জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ الْفَضْلِ حَدَّثَنَا يَزِيْدُ بْنُ هَارُوْنَ حَدَّثَنَا الْعَوَّامُ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ أَبُوْ إِسْمَاعِيْلَ السَّكْسَكِيُّ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا بُرْدَةَ وَاصْطَحَبَ هُوَ وَيَزِيْدُ بْنُ أَبِيْ كَبْشَةَ فِيْ سَفَرٍ فَكَانَ يَزِيْدُ يَصُومُ فِي السَّفَرِ فَقَالَ لَهُ أَبُوْ بُرْدَةَ سَمِعْتُ أَبَا مُوسَى مِرَارًا يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيْمًا صَحِيْحًا
আবূ ইসমাঈল আসসাকসাকী বলেন, আবূ বুরদাহ্-কে বলতে শুনেছি, তিনি এবং ইয়াযিদ ইবনু আবূ কাবশা (রাঃ) সফরে ছিলেন। আর ইয়াযিদ (রাঃ) মুসাফির অবস্থায় রোযা রাখতেন। আবূ বুরদাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি আবূ মূসা (আশ‘আরী) (রাঃ)-কে একাধিকবার বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন বান্দা পীড়িত হয় কিংবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য তা-ই লেখা হয়, যা সে আবাসে সুস্থ অবস্থায় ‘আমল করত। (বুখারী ২৯৯৬.আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৮৫)
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ بِمِثْلِ مَا كَانَ يعْمل مُقيما صَحِيحا»
আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ রোগে অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তার ‘আমলনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হত।
(বুখারী ২৯৯৬, আহমাদ ১৯৬৭৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৪৭, ইরওয়া ৫৬০, সহীহ আত্ তারগীব ৩৪২০।)
ব্যাখ্যা: (إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ) বান্দা যখন রোগে আক্রান্ত হয় রোগ হওয়ার পূর্বে ‘আমল করত আর রোগ তাকে ‘আমল করতে বাধা দিচ্ছে এবং তার নিয়্যাত এমনটি যে বাধাদানকারী না হলে তার ‘আমল সে চালিয়ে যেত।
(أَوْ سَافَرَ) অথবা সফর করে। সফরই তাকে ‘আমল করতে বাধা দিচ্ছে তা না হলে সে ‘আমল চালিয়ে যেত আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় আছে, (إَذَا كَانَ الْعَبْدُ يَعْمَلُ عَمَلًا صَالِحًا فَشَغَلَه عَنْهُ مَرَضٌ أَوْ سَفَرٌ)
‘যখন বান্দা সৎ ‘আমল করতে থাকে অতঃপর তাকে বাধা দেয় রোগ বা সফর।’
আহমাদ-এর বর্ণনা এসেছে,
إَذَا ابْتَلَى اللهُ الْعَبْدَ الْمُسْلِمَ بِبَلَاءٍ فِي جَسَدِه قَالَ اللهُ: أُكْتُبْ لَه صَالِحَ عَمَلِهِ الَّذِىْ كَانَ يَعْمَلُه فَإِنْ شَفَاهُ غَسَلَه وَطَهَّرَه وَإِنْ قَبَضَه غَفَرَ لَه وَرَحْمَه.
