আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
120 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (18 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
১. করোনার কারণে এখন জুম এপের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে বা কোচিং করানো হচ্ছে। একজন শিক্ষক দশ বারোজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন, যাদেরকে তিনি স্কুলেও পড়াতেন। একজন শিক্ষার্থী কোনো মাসের নয় তারিখ থেকে পড়া শুরু করে পরবর্তী মাসের নয় তারিখ শিক্ষককে টিউশন ফি দিয়ে ফেলেছে। এরপর ঐ মাসের দশ তারিখ থেকে একত্রিশ তারিখ পর্যন্ত সে একেবারে  ক্লাস করে নি বললেই চলে, কোথাও যাওয়ার কারণে, নেট কানেকশন না থাকার কারণে কিংবা অলসতার কারণে। পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল সেগুলোও দেয় নি। অর্থাৎ কোনো জ্ঞান অর্জন করতে পারে নি। এরপর পরবর্তী মাসের এক তারিখ থেকে আবার পড়া শুরু করেছে। এখন যদি সে এই মাসের শেষেই অর্থাৎ ত্রিশ তারিখে একেবারে টিউশন ফি দেয়, তাহলে শিক্ষকের হক নষ্ট হবে? মাঝখানে যে পড়েনি সেগুলোর জন্য ফিস না  দিলে গুনাহ হবে কি?
২. একটা বইয়ে পড়েছি ইশরাকের সালাত পড়ার পর ঘুমালে দরিদ্র হয়। কথাটি কি ঠিক। কেউ বেশি দূর্বল হলে একটু শুয়ে বিশ্রাম নিতে চাইলে যদি ঘুম এসে যায় তাহলে সমস্যা হবে কি?
৩. সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সদস্যদের সালাম দেয়া কি সুন্নাহ?
৪. জায়তুনের তেল মাথায় ও গায়ে সুন্নাত পালনের নিয়ত করে দিলে সুন্নাত পালন হবে কি, যেহেতু নবীজ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জায়তুনের তেল মাখতেন?
জাযাকাল্লাহু খাইরান।

1 Answer

0 votes
by (566,400 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)

ইসলাম মানুষকে যেসব উন্নত চরিত্রের শিক্ষা দেয়, তন্মধ্যে অন্যতম গুণ বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতি ও চুক্তির বাস্তবায়ন। যেকোনো ভালো কাজের অঙ্গীকার পূরণ করা ওয়াজিব।

পবিত্র কোরআনে ওয়াদার প্রতি গুরুত্বারোপ করে ইরশাদ হয়েছে, 

يا ايها الذين امنوا اوفوا بالعقود

'হে ইমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করবে।' (সুরা আল-মায়িদা, আয়াত : ১)
الا الذين عاهدتم من المشركين.....

তবে যেসব মুশরিকের সঙ্গে তোমরা চুক্তি করেছ, পরে তারা চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে কোনো ত্রুটি করেনি, আর তারা তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সেই চুক্তি তোমরা মেয়াদকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত পূর্ণ করবে। অবশ্যই আল্লাহ দায়িত্বনিষ্ঠদের ভালোবাসেন। (সুরা তাওবা, আয়াত ৪)
,
ওয়াদা (চুক্তি) পালনকারীকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন। যেমন তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ওয়াদা পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে তার জানা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ৭৬)। 

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,সে টিউশনিতে অংশগ্রহণ করবে, এটি উক্ত শিক্ষকের সাথে করা একটি চুক্তি।
,
কেহ ক্লাশ না করলে সেটি শিক্ষককে জানানো প্রয়োজন ছিলো। 
যেহেতু প্রশ্নে উল্লেখিত স্টুডেন্ট   তার সাথে টিউশনিতে থাকার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন,যাহা তাকে পুরন করা জরুরি। 
এখন যেহেতু সে ক্লাশ করেনি,তাই এই বিষয়টি শিক্ষককে জানিয়ে তিনি যদি টিউশন ফি মওকুফ করে দেন,তাহলে তা ইহসান হবে।
এক্ষেত্রে শিক্ষক যদি টিউশন ফি মওকুফ করে না দেয়,তাহলে স্টুডেন্ট এর পক্ষ থেকে চাপ দেওয়ার কোনো অনুমতি নেই।
এটি শিক্ষকের হক।  
,
আরো জানুনঃ  

