আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
136 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (45 points)

খাবার খাওয়া শেষের দিকে পানি খাওয়ার আগে যুদি কেউ আমাকে সালাম দেয় সেই ক্ষেত্রে সালামের জবাব দেয়া কি আমার জন্য ওয়াজিব হবে কি বা আমি জুদি সালাম না দেই সেই ক্ষেত্রে কি আমার গুনাহ হবে কি যুদি সেই মানুষ আমাকে ফোন কল এর মাধ্যমে অথবা সরাসরি আমার সামনে এসে সালাম দেয় ?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

https://ifatwa.info/5307/  নং ফাতওয়াতে আমরা উল্লেখ করেছি যে, প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দেয়াকে একজন মুসলমানের অন্যতম সেরা আমল হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা.-এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন- ইসলামের শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ، وَعَلَى مَنْ لَمْ تَعْرِفْ.

তুমি মানুষকে খাবার খাওয়াবে আর তোমার পরিচিত-অপরিচিত সকলকেই সালাম দেবে। সহীহ বুখারী, হাদীস : ১২

এ হাদীসে স্পষ্টভাবেই সালামকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পরিচিত-অপরিচিত সবার মাঝে। পরিচিত কাউকে যখন সালাম দেয়া হয়তা আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব কিংবা অন্য যে কোনো সূত্রেই হোক, সালামের মাধ্যমে সেই পরিচয়ের সূত্র আরও ঘনিষ্ঠ হয়। আর অপরিচিত কাউকে যখন কেউ সালাম দেয় তখন এ সালামের মধ্য দিয়েই সূচিত হতে পারে গভীর আন্তরিকতার। জীবনে কখনো দেখা হয়নি এমন কারও সঙ্গেও যখন কথাবার্তার শুরুতে সালামের আদান-প্রদান হয় তখন অকৃত্রিম হৃদ্যতা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। এক অপার্থিব শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভূত হয়। মোটকথা, সালাম বিনিময়ের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। হৃদ্যতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।

সালামের মাধ্যমে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির এ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সামাজিক বন্ধন যেমন সুদৃঢ় হয় তেমনি পরকালীন মুক্তিও এর সঙ্গে জড়িত। দেখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেহেশত লাভের জন্যেও পারস্পরিক এ ভালোবাসার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন- হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে তিনি বলেছেন,

لاَ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا. أَوَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى شَىْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ.

তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমাদের ঈমান ততক্ষণ পূর্ণ হবে না, যতক্ষণ না তোমরা একে অন্যকে ভালোবাস। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি আমলের কথা বলব, যখন তোমরা তা করবে, তখন একে অন্যকে ভালোবাসবে। তোমরা তোমাদের মাঝে সালামের প্রচলন ঘটাও।’ সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৪

খাবারের সময় সালাম দেওয়া যাবে কিনা, এই বিষয়ে জানতে আমরা মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামদের কিতাব থেকে কিছু  মাসয়ালা উল্লেখ করছিঃ সকল ইবাদতের মত সালামেরও কিছু আদব-কায়দা আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্র এমন আছে যে সব ক্ষেত্রে সালাম দেয়া মাকরূহ। সে ক্ষেত্রগুলোকে আল্লামা গায্যি রহ. নিম্নোক্ত কাব্যকারে উল্লেখ করেছেন।

سلامك مكروه على من ستسمع

ومن بعد ما أبدي يسن ويشرع

مصل وتال ذاكر ومحدث

خطيب ومن يصغي إليهم ويسمع

مكرر فقه جالس لقضائه

ومن بحثوا في الفقه دعهم لينفعوا

مؤذن أيضًا مع مقيم مدرس

كذا الأجنبيات الفتيات أمنع

ولعاب شطرنج وشبه بخلقهم

ومن هو مع أهل له يتمتع

ودع كافرًا أيضًا وكاشف عورة

ومن هو في حال التغوط أشنع

ودع آكلا إلا إذا كنت جائعًا

وتعلم منه أنه ليس يمنع

كذلك أستاذ مغن مطير

فهذا ختام والزيادة تنفع

অর্থাৎ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে সালাম দেয়া মাকরূহ। এ ছাড়া বাকী যাদের সাথে তোমার দেখা হবে, তাদের সালাম দেয়া সুন্নত ও বৈধ।

১) নামাজ পড়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

২) কোরআন তিলাওয়াত করা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৩) জিকির ও মোরাকাবায়রত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৪) খাবার খাওয়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৫) হাদিস-ফিকাহ বা অন্যান্য তালীমি মজলিসে মশগুল এমন অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৬) ওয়াজ ও নসীহত শুনা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৭) বিচারক বিচার কার্যে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৮) আযানরত, ইকামতরত কিংবা পাঠদানরত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৯) অপরিচিত যুবতী নারী [যাদের সালাম দেয়াতে ফিতনার আশংকা থাকে] তাদের সালাম দেওয়া কোনক্রমেই উচিত নয়।

১০) যারা দাবা খেলায় মগ্ন তাদের ও তাদের মত (অন্য খেলায়) মত্ত লোকদের সালাম দেওয়া উচিত নয়।

