আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
135 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
ﺍَﻟﺴَّﻼَﻡْ ﻋَﻠَﻴْــــــــــــــــــــﻜُﻢْ ﻭَ ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﮧِ ﻭَﺑَﺮَﻛَﺎﺗُﻪ
শায়েখ আমার কিছু প্রশ্ন যথাক্রমে-

কেস নং (১)

স্ত্রীকে কিভাবে দ্বীনের পথে আনা যায় যাতে করে সে সর্বদা দ্বীনের পথে থাকতে  পারে? অনেক সময় দেখা যায় অবসরে নাটক, মুভি বা গান শোনায় ব্যস্ত থাকে। বুঝালে বুঝে। কিন্তু সিরিয়াসলি না। কিভাবে স্বামী এবং স্ত্রী মিলে একটি সুন্দর, সুখের দ্বীনি পরিবার গঠন করা যায়। যদি কিছু দিক-নির্দেশনা দিতেন!

কেস নং (২)

এক ভাই দ্বীনের পথে আসতে চান। কিন্তু দুনিয়াবি রঙিন জীবন ও ভাল লাগে তার। দো-টানার মধ্যে পড়ে আছেন তিনি। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। সিগারেট ছাড়তে চান কিন্তু পারেন না, গান বাজনা ছাড়তে চান কিন্তু পারেন না, তিনি বিবাহিত তারপরেও নজরের হেফাজত করতে পারছেন না। সুন্দর নারী দেখলে তার খুব ভাল লাগে। আবার বিয়ে করতে মন চায়। তিনি রাগান্বিত হলে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কোন ঝামেলায় পড়লে আল্লাহকে দোষারোপ করেন, গালাগালি ও করেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন পরবর্তীতে। দ্বীনের পথে আসতে খুব আগ্রহী সেই ভাই। এই সব সমস্যা তিনি কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন এবং দ্বীনের পথে ফিরে আসবেন যদি  কিছু দিক-নির্দেশনা দিতেন, তাহলে ভাইটি অনেক উপকৃত হতেন।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
সুরা তওবার ১১৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ کُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۱۱۹﴾

হে মুমিনগণ,তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। 

 “তোমরা সবাই সত্যবাদীদের সাথে থাক” বাক্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সত্যবাদীদের সাহচর্য এবং তাদের অনুরূপ আমলের মাধ্যমেই তাকওয়া লাভ হয়। আর এভাবেই কেউ ধ্বংস থেকে মুক্তি পেতে পারে। প্রতিটি বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারে। [ইবন কাসীর]
,
হাদীসেও সত্যবাদিতার গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা সত্যবাদিতা অবলম্বন কর; কেননা সত্যবাদিতা সৎকাজের দিকে নিয়ে যায়, আর সৎকাজ জান্নাতের পথনির্দেশ করে। মানুষ সত্য বলতে থাকে এবং সত্য বলতে চেষ্টা করতে থাকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে তাকে সত্যবাদী হিসেবে লিখা হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক; কেননা মিথ্যা পাপের পথ দেখায়, আর পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়, আর একজন মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে এবং মিথ্যা বলার চেষ্টায় থাকে শেষ পর্যন্ত তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিখা হয়।” [বুখারী ৬০৯৪; মুসলিম; ২৬০৭]
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনাকে স্ত্রীকে সৎ ও নেককার লোকদের সাথে উঠাবসা করার চেষ্টা করতে হবে।
এজন্য দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত নারীদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন।
আপনি বা অন্য মাহরাম সহ মাস্তুরাত জামাতে পাঠাতে পারেন।

এলাকার কোথাও দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত নারীদের তা'লিম হলে সেখানে নিয়ে গিয়ে নিয়মিত তা'লিমে অংশগ্রহণ করাবেন।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
নিম্নোক্ত দোয়া বেশি বেশি পড়ার কথা বলবেনঃ-

আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, 

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ 

হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

★আল্লাহর কাছে বেশি বেশি এই দোয়া করতে বলবেন।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)

দোয়াটি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

নেককারদের সোহবত গ্রহণ করতে হবে। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করতে হবে।

এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে। 

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

অধিকহারে ইস্তেগফার করতে হবে। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ   অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নেয়া যেতে পারে।

★কখনো একাকী নিভৃতে থাকা যাবেনা। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হতে হবে। ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করতে হবে।

আপনার স্ত্রীকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

অনুরূপভাবে আমরা আপনার স্ত্রীকে বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। 

★অধিকহারে আল্লাহর যিকির করতে হবে। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
পাশাপাশি আরো কিছু পরামর্শঃ-
নাটক, মুভি বা গান দেখা/শোনার যাবতীয় পথ বন্ধ করতে হবে। এর জন্য যাহা যাহা করনীয়, তাহা তাহা করতে হবে।

প্রয়োজনে বাটন যুক্ত সেট ব্যবহার করতে দিতে পারেন।

অবসরের সময় যেনো উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হয়,সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। 

(০২)
ভাইটিকে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত হয়ে ৪০ দিন/তিন দিন লাগানোর পরামর্শ দিবেন।

নতুবা কোনো হক্কানী শায়েখের স্বরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ থাকবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...