(০২)
সুন্নত হচ্ছে, ফজরের পর না ঘুমানো।’ 
এসময় ইবাদত বান্দেগী,কুরআন তেলাওয়াত,যিকির আযকার,প্রয়োজনীয় কাজ  করা উচিত। 
যদিও শারীরিক প্রবণতা হলো, ফজরের পর চোখেতে আপনা-আপনি ঘুম জড়িয়ে আসে।
,
এসময়ে ঘুমানো নাজায়েজ নয়,তবে সুন্নাতের খেলাফ। 

আমাদের প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন-

ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﺭِﻙْ ﻷُﻣَّﺘِﻲ ﻓِﻲ ﺑُﻜُﻮﺭِﻫَ

‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’

বর্ণনাকারী বলেন, ‘এ জন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন।’

সাখর রা. ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন।’ 
(আবু দাউদ :২৬০৬)

আরো জানুনঃ 
,
★প্রশ্নে উল্লেখিত ""ইশরাকের সালাত পড়ার পর ঘুমালে দরিদ্র হয়""
মর্মে কোনো হাদীস নেই। 
তবে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কোনো সময় এমনটি হলে ঘুমানো যায়।
মাঝে মাঝেই এমনটি করলে সেটি সুন্নাতের খেলাফ হবে।
তবে নাজায়েজ নয়।
এতে কোনো গুনাহ নেই।   
,
(০৩)
ঘুম থেকে উঠার পর করনীয় সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছেঃ   
ঘুম থেকে উঠেই উভয় হাত দ্বারা মুখমণ্ডল এবং চক্ষুদ্বয়কে হালকাভাবে মর্দন করা, যাতে ঘুমের ভাব দূর হয়ে যায়।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ১৮৩)

 ঘুম হতে উঠার পর এই দু‘আ পড়া :
 الحمد لله الذى احيانا بعد ما اماتنا واليه النشور
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৬৩২৪)

 যখনই ঘুম হতে উঠা হয়, তখনই মিসওয়াক করা একটা সুন্নাত। উযু করার সময় উযুর সুন্নাত হিসেবে মিসওয়াক করা।
(বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২৪৫/ আবু দাউদ, হাঃ নং ৪৭)
,
এক্ষেত্রে সালাম দেওয়ার বিধান এই হাদীস থেকে উলামায়ে কেরাম বলেছেনঃ
 
 রাসূল (ছাঃ) বলেন
, إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأَهُمْ بِالسَّلاَمِ 
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে প্রথমে সালাম দেয়’। 

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! দু’জন লোকের মধ্যে সাক্ষাৎ হ’লে কে প্রথম সালাম দিবে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার বেশী নিকটবর্তী’।

প্রথমে সালাম না দিলে রাসূল (ছাঃ) কথা বলার অনুমতি দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,لاَ تَأْذَنُوْا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأْ بِالسَّلاَمِ ‘যে ব্যক্তি আগে সালাম দেয় না তোমরা তাকে (কথা বলার) অনুমতি দিও না’

আরো জানুনঃ 
,
সুতরাং ঘুম থেকে উঠার সময় যেহেতু অনেকক্ষন পর ব্যাক্তিবর্গদের সাথে দেখা হয়,তাই সেই সময়ে কথা বলার আগেই সালাম দেওয়া মুস্তাহাব।  
,
(০৪)
হ্যাঁ এতে নিয়ত করলে সুন্নাত পালম হবে, ছওয়াব হবে। 
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
 
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ مَنْصُورٍ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ كَانَ ابْنُ عُمَرَ يَدَّهِنُ بِالزَّيْتِ فَذَكَرْتُهُ لإِبْرَاهِيمَ قَالَ مَا تَصْنَعُ بِقَوْلِهِ 

১৫৩৭. সা‘ঈদ ইবনু জুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) (ইহরাম বাঁধা অবস্থায়) যায়তুন তেল ব্যবহার করতেন। (রাবী মানসুর বলেন) এ বিষয় আমি ইব্রাহীম (রহ.)-এর নিকট পেশ করলে তিনি বললেন, তাঁর কথায় তোমার কী দরকার। (বুখারী শরীফ আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৪৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৪৪৩)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...