১১) যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন তাকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

১২) অমুসলিমকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

১৩) ইস্তিঞ্জারত অবস্থায় অথবা সতরবিহীন অবস্থায় থাকলে ওই ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

★★ফাতাওয়ায়ে শামীতে এসেছেঃ  

یکرہ السلام علی العاجر عن الجواب حقیقۃ کالمشغول بالأکل أو الاستفراغ، أو شرعًا کالمشغول بالصلاۃ وقراء ۃ القرآن، لو سلّم لا یستحق الجواب … یأثم بالسلام علی المشغولین بالخطبۃ … أو الأذان والإقامۃ ویردون في الباقي لإمکان الجمع بین فضیلتي الرد۔ (شامي، کتاب الصلاۃ / باب ما یفسد الصلاۃ وما یکرہ فیہا، مطلب: المواضع التي یکرہ فیہا السلام ۲؍۳۷۵ زکریا)

ফাতাওয়ায়ে শামী (২/৩৭৫) তে সেই সময় গুলো উল্লেখ করা হয়েছেঃ  

নামাজ রত ব্যাক্তি,কুরআন তেলাওয়াত রত ব্যাক্তি,যিকির রত অবস্থায়, হাদীসের দরস দান করার সময়,খুতবা বা ওয়াজ করার সময় বক্তাকে এবং তাত শ্রোতাদেরকে,নামাজ রত ব্যাক্তির কাছের কাউকে সালাম দেওয়া,ফিকাহ নিয়ে গবেষণা রত ব্যাক্তি, বিচার কার্য সম্পাদন রত অবস্থায় বিচারককে,ইলম শিক্ষারত অবস্থায়,আযান ইকামতের সময়,ক্লাশরত শিক্ষার্থীদেরকে,গায়রে মাহরাম যুবতী মহিলাকে,দাবা বা যেকোনো অনার্থক কাজ বা খেলায় লিপ্ত ব্যাক্তি,স্ত্রীর সাথে সহবাস বা তার পূর্ব মুহুর্তে ব্যাক্তি কে সালাম দেওয়া,ছতর অনাবৃত ব্যাক্তি,ইসতেঞ্জা রত ব্যাক্তি, খানা খাওয়া অবস্থায়, (কিন্তু লোকমা মুখে না থাকা অবস্থায় যদি তাকে সালাম দিলে সে কিছু মনে না করে, তাহলে তাকে সালাম দেওয়া যাবে),অযু রত অবস্থায়।

উক্ত সময়ে উল্লেখিত ব্যাক্তিদেরকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। 

সালাম সম্পর্কে আরো জানুনঃ https://ifatwa.info/2795/

★★খাবারের সময় সালাম দেওয়া যাবে এবং নেওয়া যাবে। প্রচলিত যে ধারণা রয়েছে যে, ‘খাদ্য গ্রহণকারীকে সালাম দেয়া যাবে না’ এর কোন অস্তিত্ব নেই। তবে যদি কারো মুখের ভেতরে খাবার থাকে, তাহলে তাকে সালাম না দেওয়া ভাল। এ অবস্থায় কেউ সালাম দিলে উত্তর প্রদান ওয়াজিব নয়। (সাখাবী, আল মাকাসিদ, পৃ. ৪৬০, মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার, পৃ. ২৬৫)

এ সম্পর্কে (কাশফুল খুফা) কিতাবে বলা হয়েছে (لا سلام على أكل) ليس بحديث) অর্থাৎ খাবার চলাকালীন সময়ে সালাম দেওয়া যাবে না, এটা কোন হাদিস নয়।

ইমাম নববী রহ. তাঁর আযকার কিতাবে বলেন, খাবার চলাকালীন মুখে খাবার থাকা অবস্থায় সালাম দিলে জবাব দেওয়া জরুরি নয়। তবে যদি মুখে লোকমা না থাকা অবস্থায় সালাম দেয় তাতে কোন সমস্যা নেই এবং উত্তর প্রদান জরুরি।

শায়খ আব্দুর রহমান আস সাহিম বলেন, সমাজে প্রচলিত খাবার সময় সালাম দেওয়া যায় না বলে যে কথাটি রয়েছে তা সালামের ব্যাপারে নয়, মোসাফাহার ব্যাপারে। সুতরাং সালাম দেওয়া ও নেওয়াতে কোন সমস্যা নেই। (সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৪৬০, মোল্লা কারী, আল আসরার, পৃ. ২৬৫, আল-আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৪৮৮, যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ, পৃ. ২০৩। )

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

★★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে খাবারের সময় মুখে লোকমা থাকা অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ। কারন, এতে উক্ত ব্যক্তির জবাব দিতে সমস্যা হবে। কিন্তু লোকমা মুখে না থাকা অবস্থায় তাকে সালাম দিলে সে যদি কিছু মনে না করে, তাহলে তাকে সালাম দেওয়া যাবে, এটা মাকরুহ নয় এবং এমতাবস্থায় যাকে সালাম দেওয়া হয়েছে তারও উচিত সালামের জবাব দেওয়া।

আরো জানুনঃ  https://ifatwa.info/211/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...