আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
90 views
in পবিত্রতা (Purity) by (24 points)

আসসালামু আলাইকুম 

 

১) আই ফতুয়াতে দেখেছি  ফ্লোর টাইলসবিশিষ্ট হয় এবং টাইলসগুলো আয়নার মতো সমান হয় এবং পানি চোষার ক্ষমতা না রাখে, তাহলে তা আয়নার হুকুমে।  এখানে টাইলসগুলো আয়নার সমান বলতে কি বুঝানো হয়েছে? আমাদের ঘরের টাইলসের প্রতিবিম্ব আয়নার মতন স্পষ্ট নয়, কিন্তুু ঝাপসা করে হলেও প্রতিবিম্ব তৈরি করে। তাহলে কি আমাদের ঘরের টাইলস আয়নার হুকুমে পড়বে?


 

২) তেলাপোকা মারলে যেকোনো রস বের হলেই কি তা নাপাক? কোরআন হাদীসের আলোকে বললে উপকৃত হতাম। 

 

৩) আমার মা- বাবা আর ছোটভাই পবিত্রতার ব্যাপারে অজ্ঞ।  এখন তারা পাক পবিত্রতার বিষয় খুব একটা গুরুত্ব দেয় না আর মানতেও চায় না। তাদের কারণে ঘরে যদি নাপাকি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে কি আমি ও কি সব বিষয়কে নাপাক ধরে নেব নাকি পাক? কখনো কখনো হয়তো আমি জানতেও পারবোনা তারা নাপাকি ছড়ালে। 

 

৪) তারা যেখানে সেখানে তেলাপোকা মেরে রাখে এখন সে সকল স্থান কি নাপাক হবে? তাদের যদি আমি মানা করি তারপরও তারা একাজ করে, তাহলে কি আমি সব কিছু পাক করতে থাকবো? এটা তো তখন আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।  উল্লেখ্য তেলাপোকা মারলে একটা সাদা জিনিস বের হয়। তেলাপোকা মূলত পাক ঘরে বেশি থাকে তাই তারা যখন তেলাপোকা মারে তখন এটা মূলত পাক ঘরেই মারে। পাকঘরে অনেকসময়ই কিছু পানি পরে থাকে, তাইলে পরে তেলাপোকা মারার পর ঐ তরল তো পাক ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং জুতার সাথে বা পায়ের সাথে অন্য রুমেও ছড়িয়ে যেতে পারে। 

৫) আমি কি এ ক্ষেত্রে বিনা সন্দেহে ঘরে নামাজ পড়তে পারবো? যেহেতু তারা নাপাকি ছড়াচ্ছে এবং আমি তো এক্ষেত্রে তাদের বললেও তারা আমার কথা হয়তো শুনবে না। 

 

জাযাকাল্লাহু খাইরান 

1 Answer

0 votes
by (679,640 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
হাদীস শরীফে   এসেছে-

يَا عَمَّارُ إِنَّمَا يُغْسَلُ الثَّوْبُ مِنْ خَمْسٍ: مِنَ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ وَالْقَيْءِ وَالدَّمِ وَالْمَنِيِّ

আম্মার বিন ইয়াসার রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয় ৫টি কারণে কাপড় ধৌত করতে হয়, যথা-১-পায়খানা, ২-প্রশ্রাব, ৩-বমি, ৪-রক্ত, ৫-বীর্য। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৪৫৮}

https://ifatwa.info/17831/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ

টাইলস বিহীন ফ্লোরে যদি নাপাকি পড়ার পর তা পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে পরবর্তীতে তাতে ভেজা পা পড়লে সেক্ষেত্রে পা নাপাক হবে না। 

