আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
205 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (2 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম শায়েখ।
জনৈক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তার ইমপ্লয়িদের জানিয়েছে বলেছে, "কর্মক্ষেত্রে আমরা সরকারী সকল নিয়ম মেনে চলব।" - এই বক্তব্য দ্বারা তারা পুর্বের কিছু অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধাও কমিয়ে দিয়েছে, শুধু মাত্র সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার জন্য্য। কিন্তু তারা হিন্দু / বৌদ্ধ / খ্রিষ্টানদের যে ছুটিগুলো রয়েছে, (যেগুলোতে সবাই ছুটি পায় সরকারি ভাবে। যেমন,  দুর্গাপুজা, বড়দিন সর্বজনিন সরকারি ছুটি থাকে) সেগুলোতে মুসলিম ইমপ্লয়িদের কোন ছুটি দেয় না এবং ওইদিনের ফুলটাইম অফিসের বদলে কোন ওভারটাইমও দেয় না। আমার প্রশ্ন হলো -
১। তাদের সাথে "সরকারি নিয়মে সম্পুর্ণভাবে চলার"  - কৃত চুক্তি মাধ্যমে কি একজন মুসলিম ইমপ্লয়ি অমুসলিমদের উতসবের ছুটিগুলো পাওয়ার অধিকার রাখে কিনা ?
২। সরকারি ছুটির দিনে অফিস করানোর কারণে ওভারটাইমের টাকা পাওয়া ইমপ্লপ্যিদের হক কিনা ?
৩। এই ছুটিগুলো না দিয়ে "সরকারি নিয়মে সম্পুর্ণভাবে চলার"  - ইমপ্লয়িদের সাথে কৃত চুক্তি তারা ভঙ্গ করছে কিনা ?
৪। মুসলিমদের জন্য এইসকল ছুটি নেয়া বৈধ কিনা ? উল্লেখ্য যে, আমরা অবশ্যই অমুসলিমদের উতসব পালনের জন্য ছুটি চাইনা। বরং একদিন রেস্ট পাবো কাজ থেকে, এই জন্যই ছুটির আকাঙ্খা করি।
closed

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
selected by
 
Best answer

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

হিন্দুদের পূজা অনুষ্ঠানে গমণ করে খাবার গ্রহণ জায়েজ নয়। যেহেতু এ জাতীয় দাওয়াতে অংশগ্রহণ করলে নিজের ঈমান-আমলের ক্ষতি হবার আশঙ্কাই প্রবল থাকে সেহেতু এজাতীয় দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা সর্বাবস্থায় হারাম।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন,

من تشبه بقوم فهو منهم

‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভক্ত বলে গণ্য হবে।’ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১

অন্য একটি বর্ণনায় খলীফা হযরত উমর রা. বলেছেন,

 اجتنبوا أعداء الله في عيدهم

তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাক। আস সুনানুল কুবরা, হাদীস ১৮৮৬২

অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন ‘কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়ে থাকে।’ আরেকটি বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেছেন

من بنى ببلاد الأعاجم وصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك، حشر معهم يوم القيامة.

অর্থাৎ যারা বিধর্মীদের মত উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ঐ লোকদের সাথেই হবে। আস সুনানুল কুবরা, হাদীস ১৫৫৬৩

ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন,

ولا يجوز للمسلمين حضور أعياد المشركين باتفاق أهل العلم الذين هم أهله . وقد صرح به الفقهاء من أتباع المذاهب الأربعة في كتبهم . . . وروى البيهقي بإسناد صحيح عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه أنه قال : (لا تدخلوا على المشركين في كنائسهم يوم عيدهم فإن السخطة تنزل عليهم) . وقال عمر أيضاً : (اجتنبوا أعداء الله في أعيادهم . )

যারা বাস্তবেই আলেম তাঁরা সকলেই এব্যাপারে একমত যে, মুসলিমদের জন্য মুশরিকদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা মোটেই জায়েয নেই। এবিষয়ে চার মাযহাবের ফকিহগণই তাঁদের কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া ইমাম বাইহাকি রহ. সহিহ সনদে উমর রাযি. বর্ণনা করেছেন যে, ‘মুশরিকদের অনুষ্ঠানের দিন তাদের উপাসনালয়গুলোতে প্রবেশ করো না। কেননা, ওই সময় তাদের উপর আল্লাহর গজব নাযিল হয়।’ উমর রাযি. আরো বলেন, আল্লাহর দুশমনদের থেকে তাদের অনুষ্ঠানের দিন দূরে থাকবে। (আহকামুয যিম্মাহ ১/৭২৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) অমুসলিমদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন। তাদের রান্নাকৃত খাবার খেয়েছেন। তাদের দেওয়া উপহারও গ্রহণ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৬১৫)