আল্লাহ যখন মুসলিম বান্দাকে তার শরীরে রোগ দিয়ে পরীক্ষা করান তখন আল্লাহ (মালাককে) বলেন তার জন্য সৎ ‘আমল লিপিবদ্ধ কর যা সে সৎ ‘আমল করছিল যদি তাকে আরোগ্য লাভ করান তাহলে তাকে শুধু ধৌত ও পাক পবিত্র করাল (গুনাহ হতে) আর যদি আল্লাহ তাকে মৃত্যু ঘটান তহলে তাকে মাফ করে দেন এবং তার প্রতি রহম করেন।
নাসায়ীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, হাদীসে সেখানে বল হয়েছে যার রাত্রিতে নফল সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) রয়েছে কিন্তু ঘুম বা ব্যথা তাকে সালাত আদায়ে বাধা দিয়েছে তারপরেও তার জন্য সালাতের সাওয়াব লেখা হয় আর ঘুমটি হল তার ওপর সদাক্বাহ্ (সাদাকা)।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
এক্ষেত্রে যেই মহিলা নিয়মিত নামাযি হয়, যদি হায়েজ না আসতো,তাহলে অবশ্যই নামাজ পড়তো,নামাজ আদায়ের আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে পূর্ণ ভাবে থাকে,তবে শুধু রাসুলের আদেশ স্বার্থে সেই সময়ে নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকে,সেক্ষেত্রে হায়েজ দিন গুলোতেও উক্ত মহিলা উপরোক্ত হাদীসের আলোকে নামাজের ছওয়াব পাবে,ইনশাআল্লাহ।
একই বিষয় কুরআন তিলাওয়াত এর ক্ষেত্রেও হবে।
তবে এক্ষেত্রে হায়েজ অবস্থাতে নামাজের ওয়াক্ত গুলোতে অযু করে এসে কিছু সময় (সামান্য সময় হলেও) যিকির আযকার করার পরামর্শ থাকবে।
(০২)
না,আল্লাহ তায়ালা এ সময়ে নারীদের অপছন্দ করেননা।
এটি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
আল্লাহ তায়ালাই এটি দিয়েছেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الْقَاسِمِ، قَالَ سَمِعْتُ الْقَاسِمَ، يَقُولُ سَمِعْتُ عَائِشَةَ، تَقُولُ خَرَجْنَا لاَ نَرَى إِلاَّ الْحَجَّ، فَلَمَّا كُنَّا بِسَرِفَ حِضْتُ، فَدَخَلَ عَلَىَّ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَبْكِي قَالَ " مَا لَكِ أَنُفِسْتِ ". قُلْتُ نَعَمْ. قَالَ " إِنَّ هَذَا أَمْرٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ، فَاقْضِي مَا يَقْضِي الْحَاجُّ، غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوفِي بِالْبَيْتِ ". قَالَتْ وَضَحَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ نِسَائِهِ بِالْبَقَرِ.
‘আয়িশাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা হাজ্জের উদ্দেশেই (মদিনা হতে) বের হলাম। ‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর আমার হায়য আসলো। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং বললেনঃ কী হলো তোমার? তোমার হায়য এসেছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ এ তো আল্লাহ্ তা‘আলাই আদম-কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং তুমি বাইতুল্লাহর ত্বওয়াফ ছাড়া হাজ্জের বাকী সব কাজ করে যাও। ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেনঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে গাভী কুরবানী করলেন।
(বুখারী ৩০৫, ৩১৬, ৩১৭, ৩১৯, ৩২৮, ১৫১৬, ১৫১৮, ১৫৫৬, ১৫৬০, ১৫৬১, ১৫৬২, ১২৩৮, ১৬৫০, ১৭০৯, ১৭২০, ১৭৩৩, ১৭৫৭, ১৭৬২, ১৭৭১, ১৭৭২, ১৭৮৩, ১৭৮৬, ১৭৮৭, ১৭৮৮, ২৯৫২, ২৯৮৪, ৪৩৯৫, ৪৪০১, ৪৪০৮, ৫৩২৯, ৫৫৪৮, ৫৫৫৯, ৬১৫৭,৭২২৯; মুসলিম ১৫/১৭, হাঃ ১২১১)
(আধুনিক প্রকাশনী- ২৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯০)
(০৩)
এই দিন গুলোতে নারীরা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবেনা। তবে এই দিনগুলোতে যিকির আযকার,দোয়া চালিয়ে যেতে হবে।
(০৪)
শরীয়তের বিধিনিষেধ (কুরআন তিলাওয়াত না করা,সহবাস না করা,মসজিদে প্রবেশ না করা,কাবা ঘর তওয়াফ না করা,ইত্যাদি) মেনে চলতে হবে,এই দিনগুলোতে যিকির আযকার,দোয়া চালিয়ে যেতে হবে।
(০৫)
হ্যাঁ এর দরুন আল্লাহ তায়ালা হতে ক্ষমার আশা করা যাবে।
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন যখন কোনো (বিপদ) কষ্টে আক্রান্ত হয়, তখন আল্লাহ বিনিময়ে তার গুনাহগুলো (ঝরিয়ে দেন) মাফ করে দেন; যেমন (শীতকালে) গাছের পাতা ঝরে পড়ে। ’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৬৪৭)
(০৬)
হ্যাঁ, ব্যাথা দূর হওয়ার দোয়া করা যাবে।