(قَوْلُهُ: إلَّا حَجَرًا خَشِنًا إلَخْ) فِي الْخَانِيَّةِ مَا نَصُّهُ: الْحَجَرُ إذَا أَصَابَتْهُ النَّجَاسَةُ، إنْ كَانَ حَجَرًا يَتَشَرَّبُ النَّجَاسَةَ كَحَجَرِ الرَّحَى يَكُونُ يُبْسُهُ طَهَارَةً، وَإِنْ كَانَ لَا يَتَشَرَّبُ لَا يَطْهُرُ إلَّا بِالْغَسْلِ. اهـ. وَمِثْلُهُ فِي الْبَحْرِ.
وَبَحَثَ فِيهِ فِي شَرْحِ الْمُنْيَةِ فَقَالَ هَذَا بِنَاءً عَلَى أَنَّ النَّصَّ الْوَارِدَ فِي الْأَرْضِ مَعْقُولُ الْمَعْنَى؛ لِأَنَّ الْأَرْضَ تَجْذِبُ النَّجَاسَةَ وَالْهَوَاءَ يُجَفِّفُهَا فَيُقَاسُ عَلَيْهِ مَا يُوجَدُ فِيهِ ذَلِكَ الْمَعْنَى الَّذِي هُوَ الِاجْتِذَابُ، وَلَكِنْ يَلْزَمُ مِنْهُ أَنْ يَطْهُرَ اللَّبِنُ وَالْآجُرُّ بِالْجَفَافِ وَذَهَابِ الْأَثَرِ وَإِنْ كَانَ مُنْفَصِلًا عَنْ الْأَرْضِ لِوُجُودِ التَّشَرُّبِ وَالِاجْتِذَابِ. اهـ. وَعَلَى هَذَا اسْتَظْهَرَ فِي الْحِلْيَةِ حَمْلَ مَا فِي الْخَانِيَّةِ عَلَى الْحَجَرِ الْمَفْرُوشِ دُونَ الْمَوْضُوعِ، وَهَذَا هُوَ الْمُتَبَادِرُ مِنْ عِبَارَةِ الشُّرُنْبُلَالِيَّةِ، لَكِنْ يَرُدُّ عَلَيْهِ أَنَّهُ لَا يَظْهَرُ فَرْقٌ حِينَئِذٍ بَيْنَ الْخَشِنِ وَغَيْرِهِ، فَالْأَوْلَى حَمْلُهُ عَلَى الْمُنْفَصِلِ كَمَا هُوَ الْمَفْهُومُ الْمُتَبَادِرُ مِنْ عِبَارَةِ الْخَانِيَّةِ وَالْبَحْرِ.
وَيُجَابُ عَمَّا بَحَثَهُ فِي شَرْحِ الْمُنْيَةِ بِأَنَّ اللَّبِنَ وَالْآجُرَّ قَدْ خَرَجَا بِالطَّبْخِ وَالصَّنْعَةِ عَنْ مَاهِيَّتِهمَا الْأَصْلِيَّةِ بِخِلَافِ الْحَجَرِ فَإِنَّهُ عَلَى أَصْلِ خِلْقَتِهِ فَأَشْبَهَ الْأَرْضَ بِأَصْلِهِ، وَأَشْبَهَ غَيْرَهَا بِانْفِصَالِهِ عَنْهَا، فَقُلْنَا إذَا كَانَ خَشِنًا فَهُوَ فِي حُكْمِ الْأَرْضِ؛ لِأَنَّهُ لَا يَتَشَرَّبُ النَّجَاسَةَ، وَإِنْ كَانَ أَمْلَسَ فَهُوَ فِي حُكْمِ غَيْرِهَا؛ لِأَنَّهُ لَا يَتَشَرَّبُ النَّجَاسَةَ - وَاَللَّهُ أَعْلَمُ -
«حاشية ابن عابدين = رد المحتار ط الحلبي» (1/ 312)
মর্মার্থ-
ফ্লোর যদি টাইলসবিহীন হয়, তাহলে নাপাকির ওপর পানি ঢেলে দিলে তা পবিত্র হয়ে যাবে। তবে পানি ঢালার পূর্বেই যদি শুকিয়ে যায়, তাহলেও পবিত্র হয়ে যাবে। কেননা তা মাটির হুকুমে। আর যদি ফ্লোর টাইলসবিশিষ্ট হয় এবং টাইলসগুলো আয়নার মতো সমান হয় এবং পানি চোষার ক্ষমতা না রাখে, তাহলে তা আয়নার হুকুমে। অর্থাৎ কোন কাপড় জাতীয় বস্তু দ্বারা মুছে ফেললে পবিত্র হয়ে যাবে। কিন্তু টাইলসে যদি মাটির মতো শোষণ ক্ষমতা থাকে, তাহলে তা মাটির হুকুমে। অর্থাৎ শুকানোর দ্বারা পবিত্র হয়ে যাবে। আর যদি শোষণ ক্ষমতা না থাকে এবং আয়নার মতো সমানও না হয়, তাহলে নাপাকি দূর হওয়া পর্যন্ত পানি দিয়ে তা ভালো ভাবে ধুতে হবে। (আরো জানতে দেখুন- ই’লাউস সুনান: ১/৩৯২, হিদায়া: ১/৫৬, ফতহুল কদীর: ১/১৭৪, মাবসুতে সারখসী: ১/২০৬)
,
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এখানে টাইলসগুলো আয়নার হুকুমে বলতে বুঝানো হয়েছে যে আয়না যেভাবে পাক করা হয়,এধরণের টাইলসও সেভাবেই পাক করা হবে।

