আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
150 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

শায়খ,

আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি,,, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকে হেদায়েত পাই আলহামদুলিল্লাহ,, তখন শুরুর দিকেই অনলাইনে একটি মাদ্রাসাতে ভর্তি হই। আমাকে এই বিষয়গুলো অনেক টানে।। আমি ইসলামিক প্রত্যেকটা বিষয়ে অনেক ডিটেইলস পড়াশোনা করতে চাইতাম,, জেনারেল পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে আসে।। আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে ওখানের ফ্রি মিক্সিং পরিবেশ,, নানান ফিতনায় নিজেকে ঠিক রাখা কঠিন হয়ে যেতো,, আমার ক্লাসে বলতে গেলে বাকী সবাই দুনিয়াবি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত।। তাই আমি ক্লাসে কম যেতাম কম মিশতাম সবার সাথে যাতে প্রভাবিত না হই।। এভাবে চলছিলো,, কিন্তু যেহেতু ভার্সিটিতে পড়ছি,, রেগুলার ক্লাস না করার কারনে আমার পড়ায় অনেক গ্যাপ হয়ে যেতো + রেজাল্ট ও ভালো হতো না। তবুও চলছিলো,,, কিন্তু দুই  সেমিস্টার যাওয়ার পরে আমি তাল হারিয়ে ফেলি,, দীর্ঘদিন সবার সাথে থাকতে থাকতে আসতে আসতে মিশতে থাকি,, আমার মধ্যে হীনমন্যতা কাজ করা শুরু করে।। তারপর বাসায় আশেপাশে সবাইও ভাবে যে আমি এতদিন ভালো রেজাল্ট করে আসছি এখনো করবো,,তারপর আমি ডিসাইড করি দুইদিকে ব্যালেন্স করে চলবো,, এই ব্যালেন্স করতে গিয়ে আমি নিজেকেই হারায়ে ফেলি,,, এখন আমার না দ্বীন আছে দুনিয়া এরকম একটা অবস্থা।। কোনোদিকেই ভালো করতে পারিনি,, পাশাপাশি মাদ্রাসায় যে ভর্তি হয়েছিলাম অনেক গ্যাপ হয়ে গেছে,, এতটা গ্যাপ ফিল আপ করে আসাও সম্ভব হচ্ছেনা।। আমি পুরোপুরি ডিপ্রেসড। গত একটা বছর দুইদিকে ব্যালেন্স করতে করতে আমি কাহিল।।ইমান আমল সব কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে।। আর পারছিনা।। বেচে থাকা কঠিন মনে হচ্ছে।।। একদিকে স্বপ্ন অন্যদিকে পরিবার।। ইদানীং দুনিয়াবি মানুষদের সাথে থাকতে থাকতে দেখতেছি নিজের মধ্যেও অনেক পরিবর্তন চলে আসতেছে,, আচার আচরন সব জায়গাতেই,, তারপর ভাবলাম এভাবে হবেনা আমি ওই জায়গা ছেড়ে দিবো,, কিন্তু পরিবার এটা মানবেনা।।  আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় মেয়ে।। আমার ছোট ভাই আছে যে অনেক ছোট।। এখন আমার বাবা সরকারি তৃতীয় শ্রেণির জব করেন,, মোটামুটি ভালোভাবেই চলছি আমরা আলহামদুলিল্লাহ।। কিন্তু আমার বাবা আর ২ বছর পর রিটায়ার্ড করবেন এবং আমার গ্রেজুয়েশন ও সেই সময় শেষ হবে।। এখন ওনাদের আশা আমি পরিবারের হাল ধরবো।। যেহেতু আমি বড়,, এবং বাবা একটু অসুস্থ,, বয়স ও হয়েছে তাই মনে হয়না উনি আর কিছু করতে পারবেন রিটায়ার্ডমেন্ট এর পরে।। তাই আমাকেই পরিবারকে সাপোর্ট দিতে হবে।। তাই ছেড়ে আসা আর হয়ে উঠেনি।।  এখন আমার কাছে দুইটা অপশন।

১) যেই দ্বীনি ইলম অর্জন করতে চেয়েছিলাম ওইটা অফ রেখে পুরোপুরি জেনারেল পড়াশোনায় ফোকাস করা +স্কিল ডেভেলপ করে ফ্রিল্যান্সিং /বা স্কলারশিপ এ দেশের বাইরে চলে যাওয়া/বিসিএস প্রিপারেশন। এরপর ইনকাম সোর্স ফিক্সড হলে (৩ বছর লাগবে) তারপর গিয়ে যেই ইলম অর্জন করতে চেয়েছিলাম সেটা করা। (আমার পারিবারিক দিক বিবেচনা করে এইটা একটা অপশন) কিন্তু ভয় লাগে তার আগেই যদি মৃত্যু এসে যায়!

২) আল্লাহর উপর সব ছেড়ে দিয়ে ( মানে বাবা রিটায়ার্ড করলে কেমনে চলবো যদি ইনকামের কোনো ব্যবস্থা এখন থেকে না করি বা ওই বিষয়ে এখন চিন্তা না করি) দ্বীনি ইলম অর্জন এ পুরোপুরি মনোনিবেশ করা,,, (এক্ষেত্রে আম্মু বাবা অনেক মানসিক কষ্টে ভুগেন,, কারন ওনাদের এতদিনের আশা রিটায়ার্ডমেন্ট এর পর আমি পরিবারের হাল ধরবো। নাহয় সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা করেন কি হবে কি খাবো ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার কি হবে,, দ্রব্যমুল্যের যেই উর্ধ্বগতি)

আমার প্রশ্ন হলো,,আমার সবদিক বিবেচনায় কোন সিদ্ধান্তটি নেওয়া উচিত ১ নাকি ২। অথবা এরচেয়ে ভালো কোনো পরামর্শ থাকলে আমাকে দিবেন ইন শা আল্লাহ।
আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো যদি আমি দ্বীনি ইলমের দিকে যাই তাহলে কিভাবে শুরু করবো?  আগে হিফজ এ ভর্তি হবো নাকি আলেমা হওয়ার জন্যে ভর্তি হবো? তাজউইদ নিয়ে এক জায়গায় পড়াশোনা করতেছি নাকি শুধু তাজউইদ নিয়ে ডিটেইলস পড়াশোনা করবো?  এই বিষয়ে একটি প্রোপার গাইডলাইন।।

গুছিয়ে লিখতে পেরেছি কিনা জানিনা।। তার জন্যে ক্ষমা প্রার্থী।। জাজাকাল্লাহু খাইরান।।

1 Answer

0 votes
by (564,060 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم


দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

 فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া।  (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

★ একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات     জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
যতদিন পর্যন্ত এই দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন  কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।

২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১;

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার জন্য পরামর্শঃ-
আপনি ফিতনাহ মুক্ত থাকার আপ্রান চেষ্টার সাথে পূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে ও উপরোক্ত শর্তাবলি পুরোপুরি ভাবে মেনে জেনারেল লাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন,
আপনি ফরজে আইন পরিমান ইলম অর্জন না করে থাকলে অনলাইন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে জেনারেল পড়াশোনার পাশাপাশি ফরজে আইন পরিমান ইলম অর্জন করবেন।

আর যদি আপনার ফরজে আইন পরিমান ইলম অর্জন আগেই হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে আপাতত দ্বীনি ইলমের দিকে না গিয়ে জেনারেল লাইনে পড়াশোনা শেষ করবেন।

চাকরির যেই বিষয় বলছন,সেটি নিয়ে আপাতত টেনশন করে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন।

সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...