঠিত হবে না।
অতএব বিয়ের আগে কাবিন করার অর্থ হচ্ছে, স্বামী তার
স্ত্রীকে বিয়ের আগেই তালাক গ্রহণের ক্ষমতা দিয়ে দিচ্ছে। অথচ বিয়ের আগে তো স্বামী নিজেই
তালাক প্রদানের ক্ষমতা রাখে না। কেননা বিবাহ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত স্বামী তার স্ত্রীর
জন্য একজন পরপুরুষের ন্যায়। আর কোনো পরপুরুষ কিভাবে কোনো পরনারীকে তালাক দিবে? সুতরাং পাত্র
যদি বিয়ের আগে কাবিননামার ফরম পূরণ করত তাতে স্বাক্ষরও করে তবুও এর দ্বারা বিবাহের
পর পাত্রী তালাক গ্রহণের অধিকার প্রাপ্ত হবে না। এমতাবস্থায় সেই স্ত্রী যদি কোনোদিন
নিজের উপর তালাক গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে তার তালাক গ্রহণ শরীয়ত মতে কোনোভাবেই শুদ্ধ হবে
না।
কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, বিয়ের আগে করা এই কাবিনের ভিত্তিতেই
স্ত্রী স্বামীর থেকে তালাক নিয়ে নেয় এবং অন্যত্র বিবাহও করে ফেলে। অথচ এভাবে তার তালাক
গ্রহণ কার্যকর হয় না এবং অন্যত্র বিবাহও বৈধ হয় না।
বিয়ের আগে কাবিন করার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় খারাপ দিক হলো অনেকে
এই কাবিনকেই বিবাহ মনে করে। ফলে মৌখিকভাবে বিয়ের ইজাব-কবুল না করে শুধু কাবিন করার
দ্বারাই বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে মনে করে। অথচ মৌখিক ইজাব-কবুল ছাড়া কাবিননামা দ্বারা
কখনোই বিবাহ সংঘটিত হবে না। ফলে ছেলেমেয়ের একত্রে থাকাও বৈধ হয় না।
তাই সার্বিক বিবেচনায় ইসলামী শরীয়ত ও সরকারি আইন অনুযায়ী বিয়ে
পড়ানোর কাজ সুসম্পন্ন হওয়ার পরেই কেবল কাবিননামার ফরম পূরণ ও সাক্ষর করতে হবে, বিয়ের আগে কখনই
নয়।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا
عَبْدُ الرَّزَّاقِ أَنْبَأَنَا مَعْمَرٌ عَنْ جُوَيْبِرٍ عَنْ الضَّحَّاكِ عَنْ
النَّزَّالِ بْنِ سَبْرَةَ عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ
عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَا طَلَاقَ قَبْلَ النِّكَاحِ
‘আলী
ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বিবাহের
পূর্বে তালাক নাই।
(সুনানে
ইবনে মাজাহ ২০৪৯)
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ
أَنْبَأَنَا عَامِرٌ الْأَحْوَلُ ح و حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ حَدَّثَنَا
حَاتِمُ بْنُ إِسْمَعِيلَ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ جَمِيعًا عَنْ
عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم قَالَ لَا طَلَاقَ فِيمَا لَا تَمْلِكُ
‘আমর
ইবনু শু‘আইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তালাক দেয়ার অধিকার জন্মানোর আগে প্রদত্ত তালাক কার্যকর হয়
না।
তিরমিযী ১১৮১, আবূ দাউদ ২১৯০, সহীহ, ইরওয়াহ ১৭৫১, ২০৬৯, সহীহ আবী দাউদ
১৯০০, ইবনে
মাজাহ ২০৪৭ রাওদুন নাদীর ৫৭১, আত-তা'লীকু আলাত তানকীল ২/৬২।
আরো জানুনঃ https://ifatwa.info/41775/