আর তাহা হলোঃ-
কোনো কিছু দ্বারা প্রথমে প্রস্রাবকে তুলে নিয়ে কাপড় ইত্যাদি দ্বারা ধৌত করতে হবে। অথবা বেশীকরে পানি ঢেলে  সমস্ত ফ্লোরকে ধৌত করে পানি অন্যত্র ফেলে দিতে হবে।

এক্ষেত্রে পানি দ্বারা ধৌত করা মুশকিল হলে সেক্ষেত্রে ফ্লোর ১ বার মুছে পুরোপুরি না শুকিয়ে ৩-৪ মিনিট শুকিয়ে এভাবে ২য় বার করে পুরোপুরি না শুকিয়ে ৩-৪ মিনিট শুকিয়ে সবশেষে ৩য় বার মুছে ভালো করে শুকালে ফ্লোর পবিত্র হবে।প্রতিবার ভালভাবে শুকাতে হবে না। তবে প্রতিবার মুছে দেয়ার কাপড়টি ধোয়া আবশ্যক। 

আরো জানুনঃ- 
★প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনাদের ঘরের টাইলস আয়নার হুকুমে পড়বে।

(০২)
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

اَلَّذِیۡنَ یَتَّبِعُوۡنَ الرَّسُوۡلَ النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ الَّذِیۡ یَجِدُوۡنَہٗ مَکۡتُوۡبًا عِنۡدَہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ ۫ یَاۡمُرُہُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہٰہُمۡ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُحِلُّ لَہُمُ الطَّیِّبٰتِ وَ یُحَرِّمُ عَلَیۡہِمُ الۡخَبٰٓئِثَ وَ یَضَعُ عَنۡہُمۡ اِصۡرَہُمۡ وَ الۡاَغۡلٰلَ الَّتِیۡ کَانَتۡ عَلَیۡہِمۡ ؕ فَالَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِہٖ وَ عَزَّرُوۡہُ وَ نَصَرُوۡہُ وَ اتَّبَعُوا النُّوۡرَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ مَعَہٗۤ ۙ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۵۷﴾ 

“(এরা তো তারাই) যারা সেই রাসূল ও নিরক্ষর নবীর অনুসরণ করে যার কথা তারা তাদের তাওরাত ও ইনজীলে লিখিত পাচ্ছে। তিনি তাদেরকে ভালকাজ করার আদেশ দেন ও মন্দকাজ করতে নিষেধ করেন, তাদের জন্য ভাল জিনিসকে বৈধ ও খারাপ জিনিসকে অবৈধ ঘোষণা করেন।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৭]

সুতরাং পোকামাকড় খারাপ জিনিসের অন্তর্ভুক্ত; যেমন- কীট, গুবরে পোকা, তেলাপোকা, ইঁদুর, গিরগিটি, তক্ষক, টিকটিকি, গেছু ইঁদুর, বিচ্ছু, সাপ ইত্যাদি খারাপ জিনিস হিসেবে গণ্য।
এটি ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফেয়ির অভিমত...”। 
(আল-মুগনী (১৩/৩১৬-৩১৭) 

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
https://ifatwa.info/18133/ ফতোয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে, তেলাপোকার বিষ্ঠা নাপাক ও নাজাসতে গালিজা।

★তেলাপোকা মারলে সাদা যে রস বের হয়, সেগুলো নাপাক।

(০৩)
আপনি নাপাকি ছড়িয়ে যাওয়ার বিষয় দেখলে/নিশ্চিত হলে/নাপাকির গন্ধ বা চিহ্ন পেলে সংশ্লিষ্ট স্থানকে নাপাক হিসেবে ধরবেন।

নতুবা শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে নাপাক বলার সুযোগ নেই।

(০৪)
এক্ষেত্রে সেসব স্থানকে আপনি নাপাক ধরে নিবেন। তবে আপনি সেসব স্থান সম্পর্কে অবগত হতে না পারলে এবং সাদা রস দেখতে না পেলে সমস্যা নেই।

(০৫)
আপনি ঘরে জায়নামাজ বিছিয়ে জায়নামাজ এর উপর নামাজ পড়বেন।
,
ফ্লোর নিশ্চিত ভাবে নাপাক হলেও এক্ষেত্রে আপনার নামাজে কোনো সমস্যা হবেনা। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...