فى الفتوى الهندية-ولا بأس بطعام المجوس كله الا الذبيحة الخ (الفتوى الهندية-5/347، كتاب الكراهية، الباب الرابع عشر فى اهل الذمة، البحر الرائع، كتاب الكراهية، فصل الأكل والشرب-8/184، المحيط البرهانى-8/69

যার সারমর্ম হলো মূর্তিপুজকদের খাবার খাওয়া জায়েজ আছে,তবে তাদের জবাইকৃত পসগু ব্যাতিত।    

শরীয়তের বিধান হলো, বিধর্মীদের রান্না করা খাবার যেমন, মাছ, তরকারি ইত্যাদি খাওয়া জায়েয আছে, যদি সে খাদ্যটি হারাম না হয় এবং তাতে যদি হারাম কোন কিছুর সংমিশ্রণ না থাকে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ অমুসলিমদের দেয়া দাওয়াত খেয়েছেন এবং তাদের দেয়া হাদিয়াও গ্রহণ করেছেন।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১, ৩: এতে কোনো সন্দেহ নাই ওয়াদা পুর্ণ করা এবং সে অনুযায়ী কর্মসম্পাদন করা প্রত্যেক মু'মিনের বৈশিষ্ট্য। আর ওয়াদাকে ভঙ্গ করা মুনাফিকদের  বৈশিষ্ট্য। সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে বাস্তবিক অর্থেই অফিস কর্তৃপক্ষ যদি "সরকারি নিয়মে সম্পুর্ণভাবে চলার" অঙ্গিকার করে থাকে তাহলে যেদিন সরকারী ছুটি থাকে সেদিন ইমপ্লয়িদেরকে ছুটি দেওয়া তাদের উপর আবশ্যক। যদি সকলের সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করত: ছুটি প্রদান না করা হয় তাহলে এটি ওয়াদা ভঙ্গ করার শামিল হবে। ওয়াদা ভঙ্গ করা একজন মুনাফিকের আলামত। অফিস কর্তৃপক্ষের উচিৎ হয়তো তাদের রুলস পরিবর্তন করবে, অন্যথায় কৃত ওয়াদা পূর্ণ করবে।

২. জ্বী যে সকল কর্মচারী ছুটির দিনে ওভার ডিউটি করবে তাদেরকে অফিস কর্তৃপক্ষ তাদের অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক উত্তম রুপে দিয়ে দিতে হবে।।

৪. পূজা উপলক্ষে সরকারী ছুটিসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদাণ করা কোনো মুসলিম রাষ্ট্রর জন্য জায়েয হবে না। অমুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থানরত মুসলিম নাগরিকদের জন্য অনৈসলামিক উৎসব উপলক্ষ্যে সেই রাষ্টের ভাতা গ্রহণ করা যদিও জায়েয হবে। তবে গ্রহণ না করাই তাকওয়ার দাবী। সুতরাং বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যদি উক্ত দিনে ছুটি নেওয়া জায়েয আছে। তবে তাকওয়ার দাবী হলো ছুটি না নেওয়া।

বি:দ্র:  অফিস কর্তৃপক্ষ হয়তো দ্বীনদারিতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে উক্ত দিনে মুসলিম কর্মচারীকে ছুটি দেয়নি। তাদের উচিত যে, অফিস রুলস এমন তৈরী করা যে, "সরকারি নিয়মে চলা" তবে বিধর্মীদের উৎসবের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। অর্থাৎ সেদিন কোন মুসলিম কর্মচারী ছুটি পাবে না। আমরা মুসলিম হিসেবে এমনটিই হওয়া উচিত। তাহলে সাধারণ কর্মচারীদের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ হওয়া বা উপরে উল্লেখিত প্রশ্নগুলি আসার কোন সুযোগ থাকবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...